Author : Samir Puri.

Published on Mar 31, 2025 Updated 0 Hours ago

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হওয়ার সময় মধ্য শক্তিগুলিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা আদর্শ-নির্ধারক হতে চায়, না কি বিশ্ব ব্যবস্থাকে তাদের কৌশলগত স্বশাসন সীমিত করতে দেবে।

ডিজিটাল যুগে কৌশলগত স্বশাসন: মধ্য শক্তিগুলি কি নেতৃত্ব দিতে পারে?

এই প্রবন্ধটি ‘‌রাইসিনা এডিট ২০২৫’‌ সিরিজের অংশ



এই শতাব্দীতে যে
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটছে তার মধ্যে রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি), হিউম্যান-মেশিন ইন্টারফেস, এবং এমন আরও অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বৃহত্তর বহু-মেরুকরণের সময়েই এটি বিকশিত হচ্ছে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, এ হল পারস্পরিক সম্পর্ক, কার্যকারণ নয়। যাই হোক, এই উন্নত প্রযুক্তিগুলির বিকাশ ও গ্রহণের প্রতিযোগিতাটি মধ্য শক্তিগুলির কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অর্জনের সম্ভাবনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিপরীতভাবে, প্রযুক্তির মহা-‌প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যাওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চিনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়া তাদের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

কাই ফু লি তাঁর
এআই সুপারপাওয়ারস (২০১৮) বইয়ে বলেছেন যে, কিছু দেশ উন্নত প্রযুক্তির উৎস এবং অন্যদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডেটা প্রবাহ সরবরাহকারী হতে পারে, তবে এই ডেটা প্রবাহের পরিধিতে থাকা ব্যক্তিদের সরবরাহকারীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, যা নতুন প্রযুক্তি  স্তরক্রম তৈরি করে।

মধ্য শক্তিগুলির জন্য, এটি অসাধারণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদি দেশগুলি আরও উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের সদিচ্ছা এবং অব্যাহত বাণিজ্যিক স্বার্থের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তা হলে কঠিন ও নরম শক্তির ক্ষেত্রে নিজের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধি করে কী লাভ?


এই উন্নত প্রযুক্তিগুলির বিকাশ ও গ্রহণের প্রতিযোগিতাটি মধ্যম শক্তিগুলির কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অর্জনের সম্ভাবনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



তৃতীয় শিল্প বিপ্লব থেকে আমরা ইতিমধ্যেই এর একটি পূর্বরূপ দেখতে পেয়েছি।  এটি ২০০০-এর দশকে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থার একমেরু যুগের শেষের দিকে, প্রকাশিত হয়েছিল। একমেরু যুগ অংশত প্রযুক্তিগতভাবে মৃতপ্রায় সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণে উদ্ভূত হয়েছিল।

ঠান্ডা যুদ্ধের পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ ও এশিয়ায় তার নিকটতম মিত্ররা প্রযুক্তির এই যুগটিতে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্ভাবনী অর্থনীতিসহ মার্কিন অংশীদারিত্বের বিস্তৃত কক্ষপথের মধ্যে থাকা দেশগুলি বিশ্বমানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিকাশের মধ্য দিয়ে মধ্য শক্তি হিসাবে তাদের অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।

এর সুস্পষ্ট উদাহরণ হল বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খল, যেখানে তাইওয়ানের
তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএমএসসি) এবং কোরিয়ার স্যামসাং বিশ্বের উন্নত সেমিকন্ডাক্টরগুলির একটি উচ্চ শতাংশ সরবরাহ করে (যদিও এরা নির্ভরশীল একটি ডাচ কোম্পানি এএসএমএল এবং জাপানের অন্যান্য কোম্পানির উপর, যারা চিপ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় লিথোগ্রাফি মেশিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে)। নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছিল এবং সহস্রাব্দের শুরুতে তাদের নিজের নিজের শ্রেণিতে সেরা হিসেবে  আবির্ভূত হয়েছিল।

বহুমেরু যুগে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা

এখন পার্থক্য হল প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা মার্কিন নেতৃত্বাধীন একমেরু যুগে নয়, বরং বাস্তব বহুমেরুকরণের বিশ্বে ঘটছে;‌ বিশেষ করে, শীর্ষস্থানীয় দুই শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার মধ্যে। তাদের প্রতিযোগিতা এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছে যে এখন একে অপরের প্রযুক্তি উদ্ভাবনকে ধীর করার প্রচেষ্টায় পারস্পরিক প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।

