Published on Nov 06, 2021 Updated 0 Hours ago

২০২১–এর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্কের টীকাকরণ আগে যেমন মনে হয়েছিল তেমন অবাস্তব নয়।

ভারতের সকলকে ভ্যাকসিন দেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রয়াস

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচ্চাকাঙ্ক্ষী সিদ্ধান্ত ও সব প্রাপ্তবয়স্ককে ২০২১–এর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কোভিড–১৯ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেওয়ার সরকারি ঘোষণার রূপায়ণ এখন আয়ত্তের মধ্যে এসে গেছে। যখন ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন এই টীকাকরণের পরিকল্পনাকে অনেকেরই অবিশ্বাস্য ও অসম্ভব (impossible) মনে হয়েছিল, কারণ তাঁরা এই বিরাট কাজ করার প্রশ্নে ভারতের ক্ষমতা বা সামর্থ্য নিয়েই সন্দিহান ছিলেন। সারা দেশ জুড়ে অতি বিচিত্র ধরনের জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে টীকা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের আছে কি না, সেই সন্দেহও অনেকের ছিল। কিন্তু দ্রুত কোউইন প্ল্যাটফর্ম উদ্ভাবন করে নিয়ে ভারত বিরাট সংখ্যক মানুষের টীকাকরণের উপযোগী নির্ভরযোগ্য পরিচালন ব্যবস্থা তৈরি করার চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। সেটা সম্ভব হল অনলাইন ও অফলাইনে কাজের মাধ্যমে একটা যাচাইযোগ্য ডেটাবেস তৈরির কাজ সুসম্পন্ন হওয়ায়। সেপ্টেম্বরে ভারতে টীকাকরণের রান রেট ছিল ২৩ কোটি ডোজ । এই অবস্থায় গত পাঁচ মাসের তাৎপর্যপূর্ণ প্রস্তুতির আপেক্ষিক হিসেবের পরিপ্রেক্ষিতে ধরে নেওয়া যায় বাকি বছরে ভ্যাকসিনের সরবরাহ আরও খানিকটা বাড়বে, এবং বছরের শেষে হয়তো ১৯০ কোটি ডোজ দেওয়া সম্ভব হবে।

দেশের বয়স্ক মানুষের প্রায় তিনচতুর্থাংশের অন্তত একটা ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছেআর ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের কভারেজ আরও বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৫+‌ বয়সীদের একতৃতীয়াংশের বেশি নাগরিকের সম্পূর্ণ টীকাকরণ হয়ে গিয়েছে‌।

এখন বিশেষজ্ঞরা প্রায় সকলেই স্বীকার করেন যে অন্য নিম্নমধ্য আয়ের দেশগুলির তুলনায়, এমনকি কিছু মধ্য আয়ের দেশের থেকেও, ভারতে ভাল টীকাকরণ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষে ভারত প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ৮৯ কোটি ডোজ দিয়ে দিতে পেরেছে। সেপ্টেম্বরের শেষে দেওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কাছে এখনও ৪ কোটি ৫৭ লক্ষ ডোজ আছে, এবং পাইপলাইনে আছে ৮৪ লক্ষের কিছু কম। দেশের বয়স্ক মানুষের প্রায় তিন–চতুর্থাংশের অন্তত একটা ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে, আর ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের কভারেজ আরও বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৫+‌ বয়সীদের এক–তৃতীয়াংশের বেশি নাগরিকের সম্পূর্ণ টীকাকরণ হয়ে গিয়েছে (‌লেখচিত্র ১)‌।

লেখচিত্র ১: ভারতে ভ্যাকসিন কভারেজ (‌৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১)‌

সূত্র: https://www.orfonline.org/vaccine-tracker/

একটা নিম্নমধ্য আয়ের দেশের পক্ষে এই সাফল্য প্রশংসনীয় ও বিস্ময়কর। আয়তন ও পরিধির কারণেই এই কৃতিত্ব পুরো মুক্ত দুনিয়ায় নজিরবিহীন। প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের ডোজের সংখ্যার নিরিখে আমরা যখন (‌স্বআরোপিত)‌ ডেডলাইনের কাছে পৌঁছে গেছি, তখন কিছু নীতিগত প্রশ্ন কিন্তু উত্তরের প্রতীক্ষায় আছে। কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য এখন এগুলোর উত্তর খুঁজে বার করা জরুরি, এবং এটাকে আবশ্যিক কর্তব্য হিসেবে দেখতে হবে।

