Author : Kajari Kamal

Published on Apr 27, 2023 Updated 0 Hours ago
রাষ্ট্রযন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: প্রাচীন ভারত থেকে সমসাময়িক পাঠ

এই প্রতিবেদনটি রাইসিনা ফাইলস ২০২৩ সিরিজের অংশ


আন্তর্জাতিক সম্পর্কের (আইআর) বিদ্যাচর্চার ধারাটি প্রায় এক শতাব্দী আগে তার সূচনাকাল থেকে ব্যাপকভাবে ইউরোপকেন্দ্রিক। বৃহৎ শক্তির  প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে এর প্রাথমিক সম্পৃক্ততা, ক্ষমতা, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের বাস্তববাদী ধারণার বৈশ্বিকীকরণ – প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের পশ্চিমী খ্রিস্টীয় ভিত্তির উপর নির্মিত – অপশ্চিমী সমাজগুলির জ্ঞান উৎপাদনের তাৎপর্যকে প্রান্তিক করে তুলেছে। তা সত্ত্বেও বিশ্বায়ন, পুনঃভারসাম্য এবং বহুমেরুকরণ দ্বারা চালিত সমসাময়িক আন্তর্জাতিক রাজনীতি  অন্যান্য ভৌগোলিক অঞ্চলের সাবলীলতাকে বৃদ্ধি করেছে, যা সত্যিকারের ‘বৈশ্বিক’ আইআর-এর প্রয়োজনীয়তাকে দর্শিয়েছে। বিশেষ করে চিন এবং ভারতের উত্থান, প্রাচীন অতীতে নিহিত রাষ্ট্রীয় আচরণের সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা প্রকাশের জন্য তাদের কৌশলগত সংস্কৃতির অধ্যয়ন করেছে। নির্দিষ্ট সর্বজনীন, বাস্তববাদী ধারণার প্রচারের পাশাপাশি এই স্বদেশি দর্শনগুলির অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

প্রাচীন ভারতীয় চিন্তাবিদ কৌটিল্যের রাজমণ্ডলের তত্ত্ব (এককেন্দ্রিক, আন্তঃরাজ্যের ভূ-রাজনৈতিক ধারণা), শক্তির সপ্তাঙ্গ (সাত অঙ্গ) তত্ত্ব ও মাৎস্যন্যায়কে সূক্ষ্ম তারতম্য থাকলেও মাকিয়াভেল্লি-র ‘প্রিন্স’ (১৫১৩), হবস-এর ‘স্টেট অব নেচার’ (১৬৫১), হানস জে মর্গেনথাউ-এর ‘ন্যাশনাল পাওয়ার’ (১৯৪৮) বা কেনেথ ওয়াল্টজের ‘অ্যানার্কি’র (১৯৫৯) পূর্বসূরি বলা চলে। সমন্বিতকরণ এবং বিভাজনের প্রয়োজনীয়তা এমন এক সময়ে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে যখন ভারত বিশ্বের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এটি বিশ্বের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার সুযোগের প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগানো উভয়ের কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে। এটির উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা এবং সদিচ্ছা দুইই রয়েছে।

আঞ্চলিকভাবে ভারত সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা পরিবেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন যখন আগ্রাসী চিন এবং একটি অশান্ত প্রতিবেশ বৈশ্বিক উদ্বেগ ও ভারতের নিজস্ব সমস্যার মাঝের সীমারেখা মুছে দিয়েছে। এই অভিন্নতা সত্ত্বেও ভারত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য একটি অনন্য ব্যবস্থার প্রস্তাব দেয় – আপাতদৃষ্টিতে তা পরস্পরবিরোধী এবং প্রায়শই তার অংশীদারদের অবস্থানের সঙ্গে সহমত পোষণ করে না। কেন সমসাময়িক ভারতের বৈশিষ্ট্যগত অসংলগ্নতা, দর কষাকষির আচরণ, কৌশলগত সংযম এবং তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ধূসর’তাকে সহজে গ্রহণ করার কাজটি কঠিন হয়ে উঠেছে কেন? থুকিডাইডিস, মাকিয়াভেল্লি, ক্লজউইৎস এবং মর্গেনথাউ-এর ভৌগোলিক অঞ্চলের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে এর সভ্যতাগত নোঙরগুলিকে কীভাবে পৃথক করা যায়?

