Published on Aug 04, 2022 Updated 0 Hours ago

ভারত তার কর্মসূচিতে নাগরিক সমাজ সংগঠন এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির সুদৃঢ়করণের প্রয়োজনীয়তার উপরে জোর দিয়েছে।

ব্রিকস-এ আন্তঃসহযোগিতা এবং চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা

এ বছরের শীর্ষ সম্মেলন ইন পারসন ফরম্যাট বা প্রতিনিধিদের শারীরিক ভাবে উপস্থিতিতে হতে পারে… প্রাথমিক ভাবে এমন জল্পনা শোনা গেলেও পরিশেষে ভার্চুয়াল সমাবেশের সিদ্ধান্ত অন্ততপক্ষে ভারতের জন্য এক অমীমাংসিত সীমান্ত সংঘাতের মাঝে চিনা প্রতিনিধির সরকারি সফরের আশঙ্কা থেকে মুক্তি দিয়েছে। এই বছরেরটি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ১৪তম সংস্করণ এবং এ নিয়ে পরপর তিন বছর এই সম্মেলনটি ২৩-২৪ জুন ভার্চুয়াল ভাবে আয়োজিত হল। এই অধিবেশনে আন্তর্জাতিক উন্নয়নের নিরিখে উচ্চ পর্যায়ের কথোপকথন চলে।

শীর্ষ সম্মেলনটিতে পাঁচটি সদস্য দেশই বৈশ্বিক প্রশাসনের শক্তিশালীকরণ এবং সংস্কার, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সংহতি প্রদর্শন, শান্তি ও নিরাপত্তা অটুট রাখা, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রচার, স্থিতিশীল উন্নয়নের ২০৩০ সালের কর্মসূচির বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করা, মানুষে মানুষে আদানপ্রদান বাড়ানো এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের প্রচার সংক্রান্ত ক্ষেত্রে একজোট হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা তাদের ব্যক্তিগত অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরতেও পিছপা হয়নি। শীর্ষ অধিবেশনটি চলাকালীন সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতা, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, প্রথাগত বা চিরাচরিত ওষুধ, পরিবেশ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, কৃষি, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় সংস্কার, কোভিড-১৯ অতিমারি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মতো আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এ বছর ভারতের ব্রিকস স্টার্ট আপ ইভেন্ট আয়োজন করার ঘোষণা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট আপ বাস্তুতন্ত্র হিসেবে তার অবস্থানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এবং এই পদক্ষেপ ভারতকে গ্লোবাল সাউথ ইনোভেশন ড্রাইভ বা উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের শীর্ষে জায়গা করে দিতে পারে।

বিশেষ করে, ভারত সমাবেশটিতে অংশগ্রহণ করে ব্রিকস-এর নিজস্ব চরিত্র, ব্রিকস নথি সংক্রান্ত অনলাইন ডেটাবেস তৈরি করা, একটি ব্রিকস রেলওয়েজ রিসার্চ নেটওয়ার্ক এবং ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলির মধ্যে আন্তঃসহযোগিতার সশক্তিকরণের প্রয়োজনীয়তার উপরে জোর দিয়েছে। এই সব পদক্ষেপের প্রধান লক্ষ্য হল সংযোগ ব্যবস্থায় নির্বিঘ্নতা সুনিশ্চিত করা এবং সদস্য দেশগুলির মধ্যে সরবরাহ শৃঙ্খলে অনুমানযোগ্যতার সঞ্চার করা।

সর্বোপরি, এ বছর ভারতের ব্রিকস স্টার্ট আপ ইভেন্ট আয়োজন করার ঘোষণা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট আপ বাস্তুতন্ত্র হিসেবে তার অবস্থানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এবং এই পদক্ষেপ ভারতকে গ্লোবাল সাউথ ইনোভেশন ড্রাইভ বা উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের শীর্ষে জায়গা করে দিতে পারে। এর পাশাপাশি ভারত তার কর্মসূচিতে নাগরিক সংগঠন এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সশক্তিকরণের প্রয়োজনীয়তার উপরে জোর দিয়েছে। এ ছাড়াও জোটের সদস্য দেশগুলি চারটি সুবিশাল মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার দরুন এবং অতিমারি পরবর্তী ব্যাঘাতের জন্য সংযোগবৃদ্ধির গুরুত্বের উপরে আলোকপাত করেছে। যে উপায়ে কোভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য ব্রিকস আন্তঃসহযোগিতা দীর্ঘমেয়াদি বা ফলপ্রসূ হতে পারে, সেটি হল ওষুধ সংক্রান্ত পণ্যের প্রয়োজনীয়তার অভিন্ন স্বীকৃতি, যা জোট দেশগুলির মধ্যে একটি কার্যকরী প্রক্রিয়া হওয়া উচিত।

পারস্পরিক সহযোগিতার অন্য যে সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি নিয়ে আলোচনা হয়, সেগুলি হল কোভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধার, ব্রিকস-এর প্রসার বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল মহাকাশ আন্তঃসহযোগিতা। ব্রিকস দেশগুলির জন্য সাম্প্রতিক কালে মহাকাশ আন্তঃসহযোগিতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের গঠন সদস্য দেশগুলির মধ্যে রিমোট সেন্সিং এবং তথ্য বণ্টনের প্রক্রিয়ার অগ্রগতির ক্ষেত্রে ১৪তম শীর্ষ সম্মেলনের যথার্থ পূর্বাভাস রূপে কাজ করেছে। ব্রিকস-এর সম্ভাব্য প্রসার নিয়ে আলোচনা চলতে থাকলেও ব্রিকস আউটরিচ এবং ব্রিকস প্লাস কোঅপারেশনের প্রচার অন্যান্য উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মূল মর্মের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।