সাম্প্রতিক অতীতে আমরা দেখেছি, যে সব দেশে অতিমারির নতুন ঢেউ এসেছে সেখানে দুটো স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য ছিল:‌ অপেক্ষাকৃত ধনী দেশগুলোতে এই ঢেউ ছিল মাঝারি মাপের, কিন্তু গরিব দেশগুলো সাধারণত সংক্রমণের সর্বোচ্চ শিখর ছুঁয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘ভ্যাকসিন বিভাজন’‌–এর ছবিটাও প্রতিফলিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু এমন একটা দেশ যেখানে দুটো ছবিই এক সঙ্গে দেখা গিয়েছে। মার্কিন দেশে ভ্যাকসিন বিভাজনের মূলে রয়েছে রাজনৈতিক ও আদর্শগত কারণ, যার পরিণাম হয়েছে খুবই ক্ষতিকর।

শুরুর দিককার মুক্ত মূল্যনির্ধারণ  মে মাসে শুরু হওয়া অ্যাকসেলারেটেড ন্যাশনাল কোভিড১৯ ভ্যাকসিনেশন স্ট্র‌্যাটেজিযে সময়ে দিনে ২০ লক্ষের মতো লোককে টীকা দেওয়া যেততা থেকে আজ ভারতের টীকাকরণের প্রয়াস অনেক পথ অতিক্রম করে এসেছে। সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে দৈনিক ৭৫ লক্ষ লোকের টীকাকরণ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা অতিমারির মানচিত্রে সাধারণ ভাবে একটা ‘‌বিযুক্ত’‌ হওয়ার ঘটনা দেখতে পেয়েছেন:‌ যে সব দেশ ও সমাজ ভ্যাকসিন পেয়েছে তারা সংক্রমণের তীব্রতা (সংক্রমিতের সংখ্যা)‌ থেকে রোগের কারণে গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর মতো ক্ষতিকে বিযুক্ত করতে পেরেছে। অনেক দেশে যেখানে অনেক বেশি সংখ্যক লোকের টীকাকরণ হয়ে গিয়েছে তারা এখন SARS-CoV-2 কে আঞ্চলিক রোগ হিসেবেই দেখছে। সাধারণ ভাবে সংক্রমিতের সংখ্যা বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সাম্প্রতিক অতীতে কমে গিয়ে থাকলেও একথা ভাবা বিপজ্জনক যে আমরা অতিমারির শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। জীবাণুর বিবর্তন (‌মিউটেশন)‌ ও টীকাকরণ হয়নি এমন বিশাল সংখ্যক মানুষের অস্তিত্ব ভাইরাসকে সুযোগ করে দিচ্ছে প্রাণঘাতী হিসেবে থেকে যেতে এবং যে কোনও সময় অতিমারিকে ফের বিপজ্জনক দিকে ঘুরিয়ে দিতে। সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কের এবং টিনএজারদের টীকাকরণকে এখন জাতীয় অগ্রাধিকার বলে গণ্য করতে হবে।

শুরুর দিককার মুক্ত মূল্যনির্ধারণ ও মে মাসে শুরু হওয়া অ্যাকসেলারেটেড ন্যাশনাল কোভিড–১৯ ভ্যাকসিনেশন স্ট্র‌্যাটেজি, যে সময় দিনে ২০ লক্ষের মতো লোককে টীকা দেওয়া যেত, তা থেকে আজ ভারতের টীকাকরণের প্রয়াস অনেক পথ অতিক্রম করে এসেছে। সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে দৈনিক ৭৫ লক্ষ লোকের টীকাকরণ হয়েছে। শুরুর থেকে এখন পর্যন্ত মাসে কত মানুষের টীকাকরণ হয়েছে তার বিশ্লেষণ (‌লেখচিত্র ২)‌ দেখিয়ে দেয় সংখ্যা কী ভাবে বেড়েছে। মে মাসে যেখানে দেওয়া হয়েছিল ৬ কোটি ১০ লক্ষ ডোজ, সেখানে সেপ্টেম্বরে সংখ্যাটা ছিল ২৩ কোটির বেশি, যার অর্থ ক্ষমতা অর্জনের মাত্রা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়, প্রায় ৪০০ শতাংশ।