ভারত যে প্রিজমের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে দেখছে, এই নিবন্ধের মাধ্যমে সেটিরই উন্মোচন ঘটানো হয়েছে। ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার ভিত্তিমূলক পাঠ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত রাষ্ট্রযন্ত্র সম্পর্কিত একটি প্রাচীন ধ্রুপদি সাহিত্য

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের একটি বিশদ ব্যাখ্যার মাধ্যমে এটিতে প্রাচীন ভারতীয় কৌশলগত চিন্তাধারার মৌলিক নীতিগুলি এবং তা সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সমন্বিত বিশ্বের জন্য কী উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, তার অনুসন্ধান করা হয়েছে।

সর্বাত্মক রাষ্ট্রযন্ত্র

প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রযন্ত্র আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ধারণ করে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে প্রাথমিকভাবে অন্তিম লক্ষ্য এবং ‘ধারণাগত চাবিকাঠি’ হল যোগক্ষেম, যেখানে ‘যোগ’-এর অর্থ জিনিসের ক্রিয়া বা অর্জন এবং ‘ক্ষেম’ হল সশক্তকরণ বা দখল সুরক্ষিত করা। একই সঙ্গে এই ছত্রের ধারণাটি মানুষের রক্ষা (নিরাপত্তা) এবং পালনকে (সুস্থতা) সুনিশ্চিত করে। এই দ্বৈত কাজটি একটি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়, যা অর্থপূর্ণভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান (দণ্ডনীতি) এবং অর্থনীতি (বর্ত); গার্হস্থ্য রাজ্য (তন্ত্র) এবং আন্তঃরাজ্যর (আভাপা) সঙ্গে জড়িত। জনসাধারণের বস্তুগত কল্যাণ রাজনৈতিক বৈধতা ও সামাজিক সংহতি বজায় রাখে, যার ফলে লাভজনক অর্থনৈতিক উৎপাদন সম্ভব হয়। এর ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজার হাতে থাকা দণ্ডকে শক্তিশালী করে ও রাজ্যের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করে। কৌটিল্য একটি আধুনিক ওয়েস্টফালিয়ান রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিতরে / বাইরের কাঠামোকে এই কথার দ্বারা নাকচ করে দিয়েছেন যে – ‘একটি রাষ্ট্রের কল্যাণ একটি সক্রিয় বিদেশ নীতির উপর নির্ভরশীল।’[১]

দু’টি আন্তঃসংযুক্ত পরিসর বডিপলিটিক বা রাজনৈতিক দেহের সাতটি অঙ্গের (সপ্তাঙ্গ) উপস্থাপনকারী ‘রাষ্ট্রের সাতটি উপাদান’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়,: (ক) রাজা (স্বামী); (খ) মন্ত্রী-পরিষদ (অমাত্য); (গ) গ্রামাঞ্চল (জনপদ); (ঘ) দুর্গ (দুর্গ); (ঙ) কোষাগার (কোষ); (চ) সেনাবাহিনী (দণ্ড); এবং (ছ) বন্ধু (মিত্র)। এগুলি একটি ক্রমবিন্যাস অনুসরণ করে এবং একসঙ্গে একটি রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীন জাতীয় শক্তি নির্মাণ করে। উল্লেখযোগ্যভাবে মৌলিক উপাদানগুলির ক্রম থেকে উত্থিত রাষ্ট্রের ক্ষমতা সামরিক শক্তির পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিচক্ষণতা, জনগণের উত্পাদনশীলতা এবং মানুষের সুখ (জনপদ) দ্বারা নির্ধারিত হয়। শাসকের দায়িত্ব  হল উদ্যমীভাবে সক্রিয় থাকা এবং এমন উদ্যোগে নিযুক্ত থাকা, যা বস্তুগত মঙ্গল (অর্থ) নিয়ে আসে। এটি আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা (ধর্ম) এবং ইন্দ্রিয়সুখ-এর (কাম) মূল চালিকাশক্তি।

একটি বিশ্বায়িত এবং পরস্পর-নির্ভরশীল সমসাময়িক রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা অঞ্চল এবং বিশ্বের সঙ্গে সহজাতভাবে জড়িত। প্রশংসনীয়ভাবে ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে তার দর্শনে যোগক্ষেম-র প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মুক্ত, অবাধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হিসাবে এবং এই অঞ্চলে ও  তার বাইরেও সমস্ত অংশীদারের ‘প্রগতি ও সমৃদ্ধির অভিন্ন সাধনা’ অর্জনের প্রচেষ্টায় ব্রতী।[২] বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ বাণিজ্য ও জ্বালানির প্রবাহ এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভারতের জাতীয় উন্নয়ন অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও বাণিজ্য এবং শক্তি নিরাপত্তা… উভয়ের জন্য যোগাযোগের সামুদ্রিক লাইন সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণভাবে সংযুক্ত। আয়তনের ভিত্তিতে দেশের বাণিজ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশ এবং মূল্যের ভিত্তিতে ৬৮ শতাংশ সমুদ্র ও মহাসাগরের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়।[৩] তেলের জন্য ভারতের ক্রমবর্ধমান ‘সামুদ্রিক নির্ভরতা’র পরিমাণ ৯৩ শতাংশ বলে অনুমান করা হয়েছে।[৪] উপরন্তু একটি বাহ্যিকভাবে নিরাপদ পরিবেশ অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এই প্রেক্ষাপটে চতুর্পাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপ বা কোয়াড নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে একটি ফলপ্রসূ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।

