Published on Nov 15, 2021 Updated 0 Hours ago

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য কাজ করার পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরে এখন আলাপ–আলোচনার প্রয়োজন দায়িত্বভার নিয়ে।

বিশ্বজনীন নিয়মবিধি তৈরির প্রয়াস কে আরও শক্তিশালী করা:‌ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের অন্তর্ভুক্তি

২০২১–এর আগস্টে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করার সুবাদে ভারত দেখাতে পেরেছে তার প্রভাব, সৃষ্টিশীলতা ও কূটনীতি। আর এটা ঘটেছে এমন সময় যখন ভারত পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। এই চাপ ওয়াশিংটন ও অন্য পশ্চিমী দেশের রাজধানীগুলিতে নতুন করে ‘‌দায়িত্বশীল অংশীদার’‌ বিতর্কটাকে জিইয়ে তুলেছে, বিশেষ করে এই কারণে যে তারা বুঝতে চাইছে ভারতের উত্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমী মিত্রদেশগুলির স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে কি না। এই আলোচনায় আমরা দেখাতে চেষ্টা করেছি পশ্চিমের এখন নতুন আলোয় ভারতের পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। এখানে একথাও বলা হয়েছে যে ভারতে এই বিতর্ক এখনও পর্যন্ত সংস্কারকেন্দ্রীক হয়ে থাকলেও, তার পাশাপাশি ক্ষমতার সঙ্গে যে দায়িত্ব আসে তা নিয়েও এবার আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।


আরোপণ: হর্ষ ভি পন্থ ও চিরায়ু ঠক্কর, “স্ট্রেনদেনিং গ্লোবাল রুল–মেকিং:‌ ইন্ডিয়া’‌জ ইনক্লুসন ইন দ্য ইউএন সিকিউরিটি কাউন্সিল,” ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ নম্বর ৪৯৯, অক্টোবর ২০২১, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন


ভূমিকা

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে (‌ইউএনএসসি)‌ ভারতের সময় এসেছিল ২০২১–এর আগস্টে, যখন ভারত ২০২১–২২–এর জন্য নির্বাচিত সদস্য হওয়ার পাশাপাশি এক মাসের জন্য পরিষদের সভাপতিত্ব করেছিল। গত কয়েক দশকে স্থায়ী সদস্যেরা চেষ্টা করেছে ভারতের মতো নির্বাচিত অস্থায়ী সদস্যদের ক্ষমতা হ্রাস করতে, যার ফলে তাদের এই মঞ্চটি অর্থবহ ভাবে ব্যবহার করার সামর্থ্যও কমে গেছে। নিরাপত্তা পরিষদের শীর্ষাসনে বসা, তা সে যত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যই হোক না কেন, নয়া দিল্লিকে সুযোগ করে দিয়েছিল বিশ্বজনীন শাসনের অনিশ্চয়তার সঙ্গে ভারত কত ভাল যুঝতে পারে তা সবাইকে দেখিয়ে দেওয়ার। সভাপতিত্ব ভারতকে সুযোগ করে দিয়েছিল তার প্রভাব, সৃষ্টিশীলতা ও কূটনীতি তুলে ধরার, আর সভাপতির বিবৃতিতে নাম না–করে নিজের প্রতিপক্ষ চিনকে আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৯ আগস্ট সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনিই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি এই দায়িত্ব পালন করলেন।[১]

বহুপাক্ষিক সংগঠনগুলিতে নিজের পদচিহ্ন আরও স্পষ্ট করে তুলে ভারত বিশ্বজনীন নিয়মবিধির স্রষ্টা হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে আরও বড় ভূমিকা নেওয়ার এই ইচ্ছা এমন একটা সময়ে তৈরি হচ্ছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চাইছে তার গণতান্ত্রিক অংশীদারেরা বিশ্বজুড়ে নিয়মনির্ভর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আরও বড় ভূমিকা নিক, কারণ এই সময়েই সংশোধনবাদী চিনের উত্থান ঘটছে আর তার পাশে দাঁড়িয়েছে একই–রকম–অসন্তুষ্ট রাশিয়া। পশ্চিমী চিন্তাবিদেরা এবং নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন ভারতের মতো যে সব গণতন্ত্র অতীতে পশ্চিমী নিরাপত্তা কাঠামো থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল, তাদের এখন নিয়মশৃংখলার গুরুত্ব অটুট রাখতে পশ্চিমের সঙ্গে হাত মেলানো প্রয়োজন, তা সে নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থেই হোক বা সর্বজনীন কারণে।

কিন্তু আইনের শাসন ও মুক্ত বাজারের পথ অনুসরণকারী বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্য এই আকাঙ্ক্ষা একদিকে যেমন যথার্থ ও সময়োপযোগী, তেমনই এর মধ্যে একটা নিহিত বৈপরীত্যও আছে। বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃংখলা রক্ষার জন্য তৈরি প্রতিষ্ঠানটিতে স্থায়ী আসন না–পেলে ভারতের পক্ষে কোনও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া সম্ভব নয়। পুরনো রাজ নতুনকে জায়গা করে না–দিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবে না। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রশ্নটি, বিশেষ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রসঙ্গে, ভারতের অতীতের নির্জোট নীতি ও এখনকার বহু–জোট নীতির সঙ্গে পশ্চিমের স্বার্থরক্ষার পুরনো বিতর্কটাকে সামনে নিয়ে আসে। তার পাশাপাশি ভারতে এখন আলোচনা হওয়া প্রয়োজন ক্ষমতার সঙ্গে যে দায়িত্ব আসে তা নিয়ে।