লেখচিত্র ২:‌ ভারতের কোভিড–১৯ টীকাকরণ প্রয়াস (‌গড়ে দৈনিক যে পরিমাণ ডোজ দেওয়া হয়েছে — সংখ্যা ১০০,০০০য়)

সূত্র: প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ভারত সরকার

ভারত ২০২১–এর মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্ককে টীকা দেওয়ার উচ্চাকাক্ষী লক্ষ্য নিজের জন্য স্থির করেছে। তার মানে, প্রকৃত অর্থে, মোটের উপর ৯৫ কোটি মানুষকে দুটো ডোজ দিতে হবে, আর সব মিলিয়ে দিতে হবে ১৯০ কোটি ডোজ। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ভারত দিতে পেরেছে মোট ৮৮ কোটি ৯০ লক্ষ ডোজ। এর মধ্যে ৬৫ কোটি ছিল প্রথম ডোজ, আর ২৩ কোটি ৯০ লক্ষ দ্বিতীয় ডোজ।

সেই সময় থেকে বছরের বাকি দিনগুলোতে ভারতকে দিতে হবে আরও ১০০ কোটির বেশি ডোজ, আর তা দিতে হবে মূলত যে দুটো সংস্থার টীকা দেওয়া হচ্ছে সেই কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের ডোসেজ সাইক্‌ল (‌দুটি ডোজের সময়ের ব্যবধান)‌ অনুযায়ী। এর অর্থ ভারতকে এখন আরও বেশ বড় এক কদম এগিয়ে যেতে হবে, এবং দিতে হবে দিনে গড়ে ১ কোটি ১০ লক্ষ ডোজ। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে টীকাকরণের হার ৪৬.‌৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। (‌১)‌ আরও বেশি ভ্যাকসিন উৎপাদন ব্যবস্থা অনলাইনে এসে যাওয়ায় এবং টীকাকরণ প্রয়াস এখনও অবধি যথেষ্ট গতিতে ত্বরান্বিত হওয়ার পর অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এটা কোনওক্রমে সম্ভবপর হলেও হতে পারে।

ব্যবহৃত কোভিড ভ্যাকসিন(‌গুলি)‌ এবং টীকাকরণ প্রয়াসের গতিতে তাদের প্রভাব

কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ভারতে টীকাকরণের প্রয়াসের মূল স্তম্ভ হল সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড, যা মোটের উপর এখনও পর্যন্ত যত ডোজ দেওয়া হয়েছে তার ৮৮ শতাংশ। এর ডোসেজ সাইক্‌ল হল ১২ সপ্তাহের (‌লেখচিত্র ৩)‌। ১ অক্টোবরে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ ছিলেন যাঁরা এখনও প্রথম ডোজ পাননি। এদের একটা অংশকে কোভ্যাক্সিন বা স্পুটনিক–৫ টীকা দেওয়া যেতে পারে (‌দুটোরই ডোসেজ সাইক্‌ল ১ মাস বা তার কম)। কোভিশিল্ডের ডোসেজ সাইক্‌ল অনুযায়ী কিন্তু একটা বড় সংখ্যার মানুষের দ্বিতীয় ডোজ জানুয়ারিতে চলে যাবে।

সূত্র: https://dashboard.cowin.gov.in/

কাজেই নীতিগত ক্ষেত্রে সমস্যার জায়গাটা সম্ভবত শুধু টীকাকরণের ক্ষমতা ৪৭ শতাংশ বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সে কাজটা নিশ্চয়ই করা সম্ভব। প্রশ্নটা হল দুটি টীকার মধ্যে ব্যবধানের কথা মাথায় রেখে কী ভ্যাকসিন বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে।

