এটি চায়না ক্রনিকলস সিরিজের ১৬২তম প্রবন্ধ
চিনের কোস্ট গার্ডের জন্য নতুন মেরিটাইম রেগুলেশন — চায়না কোস্ট গার্ড (সিসিজি) ডিক্রি নং ৩ — ১৫ জুন কার্যকর হয়েছে৷ সিসিজি-কে বৃহত্তর সুযোগ ও ক্ষমতা প্রদান করার এই নতুন আদেশটির ভিত্তি ২০২১ সালের কোস্ট গার্ড আইন, এবং এতে বেজিং তার সামুদ্রিক এক্তিয়ার বলতে কী বোঝে তার ব্যাখ্যার প্রসারণ ঘটানো হয়েছে। ২০২১ সালের আইনটি জরুরি পরিস্থিতির পরিধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছিল, এবং সাধারণত সংকটের জন্য সংরক্ষিত ব্যবস্থাগুলিকে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ইউএনক্লস-প্রতিষ্ঠিত সীমার বাইরে "অধিক্ষেত্রগত সমুদ্র" শব্দটির অস্পষ্ট ব্যবহার প্রস্তাব করেছে যে, নাইন-ড্যাশ লাইনের মধ্যে (একটি সীমারেখা যেটি তার সার্বভৌম সীমার বাইরে দক্ষিণ চিন সাগরের বেশিরভাগ অংশের উপর তার দাবির রূপরেখা দিতে ব্যবহৃত হয়েছে) সমস্ত জাহাজ সিসিজি-র লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এর ফলে একটি সম্ভাব্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ডিক্রি নং ৩-এর প্রসারিত পরিধি
সিসিজি চিনের সামুদ্রিক স্বার্থরক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জলসীমায় প্রভাব বিস্তারে এবং দেশীয় সামুদ্রিক আইন প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের বৃহত্তম উপকূলরক্ষী বাহিনী হিসাবে সিসিজি কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) অধীনে কাজ করে। এটি ১৫০টিরও বেশি বড় জাহাজ, প্রায় ৫০টি মাঝারি আকারের জাহাজ, এবং আনুমানিক ৩০০ ছোট টহল নৌকার একটি শক্তিশালী বহর নিয়ে কার্যকরভাবে এটিকে চিনের বৃহত্তর সামরিক ও কৌশলগত উপকরণের সঙ্গে একীভূত করে। এটি তার বর্তমান আকারে ২০১৩ সালে চায়না মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স, ফিশারিজ ল এনফোর্সমেন্ট কমান্ড, কাস্টমস অ্যান্টি স্মাগলিং ব্যুরো ও চায়না কোস্ট গার্ড-সহ বেশ কয়েকটি সামুদ্রিক সংস্থার একত্রীকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই একত্রীকরণের লক্ষ্য ছিল কাজকর্ম পরিচ্ছন্ন করা, সমন্বয় বাড়ানো এবং চিনের বিস্তৃত সামুদ্রিক পরিসরে শক্তি ব্যবস্থাপনা ও প্রক্ষেপণের ক্ষমতা শক্তিশালী করা। প্রাথমিকভাবে, সিসিজি ছিল স্টেট ওশিয়ানিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসওএ)-এর অধীনে; কিন্তু ২০১৮ সালে এটিকে পিপলস আর্মড পুলিশ (পিএপি)-এর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তর করা হয়েছিল এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) অধীনে রাখা হয়েছিল, যা এর উন্নত কৌশলগত গুরুত্ব নির্দেশ করে। তথাকথিত নাইন-ড্যাশ লাইন দ্বারা আবদ্ধ চিনের বিস্তৃত দাবি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালগুলি মূলত প্রত্যাখ্যান করেছে। যাই হোক, সিসিজি-র এই দাবিগুলির অবিরাম প্রয়োগ একটি জটিল আইনি ও কূটনৈতিক ভূচিত্র তৈরি করে, যেখানে চিন ধারাবাহিক অনুশীলন ও জবরদস্তির মাধ্যমে সামুদ্রিক নিয়মগুলিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে চায়।