আন্তঃসংযোগ ও অভিন্ন উৎকর্ষের যুগে আরও সহযোগিতামূলক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য কৌটিল্যের মহাদেশীয় রাজমণ্ডলের কঠোর বন্ধু-শত্রু বিন্যাসের বৈশিষ্ট্যকে ত্যাগ করা আখেরে ভারতের বিদেশনীতির অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তির প্রাধান্যকেই দর্শায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইউক্রেন সংঘাতের মধ্যে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিকে সরকার ‘ভারতীয় জনগণের স্বার্থে সর্বোত্তম চুক্তি অর্জন করা সম্ভব এমন স্থানে পৌঁছনোর উদ্দেশ্যে একটি বুদ্ধিমান নীতি’ হিসেবে বিবেচনা করে।[৫]

রিয়েল পলিটিক ও মরাল পলিটিক বা বাস্তব রাজনীতি এবং নৈতিক রাজনীতি

ভারতের ‘আন্তর্জাতিক জাতীয়তাবাদী’ আচরণ তর্কযোগ্যভাবে লোকসংগ্রহের (সামাজিক সম্পদ) বিমূর্ত সর্বজনীন আদর্শের ‘অতিরিক্ত রাজনৈতিক বাস্তববাদী’ লক্ষ্যগুলির সঙ্গে রাষ্ট্রের টিকে থাকার প্রাচীন ‘বাস্তববাদী’ শিকড়েরই সাক্ষ্য বহন করে।[৬] একটি শূন্য-সমষ্টি জগতে বেঁচে থাকা এবং ক্ষমতায় আসীন থাকার যে ভারসাম্য তা পরিবর্তনশীল অঙ্কের পরিসরে মানবতার সংরক্ষণের একটি মৌলিক মনোভাবের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়।

সম্ভবত এই বিশ্বদৃষ্টি ধর্মের প্রাচীন ভারতীয় মহাজাগতিক ঐতিহ্যের একটি মেটা-তাত্ত্বিক উপলব্ধি থেকে উদ্ভূত যা জীবনের পক্ষপাত এবং তার বৈচিত্র্যের ‘সম্পর্কগত অস্তিত্বগত’ ধারণার মধ্যে নিহিত।[৭] এ ছাড়াও পৌরাণিক বিশ্ববিদ্যায় জম্বুদ্বীপের (একটি চার পাপড়িযুক্ত পদ্ম হিসাবে বর্ণিত) একটি বর্ষ হিসাবে ভারতবর্ষের চিত্রটি সুসংগত আন্তর্জাতিক সহাবস্থানের একটি ভারতীয় আখ্যানই তুলে ধরে, যা প্রাচীন চিনের ‘মধ্য রাজ্য জটিলতা’ থেকে একেবারে ভিন্ন। এই প্রেক্ষাপটে জি২০-তে ভারতের সভাপতিত্বে বসুধৈব কুটুম্বকম — এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ-এর ভাবনা অর্জনের জন্য এটিকে অনন্য ভাবে উপস্থাপন করে।

বাস্তব রাজনীতি এবং নৈতিক রাজনীতির বিপরীত কিন্তু পরস্পর-সম্পৃক্ত ধারাগুলি স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের বিদেশনীতিকে রূপ দান করেছে। জোটনিরপেক্ষতার ধারণাটি বসুধৈব কুটুম্বকম-এর বিশ্বাসকে রূপ দিতে সাহায্য করেছে— দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে এক দিকে সমগ্র বিশ্বকে এক জাতি হিসেবে[৮] দেখা এবং অন্য দিকে সক্ষমতা নির্মাণ এবং জাতীয় নিরাপত্তার বাস্তববাদী বিবেচনার প্রতি লক্ষ্যগুলিকে তুলে ধরা। জওহরলাল নেহরুর ভাষায়, ‘প্রত্যেক জাতি বিদেশনীতির বিকাশের ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থকে প্রথমে রাখে। সৌভাগ্যবশত, ভারতের স্বার্থ শান্তিপূর্ণ বিদেশনীতি এবং সমস্ত প্রগতিশীল দেশের সঙ্গে সহযোগিতার সঙ্গে সমাপতিত হয়।’[৯]

