২১ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেশ ও গোটা অঞ্চলে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। এমন অনেক কিছু এই নির্বাচনে জড়িত যা প্রথম ঘটছে: গণঅভ্যুত্থান ‘অর্গল্য’ ও অর্থনৈতিক সংকটের পর এটি প্রথম নির্বাচন; এই প্রথম চার হেভিওয়েট (৩৯ জন প্রতিযোগীর মধ্যে) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন; এবং এই প্রথম তামিল দলগুলি তাদের প্রার্থী দিয়েছে। আগামী নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় রেখে বলা যায়, অনেকটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। ভারতের জন্য, যে দেশ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালে ভাল রকম অগ্রগতি দেখেছে, সেখানে প্রচুর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কাজেই ভারত যে কোনও ফলাফল এবং বিস্ময়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।
২০২৪ নির্বাচন: ভারত থেকে দৃশ্যপট
২০২২ সালে শুরু হওয়া শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার পর এটি হবে প্রথম এই ধরনের নির্বাচন। এই সংকটের সূত্রপাত হয়েছিল বাজেট ও বাণিজ্য ঘাটতি, ঋণের স্তূপ, ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মারাত্মক হ্রাসের মতো কাঠামোগত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির কারণে, যা অত্যাবশ্যক পণ্যের ঘাটতি ও অতিমাত্রার মূল্যস্ফীতির জন্ম দেয়। খাদ্য ও রেশনের জন্য দীর্ঘ লাইন, বিদ্যুতের ঘাটতি, বিদ্যুতের চড়া দাম, প্রতিশ্রুতি পূরণে রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা প্রভৃতির সঙ্গে একটি 'নতুন ব্যবস্থার' দাবি দেশব্যাপী বিক্ষোভের দিকে নিয়ে যায়। যদিও আন্দোলনটি মূলত শান্তিপূর্ণ ছিল, একাধিক জাযগায় হিংসা, সংঘর্ষ এবং অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গিয়েছিল। এর শেষ দিনগুলিতে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়ে, এবং প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
এই সংকটের সূত্রপাত হয়েছিল বাজেট ও বাণিজ্য ঘাটতি, ঋণের স্তূপ, ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মারাত্মক হ্রাসের মতো কাঠামোগত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির কারণে, যা অত্যাবশ্যক পণ্যের ঘাটতি ও অতিমাত্রার মূল্যস্ফীতির জন্ম দেয়।
দূরবর্তী স্থান থেকে দেখে, নয়াদিল্লির নীতিনির্ধারকেরা মানবিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন। নিজের 'প্রথমে প্রতিবেশ' এবং 'অঞ্চলের সবার জন্য নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধি' (সাগর) নীতি অনুযায়ী ভারত শীঘ্রই ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল। এটি অত্যাবশ্যক পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ঋণ স্থগিত, মুদ্রার অদলবদল, অনুদান, একটি স্বল্পমেয়াদি ঋণ সুবিধা, মানবিক ত্রাণ এবং একাধিক লাইন অফ ক্রেডিট প্রদান করে। সহায়তার লক্ষ্য ছিল দ্বীপরাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। এছাড়াও চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির মোকাবিলা করতে এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বৃদ্ধির জন্য ভারত সে দেশে কৌশলগত বিনিয়োগের প্রসার ঘটায়। ভারত দেশটিকে তার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আলোচনায় সহায়তা করেছিল, এবং সরকারি ঋণদাতা কমিটিরও অংশ ছিল যা ঋণ পুনর্গঠন করে এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত ৫.৬ বিলিয়ন মূল্যের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।
যদিও ভারত শ্রীলঙ্কাকে তার অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছে, দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। মানুষ একটি 'ব্যবস্থাগত পরিবর্তনের' আহ্বান অব্যাহত রেখেছেন, এবং চারজন প্রধান প্রার্থী রয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে দিল্লি জানে যে রাজনৈতিক পেন্ডুলাম যে কোনও দিকে দুলতে পারে। চার প্রধান প্রার্থী — নির্দল রনিল বিক্রমসিংহে, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার-এর অনুরা কুমারা দিসানায়েকে, শ্রীলঙ্কা পডুজানা পেরামুনার নামাল রাজাপক্ষে, এবং সামাগি জনা বালাওয়েগয়ার সাজিথ প্রেমদাসা — হয় সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন বা করার পরিকল্পনা রয়েছে। শ্রীলঙ্কার আমন্ত্রণে ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্করের জুনে শ্রীলঙ্কা সফরের সময়েও তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠক হয়েছে। এই ভাবে দলনিরপেক্ষ পথে ভারত নির্বাচনী ফলাফল থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ ও বিস্ময়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।