সিসিজি চিনের সামুদ্রিক স্বার্থরক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জলসীমায় প্রভাব বিস্তারে এবং দেশীয় সামুদ্রিক আইন প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সামুদ্রিক অধিকার সুরক্ষা ও আইন প্রয়োগের উদ্দেশ্যে, নতুন ডিক্রি অনুযায়ী, কোস্ট গার্ড সংস্থাগুলি এখন তাদের (প্রসারিত) এক্তিয়ারের মধ্যে বিভিন্ন সামুদ্রিক উৎপাদন কার্যক্রমের অন-সাইট তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শন করার জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত৷ সমুদ্র অঞ্চলের ব্যবহার, সামুদ্রিক খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও বিকাশ, সাবমেরিন কেবল ও পাইপলাইন স্থাপন ও তার সুরক্ষা, সামুদ্রিক জরিপ ও পরিমাপ, মৌলিক সামুদ্রিক ম্যাপিং, এবং যা দূষণ সৃষ্টি করে এমন সামুদ্রিক ডাম্পিং, সবই এই ক্রিয়াকলাপগুলির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সিজিজি রেগুলেশন নং ৩ যুদ্ধজাহাজ ও অন্য সার্বভৌম অনাক্রম্য জাহাজগুলিকে ছাড় দেয় না, এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিপরীতে প্রয়োগকারী পদক্ষেপের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে দেয়। প্রবিধানের বাস্তবায়ন, যা উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌম অধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা নিশ্চিত করা দূর-সমুদ্রের স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করতে পারে, তা উত্তেজনা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। আইনটি সিসিজি-কে মৎস্য প্রবিধান প্রয়োগ করা এবং "গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য জলে" জাহাজগুলিকে আটকে রাখার অনুমোদন দেয়, যা দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের বার্ষিক মাছ ধরার স্থগিতাদেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে মৎস্য চাষের উপর নির্ভরশীল উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলির জন্য অনিশ্চয়তা বাড়ায়। নতুন আদেশটি ২০২১-এর বিধানগুলিকে আরও প্রসারিত করেছে, এবং কার্যত সিসিজি-কে ৬০ দিন পর্যন্ত বিদেশী জাহাজ ও ব্যক্তিদের আটক, এবং নাইন-ড্যাশ লাইনের মধ্যে যে কোনও সন্দেহভাজন জাহাজের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করার, ক্ষমতা ন্যস্ত করে৷
দক্ষিণ চিন সাগরের উপকূলের জন্য প্রভাব
দক্ষিণ চিন সাগরে সিসিজি প্রায়ই বিতর্কিত ক্ষেত্রগুলিকে, বিশেষ করে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ ও স্কারবোরো শোলকে, ঘিরে কাজে লিপ্ত হয়। এই কার্যকলাপগুলি প্রায়শই ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া-সহ অন্য দাবিদার রাষ্ট্রগুলির উপকূলরক্ষী ও নৌবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত। সিসিজি-র উপস্থিতি অসামরিক উপায়ে বিতর্কিত এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য চিনের বৃহত্তর কৌশলের বহিঃপ্রকাশ। যদিও পূর্বে, সিসিজি ক্রমবর্ধমানভাবে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করার সময় সরাসরি সংঘাত এড়িয়ে চলত, নতুন বিধানগুলি প্রকৃতিগতভাবে আরও প্রতিকূল। প্রকৃতপক্ষে, ডিক্রি কার্যকর হওয়ার মাত্র দুই দিন পরেই সিসিজি ফিলিপাইনসের নৌবাহিনীর নৌকার লোকেদের সঙ্গে ম্যাচেট, কুড়াল ও হাতুড়ি ব্যবহার করে হিংসাত্মক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, এবং এমনকি বলপূর্বক নৌকায় উঠে পড়ে এবং নৌবাহিনীর কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চিন ফিলিপিনো ও ভিয়েতনামী জেলেদের হাইব্রিড যুদ্ধের কৌশল ব্যবহার করে হয়রানি করার জন্য নিয়মিতভাবে পিপলস আর্মড ফোর্সেস মেরিটাইম মিলিশিয়া (পিএএফএমএম) নিয়োগ করে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির প্রতিক্রিয়া জটিল করে তোলে। এর আগে ২৩ মে চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড জয়েন্ট সোর্ড-২০২৪এ নামে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছিল, যার মধ্যে “অগ্রসর হওয়া”, “অবরোধ”, “আক্রমণ”, “ধ্বংস” এবং তাইওয়ান দ্বীপটিকে "বিচ্ছিন্ন করা" অন্তর্ভুক্ত ছিল। কম্যান্ড বলেছিল এটি "তাইওয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের" জন্য একটি "শাস্তি ", এবং হস্তক্ষেপ ও উস্কানি দেওয়ার লক্ষ্যে সমবেত বৈদেশিক শক্তির জন্য "কঠোর সতর্কবার্তা"।