ভারতকে দিতে হবে আরও ১০০ কোটির বেশি ডোজআর তা দিতে হবে মূলত যে দুটো সংস্থার টীকা দেওয়া হচ্ছে সেই কোভিশিল্ড  কোভ্যাক্সিনের ডোসেজ সাইক্‌ল (‌দুটি ডোজের সময়ের ব্যবধান)‌ অনুযায়ী। এর অর্থ ভারতকে এখন আরও বেশ বড় এক কদম এগিয়ে যেতে হবেএবং দিতে হবে দিনে গড়ে  কোটি ১০ লক্ষ ডোজ। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে টীকাকরণের হার ৪৬.‌ শতাংশ বাড়াতে হবে।

এক্ষেত্রে তিনটে সম্ভাবনার কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রক বিবেচনা করতে পারে। প্রথম, সত্যিসত্যিই কি এই সম্ভাবনা আছে যে কোভ্যাক্সিন অবশেষে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ফাঁকটা ভরাট করতে এগিয়ে আসবে?‌ কিন্তু তারা যদি তাদের উৎপাদন দ্বিগুণও করে, তা হলেও প্রচুর মানুষ টীকাকরণের আওতার বাইরে থেকে যাবেন, যদি না স্পুটনিক–৫ তাদের উৎপাদন দ্রুত অনেকটা বাড়ায়। দ্বিতীয় বিকল্প হল কোভিশিল্ডের দুটো ডোজের মধ্যে ব্যবধান কমানো। তা হলে টীকাকরণ ক্ষমতার বেশিটাই নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের অনেকটা জুড়ে ব্যবহার করা সম্ভব দ্বিতীয় ডোজের জন্য। আর তৃতীয়টা অবশ্যই হল এখনই এমন কোনও নতুন ভ্যাকসিন পাওয়া, যার প্রচুর উৎপাদন ক্ষমতা (‌ডোজ)‌ আছে এবং যার দুটি ডোজের মধ্যে ব্যবধান কম।

বাকি সকলের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড়সড় বিলম্বের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ড উৎপাদনে অসাধারণ সক্রিয়তা (‌বা ‘‌ওভার পারফরমেন্স’‌) ‌দেখিয়েছে। পাঁচ মাস আগে সবচেয়ে আশাবাদীরা যা ভেবেছিলেন তারা তার চেয়েও বেশি উৎপাদন করেছে। আর সেটাই ভারতের টীকাকরণ প্রয়াসে সহায়তা করেছে।

আর যে সব গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন ভারতে শীঘ্রই এসে যাবে, তার মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউটের বক্তব্য অনুযায়ী  কোভোভ্যাক্স–এর জরুরিভিত্তিক অনুমোদনের আবেদন করা হবে ২০২১–এর শেষে। কাজেই আমরা যে সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করছি তার মধ্যে এই ভ্যাকসিনের বিশেষ প্রভাব পড়ার কথা নয়। একই ভাবে, যা রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে তাতে ইঙ্গিত মিলেছে যে রাশিয়ায় সংক্রমণের সংখ্যা আবার বেড়ে যাওয়ায় ভারতে স্পুটনিক–৫ আসার পরিকল্পনা ব্যাহত হবে, যদিও সময়সীমার শেষের মুখে এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের মধ্যেকার ২১ দিনের ব্যবধান খুবই কাজের হত। বায়োলজিক্যাল–ই’‌র জনসন অ্যান্ড জনসন–এর ভ্যাকসিন উৎপাদন এই বছরের শেষে শুরু হতে পারে;‌ তবে এখনও অবধি এর টাইমলাইন নিয়ে কোনও তথ্য নেই। জাইডাস ক্যাডিলা’‌র তিন ডোজের ভ্যাকসিনও শুরুতে মাসে মাত্র ১ কোটি ডোজ উৎপাদন করবে:‌ কিন্তু এটাই প্রথম শিশুদের দেওয়ার যোগ্য ভারতে অনুমোদিত টীকা হওয়ায় এটি সম্ভবত ২০২১–এ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কোনও ফারাক গড়ে দিতে পারবে না। জাইডাস ক্যাডিলা’‌র ডোজ যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এখনও এটি শিশুদের জন্য একমাত্র টীকা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে বলে কোমরবিডিটি আছে এমন শিশুদেরই এটি দেওয়া উচিত।