এই আলোচনায় আমরা যুক্তি দিয়ে এটাই দেখিয়েছি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমী মিত্রদের এখন বহুজাতিক মঞ্চগুলিতে ভারতের ভূমিকার পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য কাজ করার পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরে এখন আলাপ–আলোচনার প্রয়োজন দায়িত্বভার নিয়ে। এই বিতর্কগুলো পরস্পরের পরিপূরক:‌ কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর না–হওয়া পর্যন্ত ভারত কী ভাবে তার অতিরিক্ত দায়ভার বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নেবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তার কোনও অর্থ হয় না। একই ভাবে ভারত যে ইচ্ছুক তার স্পষ্ট ইঙ্গিত গেলে সে দায়িত্বশীল অংশীদার হবে কি না তা নিয়ে ভয় কেটে যাবে। এই আলোচনার শেষে আগস্টে ভারতের সভাপতিত্বের সময় বড় বড় কী ঘটনা ঘটেছিল তা দেওয়া আছে।

ভারত মার্কিন স্বার্থ বর্তমান অভিন্নতা

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার জন্য নয়া দিল্লির চাপ ওয়াশিংটনে উস্কে দিয়েছে ভারতের ভবিষ্যৎ আচরণ বনাম মার্কিন স্বার্থ নিয়ে নতুন বিতর্ক। ভারত কি দায়িত্বশীল অংশীদার হবে?‌ আন্তর্জাতিক আঙিনায় ভারতের উত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কতটা বিনিয়োগ করা উচিত?‌ বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি সহযোগী হয়ে উঠতে পারে?‌ বহুপাক্ষিক শাসন ব্যবস্থার শীর্ষ পর্যায়ে ভারতের সবেগে ঢুকে পড়ার সাম্প্রতিক প্রয়াস এই রকম কিছু প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে।

অবশ্যই গত দু’‌দশকে ভারত–মার্কিন অংশীদারিত্ব অনেক দূর এগিয়েছে। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন মিত্র দেশগুলো মার্কিন পন্থা যতটা মেনে চলে ভারত ততটা নয়।[২] এই কারণে মার্কিন নীতিনির্ধারক মহলে ভারতকে নিয়ে ভয় আছে। ভারত বার বার রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে জোট বাঁধায় অনেকে মনে করেন ভারত আধিপত্যবিরোধী জোটের অংশ, যা পশ্চিমী স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। এই ভয়ের খানিকটা অবশ্যই অমূলক, এবং বহু প্রশ্নে আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমেরিকার সঙ্গে মতৈক্য হওয়া সম্ভব। এই সম্ভাবনার কথা বোঝাতে এই নিবন্ধে পাঁচটি প্রস্তাবের রূপরেখা দেওয়া হচ্ছে যা বিশ্বের শাসন ব্যবস্থায় মার্কিন দেশের সম্ভাব্য মিত্র হিসেবে ভারতের জায়গা পোক্ত করবে।

প্রথমত, দেখা দরকার মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (‌এনএসসি)‌–এর প্রাক্তন দক্ষিণ এশিয়া ডিরেক্টর জেনিয়া ডরম্যানডি যা বলেছেন:‌ “ভারতের স্বার্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমান্তরাল হবে, কিন্তু কখনওই অভিন্ন হবে না।”[৩] ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সামরিক সমর্থনপুষ্ট নয় এমন গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকেই সে সমর্থন করবে, যেমন করেছে আফগানিস্তান ও মায়ানমারে। একই সঙ্গে ভারত গায়ের জোরে বা সামরিক শক্তির সাহায্যে অন্য দেশে গণতান্ত্রিক সরকার তৈরি করতেও আগ্রহী নয়। একই ভাবে ভারত ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থামাতে আমেরিকার পাশে দাঁড়ালেও তার জন্য নিজের ভূরাজনৈতিক বা শক্তিক্ষেত্রের স্বার্থহানি করতে রাজি হয় না। অবশ্যই ভারত ক্ষোভের সঙ্গে ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করেছিল,[৪] এবং কখনও কখনও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির সদস্য হিসেবে তেহরানের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল;[৫] কিন্তু কখনওই শুধু এই কারণে ইরানকে অস্পৃশ্য বলে মনে করেনি যে ট্রাম্প প্রশাসন তেহরানের উপর সর্বাধিক চাপ তৈরি করতে চেয়েছিল।[৬]

দ্বিতীয়ত, ভারতের নানা ধরনের আচরণ মূলগত মার্কিন স্বার্থকে আঘাত করে না। ব্যতিক্রম হয়তো শুধুই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক। বিভিন্ন প্রশ্নে ভারতের এখনকার অবস্থান হয়ত খুব উৎসাহজনক ভাবে মার্কিন অবস্থানের সঙ্গে মিলে যায় না, কিন্তু তা পুরোপুরি তার বিরুদ্ধেও যায় না:‌ যেমন চিনকে প্রতিরোধ করা, ইরান ও উত্তর কোরিয়ায় পরমাণু অস্ত্রের প্রসাররোধ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা, একটা নিয়মবিধি–নির্ভর বিশ্বব্যবস্থা তৈরির উপর জোর দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং মুক্ত বাজার গণতন্ত্র প্রসারের চেষ্টা করা। তবে কিছু সংঘাতের জায়গা আছে, যেমন ভারতের বিভিন্ন বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আরও বেশি ভোট–শেয়ারের দাবি এবং দেশীয় শিল্পের জন্য রক্ষাকবচ তৈরির প্রবণতা।

তা ছাড়া ভারত পরমাণু অস্ত্র প্রসাররোধ চুক্তি বা এনপিটি–তে স্বাক্ষরকারী নয়। তা সত্ত্বেও ভারতের অনেক কিছু আমেরিকা এক রকম মেনে নিয়েছে (‌যেমন পরমাণু শক্তিধর হিসেবে ভারতের প্রতিষ্ঠা)‌, অথবা নয়াদিল্লির দাবি মেনে নিয়ে সংঘাতের ক্ষেত্র কমাতে প্রয়াসী হয়েছে (‌যেমন আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার বা আইএমএফ–এ কোটা বাড়ানোর জন্য ভারতের অনুরোধ)‌।[৭]