এর সবচেয়ে আশাবাদী পাঠ হল, মহাশক্তি প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা খরচ ও অন্যদের প্রবেশের বাধা কমিয়ে দেয়। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকরভাবে,
চিনা এআই সিস্টেম ডিপসিক-‌এর আত্মপ্রকাশ এবং এটি তৈরির খরচ এখন এআই মডেলগুলির কম-‌ব্যয়বহুল বিকাশের প্রবণতা নির্দেশ করে। যদি এআই মডেলগুলির জন্য বিশাল সম্পদ বা মূলধনের প্রয়োজন না হয়, যা এখনও পর্যন্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদ্ধতি ছিল, তাহলে প্রবেশের জন্য কম বাধার কারণে উন্নত প্রযুক্তি মার্কিন-কেন্দ্রিকতা অতিক্রম করে দ্রুত বিস্তারিত হবে।


চিনা এআই সিস্টেম ডিপসিক-‌এর আত্মপ্রকাশ এবং এটি তৈরির খরচ এখন এআই মডেলগুলির কম-‌ব্যয়বহুল বিকাশের প্রবণতা নির্দেশ করে।



'বিঘ্নকারী' শব্দটি প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলি দ্বারা অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয়, তবে বর্তমানে ভূ-রাজনৈতিক প্রযুক্তিগত ভূদৃশ্যে প্রচুর ব্যাঘাত ঘটছে, এবং এর বেশিরভাগই মধ্য শক্তিগুলিকে উপকৃত করতে পারে।

তবে মার্কিন-চিন প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার প্রভাব সম্পর্কে আরও হতাশাবাদী পাঠ হল, মধ্য শক্তিগুলি নিজেদেরকে এমনভাবে পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করছে যা তাদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

মধ্য শক্তিগুলি প্রায়শই এই দুটি মেরুর মধ্যে চলাচল করতে বাধ্য হয়, যেমন
২০২০ সালে হুয়াওয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্য (‌ইউকে)‌-‌র অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যখন এটি কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছিল তার কৌশলগত প্রবৃত্তির কারণে নয়, বরং মার্কিন চাপের কারণে। সিঙ্গাপুরের মতো কিছু দেশের সাফল্যের গল্প রয়েছে যে তারা দুটি মেরুর মধ্যে অন্যদের তুলনায় বেশি সফলভাবে চলাচল করেছে, এবং বহু-সংযুক্ত প্রযুক্তি নীতি অনুসরণ করে সাফল্য পেয়েছে।

প্রযুক্তি রপ্তানিকারক এবং আদর্শ-নির্ধারক হিসাবে মধ্য শক্তিগুলি

ক্রমবর্ধমান বহুমেরু বিশ্ব তৈরি করে এমন অন্য মধ্য শক্তিগুলি এক্ষেত্রে কোথায় দাঁড়াবে? তারা কীভাবে সমসাময়িক প্রযুক্তি সহযোগিতার সেরা অংশটি গ্রহণ করতে পারে এবং সবচেয়ে খারাপটি এড়াতে পারে?

সাধারণভাবে, মধ্য শক্তিগুলির বহু-সারিবদ্ধ নীতি পরিচালনার জন্য যথেষ্ট ও ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা রয়েছে, এবং তারা বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতায় নিছক দাবার গুটি নয়। আন্তর্জাতিক পরিবর্তনশীলতা কীভাবে রূপ নিচ্ছে তার অনুধাবন এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ছিল ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে 
‘‌উদীয়মান মধ্য শক্তি' সম্পর্কিত সাম্প্রতিক সমীক্ষার উত্তরদাতাদের থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়া ।

তবে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, গল্পটি আরও অসম। সবচেয়ে ভাল সম্ভাবনা হল প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা এই দেশগুলিকে বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনী নেটওয়ার্কগুলিতে প্রান্তিক খেলোয়াড় থেকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রূপান্তরিত করবে। মানব মূলধনে বিনিয়োগ করে, সহায়ক নীতি পরিবেশ তৈরি করে, এবং প্রযুক্তির স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে এই জাতীয় মধ্য শক্তিগুলি তাদের ওজনের তুলনায় বেশি সাফল্য পেতে পারে।