খবর অনুযায়ী কোভ্যাক্সিন অক্টোবর থেকে উৎপাদন ৩৫ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ লক্ষ করছে। ভারত সরকার এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজের জন্য বাধ্যতামূলক তিন মাস অপেক্ষার সময়সীমা কমানোর কোনও পরিকল্পনা এখন নেই। তবে জাতীয় টীকাকরণ প্রয়াসে আরও ডোজ হাতে এসে গেলে এই সিদ্ধান্ত হয়তো পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।

ভারতের টীকাকরণ প্রয়াসে সম্ভাব্য পথ

এর পর আমরা আলোচনা করব অনেক পথের মধ্যে দুটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট নিয়ে যা আগামী মাসগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এবং ভারতের সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের টীকাকরণ সম্ভবপর করতে পারে।

এখনও অবধি প্রাপ্ত তথ্য থেকে বোঝা যায় টীকাকরণ প্রয়াসের ডিসেম্বর ডেডলাইনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন তিনটি বিষয় হল টীকা উৎপাদন ক্ষমতা (‌যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে)‌, কোভিশিল্ডের দুটি ডোজের মধ্যে তিন মাসের ব্যবধান, এবং তার পাশাপাশি রফতানি করার মতো উদ্বৃত্ত। প্রথম দৃশ্যপটে ধরে নেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিনের সরবরাহ ২০২১–এর সেপ্টেম্বরের স্তরেই থাকবে, যা হল মাসে ২৩ কোটির মতো। এরকম ক্ষেত্রে ভারতের সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের টীকাকরণ সম্ভব হবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে;‌ আর এ বছরের ডিসেম্বরের শেষে ভারতে ডোজ কম পড়বে ৩২ কোটি ১০ লক্ষ।

দ্বিতীয় দৃশ্যপটে ধরে নেওয়া হচ্ছে ২০২১–এর সেপ্টেম্বরের স্তরের থেকে গড়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ বাড়বে ৪৬.‌৫ শতাংশ। মে ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেহেতু দৈনিক টীকাকরণের সংখ্যা ৪০০ শতাংশ বেড়েছিল, তাই এই ধরনের বৃদ্ধি অসম্ভব নয়। সম্প্রতি কোভিশিল্ড–এর উৎপাদন ক্ষমতা মাসে ১৬ কোটি ডোজ থেকে বাড়িয়ে ২০ কোটি ডোজ করার কথা ঘোষণা করার পর রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে সংস্থাটি অক্টোবর মাসে ২২ কোটি ডোজ সরবরাহ করবে। অর্থাৎ ঠিক যে ভাবে গত মাসগুলিতে সংস্থাটি উৎপাদন ত্বরান্বিত করেছে, এখনও সে ভাবেই করতে থাকবে। দ্বিতীয় দৃশ্যপটে ভারত ২০২১–এর ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্ককে টীকার একটি ডোজ দিয়ে দেবে, এবং কোভিশিল্ডের ২৫ কোটি ১০ লক্ষ দ্বিতীয় ডোজের সময় জানুয়ারিতে পড়ায় ২০২২–এর জানুয়ারিতে সকলের টীকাকরণ সম্পূর্ণ হবে।

এই দৃশ্যপটগুলোর মধ্যে স্পুটনিক–৫ ধরা হয়নি, কারণ রাশিয়ায় আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভ্যাকসিনের উপাদানগুলোর আমদানি থমকে গেছে । অবশ্যই ভারত টীকাকরণ বাধ্যতামূলক করেনি, এবং নানা কারণে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার একটা ভাল অংশের স্বেচ্ছায় টীকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকবে। আমাদের বিশ্লেষণে কিন্তু ধরে নেওয়া হয়েছে যে ১৮ বছরের উপরে সব নাগরিক টীকার দুটো ডোজ নিতে চাইলে তাঁরা তা সময়সীমার মধ্যে পেয়ে যাবেন। কাজেই ভ্যাকসিন নিতে অনীহার বিষয়টি এখানে হিসেবের মধ্যে না–এনে যাঁদের পাওয়ার কথা তাঁদের সকলকেই হিসেবের মধ্যে ধরা হয়েছে। তা ছাড়া এখানে ধরা হয়নি সম্ভাব্য উদ্ভাবনের কথাও, যেমন যাঁদের বিপদ কম তাঁদের ক্ষেত্রে ডোজ ভেঙে দেওয়া বা ভ্যাকসিনের মিশ্রণ ঘটানো (‌যা অন্যান্য অসুখের ক্ষেত্রে ভারতে আমরা এখনই করে থাকি)। এটা করা গেলে সীমিত সরবরাহ বাড়িয়ে নেওয়া যায়, মৃত্যুর হার কমে এবং সার্বজনীন টীকার পরিধির পথে যাত্রা ত্বরান্বিত হয়।‌