তৃতীয়ত, ভারতের কৌশলগত নীতিনির্ধারক এলিটদের বহুমেরুবিশিষ্ট পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষা রাশিয়া–সহ অন্য সব শক্তির স্বার্থের কথা মাথায় রাখে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একথা মাথায় রাখা উচিত যে ভারত রাশিয়ার অনুসৃত নানা পদ্ধতি সম্পর্কে আপত্তিও তোলে। যেমন, নয়া দিল্লি যদিও মনে করে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার রাজনৈতিক স্বার্থ বৈধ, এই বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ভারত ভোটদানে বিরত ছিল।[৮] প্রাক্তন সামরিক অফিসার সের্গেই স্ক্রিপালকে বিষ দিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রোহিবিশন অফ কেমিক্যাল ওয়েপন্‌স সংগঠনে ভারত রাশিয়ার পক্ষ নিতে অস্বীকার করেছিল।[৯] রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পশ্চিমের জন্য বহুপাক্ষিক স্তরে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে কাজ করবে। বারাক ওবামার থেকে শুরু করে পরের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে চলার প্রয়োজন বুঝতে পেরেছেন। রাশিয়াকে কোণঠাসা করে চিনের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে পশ্চিমের স্বার্থরক্ষা হবে না। কিন্তু ঘরোয়া রাজনীতির চাপে পশ্চিমের পক্ষে বিশেষ এগিয়ে আসা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে সমুদ্রসংক্রান্ত বিতর্কে চিনের ব্যাপক লবি সত্ত্বেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে উপস্থিত থেকে বুঝিয়ে দেন ভারত আর চিনকে তিনি এক গোত্রে ফেলছেন না। এ থেকে এটাও স্পষ্ট যে ভারতের ‘‌কৌশলগত স্বাধিকার’‌, যা পশ্চিমের এত রাগের কারণ, অনেক সময়েই যথেষ্ট ফলপ্রসূ হতে পারে।[১০]

রাশিয়া, ভারত ও চিনের এক সঙ্গে ভোট দেওয়াটা হল অংশত গ্লোবাল সাউথ বা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সন্তুষ্ট রাখার সমান্তরাল প্রয়াস। চিন সম্প্রতি যে ভাবে আগ্রাসন দেখিয়েছে, তাতে ভারতের আর চিনের সঙ্গে স্বেচ্ছায় জোট বাঁধার সম্ভাবনা প্রায় নেই, আর এখানেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের তফাত। বেজিংয়ের লড়াইয়ের মনোবৃত্তি তাকে প্রতিপক্ষ করে তুলেছে, এবং ভারত বাধ্য হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জে বেজিংয়ের বেড়ে–চলা প্রভাব কমাতে বহুপাক্ষিক স্তরে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের সঙ্গে কাজ করতে। সম্প্রতি চিনের গোপনে রাষ্ট্রপুঞ্জের নথিতে ‘‌শি জিনপিংয়ের চিন্তাভাবনা’‌‌ ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রয়াস ভারতীয়, ইউরোপীয় ও মার্কিন কূটনীতিকরা একযোগে কাজ করে প্রতিহত করেন।[১১]

চতুর্থত, ভারত উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মাঝখানের একটা ‘ধূসর অঞ্চল’–এ রয়েছে‌,[১২];‌ তার এক পা রয়েছে জি৭৭–এ, আর অন্য পা আংশিক ভাবে জি৭–এ।[১৩] ভারতের সঙ্গে যেমন অধিকাংশ জি৭ সরকারের কৌশলগত ও রাজনৈতিক উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তেমনই সে এখনও উন্নয়নশীল পৃথিবীর স্বার্থের কথা সমান ভাবেই তুলে ধরে। যেমন, যদিও নয়া দিল্লি নিজে জলবায়ু লক্ষ্য পূরণে সক্রিয় হয়েছে,[১৪] তার পাশাপাশি উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রবক্তা হিসেবে উন্নত দেশগুলির কাছেও কিন্তু সে বারবার দাবি জানাচ্ছে যাতে অভিযোজন ও ক্ষতিপূরণের জন্য তারা আরও কাজ করে এবং আরও টাকা দেয়। এই নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার পরিবর্তে,[১৫] মার্কিন নীতিনির্ধারকদের উচিত গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্কের ফয়দা তোলা। এই জায়গায় ভারত জমি ছেড়ে দিলে চিন, যে সদস্য না–হয়েও জি৭৭–এর সঙ্গে মিশে থাকে, তাদের পরিত্রাতা হয়ে উঠবে।

পঞ্চমত, প্রতিবেশী চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে পুরনো বিবাদ বাদ দিলে ভারতের সঙ্গে অন্য কারও কোনও সামরিক বিবাদও নেই, এবং কোনও জমি পুনরুদ্ধারের আগ্রহও ভারতের নেই। যে হেতু ভারতের বিবাদের ভূগোল সীমিত, তাই সে ক্ষমতার অপব্যবহার করবে এমন সম্ভাবনাও কম। এর অর্থ দাঁড়ায় ভারতের ভূরাজনৈতিক বাধা কম, এবং সেই কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে সে তুলনায় অধিকতর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে সক্ষম। এটাও গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্যণীয় যে তার এখনকার বিবাদগুলোতে সে পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের হস্তক্ষেপে বাধা দেয়।

ভারত সম্পর্কে মার্কিন মূল্যায়নে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হলে ভারতের সঙ্গে আলোচনা আরও ফলপ্রসূ ও বাস্তবসম্মত হতে পারে। এর ফলে ভারতকে মার্কিন জোটের কেন্দ্রীভূত শরিক হিসেবে না–পাওয়ার কারণে যে অযাচিত হতাশা তৈরি হতে পারে, তাও দূর হবে।