একটি সংশোধনবাদী পাঠ্য হিসাবে কৌটিল্য ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমন্বিতকরণের পক্ষে ছিলেন, যা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা দ্বারা সুরক্ষিত একটি পবিত্র ভূ-সাংস্কৃতিক স্থান। যাই হোক, তিনি এই চক্রবর্তীক্ষেত্রের (সার্বভৌম অঞ্চল) বাইরে কোনও সাম্রাজ্যবাদী প্রবণতা পোষণ করেননি – যা বাস্তব রাজনীতির ও নৈতিক রাজনীতির একটি ভাল দৃষ্টান্তকেই তুলে ধরে।

‘ক্ষমতা’র ধারণা

ক্ষমতা সংক্রান্ত কৌটিল্যের ধারণাটিও বহির্জগৎকে অন্তর্জগতের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং যৌক্তিকতা ও আদর্শের সমন্বয় ঘটায়; ক্ষমতা আপেক্ষিক এবং সর্বোচ্চ হওয়ার পরিবর্তে এটি একটি উপায় মাত্র। কৌটিল্য রাষ্ট্রযন্ত্রের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব সেই উপাদানগুলিরই তালিকা তৈরি করে যা একত্রে একটি রাষ্ট্রের জাতীয় শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে। সংশ্লিষ্ট উপাদান এবং তাদের ক্রম থেকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ অনুমান করা সম্ভব। প্রথমত, বস্তুগত (অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি) এবং অ-বস্তুগত (নেতৃত্বের রাজনৈতিক কাজ, মন্ত্রীদের আনুগত্য এবং দক্ষতা, নাগরিকদের উত্পাদনশীলতা, সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল) কারণগুলির অনন্য সমন্বয় একটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা এবং সদিচ্ছার ধারণা প্রদান করে।

দ্বিতীয়ত, স্বামী (শাসক) এবং অমাত্য (মন্ত্রী-পরিষদ) দুই শক্তিকে শীর্ষ ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে কৌটিল্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সর্বোচ্চ স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি মাত্রা স্থির করেন; মন্ত্রশক্তির (পরামর্শের ক্ষমতা) মূল্য প্রভাবশক্তি (কোষাগার ও সেনাবাহিনীর শক্তি) এবং উত্সাহশক্তির (বীরত্বের শক্তি) ঊর্ধ্বে থাকে। তৃতীয়ত, মিত্রর (বাহ্যিক মিত্র) অন্তর্ভুক্তি আসলে অভিনব এবং ক্রমবিন্যাসে এর স্থান এ কথাই দর্শায় যে, বাহ্যিক সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও প্রথম ছ’টির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হলে তবেই তা অবলম্বন করা উচিত।

চতুর্থত, রাষ্ট্রীয় কারণগুলির মধ্যে একটি ডমিনো প্রভাব রয়েছে। শীর্ষে থাকা স্বামী সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অমাত্যদের নির্বাচন করেন যাঁরা জনপদে দায়িত্ব পালন করেন। উদ্যোগের সাফল্য বস্তুগত সমৃদ্ধির দিকে চালিত করে, যা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বৈধতাকে সশক্ত করে, প্রতিরক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কোষাগারের প্রাচুর্যে অবদান রাখে, যা ফলস্বরূপ সেনাবাহিনীকে সু-প্রশিক্ষিত রাখতে সাহায্য করে এবং এর প্রতিবন্ধক মূল্য বৃদ্ধি করে যা রাষ্ট্রের দর কষাকষির ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় শাসন-কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের নিরিখে এটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

যাই হোক, একটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা রাজমণ্ডলে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় গতিশীল এবং আপেক্ষিক। পূর্বনির্ধারিত বিদেশনীতির কার্যকলাপ না হলে এবং রাজমণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত ভৌগোলিক নির্ণয়বাদকে দুর্বল না করে দিলে আপেক্ষিক শক্তি, রাষ্ট্রের স্বভাবের (ভাবিন) সঙ্গে একত্রে পূর্বনির্বাচন করতে সাহায্য করে। ষড়গুণ্যর (বিদেশনীতির ছ’টি ব্যবস্থা) মধ্যে রয়েছে আবাসননীতি বা শান্তিচুক্তি (সম্বন্ধি), আশ্রয়ের অন্বেষণ (সংশ্রয়) এবং দ্বৈত নীতি (দ্বৈধভাব) সাধারণত দুর্বলদের জন্য নির্ধারিত; শত্রুতা (বিগ্রহ) এবং শক্তিশালীদের  জন্য অভিযান (যান); এবং সমানের জন্য নিরপেক্ষতা (আসন)।