টেবিল ১: ২০২১–এর ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্কের টীকাকরণের পথে ভারতের যাত্রা: দুটি দৃশ্যপট


বিশ্বজনীন প্রসঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যা থেকেই স্পষ্ট যে দ্বিতীয় দৃশ্যপটটি অর্জনযোগ্য, যেখানে ২০২১ নভেম্বরের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের অন্তত একটি ডোজ নেওয়া হয়ে যাবে, আর দ্বিতীয় ডোজের তারিখ ২০২২–এ চলে যাবে। এমন একটা দেশ যেখানে ১৮–র উপরের জনসংখ্যার মানুষের সংখ্যা ৯৫ কোটি, সেখানে সকলকে ১১ মাসে একটা ডোজ দিতে পারাটাও হবে একটা প্রশংসনীয় সাফল্য। দ্বিতীয় দৃশ্যপটে ২০২১ নভেম্বর থেকে ভাল সংখ্যায় রফতানিযোগ্য অতিরিক্ত ডোজের কথাও ধরা হয়েছে।

ভারত যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের টীকাকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করছে, তবে দুর্ভাগ্যক্রমে এমন কোনও সীমা পাওয়া যায়নি যা পেরোলে প্রাপ্তবয়স্কদের গোষ্ঠী প্রতিরোধশক্তি বা হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যাবে। তা ছাড়া কোভিড–১৯–এর গোষ্ঠী প্রতিরোধশক্তি আসতে হবে সব মানুষের জন্য, আর অতি–তরুণ ভারতের জন্য এর অর্থ হল ১৮ বছরের নীচের জনসংখ্যার বড় অংশের টীকাকরণ। যদি ২০২১ ডিসেম্বর বা ২০২২ জানুয়ারির মধ্যে ইচ্ছুক সব প্রাপ্তবয়স্কের টীকাকরণ ভারত করে ফেলতেও পারে, তা হলেও কোটি কোটি বাচ্ছার টীকাকরণ না–হলে গোষ্ঠী প্রতিরোধশক্তি অর্জনের জায়গায় পৌঁছতে পারবে না। ভারত যখন ভ্যাকসিন দিয়ে এবং দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করে কোভিড–১৯–এর বিপদ আয়ত্বে আনছে, সেই সময় বাকি বিশ্বে প্রতিশ্রুতিমতো ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ছোটদের টীকাকরণই হবে ভারতের পরবর্তী উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য।

এই আলোচনা থেকে দেখা গেল ২০২১–এর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্কের টীকাকরণ আগে যেমন মনে হয়েছিল তেমন অবাস্তব নয়। আগের মতোই ভারত এখনও যে ভাবে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তার ফলে দেশ ২০২২–এর জানুয়ারির মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্কের টীকাকরণের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করতে পারবে, এবং সেই সঙ্গেই বাকি বিশ্বে ভ্যাকসিন পাঠাতে ও অত্যন্ত কম প্রতিরোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য বুস্টার ডোজের ব্যবস্থাও করতে পারবে।


[১] এর ভিত্তি হল মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দৈনিক প্রদত্ত ডোজের ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ব্যবহার করে নিবন্ধকারদের কষা হিসেব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Samir Saran

Samir Saran

Samir Saran is the President of the Observer Research Foundation (ORF), India’s premier think tank, headquartered in New Delhi with affiliates in North America and ...

Read More +
Oommen C. Kurian

Oommen C. Kurian

Oommen C. Kurian is Senior Fellow and Head of Health Initiative at ORF. He studies Indias health sector reforms within the broad context of the ...

Read More +