এই আলোচনার পরের অংশে যাওয়ার আগে বিশ্বের নানা দেশের রাজধানীতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার নিয়ে বিতর্কের কতটা অবকাশ আছে, তা দেখে নেওয়াও দরকার। অনেক সময়েই নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের প্রশ্নটিকে শুধু প্রতিনিধিত্বের আলোয় দেখা হয়। সেটা যদিও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু পরিষদের কার্যকর ভূমিকার পথে সেটাই একমাত্র বাধা নয়। একই সঙ্গে ভাবতে হবে অর্থসংস্থান ও অগ্রাধিকারের পুনর্বিন্যাস, এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথাও। এখন প্রায় সব বিশ্বজনীন শাসন–প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকার সংস্থান খুবই কম। নিয়মিত ভাবে অর্থ প্রদানের যে সব অঙ্গীকার করা হয়, তা মানা হয় না। সেই জন্যই রাষ্ট্রপুঞ্জ যাতে তার ন্যূনতম কাজ চালাতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে মহাসচিবকে বিভিন্ন দেশের কাছে আবেদন জানাতে হয় বকেয়া টাকা দেওয়ার জন্য।[১৬] আরও অনেক সাধারণ চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে— জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড–১৯ অতিমারি, গণবাস্তুচ্যুতি ও স্থানান্তরে গমন, এবং সংঘর্ষ। সদস্য দেশগুলি অর্থের সংস্থান না–করে বৈশ্বিক শাসন-ব্যবস্থা থেকে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা পরিষদে আরও সদস্যের অন্তর্ভুক্তির অর্থ এই নয় যে সব সমস্যা মিটে গেল। তার জন্য প্রয়োজন নিরাপত্তা পরিষদের বিষয়বস্তুগত ভাবে প্রসারিত ও ভৌগোলিক ভাবে নবায়িত ‘‌সংঘর্ষ’‌ সম্পর্কিত নতুন ধারণা অনুধাবন করা। অর্থনৈতিক ভরকেন্দ্র যেমন এখন চলে গিয়েছে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, তেমনই বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলোও। উদাহরণ হিসেবে বস্তুগত ভাবে সাইবার দুনিয়া এখন ততটাই বিপদের কারণ যতটা চিরাচরিত সংঘর্ষগুলো।

এর অর্থ প্রতিনিধিত্ব বিতর্ক খাটো করা নয়। ভারতের মতো উদীয়মান দেশগুলিকে না–নিয়ে এই সব চ্যালেঞ্জের অনেকগুলিরই মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির দক্ষতার অভাব পথ করে দিচ্ছে ‘‌সীমিত সংখ্যক পক্ষ (‌প্লুরিলেটারাল)‌ ও খুবই কম সংখ্যক পক্ষ (‌মিনিলেটারাল)‌ নিয়ে তৈরি মঞ্চগুলির… [যাদের] শুধু চিরাচরিত নিরাপত্তাজনিত প্রশ্নগুলির মোকাবিলায় আরও কার্যকর ও দক্ষ হিসেবেই দেখা হচ্ছে না, অ–চিরাচরিত ক্ষেত্রেও’‌ একই ভাবে সমর্থ হিসেবে দেখা হচ্ছে।[১৭] রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ যদি না নিরাপত্তা সংক্রান্ত বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এবং প্রতিনিধিত্ব, অর্থসংস্থান ও অগ্রাধিকারের পুনর্বিন্যাসের ইস্যুগুলির মোকাবিলা করতে পারে, তবে অনেকটা শূন্যতা তৈরি হবে, যা পূরণ করতে এগিয়ে আসবে কতগুলি বিভিন্ন ধরনের আগ্রহী শক্তির জোট।

অধিকার বনাম দায়িত্ব

এই লেখায় আগেই বলা হয়েছে ওয়াশিংটন ও অন্য পশ্চিমী দেশগুলির রাজধানীতে বিশ্ব শাসনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন। একই সঙ্গে নয়া দিল্লিতেও নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের আসনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব নিয়ে। ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষার মধ্যে একটা অধিকারবোধের ছোঁয়া আছে। নয়া দিল্লি মনে করে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে, শান্তিরক্ষায় তার ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে, এবং তার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ওজনের জন্যই তার নিরাপত্তা পরিষদের টেবিলে থাকা উচিত। এই পরিপ্রেক্ষিত থেকে যা বাদ পড়ে যাচ্ছে তা হল দায়িত্বের দিকটার গুরুত্ব—অর্থনৈতিক, বস্তুগত ও রাজনৈতিক— যা কিনা এই ধরনের উত্তরণের জন্য আবশ্যিক। যেমন রাষ্ট্রপুঞ্জের কাজকর্ম চালানোর জন্য মোট ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিশাল বাজেটের মধ্যে ভারত দেয় ২ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। ভারত কি আরও আর্থিক দায়ভার বহন করতে ইচ্ছুক এবং সক্ষম?‌ নিয়মিত হিসাবনির্দিষ্ট চাঁদা ছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যেরা বিরাট পরিমাণ টাকা দেয় স্বেচ্ছায়। ভারতকে তার আকাঙ্ক্ষা ও দায়িত্বের সমন্বয়সাধন করতে হবে। ভারতের পরিপ্রেক্ষিত থেকে দেখলে স্থায়ী সদস্যের আসনে যাওয়ার পথে বাধা হল পদ্ধতিগত ও রাজনৈতিক, যা অতিক্রম করা সম্ভব অবিরত নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের জন্য চাপ তৈরি করে ও নিজের আন্তর্জাতিক আকর্ষণ বাড়িয়ে।