নিশ্চিতভাবে এ কথা বলা যায় যে, রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের প্রকৃতি, ব্যাপ্তি এবং স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব, শাসকের ন্যায়পরায়ণতা ও স্বার্থের পারস্পরিকতার উপর ভিত্তি করে নিয়মের একাধিক ব্যতিক্রমও রয়েছে। পারস্পরিক শান্তির জন্য একটি অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার পাশপাশি দুটি সমান শক্তিও ভারত ও চিনের মতো ১৯৯৩ সালের সীমান্ত শান্তি ও প্রশান্তি চুক্তির মতো সহাবস্থানের নীতি গ্রহণ করতে পারে। দীর্ঘ সময়ের সমন্বিতকরণের পর ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সুবিধা লাভ করে চিন এবং ২০২০ সালের গ্রীষ্মে তার লাদাখ আক্রমণের মাধ্যমে সমধি থেকে সামধায়নে (একটি চুক্তিতে প্রবেশের পর তা থেকে বেরিয়ে যাওয়া) পরিবর্তন করে।[১০]

অর্থশাস্ত্র আন্তঃরাজ্য রাষ্ট্রের একটি স্তরযুক্ত বোঝাপড়াকে তুলে ধরে এবং বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলার সবচেয়ে সর্বোত্তম উপায় একটি ক্রমাগত ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত হলেও নমনীয়। সঠিক অনুমানে পৌঁছনোর ব্যাপারটি সমালোচনাসাপেক্ষ। তাই জ্ঞানকে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিত্তি করে তোলা হয়। ভৌগোলিক, বস্তুগত, স্বভাবগত এবং পরিস্থিতিগত বিবেচনা থেকে উদ্ভূত বন্ধু এবং শত্রুদের শ্রেণিবিভাগ কৌশলগত মূল্যায়নকে তীব্রতর করে এবং নীতি ব্যবস্থাকে কার্যকর করে তোলে।[১১] এটি একটি ‘জন্মগত’ শত্রু (প্রকাশ্যেই অনুকরণীয় গুণাবলি থেকে বঞ্চিত এবং ক্রমাগত ক্ষতি সাধন করে) এবং একটি ‘সম্ভাব্য’ শত্রুর (এমন এক শক্তি, যে হিংস্র অথবা হিংস্রতার সঙ্গে কাজ করে, অন্ততপক্ষে সাময়িক ক্ষেত্রে) মধ্যে যে পার্থক্য নির্ণয় করে তা দরকারি। উদাহরণস্বরূপ, চিন ও পাকিস্তানের প্রতি ভারতের সম্ভাব্য দৃষ্টিভঙ্গির বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের কথা বলা যায়।[১২] সমঝোতা, উপহার প্রদান, মতবিরোধ এবং বল প্রয়োগের মতো রাজনীতির চারটি পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে নির্মিত উপায়সমূহ একক, বিকল্প বা সম্মিলিত পদ্ধতিতে ব্যবহার করার জন্য বিকল্পগুলির একটি সাধনী প্রদান করে।[১৩]

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে কৌটিল্য শক্তি ধারণকে ক্ষমতার অধিকার বলে মনে করতেন, যা ‘জনগণের সুখ’-এর পরিপ্রেক্ষিতে সংজ্ঞায়িত সাফল্য অর্জনের একটি উপায় (অন্তিম পরিণতির পরিবর্তে) হিসাবে ব্যবহৃত হত।

কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন

তর্কযোগ্যভাবে, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের বিদেশনীতি পরিকাঠামোর অন্যতম একক শক্তিশালী স্থায়ী বিন্দু এবং সম্ভবত পশ্চিমের জন্য সবচেয়ে যা বিভ্রান্তিকর, তা হল বিচারের স্বাধীনতা এবং স্বনির্ভরতার সহজাত ধারণা, যেটির উৎস হল কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের সময়কাল। জওহরলাল নেহরু এবং নরেন্দ্র মোদীর মতো দুই প্রধানমন্ত্রী ভিন্ন সময়ে প্রতিনিধিত্ব করলেও উভয়ই আত্মনির্ভর ভারতের অভিন্ন ভিত্তিতে বিশ্বাসী।[১৪]

কৌটিল্যের রাষ্ট্রযন্ত্র (তার সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের মাধ্যমে) সুস্পষ্টভাবে বন্ধুকে (মিত্র) সর্বশেষ এবং একমাত্র বাহ্যিক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রথম ছ’টি গার্হস্থ্য  উপাদানের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও রাষ্ট্রগুলি দ্বৈত নীতির মাধ্যমে (দ্বৈধভাব) এক পক্ষের সঙ্গে মিত্রতা করে অন্যের সাথে লড়াই করে; এবং একটি বৃহৎ শক্তির কাছ থেকে আসন্ন হুমকির মুখে আশ্রয় (সংশ্রয়) খোঁজার মাধ্যমে কৌশলগত অংশীদারিত্বের (সমবায়) আকারে নিজের ক্ষমতা বাড়াতে বাহ্যিক সাহায্য ব্যবহার করতে পারে। আশ্রয় অন্বেষণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক স্বায়ত্তশাসনকে ঝুঁকির পরিবর্তে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ পরিবেশন করার দরুন শেষ দু’টির মধ্যে দ্বৈত নীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