মৎস্যজীবী এবং ১৩ক
ভারত-শ্রীলঙ্কা চুক্তির অংশ হিসাবে ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী (১৩ক) থেকে একটি প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ উদ্ভূত হতে পারে। ১৩তম সংশোধনী শ্রীলঙ্কাকে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানায়, এবং ফেডারেলিজম গ্রহণ করা ও প্রদেশগুলির ক্ষমতায়নের জন্য চাপ দেয়। ভারত এর বাস্তবায়নকে সে দেশের জন্য ন্যায়বিচার, সমতা ও শান্তি নিশ্চিত করা, এবং বিস্তৃতভাবে সংঘাতের যে কোনও সম্ভাব্য পরিণতি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখে। যাই হোক, শ্রীলঙ্কার মূলধারার নেতারা তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদকে শক্তি জোগানোর ভয়ে, এবং নিজেদের সিংহলী ভোটভিত্তি থেকে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার কারণে, এর সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে দ্বিধা করেছেন, বিশেষ করে ভূমি ও পুলিশের ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে। এমনকি আসন্ন নির্বাচনেও প্রেমদাসা ছাড়া কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী ত্রয়োদশ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবির সঙ্গে একমত হননি। বিক্রমসিংহে পুলিশের ক্ষমতা ছাড়াই ১৩তম সংশোধনীর প্রস্তাব করেছেন, এবং দিসানায়েকে প্রাদেশিক নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (সর্বশেষ ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত) হয়েও একটি নতুন সংবিধান প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। তামিল দলগুলির — তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ও ইলাঙ্কাই তামিল আরাসু কাদচ্চির — মধ্যে বিভাজন এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নিয়ে তাদের মতপার্থক্যও ১৩তম সংশোধনীর আহ্বানকে দুর্বল করে দিতে পারে৷ ভারত এইভাবে ১৩তম সংশোধনী কার্যকর করতে এবং শ্রীলঙ্কার জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজে পেতে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে৷
বিক্রমসিংহে পুলিশের ক্ষমতা ছাড়াই ১৩তম সংশোধনীর প্রস্তাব করেছেন, এবং দিসানায়েকে প্রাদেশিক নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (সর্বশেষ ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত) হয়েও একটি নতুন সংবিধান প্রবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হল জেলেদের সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করা। ভারতীয় মৎস্যজীবীরা শ্রীলঙ্কার জলসীমায় প্রবেশ করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং তাদের জাহাজ বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। গত বছর (২০২৩ সালে) ২৪০ জনেরও বেশি জেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, এবং ৩৫টি ট্রলার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এই বিবাদগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে সহিংস হয়ে উঠেছে, যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর একজন নাবিক এবং একজন ভারতীয় মৎস্যজীবীর মৃত্যুর দ্বারা প্রদর্শিত হয়েছে। তামিলনাড়ুর জেলেরা সম্প্রতি ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার আদালতের রায়ের প্রতিবাদ জানাতে বার্ষিক সেন্ট অ্যান্থনি’জ চার্চ উৎসবও বয়কট করেছিল, যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রদর্শন করে। এই জরুরি বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট বিক্রমসিংহে 'এক লপ্তে সব সমস্যা সমাধানের' জন্য চাপ দিচ্ছেন, আর ভারত একটি 'স্থায়ী সমাধান' খুঁজে বার করার অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু, যতক্ষণ না সেই সমাধানের অন্বেষণ করা হয়, ভারত আশা করে শ্রীলঙ্কা সরকার 'মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির' মাধ্যমে বিষয়টি দেখবে। নির্বাচনী ফলাফল নির্বিশেষে এই প্রত্যাশা অব্যাহত থাকবে।