বহুপাক্ষিকতার প্রসঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক চিন্তাধারায় ‘‌তৃতীয় বিশ্ব’‌ প্রাধান্য পেলেও, নিরাপত্তা পরিষদের আসনের জন্য বাকি বিশ্বের সমর্থন জোগাড়ের প্রয়াস এবং কাশ্মীর সংঘর্ষ তার রাজনৈতিক চিন্তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় নির্জোট নীতির অনুসারী ভারত এখন ইস্যুভিত্তিক জোটের পথে হাঁটে, এবং কোনও একটি ব্লকের সঙ্গে ক্রমিক একাত্মীকরণ এড়িয়ে চলে। তা ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের আসনের জন্য দাবিতে সর্বাধিক সমর্থন জোগাড়ের জন্য নয়া দিল্লি এমন কোনও অবস্থান না নিতে চেষ্টা করে যাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের কোনও বড় শক্তি অসন্তুষ্ট হয়, যাতে তার অবস্থানের ফলে কারও স্বার্থে আঘাত না–লাগে। কাজেই রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোট দানের ক্ষেত্রে ভারতের বিরত থাকার ঘটনা বিবেচিত হয় তার ডিফল্ট চয়েস হিসেবে।[১৮]

এই ঝুঁকি না–নেওয়া, জোট না–বাঁধার কৌশল আন্তর্জাতিক শুভকামনা অর্জন করতে যেমন সক্ষম হয়েছে, তেমনই কাশ্মীরে ভূখণ্ডগত দাবির মতো নিজস্ব স্বার্থের মূল বিন্দুগুলোতে বাকি বিশ্বের কিছুটা সমর্থনও জোগাড় করেছে।[১৯] কিন্তু এই কৌশল পশ্চিমী অংশীদারদের কাছে এমন সঙ্কেত পাঠাতে পারেনি যে ভারত কড়া অবস্থান নিতে আগ্রহী, এমনকি তেমন খারাপ পরিস্থিতিতে দরকার পড়লে অন্যদের অসন্তুষ্ট করেও। তবে ভারত সম্ভবত স্থায়ী সদস্য না–হওয়া পর্যন্ত তার সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ‘‌স্বর্ণালী নীরবতা’‌র পথ বদলাবে না।[২০] তা সত্ত্বেও বিশ্বের মঞ্চে কাজ করা হল একটা রাজনৈতিক দায়িত্ব, এবং ভারতের কৌশলগত চিন্তাবিদদের ভারতের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আরও জোরালো মতামত দেওয়া উচিত। অবশ্যই সেই রাজনৈতিক আচরণ হতে হবে এই অঞ্চলে এবং তা অতিক্রম করে আরও দূরে দেশের স্বার্থের অনুসারী। এই ধরনের কথোপকথন না হলে গুরুতর দায়িত্ব নেওয়ার আগে নয়া দিল্লির কৌশলগত ভাবনাচিন্তার যে ধরনের গভীরতা প্রয়োজন, তা তৈরি হবে না।

এই সময়টার মধ্যে ভারত অবশ্য অন্তত আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হিসেবে কাশ্মীরের ঊর্ধ্বে কী ভাবে উঠতে হবে তা শিখে নিতে পারে। যেমন ভারত আরিয়া ফর্মুলা বৈঠক (‌নিরাপত্তা পরিষদের ঘরোয়া আলোচনা)‌ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে ওই মঞ্চটি অপব্যবহার করতে শুরু করার পর থেকে।[২১] কিন্তু ভারত যদি সত্যিই প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হতে চায়, তা হলে তার অন্যের বিরূপ ব্যবহার নিয়ে এত সহজে এত মাথা ঘামানো চলে না। এস্তোনিয়া যখন রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সপ্তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য আরিয়া ফর্মুলা বৈঠকের আয়োজন করেছিল, তখন রাশিয়া তাতে অংশ নিয়েছিল ঘটনাটা তার পক্ষে অত্যন্ত অরুচিকর হওয়া সত্ত্বেও। রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার মিশন পরে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের বৈঠক ডেকেছিল। পুরনো পথ পেছনে ফেলে ভারতেরও এখন উচিত এই ধরনের ঘরোয়া বৈঠক এড়িয়ে না–গিয়ে বরং সেগুলোকে কূটনীতির সৃজনশীল সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো। নিজের মর্যাদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু ও অংশীদারদের কাছ থেকে আরও যাচাইয়ের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ভারতের তৈরি থাকা উচিত।

ভারতের কূটনীতিকেরা তাদের যৌথ ইস্তাহারগুলোর জন্য সমর্থন জোগাড় করতে কঠোর প্রয়াস করে থাকেন। একই ভাবে তাঁদের কথাবার্তা শুরু করা উচিত নিউ ইয়র্কে অশ্বখুরাকৃতি টেবিলে ভারত স্থায়ী ভাবে বসতে শুরু করলে উদীয়মান নয়া দিল্লির কাছে অন্যদের প্রত্যাশা কী হবে তা নিয়ে। মন্ত্রকের ভেতরে, এবং বাইরে নীতিপ্রণেতা মহলে, এই ধরনের আলাপ–আলোচনা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার নিয়ে কথাবার্তার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, নীতিপ্রণেতারা ভারতের মতো গণতন্ত্রের উপর বাজি ধরে ঠিকই করেছেন। তা সত্ত্বেও ভারত পূর্ব এশিয়ার প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রগুলোর মতো (‌যেমন জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়া) ‌হবে এমন প্রত্যাশা বহুপাক্ষিক, এবং হয়তো কৌশলগত, প্রয়াসের ক্ষেত্রেও হতাশাজনক ও অকার্যকর। আনুষ্ঠানিক জোটসঙ্গী হিসেবে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া স্বচ্ছন্দ ভাবে নিজেদের ঠিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশেই রেখেছে একগুচ্ছ বিশ্বজনীন শাসন সংক্রান্ত প্রশ্নে, যেমন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা, প্রসাররোধ চুক্তিসমূহ, শর্তসাপেক্ষ ঋণশোধে ছাড়, অথবা এমনকি কোনও জমানা বদলানোর জন্য ব্যবস্থাগ্রহণ।[২২] ভারত এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক জোটের বিরুদ্ধে।‌ সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের সঙ্গে এক পংক্তিতেই বসবে, কিন্তু একটু দূরে। তৎসত্ত্বেও ভারত কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং পশ্চিমের স্বার্থ নিয়ে ভাবে, এবং তা দেখা গিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের প্রশ্নে তার বিবর্তনশীল, গঠনমূলক অবস্থান থেকে।

