Author : Manoj Joshi

Published on Apr 21, 2023 Updated 0 Hours ago

উভয় দেশের মধ্যে বৈঠক চললেও ভারতকে ভারসাম্যচ্যুত করতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার নির্ভুলতার অভাবকে যদি চিন কাজে লাগাতে চায়, তা হলে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হবে না

ভারত-চিন সীমান্তে শান্তি অর্জনে ধীর পদক্ষেপ

ভারত ও চিন তাদের বিতর্কিত ৪০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৯৩, ১৯৯৬, ২০০৫ এবং ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত পুরনো চুক্তিগুলি দ্বারা রূপায়িত সম্পর্কটি ২০২০ সালে ভেঙে পড়ে যখন তিব্বতের লাদাখে চিনা সৈন্যদের জমায়েত শুরু হয় এবং তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সীমান্তে টহল দেওয়ার কাজে বাধা দেওয়ার জন্য প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর ছ’টি অবরোধ বিন্দু গড়ে তোলে।

২০২০ সালের জুন মাসে গলওয়ানে একটি সংঘর্ষের ফলে ২০ জন ভারতীয় এবং চারজন চিনা সৈনিক নিহত হন, যা ১৯৭৫ সালের পর থেকে এলএসি বরাবর এহেন প্রথম ঘটনা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তাওয়াংয়ের উত্তর-পূর্বে ইয়াংটসেতে চিন-ভারত সংঘর্ষ এ কথাই দর্শায় যে, শুধু মাত্র লাদাখে নয়, সমগ্র এলএসি বরাবর নতুন ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে।

সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত করার প্রচেষ্টা

ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের পূর্ব এশিয়া বিভাগ ও ভারতের বিদেশমন্ত্রীর অফিসের যুগ্মসচিব শিল্পক আম্বুলে এবং চিনের বিদেশমন্ত্রকের অধীনস্থ ডিপার্টমেন্ট অব বাউন্ডারি অ্যান্ড ওশান অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর জেনারেল হং লিয়াং-এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চিন-ভারত সীমান্ত বিষয়ক ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশনের (ডব্লিউএমসিসি) ২৬তম বৈঠক উপলক্ষে ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁরা বেজিংয়ে মিলিত হন। এটি ছিল ২০২০ সালের ঘটনার অব্যবহিত পরে হওয়া ১১ দফার ভিডিয়ো কনফারেন্সের পরবর্তী সময়ে প্রথম শারীরিক ডব্লিউএমসিসি সভা। গত তিন বছরে ধৈর্যশীল আলোচনার মাধ্যমে উভয় পক্ষ ছয়টি অবরোধ বিন্দুর মধ্যে চারটি – গলওয়ান, প্যাংগং সো, গোগরা পোস্ট এবং জিয়ানান পাসের কাছে (পিপি১৫) মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু দু’টি প্রধান এলাকা এখনও অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে এবং ডেপসাং বালজ ও চার্ডিং নিংলুং জংশন ডেমচোক এলাকার প্রায় ১০০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল এই বিতর্কের আওতায় পড়ে।

বৈঠকের পরে ভারতীয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, ‘অবশিষ্ট এলাকা’য় বিচ্ছিন্নকরণের প্রস্তাবগুলি ‘একটি উন্মুক্ত এবং গঠনমূলক পদ্ধতি’তে আলোচনা করা হয়েছে যা ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বাভাবিকতাকে পুনরুদ্ধারের জন্য পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।’

প্রত্যাশিতভাবেই চিনা বিজ্ঞপ্তিতে ‘গলওয়ান উপত্যকা-সহ চারটি অবরোধ বিন্দুতে দুই দেশের সংঘর্ষ বিরতি করা সম্ভব হয়েছে’… এ কথা জানানোর পাশাপাশি উভয় পক্ষই ‘প্রতিষ্ঠিত রেখা’ বরাবর কাজ করা এবং পশ্চিম সীমান্ত সংক্রান্ত অবশিষ্ট সমস্যাগুলির নিষ্পত্তি করার চেষ্টার কথা বলে। তবে যা আরও উল্লেখযোগ্য তা হল, এটিতে বলা হয়েছে যে, ‘দুই পক্ষ সীমান্ত পরিস্থিতি আরও সহজ করে তোলার জন্য অন্যান্য ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে এবং সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিকীকরণ ও নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে উন্নীত করার প্রচেষ্টা করতে সম্মত হয়েছে।’

এই ‘অন্য ব্যবস্থাগুলি’ ঠিক কী হতে পারে যা, ২০২০ সালের ঘটনাগুলির ফলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে শুরু হওয়া বিপর্যস্ত পরিস্থিতির স্বাভাবিকীকরণ করতে সক্ষম?

বেশ কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হলেও সম্ভবত একটি (গত তিন বছরের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে) এলএসি-র অন্যান্য অংশকে অনুরূপ নো-প্যাট্রল জোন বা টহলবিহীন অঞ্চলে রূপান্তরিত করার বিষয় সংক্রান্ত। অব্যবহিত ভাবেই এটি ডেপসাং এবং চার্ডিং নালার অবশিষ্ট দু’টি অঞ্চলে বোঝাপড়া সংক্রান্ত একটি প্যাকেজের সূচনা করতে পারে। আলোচনায় সীমান্ত ব্যবস্থাকে সংশোধন করার অর্থ হল ডব্লিউএমসিসি-কে এমন একটি ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা, যেখানে সামরিক ও অসামরিক আধিকারিক উভয়েই অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