‘যখন শক্তির ভারসাম্য বিশ্বায়নের সঙ্গে মিলিত হয়’, তখন আন্তঃসহযোগিতার জন্য বৃহত্তর প্রণোদনার নিরিখে কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপর আলোচনাটিও এই নিবন্ধে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ বর্তমান সময়ে এর উল্লেখযোগ্য বিস্তার লক্ষ করা গিয়েছে।[১৫] সমন্বয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা উভয়ের জন্যই প্রণোদনাঋদ্ধ এই আন্তর্জাতিক পরিবেশে ভিন্ন আপেক্ষিক শক্তিসম্পন্ন রাষ্ট্রগুলির গতিবিধির জন্য প্রাচীন এই ব্যবস্থাগুলি সম্ভাবনার এক বৃহত্তর পরিসর প্রদান করে। যদিও শক্তিশালী এবং দুর্বল রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি চুক্তি ধারাবাহিকভাবে পরবর্তীতে শক্তিশালী দেশের আধিপত্যের ফলস্বরূপ হওয়ায় কৌটিল্য তাৎক্ষণিক লাভ এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ লাভ উভয়কেই বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অংশীদারিত্বে প্রবেশের সুস্পষ্ট নীতিগুলি হল শক্তি, নির্ভরযোগ্যতা এবং আগ্রহের সমন্বয়।

একজন ভাল মিত্রের গুণাবলির মধ্যে রয়েছে স্থিরতা, নিয়ন্ত্রণে থাকা, দ্রুত গতিশীলতা, বংশগত, শক্তি এবং নির্ভরযোগ্যতা। এগুলির মধ্যে অস্থায়ী হওয়া সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণে থাকা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়; স্থায়ী অথচ স্বল্পসাহায্যকারী বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং ধীর অথচ ব্যাপক গতিশীলতাসম্পন্ন  বিষয়টির বদলে ক্ষুদ্র অথচ অধিক গতিশীল বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কৌটিল্য নিয়ন্ত্রণ ঝুঁকি ছাড়াই কাজগুলি সম্পাদনা করার জন্য একটি শক্তিশালীর পরিবর্তে দু’টি সমান এবং একটি সমানের পরিবর্তে দু’টি দুর্বলের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গঠনের পরামর্শ দেন। এটি তর্কসাপেক্ষে, ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা), এসসিও (সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন) এবং কোয়াডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব পর্যায়ে ভারতের বহুপাক্ষিক পদ্ধতির কৌশলগত-সাংস্কৃতিক শিকড় স্বরূপ।

অংশীদারিত্ব গঠন এবং জোটে প্রবেশের সূক্ষ্ম উপলব্ধি মহাভারত এবং রামায়ণের অধ্যয়নেও প্রতিফলিত হয়েছে। তৃতীয় শক্তির মুখোমুখি হলে ভারসাম্য রক্ষার দিকে বিশ্ব প্রবণতাকে দর্শায় এবং প্ররোচনার একটি সাংস্কৃতিক শর্তসাপেক্ষ বিরোধিতাকে তুলে ধরে। রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাম পরাক্রমশালী বালির সঙ্গে দলবদ্ধ না হয়ে ক্ষমতাচ্যুত ও দুর্বল সুগ্রীবের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলেন। আবার অর্জুনের সঙ্গে সমস্যা হওয়ার পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল কর্ণকে বেছে নেওয়ার দুর্যোধনের সিদ্ধান্ত এক একটি দুর্বল এবং সংক্ষুব্ধ মিত্রের আনুগত্য এবং দৃঢ়তার গুরুত্বকেই দর্শায়। ‘শত্রুর শত্রুকে সহায়তা করার মাধ্যমে দুর্যোধনের কার্যকরভাবে একজন বন্ধুকে সহায়তা করতে চাওয়া’… কৌটিল্যের ‘সমস্যা বন্ধুত্বে দৃঢ়তা তৈরি করে’… এই উক্তিটিরই প্রতিফলন ঘটায়।[১৬]