ব্রিকস দেশগুলির জন্য সাম্প্রতিক কালে মহাকাশ আন্তঃসহযোগিতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের গঠন সদস্য দেশগুলির মধ্যে রিমোট সেন্সিং এবং তথ্য বণ্টনের প্রক্রিয়ার অগ্রগতির ক্ষেত্রে ১৪তম শীর্ষ সম্মেলনের যথার্থ পূর্বাভাস রূপে কাজ করেছে।

এই আপাত অভিন্নতা সত্ত্বেও অতীতে ব্রিকস সদস্য দেশগুলির মধ্যে বিতর্কের কারণ এবং প্রতিবন্ধকতা ক্রমশ দানা বেঁধেছে এবং এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারত ন্যায্যতই ব্রিকস সদস্য দেশগুলির একে অন্যের নিরাপত্তার উদ্বেগগুলি নিয়ে অধিকতর সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপরে জোর দিয়েছে, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়গুলির ক্ষেত্রে। পাকিস্তানে বসবাসকারী লস্কর-ই-তৈবার নেতা আবদুল রহমান মাক্কিকে এক জন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার ভারত এবং আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রয়াসে চিনের বাধাদান করার ঘটনা এ ক্ষেত্রে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে।

ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চিন-ভারত দ্বৈরথ

রাজনৈতিক ও ডিজিটাল উভয় পরিসরেই একটি বিভক্ত বৈশ্বিক প্রশাসনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেলেও ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী পর্যায়ের ব্রিকস-এর জন্য চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্রিকস-এর অভ্যন্তরেই রাশিয়া-ভারত, ভারত-চিন এবং চিন-রাশিয়া সম্পর্কগুলি দ্বিপাক্ষিক অগ্রাধিকার এবং চ্যালেঞ্জের সূক্ষ্ম প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। রাশিয়া যেহেতু পাশ্চাত্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত পদ্ধতিগুলির বাইরে গিয়ে নতুন প্রক্রিয়াগুলির উপরে নির্ভর করতে বাধ্য হবে, তাই বৈশ্বিক প্রশাসন এবং অর্থায়নের জন্য ব্রিকসকে নতুনতর কর্মসূচির কথা ভাবতে হবে।

২০০৮ সালের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম ‘ব্রিক’ জোট গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমি ভূ-রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এবং সিদ্ধান্তের ডমিনো প্রভাব থেকে মুক্ত একটি স্থিতিস্থাপক গ্লোবাল সাউথ আন্তঃসহযোগিতা প্রক্রিয়ার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব নির্দেশ করা। ২০১৪ সালে জি-এইট থেকে রাশিয়ার বহিষ্কার অন্য ব্রিকস সদস্য দেশগুলির সঙ্গে মস্কোর আর্থিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অকার্যকর প্রমাণিত হলেও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের পরে রাশিয়ার উপরে পশ্চিমি দেশগুলির অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে সদস্য দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসার নিরবচ্ছিন্ন ধারা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

ব্রিকস এই দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি মঞ্চ প্রদান করলেও এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথকে প্রভাবিত করার ব্যাপারে তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ।

জার্মানিতে জি-সেভেন জোটের সমাবেশে গৃহীত নীতি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে রুশ জ্বালানি এবং সোনা রফতানির উপরে আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত ভারত ও চিন-সহ বেশ কয়েকটি ব্রিকস সদস্য দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, যারা রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

এ ছাড়াও ভারত-চিন সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণের কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি। ২০২০ সালে গলওয়ান সঙ্কটের পর থেকেই ভারতীয় জনমানসে চিনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পষ্ট পরিবর্তনের সত্যতা স্বীকারে বেজিংয়ের অনিচ্ছা এমন এক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে, যেখানে এশিয়ার দু’টি প্রধান শক্তি যে কোনও রকমের পারস্পরিক আদানপ্রদান থেকে বিরত থেকেছে। ব্রিকস এই দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি মঞ্চ প্রদান করলেও এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথকে প্রভাবিত করার ব্যাপারে তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এবং চিন-ভারত সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণের অভাবে ব্রিকস-এর ভবিষ্যৎ মঞ্চটি গঠনের মহৎ অভিপ্রায় সত্ত্বেও অনিশ্চয়তায় ঘেরা থাকবে।

এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনেও সদস্য দেশগুলির মধ্যে ঐক্যের বাতাবরণ গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হয়। তা সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, পাঁচটি দেশেরই ক্রমবর্ধমান পৃথক অগ্রাধিকার বর্তমান। এই ব্যক্তিগত অগ্রাধিকারগুলি পূরণ করার কাজটি ব্রিকস  মঞ্চটির জন্য ক্রমশ কঠিনতর হয়ে পড়েছে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is a Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. His research interests include America in the Indian Ocean and Indo-Pacific and Asia-Pacific regions, particularly ...

Read More +