ভারত এই ক্ষেত্রেও একটি সাফল্যের গল্প হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটি সুপ্রতিষ্ঠিত — 
ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) একটি আন্তঃপরিচালনযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থার দুর্দান্ত উদাহরণ, কারণ ইউপিআই-এর আগে ভারত ৯০ শতাংশ নগদ-নির্ভর অর্থনীতি ছিল। এটি অন্য দেশগুলির জন্য একটি কার্যকর শিক্ষা প্রদান করে, যারা কম নগদ-নির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হতে এবং বাণিজ্যিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করতে চাইছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারত ২০২৩ সালে জি২০ সম্মেলনের সময় গ্লোবাল সাউথ দেশগুলির কাছে এটি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি সফলভাবে উপস্থাপন করেছে, যার মধ্যে আন্তঃসীমান্ত অর্থপ্রদান বৃদ্ধিও অন্তর্ভুক্ত।


মধ্যপন্থী শক্তিগুলির বহু-সারিবদ্ধ নীতি পরিচালনার জন্য যথেষ্ট ও ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা রয়েছে, এবং তারা বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতায় নিছক দাবার গুটি নয়।



এক্ষেত্রে ভারতের এক অনন্য সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ প্রযুক্তিগত ভূদৃশ্য, ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি-সচেতন জনসংখ্যা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য অনুকূল সম্পর্ক, এবং একটি স্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারিং কেন্দ্র যা এটিকে অন্তত কিছুটা চিনের উপর নির্ভরশীল করে তোলে।

ভারত বিশ্বব্যাপী এআই কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালন করে তার প্রযুক্তি নেতৃত্বের সম্ভাবনা প্রসারিত করতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্যারিসে এআই অ্যাকশন সামিটের সহ-সভাপতিত্ব করেছিলেন, আর পরের বছর ভারত ২০২৬ সংস্করণটি আয়োজন করবে, যার ফলে গ্লোবাল সাউথের মধ্যম শক্তিগুলির ভূমিকা এবং তাদের চাহিদা নিয়ে কিছু আলোচনা হতে পারে।

অন্যত্রও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, এই এপ্রিলে, আফ্রিকায় এআই-এর অর্থনৈতিক সুযোগ নিয়ে আলোচনার জন্য
এআই-এর উপর প্রথম কিগালি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচিটি ইঙ্গিত দেয় যে এই আয়োজনটি আফ্রিকার এআই সাফল্যের গল্পগুলিকে তুলে ধরবে, এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের দেশগুলিকে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসবে, যাতে প্রযুক্তি আফ্রিকাজুড়ে সীমান্তহীন সংযোগ বৃদ্ধি করে।

যেসব মধ্য শক্তি প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তা সে আদর্শ-নির্ধারক বা প্রযুক্তি সরবরাহকারী যে হিসাবেই হোক না কেন, তারা শুধু তাদের সমাজের উন্নয়ন বৃদ্ধি করার জন্যই নয়, বরং নাটকীয়ভাবে তাদের প্রভাবকে প্রসারিত করার জন্য প্রস্তুত। অন্যদিকে, যারা প্রযুক্তিগত সুবিধা অর্জনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান তিক্ত প্রতিযোগিতায় আটকা পড়ে, তাদের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন হ্রাস পেতে পারে।

সংক্ষেপে, উন্নত প্রযুক্তি রপ্তানিকারী এবং আদর্শ-নির্ধারক হয়ে উঠতে পারলে তা দেশগুলিকে বিশ্ব মঞ্চে সফলভাবে প্রতিযোগিতা করার জন্য ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ পথ করে দেয়। কিন্তু, যদি তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়ে, তবে তারা সত্যিকার অর্থে স্বায়ত্তশাসিত বৈশ্বিক খেলোয়াড় হিসাবে তাদের সম্ভাবনা কখনই পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারবে না।



সমীর পুরী চ্যাথাম হাউসের সেন্টার ফর গ্লোবাল গভর্নেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটির একজন পরিচালক।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Samir Puri.

Samir Puri.

Samir Puri is a Director at the Centre for Global Governance and Security at Chatham House. ...

Read More +