যদিও ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়া দিল্লির এখনকার মতানৈক্যের কারণ অবশ্যই পরস্পরবিরোধী স্বার্থ, এই দুই সরকারের ভিন্নতার জায়গাগুলো কিন্তু বেজিংয়ের আগ্রাসী বৈরিতার সামনে তুচ্ছ। অর্থনীতির উত্থান ঘটতে থাকা ও পশ্চিমের সঙ্গে নৈকট্য বাড়তে থাকার সময়ে নয়া দিল্লির স্বার্থও বিবর্তিত হবে। এখনকার মতো ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে একটা সংক্ষিপ্ত জোট আছে, যার অর্থ ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সমগ্রতার বাহক হবে না;‌ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যা মূল স্বার্থ সেই বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা ধরে রাখার প্রয়াসের বিরোধিতাও করবে না।

এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে নয়া দিল্লির উচিত অবিরত ওয়াশিংটনের কাছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের বিষয়টি তোলা, এবং ওয়াশিংটনের উচিত শুধু কূটনৈতিক রুটিনমাফিক দ্বিপাক্ষিক বিবৃতিতে ভারতের দাবির সমর্থনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না–থেকে এর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা। প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারের সদিচ্ছার কোনও প্রকৃত ইঙ্গিত ছাড়া নয়া দিল্লির কাছে ‘দায়িত্বশীল অংশীদার’‌ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার দাবি জানানোটা বাড়াবাড়ি। আগস্টে ভারতের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব ভাল ভাবেই দেখিয়ে দিয়েছে কী ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের স্বার্থ অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের থেকে অভিন্ন। সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো অভিন্ন বিপদ যত বাড়বে, এবং পুরনো ব্যবস্থা যত ভেঙে পড়তে থাকবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে উভয়ের স্বার্থে, এবং অন্যান্য যাদের স্বার্থ জড়িত তাদের জন্যও, ভারতের মতো অংশীদারকে স্থায়ী ভাবে নিরাপত্তা পরিষদে আনার কথা।


লেখকদের সম্পর্কে

অধ্যাপক হর্ষ ভি পন্থ হলেন ডিরেক্টর অফ স্টাডিজ অ্যান্ড হেড, স্ট্র‌্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্র‌্যাম, ওআরএফ।
চিরায়ু ঠক্কর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর ও লন্ডনের কিং’‌স কলেজ–এ জয়েন্ট ডকটরাল ক্যান্ডিডেট।


সংযোজনী

পরিশিষ্ট ক: ভারতের ইউএনএসসি সভাপতিত্ব, আগস্ট ২০২১

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ২০২১–এর আগস্ট মাসে ভারতের সভাপতিত্ব আগেকার তুলনায় ছিল এযাবৎ কালের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী কর্মসূচি। ভারতের স্থায়ী মিশন তিনটি সিগনেচার ইভেন্ট আয়োজন করে, এবং ১৪ টি ‘‌আউটকাম ডকুমেন্টস’‌ তৈরি করে। তিনটি ইভেন্ট আয়োজিত হয়েছিল সামুদ্রিক নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা বাহিনী ও মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে, আর এগুলিতে সভাপতিত্ব করেছিলেন যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিদেশমন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর ও বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শৃংলা। ঠিক দশ বছর আগে ২০১১–র আগস্টে ভারত পরিষদের সভাপতিত্ব করেছিল। সেই সময় একটাই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, দুটো সভাপতির বিবৃতি জারি হয়েছিল এবং আটটি প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল।[২৩] আর এবার ২০২১ আগস্ট সভাপতিত্বের সময় ভারত গ্রহণ করেছে পাঁচটি প্রস্তাব, জারি করেছে তিনটি সভাপতির বিবৃতি ও পাঁচটি প্রেস বিবৃতি দিয়েছে।

সিগনেচার ইভেন্টস:

(১) সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাড়ানো: আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি দলিল

তিনটির মধ্যে এই ইভেন্টটিই সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল। এর সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি নিরাপত্তা পরিষদের কোনও বৈঠকে সভাপতিত্ব করলেন। আফ্রিকান ইউনিয়নকে ডাকা হয়েছিল এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের উপপ্রধানমন্ত্রী। রাশিয়া, কেনিয়া, ভিয়েতনাম ও নাইজারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সরকারের প্রধানরা। বাকি স্থায়ী ও নির্বাচিত সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী বা সমমর্যাদার ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা। শুধু চিন ও তিউনিশিয়ার তরফে ছিলেন তাদের রাষ্ট্রপুঞ্জের রাষ্ট্রদূতেরা। এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব বৈঠকের গুরুত্ব অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদী সামুদ্রিক নিরাপত্তার পাঁচ নীতির ধারণা সামনে এনেছিলেন।[২৪]

(২) সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের ফলে আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তার বিপদ