১৯৯৩ সাল থেকে আস্থা নির্মাণ ব্যবস্থার পুরো পরিসরটি এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল যে, উভয় পক্ষই এলএসি-র বিস্তৃতি স্বীকার করলেও তাদের মধ্যে ১৮-২০টি বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য ছিল। ১৯৯৩ এবং ১৯৯৬ সালের চুক্তিগুলিতে বিশেষ করে এই সকল পার্থক্য শনাক্ত এবং সমাধান করার গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দশক যত এগিয়েছে, চিনারা কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ প্রদান না করেই একটি স্পষ্ট এলএসি সংজ্ঞায়িত করার কাজে পিছু হঠেছে; এর ফল স্বরূপ, ভারতীয় ও চিনা টহল বাহিনী প্রায়শই একে অন্যের সঙ্গে হাতাহাতি, সংঘাত, বাগ্‌বিতণ্ডা এবং এমনকি পাথর ছোড়ার মতো কাজেও জড়িয়ে পড়ে। এবং তার অন্তিম পরিণতি হয় ২০২০ সালের ঘটনা।

টহলবিহীন অঞ্চলে

উভয় পক্ষের আওতাভুক্ত অভিন্ন সাধারণ অঞ্চলগুলি টহলবিহীন অঞ্চলের আওতাভুক্ত থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ২০২০ সালের আগে এই বিরোধপূর্ণ দাবি সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত উভয় পক্ষই টহল দিয়েছে এবং এই সংক্রান্ত একটি প্রোটোকল ছিল যে, যদি দুই টহলদারী পক্ষ সম্মুখীন হয়, তা হলে তারা থামবে এবং অন্য পক্ষকে তাদের এলাকায় ফিরে যেতে বলার জন্য ব্যানার প্রদর্শন করবে। এর পর নির্ধারিত পাঁচটি সীমান্তস্থিত সমাবেশ বিন্দুর একটিতে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা হয়।

২০২০ সালে একটি ভারতীয় প্রকাশনার এক নিবন্ধে চিনা সাংবাদিক-গবেষক কিয়ান ফেং পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ‘জোন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ বা ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণের অঞ্চল’-এর ধারণাটি এমন কিছু অঞ্চলে ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ বা ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণের রেখা’কে প্রতিস্থাপন করতে পারে যেখানে কোনও সুস্পষ্ট ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বা জনসংখ্যা নেই। জনসংখ্যা সমন্বয়ের প্রয়োজন না হলে অন্য এলাকাগুলিকেও ‘সীমান্ত বেল্ট’ হিসাবে সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। তবে ধারণাটি কাজ করবে কি না তা নির্ভর করবে দুই পক্ষের আলাপ-আলোচনার অভিপ্রায়ের উপর। নিয়ন্ত্রণ রেখার নির্ভুলতার অভাবকে যদি চিন কাজে লাগাতে চায়, তা হলে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হবে না।

ধারণাটি আসলে চিনা প্রিমিয়ার ঝোউ এনলাইয়ের মূল প্রস্তাবেরই প্রতিধ্বনি যার ফলে আমরা আজকের এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি। ১৯৫৯ সালের অক্টোবর মাসে কংকা লা-য় একটি ভারতীয় পুলিশবাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয় যার ফলে ১০ জন কর্মী নিহত হন এবং এক ডজন সেনাকে আটক করা হয়।

সেই সময় ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে যে হইচই পড়ে যায়, তা শান্ত করার জন্য ঝোউ ১৯৫৯ সালের ৭ নভেম্বর লেখা একটি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে প্রস্তাব দেন, যাতে উভয় পক্ষই ‘তথাকথিত’ ম্যাকমেহন লাইন থেকে ২০ কিলোমিটার পিছনে সরে আসার পাশাপাশি ‘পশ্চিম দিকের উভয় দেশের রেখা বরাবর অঞ্চল পর্যন্তই দুই পক্ষ নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করে।’

লক্ষ্যবিন্দুর পরিবর্তন

সেই সময়ে বা এমনকি এখনও ঠিক কোন বিন্দুতে চিনারা ‘পশ্চিমে নিয়ন্ত্রণ’ অনুশীলন করে, সে বিষয়ে কোনও বিশদ মানচিত্র উপলব্ধ নয় বলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। আর সেটাই হল সমস্যার মূল কারণ। বিশেষ করে লাদাখ সীমান্তের ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে চিনারা ইচ্ছামতো লক্ষ্যবিন্দু স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।

উত্তেজনা সত্ত্বেও ভারত ও চিনের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা একে অপরের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক চালিয়ে গিয়েছেন; ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্চ মাসের শুরুর দিকে নয়াদিল্লিতে জি২০ বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে চিনা বিদেশমন্ত্রী কিন গাং-এর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

২০২২ সালের মার্চ মাসে কিনের পূর্বসূরি ওয়াং ই ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য নয়াদিল্লি সফর করেন। ওয়াং-এর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে জয়শঙ্কর এই বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলেন যে, পূর্ব লাদাখ পরিস্থিতির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না। সম্প্রতি তিনি বলেন যে, ২০২০ সালে উভয় পক্ষ যে কথায় সম্মত হয়েছিল, তা মেনে চলতে চিনা অক্ষমতা তাদের সম্পর্ককে ‘ভঙ্গুর’ এবং ‘বেশ বিপজ্জনক’ করে তুলেছে।

২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এলএসি বরাবর সমস্ত অবরোধ বিন্দুতে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদকে দূর করার নিরিখে চিনাদের রাজি করাতে সর্বোত্তম চেষ্টা করেছিলেন। চিনারা তাঁর প্রস্তাব উপেক্ষা করে। ২০২০ সালের ঘটনাপ্রবাহ ১৯৯৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ধৈর্যের সঙ্গে গড়ে ওঠা বিশ্বাসকে ধ্বংস করেছে৷ চিন-ভারত সম্পর্কের স্বাভাবিকতার মাপকাঠিটি তাই এখন অনেকটাই উঁচুতে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.