সিসিজি এছাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে এলাকায় তৎপরতা এবং টহলের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালে সিসিজি বিতর্কিত অঞ্চলে ১,৬৫২ টি জাহাজ টহল দিবস পরিচালনা করেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিসিজি কিনমেন দ্বীপপুঞ্জের কাছে টহল বাড়িয়েছে এবং এই মডেলটিকে সমগ্র তাইওয়ান প্রণালীতে প্রসারিত করার পরামর্শ দিয়েছে। এআইএস ট্র্যাকিং ডেটা প্রকাশ করে যে সেকেন্ড টমাস শোল ও লুকোনিয়া শোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসিজি টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। সিসিজি জাহাজগুলির সনাক্তকরণ এড়াতে প্রায়শই এআইএস বন্ধ করে দেয়, যা বোঝায় যে প্রকৃত টহল দিন বেশি হতে পারে।
সিসিজি এছাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে এলাকায় তৎপরতা এবং টহলের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালে সিসিজি বিতর্কিত অঞ্চলে ১,৬৫২ টি জাহাজ টহল দিন পরিচালনা করেছে।
অনেক দেশের উপকূলরক্ষীদের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে — যেমন ভিয়েতনামে আইন প্রয়োগের জন্য বিস্ফোরক ব্যবহার করা, বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায় বেসামরিক থেকে সামরিক কমান্ডে স্থানান্তর করা — তবে এই ব্যবস্থাগুলি সাধারণত যুদ্ধকালীন বা চরম জরুরি অবস্থার জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু প্রবিধানের প্রয়োগ হল চিনের জবরদস্তিমূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা, যা ২০১৬ সালে দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের নাইন ড্যাশ-লাইন দাবি প্রত্যাখ্যান করে জারি করা আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের রায়কে দুর্বল করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, নাইন-ড্যাশ লাইনের সব কোণে সিসিজি টহল স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে বেজিংয়ের উদ্দেশ্য শুধু তার দাবিগুলি জাহির করা নয়, বরং বিতর্কিত জায়গাগুলিকে ইতিমধ্যেই নিজের সামুদ্রিক অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করে তা রক্ষা করা। সিসিজি-র সংশোধিত পরিধি এইভাবে নিঃসন্দেহে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জলসীমায় উচ্চ উত্তেজনা এবং আরও সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাবে, যা চিন এবং তার প্রতিবেশীদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে জটিল করে তুলবে। সহজ কথায়, নতুন ডিক্রিটি চিনের সালামি কাটার কৌশল আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে, এবং আবারও চিনের বেআইনি সামুদ্রিক অগ্রগতি ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংকল্পকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। এখনও অবধি, ইউএনক্লস পিছিয়ে রয়েছে, আর চিন তার সামুদ্রিক দাবি জাহির করার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে।
প্রত্নশ্রী বসু অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.