বিদেশমন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছিলেন যার বিষয়বস্তু ছিল আফ্রিকা থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত ব্যাপ্ত বিশ্বজনীন ইস্যু হিসেবে সন্ত্রাসবাদ। তিনি দেশের হয়েও এই বৈঠকে বক্তব্য পেশ করেন এবং সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আট দফা কর্মসূচি উপস্থাপিত করেন।[২৫]ভারত আবার সদস্য দেশগুলিকে আহ্বান জানায় “কমপ্রিহেনসিভ কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল টেররিজম” গ্রহণ করতে। নয়া দিল্লি বহু বছর ধরে এই কথা বলে আসছে। পরিষদের ১৫ সদস্যই জানায় কী ভাবে তাদের দেশ সন্ত্রাসে আক্রান্ত, এবং এর মোকাবিলা কী ভাবে করা যায় তা নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে। দেশের প্রতিনিধিরা ছাড়া সেখানে ছিলেন তিন ডিব্রিফার:‌ (‌১) ‌ভ্লাদিমির ভোরোনকভ, আন্ডার–সেক্রেটারি–জেনারেল ফর কাউন্টার টেররিজম, (‌২)‌ মিশেল কনিনস্‌ক্স, রাষ্ট্রপুঞ্জের কাউন্টার টেররিজম কমিটির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর, এবং (‌৩)‌ দাভুদ মোরাডিয়ান, আফগান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র‌্যাটেজিক স্টাডিজ–এর ডিরেক্টর জেনারেল। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের আইএসআইএল সংক্রান্ত সর্বশেষ রিপোর্টও আলোচিত হয়েছিল।[২৬]

(৩) প্যালেস্তাইন প্রশ্ন–সহ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রক্রিয়া

ভারত নিজের সভাপতিত্ব শেষ হওয়ার একদিন আগে তৃতীয় ইভেন্টটির আয়োজন করেছিল। বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শৃংলা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শুরু হয় মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ার স্পেশাল কোঅর্ডিনেটর ও মহাসচিবের ব্যক্তিগত প্রতিনিধি টোর ওয়েনেসল্যান্ডের ডিব্রিফিং দিয়ে। তিনি ইজরায়েল ও গাজার মধ্যে সাঙ্ঘাতিক লড়াইয়ের তিন মাস পরে সেই অঞ্চলের ধ্বংস ও পুনরুদ্ধারের প্রয়াস সম্পর্কে অবহিত করেন। ১৫ সদস্যের সকলেই ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন সঙ্ঘাত নিয়ে নিজেদের দীর্ঘকালীন অবস্থান অনুযায়ী নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেন। বিদেশসচিব আবার ইজরায়েলের পাশাপাশি একটি প্যালেস্তাইন রা্ষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন।[২৭]

সভাপতির বিবৃতি:

সভাপতির বিবৃতিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ সংজ্ঞায়িত করেছে এই বলে যে তা “নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির পরিষদের তরফে দেওয়া একটি বিবৃতি, যা পরিষদের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে গৃহীত হয় এবং পরিষদের সরকারি বিবৃতি হিসেবে জারি করা হয়।” ভারত নিজের সভাপতিত্বের সময় নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলি জারি করেছিল:

• সুদান ও দক্ষিণ সুদান নিয়ে মহাসচিবের রিপোর্ট (S/PRST/2021/14)
• আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা (S/PRST/2021/15) [সামুদ্রিক নিরাপত্তা]
• পশ্চিম আফ্রিকায় শান্তি ও সংহতি (S/PRST/2021/16)
• রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা কর্মসূচি (S/PRST/2021/17)

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবসমূহ:

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাবের সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করেছে ‘‌রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন সংগঠনের মত বা ইচ্ছার আনুষ্ঠানিক অভিব্যক্তি’‌ হিসেবে। ভারতের সভাপতিত্বের সময় নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলি সম্মিলিত ভাবে গৃহীত হয়েছিল:

• রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা কর্মসূচি S/RES/2589(2021)
• মালির পরিস্থিতি S/RES/2590(2021)
• মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি S/RES/2591(2021)
• সোমালিয়ার পরিস্থিতি S/RES/2592(2021) [Extension of UNSOM]
• আফগানিস্তান পরিস্থিতি S/RES/2593(2021)

প্রেস বিবৃতি:

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে প্রেস বিবৃতি জারি একটা রুটিন ঘটনা, যার মাধ্যমে পরিষদের কাজকর্ম সম্পর্কে পৃথিবীকে অবহিত করা হয়। তা ছাড়া সভাপতির কাছে এটা একটা সুযোগ নিয়ে আসে ঘরোয়া বা আনুষ্ঠানিক বিশদ আলোচনার আগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার সেই নির্দিষ্ট প্রশ্নটিতে নিজের মতামত জানানোর। ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের মূল নীতির অনুসারী এমন একটি প্রেস বিবৃতিতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হানার নিন্দা করেছিল। যে বিবৃতিগুলো রুটিনমাফিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হয় তা বাদে ভারতের সভাপতিত্বের সময় নিম্নলিখিত প্রেস বিবৃতিগুলি জারি করা হয়েছিল:

• আফগানিস্তানে হিংসা বৃদ্ধি (SC/14592)
• পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসবাদী হানা (SC/14597)
• আফগানিস্তান পরিস্থিতি (SC/14604)
• আইএসআইএল/দায়েশ সম্পর্কিত বিবৃতি (SC/14609)
• কাবুল বিমানবন্দরের কাছে সন্ত্রাসবাদী হানা (SC/14615)