সংযোগ এবং ঘরোয়া রাজনীতি
অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সংযোগ ও অর্থনৈতিক একীকরণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চাপ রয়েছে। বন্দরের ক্ষেত্রে ভারত কলম্বো বন্দরে ওয়েস্ট কন্টেনার টার্মিনালে, জাফনার কাঙ্কেসান্থুরাই বন্দর ও ত্রিঙ্কোমালি বন্দরে সাহায্য করছে। এটি জাফনা বিমানবন্দরে সহায়তা করছে এবং হাম্বানটোটা বিমানবন্দর পরিচালনা করছে। শক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রে মান্নার ও পুনেরিনে বায়ু প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে, সামপুরে একটি সৌর প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে এবং ত্রিঙ্কোমালিতে তেল শোধনাগারগুলিকে আপগ্রেড করা হচ্ছে। একইভাবে একটি এনার্জি গ্রিড, একটি দ্বিমুখী পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন, একটি স্থল সেতু এবং অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি সহযোগিতা চুক্তি (ইটিসিএ) নিয়ে আলোচনা চলছে। ভারতীয় সংস্থাগুলিও শ্রীলঙ্কার পাবলিক এন্টারপ্রাইজগুলিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ভারত থেকে সংযোগের জন্য এই চাপের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধার করা এবং চিনা উপস্থিতি ও প্রভাব মোকাবিলা করা। যাই হোক, ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রায়ই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতির বিষয় হয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্রুত ঘনিয়ে আসার সময় বর্তমান বিরোধীরা কিছু ভারতীয় প্রকল্পের সমালোচনা করছে, এবং সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের কাছে সম্পদ বিক্রির অভিযোগ করছে। দুর্নীতির অভিযোগের কারণে কিছু প্রকল্প ইতিমধ্যেই ধীরগতি হয়ে পড়েছে, এবং সরকারে পরিবর্তন হলে চুক্তি প্রত্যাহার করা হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় জাতীয়তাবাদী ভারতবিরোধী মনোভাব জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি সংযোগ, বিদেশী বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক একীকরণের জন্য ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্রুত ঘনিয়ে আসার সময বর্তমান বিরোধীরা কিছু ভারতীয় প্রকল্পের সমালোচনা করছে, এবং সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের কাছে সম্পদ বিক্রির অভিযোগ করছে।
অন্যদিকে, আফানাসি নিকিতিন সিমাউন্ট (এএনএস)-এ নতুন বিরোধ একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। কোবাল্ট ও ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ এএনএস পর্যন্ত কন্টিনেন্টাল শেল্ফ প্রসারিত করার জন্য ২০০৯ সালে ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি (ইউএনক্লস)-এর কাছে শ্রীলঙ্কার আবেদনের ফলে সিমাউন্টে অন্বেষণের জন্য ইন্টারন্যশনাল সিবেড অথরিটির (আইএসএ) কাছে ভারতের আবেদন স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এদিকে এএনএস-এর প্রতি ভারতের আগ্রহ তার শক্তি স্থানান্তর লক্ষ্যগুলির সঙ্গে ভালভাবে খাপ খায়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত তার শক্তি রূপান্তরে সহায়তা করার জন্য ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সনাক্ত করেছে, এবং মঙ্গোলিয়া, আর্জেন্টিনা, চিলি, অস্ট্রেলিয়া ও কার্লসবার্গ রিজে গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলি অন্বেষণ করছে৷ নিজের অগ্রাধিকার ও স্বার্থ বিবেচনা করে ভারত দ্রুত কূটনৈতিকভাবে সমস্যাটির সমাধান করতে চায়। শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদী ও ভারত-বিরোধী মনোভাবকে বাড়তে না–দিয়ে নতুন সরকারের সঙ্গে ভারত একটি পারস্পরিক উপকারী সমাধানের আশা করবে।
চিন ফ্যাক্টর