বিভিন্ন উপায়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এবং শতাব্দীর শুরু থেকে তার ধীর কিন্তু অবিচলিত ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতা মূলত এই প্রবণতার দ্বারাই চালিত হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি অনিশ্চিত  প্রারম্ভিক পর্যায় থেকে শুরু করে উভয় দেশেরই নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে সুরক্ষিত করতে একে অপরের দিকে পারস্পরিক সাহায্যের গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে যাওয়া আসলে স্বার্থের সমাপতন, বহিরাগত হুমকি সংক্রান্ত অভিন্ন ধারণা এবং আপেক্ষিক শক্তির সাবলীলতাকেই দর্শায়। ভারতের তরফে এটি অংশীদার দেশ সম্পর্কে গভীর অনাস্থা এবং অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দেশ সম্পর্কে মিত্রতার প্রতি দৃঢ় প্রতিরোধের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এবং তাই দেশটির বৈচিত্র্যকরণের প্রবণতায় ঝুঁকি প্রশমনে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সহাবস্থান ও প্রতিরোধের মিশ্র কৌশলকেই প্রদর্শন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘অংশীদারিত্ব এবং জোটের মধ্যে তার অদ্ভুত এবং বিশেষ সমার্থকতা’ সত্ত্বেও ধীরে ধীরে ভারতের নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখার ‘নিজস্ব উপায়’-এর[১৭] সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে এবং ‘সহমত পোষণ না করা সত্ত্বেও একজোট থাকা’র ধারণাটি দ্বারা তার অংশীদারিত্বের সূক্ষ্মতর ধারণা আকার পেয়েছে।[১৮]

উপসংহার

বর্ধিত প্রতিযোগিতা ও অবিশ্বাস, ক্রমসঙ্কুচিত বিশ্বব্যাপী আশ্বাস, ভগ্ন বহুপাক্ষিকতার মাঝে পূর্ববর্তী কম সক্রিয় শক্তিগুলির উন্নততর অংশীদারিত্বের মাঝে ক্রমবিভক্ত পৃথিবীর সমস্যাগুলিকে সূক্ষ্ম বোঝাপড়া এবং দূরদৃষ্টি দ্বারা সমাধান করা প্রয়োজন। যখন সকল প্রধান শক্তি তাদের দীর্ঘমেয়াদি বিদেশনীতির মৌলিক বিষয়গুলিকে অস্বীকার করে পথ পরিবর্তন করছে, তখন ভারত  নিরাপদে তার অপরিবর্তিত জাতীয় চরিত্রের সঙ্গে সংযুক্ত, বিস্তৃতভাবে তার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার দ্বারা রূপায়িত, উপলব্ধি, নীতি এবং বাস্তববাদের মতো তিনটি বিষয়ের ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে বিচারের স্বাধীনতা এবং স্ব-নির্ভরতার সাধনা, শ্রদ্ধার পারস্পরিকতা এবং নিজস্ব মডেল অন্য কারও উপর চাপিয়ে না দেওয়ার ইচ্ছার সঙ্গে সংযুক্ত।[১৯]

এটির সভ্যতাগত পরিচয় তাকে সহযোগিতা, মধ্যপন্থী প্রতিযোগিতা, অন্তর্ভুক্তির উপর জোর দেওয়া, ব্লক পন্থাগুলি এড়িয়ে চলা এবং একটি গণতান্ত্রিক ও নিয়মভিত্তিক আদেশের সূচনা করার জন্য এটিকে একটি অনন্য অবস্থান প্রদান করে। এটি শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে, ভারত একটি দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক ভূমিকা পালন করতে চায়, বরং এই জন্যও, কারণ এটি একই সঙ্গে তার মূল জাতীয় স্বার্থ এবং বহুকেন্দ্রিক বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।


পাদটীকা

[১] পি ভি নরসিংহ রাও, সিলেক্টেড স্পিচেস, ভলিউম ৩, ১৯৯৩-১৯৯৪, ৩৯৯

[২] নরেন্দ্র মোদী, ‘কিনোট অ্যাড্রেস’ (স্পিচ, সিঙ্গাপুর, জুন ১, ২০১৮) শাংরি-লা ডায়লগ

[৩] মিনিস্ট্রি অব পোর্টস, শিপিং অ্যান্ড ওয়াটারওয়েজ, অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০২০-২১, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, ৬

[৪] ইন্ডিয়ান নেভি, ইন্ডিয়ান মেরিটাইম সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি, জানুয়ারি ২০১৬

[৫] আউটলুক ওয়েব ডেস্ক, ‘রাশিয়া ইজ ইন্ডিয়াজ টপ অয়েল সাপ্লায়ার ফর সেকেন্ড মান্থ ইন আ রো, ইএএম জয়শঙ্কর সেজ ‘সেন্সিবল পলিসি টু বাই অয়েল অ্যাট বেস্ট ডিল’,’ আউটলুক ইন্ডিয়া, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২