Endnotes

[১] “মোদি ফার্স্ট ইন্ডিয়ান পিএম টু প্রিসাইড ওভার ইউএন সিকিউরিটি কাউন্সিল মিটিং” হিন্দুস্থান টাইমস, ১ আগস্ট, ২০০১। বিতর্কের শেষে ভারত নিরাপত্তা পরিষদের তরফে সভাপতির বিবৃতি জারি করেছিল।
[২] চিরায়ু ঠক্কর, ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ইউনাইটেড স্টেট্‌স: ফ্রেন্ডস এভরিহোয়্যার, ফোজ অ্যাট দ্য ইউএন। স্টিমসন সেন্টার পলিসি মেমো, ২০২০
[৩] জেনিয়া ডরম্যান্ডি “ইজ ইন্ডিয়া, অর উইল ইট বি, আ রেসপনসিব্‌ল ইন্টারন্যাশনাল স্টেকহোল্ডার?” দ্য ওয়াশিংটন কোয়ার্টারলি, ৩০(৩) (২০০৭): ১১৭-১৩০।
[৪] “ইউএস ডেডলাইন এন্ডস, ইন্ডিয়া স্টপ্‌স পারচেজিং ইরানিয়ান অয়েল”, ইকনমিক টাইমস, মে ২৪, ২০১৯।
[৫] “ইন্ডিয়া ভোট্‌স এগেন্স্‌ট ইরান ইন আইএইএ রেজলিউশন”, দ্য হিন্দু, নভেম্বর ২৭, ২০০৯।
[৬] “ট্রাম্প অ্যাবানডনস ইরান নিউক্লিয়ার ডিল হি লং স্কর্‌নড।” দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ০৮ মে, ২০১৮।
[৭] এই প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মতের জন্য:‌ হর্ষ ভি পন্থ ও চিরায়ু ঠক্কর, “দ্য ইউএস–ইন্ডিয়া রিলেশনশিপ ইজ দ্য কোয়াড্‌স লিটমাস টেস্ট,” ফরেন পলিসি, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১।
[৮] “রাশিয়া হ্যাজ লেজিটিমেট ইন্টারেস্টস ইন ইউক্রেন: শিবশঙ্কর মেনন।” বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, মার্চ ০৬, ২০১৪।
[৯] “ইনডিয়া অ্যাবস্টেনস অন ভোটিং ফর প্রোপোজাল অন ইউকে স্পাই কেস এট দ্য হেগ।” ইকনমিক টাইমস, এপ্রিল ০৫, ২০১৯।
[১০] “পুটিন্‌স প্রেজেন্স ইন ইউএন ডিবেট অন মেরিটাইম সিকিউরিটি আন্ডারলাইনস ইন্ডিয়া’জ স্ট্র‌্যাটেজিক অটোনমি।” ইকনমিক টাইমস, আগস্ট ১৬, ২০২১।
[১১] “ইন্ডিয়া-ইউএস-ইইউ কম্বাইন হল্ট্‌স চায়না’‌জ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ অ্যাট দ্য ইউএন।” দ্য ওয়্যার, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮।
[১২] ভারত, নয়া দিল্লি, “জিওআই এগ্রিজ উইথ ইউএন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ,” উইকিলিক্‌স কেব্‌ল: 06NEWDELHI4827_a. Dated July 10, 2006.
[১৩] অ্যালিসা আইরেস, “ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য জি7।” কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস ব্লগ, জুন ০৪, ২০২০. (accessed October 01, 2020)
[১৪] ক্লাইমেট ট্র‌্যান্সপারেন্সি, ক্লাইমেট ট্র‌্যান্সপারেন্সি রিপোর্ট ২০২০।
[১৫] কারা সি ম্যাকডোনাল্ড অ্যান্ড স্টিউয়ার্ড এম প্যাট্রিক, ইউ এন সিকিউরিটি কাউন্সিল এনলার্জমেন্ট অ্যান্ড ইউএস ইনটারেস্ট, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্‌স স্পেশাল রিপোর্ট নং ১০, ২০১০।
[১৬] “ইউএন ইন ক্যাশ ক্রাইসিস ফ্রম আনপেড ডিউজ, সেক্রেটারি জেনরেল সেজ।” এবিসি নিউজ, এপ্রিল ০৩, ২০২০।
[১৭] হর্ষ ভি পন্থ, কাউন্সিল অফ কাউন্সিলস গ্লোবাল মেমো, গ্লোবাল পার্‌সপেকটিভস:‌ দ্য ইউএন টার্নস সেভেন্টি–ফাইভ। হিয়ার্‌স হাউ টু মেক ইট রেলেভ্যান্ট এগেন। সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০।
[১৮] অশোক মালিক, “আ কেস ইন অ্যাবস্টেনশিয়া।” প্রগতি, (২০১২।.
[১৯] রেখা দীক্ষিত, “স্ক্র‌্যাপিং অফ আর্টিক্‌ল ৩৭০: মেজার্‌ড রিঅ্যাকশনস ফ্রম ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি।” দ্য উইক, (২০১৯).
[২০] সি রাজা মোহন, “ইন্ডিয়া’‌জ স্ট্র‌্যাটেজিক ফিউচার।” ফরেন পলিসি, নভেম্বর ০৪, ২০১০।
[২১] নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আরিয়া ফর্মুলা বৈঠক ভারতের পক্ষে পুরোপুরি বয়কট করা সম্ভব নয়। তা হলেও সাধারণত একজন ভারতীয় কূটনীতিক বক্তৃতা শুরু করেন ‘‌এই ফরম্যাটের বৈঠক যা সাম্প্রতিক অতীতে অপব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে ভারতের আপত্তি’‌ দিয়ে। পাকিস্তানের আরিয়া ফর্মুলা বৈঠককে কাশ্মীরের জন্য অপব্যবহারের চেষ্টা ও ভারতীয় কূটনীতিকদের সক্রিয় বিরোধিতার বিষয়ে জানার জন্য দেখুন ঘারেখান, চিন্ময় (‌২০০৬)‌। দ্য হর্সশ্যু টেব্‌ল:‌ অ্যান ইনসাইড ভিউ অফ দ্য ইউএন সিকিউরিটি কাউন্সিল। নয়া দিল্লি:‌ পিয়ারসন এজুকেশন।
[২২] দেখুন তুলনামূলক লেখচিত্র, চিরায়ু ঠক্কর, ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ইউনাইটেড স্টেটস।
[২৩] তৎকালীন ভারতীয় পিআর হরদীপ পুরীর চিঠি।
[২৪] প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তৃতার টেক্স্ট।
[২৫] বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের বক্তৃতার টেক্স্ট।
[২৬] ইউএনএসজি–র আইএসআইএল রিপোর্ট।
[২৭] বিদেশসচিব শৃংলার বক্তৃতার টেক্স্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Chirayu Thakkar

Chirayu Thakkar

Chirayu Thakkar is a joint doctoral candidate at the National University of Singapore and Kings College London.

Read More +