অবশেষে, নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন, ভারতের তরফে চিনের উপস্থিতি বৃদ্ধির আশঙ্কা অব্যাহত থাকবে। চিনের অর্থনৈতিক প্রভাব কলম্বোকে চিনের স্বার্থ ও কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দিতে বাধ্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫-২০১৯-এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চিনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ছিল মোট ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, কিন্তু ২০০৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চিনের কাছে শ্রীলঙ্কার ঋণ ০.৪৫ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছিল। এমনকি আজও দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছে শ্রীলঙ্কার মোট ১০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে চিনের কাছে ঋণের পরিমাণ ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে, এবং চিনই সর্বোচ্চ ঋণদাতা। এই হিসাবটিতে বাণিজ্যিক ঋণের ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ধরা হয়নি। তার অর্থনৈতিক আধিপত্যের পরিপ্রেক্ষিতে, চিন শ্রীলঙ্কায় বন্দর ইজারা দেওয়া, পরিকাঠামো প্রকল্পের প্রসার, গুপ্তচর জাহাজ ও সাবমেরিন ডকিং এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে অস্ত্র তৈরির চেষ্টাসহ ভারতের বিরুদ্ধে তার প্রভাব ব্যবহার করে চলেছে, এবং তা চালিয়ে যাবে। চিন শ্রীলঙ্কার আরও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারের জন্য নিজের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আগ্রহী। চিনের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক শ্রীলঙ্কাকে আরও সুযোগ করে দেবে, এবং ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটি আরও ভাল দর কষাকষি করতে পারবে। নির্বাচনের ফলাফলে এই কাঠামোগত বাস্তবতায় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ভারত এই বাস্তবতা ভাল করেই জানে। ভারত উপলব্ধি করে যে চিন শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের জন্য তার অর্থনৈতিক শক্তি ও প্রভাবকে কাজে লাগাতে থাকবে, এবং শ্রীলঙ্কার নেতারা তাঁদের স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে উভয় দেশের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বজায় রাখবেন। কাজেই ভারত নতুন সরকারের সঙ্গে জড়িত থাকবে, এবং ভৌগোলিক নৈকট্য ও ঐতিহাসিক বন্ধনকে কাজে লাগিয়ে বিকল্প উন্নয়ন অংশীদারিত্ব ও প্রকল্পের প্রস্তাব দেবে। জয়শঙ্করের বক্তব্য: “চিন একটি প্রধান অর্থনীতি। এটি সম্পদ স্থাপন করবে। এটি চিনের মতো করে জিনিসগুলিকে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করবে। কেন আমরা এর অন্যথা আশা করতে যাব? তবে এর জবাব দিতে চিন যা করছে তা নিয়ে অভিযোগ করা ঠিক নয়। জবাব হল, ঠিক আছে, আপনারা যা করছেন করুন। তবে আমাদের আরও ভাল করতে হবে।” এই নির্বাচন এবং আগামী সরকার সম্পর্কে ভারতীয় মনোভাব এই বাস্তববাদিতাকে সর্বোত্তমভাবে ব্যাখ্যা করে। তবুও, দিল্লি আশা করে যে তার প্রখর আপত্তিগুলিকে নতুন প্রশাসন সম্মান করবে, যেমন, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় চিনা নিযুক্তি সীমিত করা, এবং তামিল-অধ্যুষিত অঞ্চলে এর উপস্থিতি না-রাখা। তবে এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী মনোভাবের কারণে এটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে।
নির্বাচন কাছাকাছি এসে পড়েছে, এবং এখন ফলাফল ও তার পরবর্তী পর্যায় নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে জেলেদের নিয়ে বিরোধ, ১৩তম সংশোধনী, সংযোগ প্রকল্প, বিতর্কিত অঞ্চল এবং এই অঞ্চলে চিনা প্রবেশের মতো বিষয়গুলি ভারতের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। যাই হোক, সমস্ত প্রধান অংশীদারকে জড়িত করে ভারত নির্বাচনের ফলাফল এবং এর সম্ভাব্য ধাক্কাগুলির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে বলে মনে হচ্ছে। যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এই দলনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করা এবং এর চ্যালেঞ্জগুলির একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বার করাই সর্বোত্তমভাবে ভারতের স্বার্থ পূরণ করবে।
এই ভাষ্যটি মূলত ‘দ্য মর্নিং’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.