[৬] দীপশিখা সাহি, কৌটিল্য অ্যান্ড নন-ওয়েস্টার্ন আইআর থিয়োরি (পলগ্রেভ ম্যাকমিলান, ২০১৯)

[৭] নবনীতা চাড্ডা বেহেরা, ‘গ্লোবালাইজেশন, ডিগ্লোবালাইজেশন অ্যান্ড নলেজ প্রোডাকশন’, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ৯৭, নম্বর ৫ (২০২১)

[৮] নরসিংহ রাও, ‘আ মরাল অথরিটি’, ইন আ রোল পারসুয়েশন: থটস অন আ নেশন, আ পিপল অ্যান্ড দি ওয়ার্ল্ড টু হুইচ দে বিলং (নিউ দিল্লি: মিনিস্ট্রি অব হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন, ১৯৮৬), ৪৭

[৯] শ্যাম সরন, হাউ ইন্ডিয়া সিজ দি ওয়ার্ল্ড: কৌটিল্য টু দ্য টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি (নিউ দিল্লি: জগরনট, ২০১৭)

[১০] লাদাখ-পরবর্তী সময়ে ভারত-চিন সম্পর্কে প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য কাজরী কমল এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রকাশ মেনন, ‘হোয়াই চায়না ইজ দ্য কৌটিল্য অফ ইন্টারন্যাশনাল পলিটিকস’, দ্য প্রিন্ট, মার্চ ৯, ২০২১

[১১] শত্রুদের শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে এভাবে: ক) শত্রুর শ্রেষ্ঠত্ব সহ প্রতিবেশী শত্রু, খ) দুর্যোগে একজন দুর্বল, এবং গ) সমর্থনহীন একজনকে নির্মূল করার উপযুক্ত। একইভাবে, ক) অন্য একটি অঞ্চল দ্বারা বিভক্ত একটি প্রাকৃতিক মিত্র, খ) মা/পিতার সাথে সম্পর্কিত একজন জন্মসূত্রে মিত্র, এবং গ) যিনি সম্পদ বা জীবনের জন্য আশ্রয় চেয়েছেন তিনি একজন মিত্র।

[১২] বিশদে পড়ার জন্য দ্রষ্টব্য কাজরী কমল এবং গোকুল সাহনি, ‘দ্য রিলেভেন্স অফ এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়ান স্ট্র্যাটেজি ইন কনটেম্পোরারি জিয়োপলিটিক্স, ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ নম্বর ৪৭০, জুলাই ২০২১, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন

[১৩] মিশ্র পরিস্থিতিতে টুল সেট হিসেবে উপহাস প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য ব্রিগেডিয়ার নিক সইয়ার, ‘ক্যান আ টুলসেট বেসড অন কৌটিল্য’জ অর্থশাস্ত্র অফার অ্যান অল্টারনেটিভ মেথডলজি টু ওয়েস্টার্ন সিস্টেমস ফর স্ট্র্যাটেজি ইন কমপ্লেক্স হাইব্রিড সিনারিওজ’ (থিসিস, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, নিউ দিল্লি, ২০২১)

[১৪] কাজরী কমল, ‘আ সেলফ-রিলায়েন্ট ইন্ডিয়া ইজ হোয়্যার মোদী অ্যান্ড নেহরু ফাইন্ড কমন গ্রাউন্ড’, মানিকন্ট্রোল, মে ২০, ২০২০

[১৫] টি ভি পল, ‘হোয়েন ব্যালান্স অব পাওয়ার মিটস গ্লোবালাইজেশন: চায়না, ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য স্মল স্টেটস অব সাউথ এশিয়া’, পলিটিকস, জুন ৬, ২০১৮

[১৬] অরুণা এবং অমৃতা নার্লিকর, বারগেনিং উইথ আ রাইজিং ইন্ডিয়া: লেসনস ফ্রম দ্য মহাভারত (অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৪)

[১৭] ডেরেক গ্রসম্যান, ‘ইন্ডিয়া’জ ম্যাডেনিং রাশিয়া পলিসি ইজন্ট অ্যাজ ব্যাড অ্যাজ ওয়াশিংটন থিঙ্কস’, ফরেন পলিসি, ডিসেম্বর ৯, ২০২২

[১৮] অ্যালিসা আয়রেস, আওয়ার টাইম হ্যাজ কাম; হাউ ইন্ডিয়া ইজ মেকিং ইটস প্লেস ইন দি ওয়ার্ল্ড (নিউ ইয়র্ক: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৮)

[১৯] রাও, ‘আ মরাল অথরিটি’, ৪৮

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.