-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার আঞ্চলিক সরকারগুলি এশিয়ার জলবায়ু ভবিষ্যৎ গঠন করছে। জাতীয় নীতিগুলি কি তাদের উচ্চাভিলাষী রূপান্তর পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে?
এই নিবন্ধটি রাইসিনা এডিট ২০২৫-এর অংশ।
গত ৫০ বছরে আঞ্চলিক নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে এশিয়া দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এশিয়া বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৫৯ শতাংশের আবাসস্থল। ২০৪০ সালের মধ্যে মহাদেশটি বিশ্বব্যাপী গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪২ শতাংশের ভাগীদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এই অঞ্চলকে অভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রে উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অনন্য অবস্থানে পৌঁছে দেবে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং বর্তমান অনুমানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, প্যারিস চুক্তির অধীনে ১.৫ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত পথে নেই এবং এটি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, যেখান থেকে ফিরে আসার সম্ভাবনাও নেই। তাই এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ায় জাতীয় জলবায়ু উদ্যোগগুলি শক্তিশালী হলেও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জলবায়ু পদক্ষেপ একাধিক স্তরে অনুসরণ করা যেতে পারে এবং তা করা উচিতও। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারগুলি বাস্তবায়ন ও নীতি পরিবর্তনকে চালিত করার ক্ষমতা রাখলেও আঞ্চলিক সরকারগুলি আদর্শ উদ্যোক্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এবং পরিবর্তনের পক্ষে ও জলবায়ু উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আঞ্চলিক সরকারগুলি আরও উচ্চাভিলাষী জলবায়ু কর্মকাণ্ডের জন্য সহায়তা ব্যবস্থার দাবি করেছে ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছে। স্থানীয় সমাধান প্রদান, সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা ও আঞ্চলিক উন্নয়ন সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তিশালী জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রচার এবং সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক সরকারগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আঞ্চলিক উদ্যোগগুলি পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং এটি একটি প্রচেষ্টা, যা ১.৫ লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতীয় সরকার পর্যায়ের সঙ্গে আঞ্চলিক উদ্যোগগুলিকে সমান ভাবে সহায়তা করতে হবে।
এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।
ভারতে জলবায়ু শাসন ব্যবস্থা একটি মিশ্র বহুস্তরীয় কাঠামোতে বিকশিত হয়েছে, যেখানে নীতিনির্ধারকরা পরামর্শ ও প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে উপ-জাতীয় শক্তিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এই কাঠামো একাধিক শক্তিকে একে অপরকে শক্তিশালী করতে সক্ষম করে। তবে উপ-জাতীয় প্রচেষ্টা কেন্দ্রীয় ভাবে বাধ্যতামূলক জলবায়ু নীতিগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যের উপর নির্ভর করে, যা বৃহত্তর উন্নয়ন ও অভিযোজন লক্ষ্যগুলিকে সমর্থন জোগায়। একই ভাবে, দক্ষিণ কোরিয়ায় উপ-জাতীয় সরকারগুলি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু কর্মসূচি পরিচালনা করলেও কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পদের উপর নির্ভরতার কারণে তহবিল ও ক্ষমতা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ উপ-জাতীয় নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য অভিন্ন সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে শেখা ও শক্তিশালী জাতীয় পদক্ষেপের জন্য যৌথ আহ্বানের পক্ষে যৌথ ভাবে সমর্থন করার সুযোগ প্রদান করে। এশিয়া ও আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতৃস্থানীয় জলবায়ু শক্তি হিসাবে উভয় দেশই একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিশীল পরিবর্তনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উপ-জাতীয় গতিকে কাজে লাগাতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যায্য রূপান্তর: উপ-জাতীয় নেতৃত্ব
বিশ্বের ১৩তম বৃহত্তম ও এশিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমনকারী দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শিল্পায়নের ফলে উপকৃত হয়েছে। একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর অর্জনে গ্লোবাল সাউথকে সমর্থন করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব দক্ষিণ কোরিয়াকেই বহন করতে হবে।
তবে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ জিএইচজি নির্গমন হ্রাস করার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার ২০২১ সালের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাবের জন্য সমালোচিত হয়েছে এবং ১.৫ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষার তুলনায় জাতীয় নীতি ও পদক্ষেপ অপ্রতুল বলে বিবেচিত হয়েছে।
উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত চুংনাম প্রদেশটি দেশের সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমনকারী প্রদেশ। এটি দেশের প্রায় অর্ধেক কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ ক্ষমতা ও উচ্চ কার্বন-নির্গমনকারী শিল্পের আবাসস্থল, যা অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি শিল্প উৎপাদন করে। তা সত্ত্বেও চুংনাম প্রদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় জ্বালানি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করেছে।
চুংনাম তার এনার্জি কনভার্সন ভিশন ২০৫০-এর উন্মোচন করে, যার লক্ষ্য ছিল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবস্থায় রূপান্তর ও প্রাকৃতিক ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে দেশের পরিষ্কার শক্তি রূপান্তরে অবদান রাখা।
২০১৭ সালে চুংনাম তার এনার্জি কনভার্সন ভিশন ২০৫০-এর উন্মোচন করে, যার লক্ষ্য ছিল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবস্থায় রূপান্তর ও প্রাকৃতিক ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে দেশের পরিষ্কার শক্তি রূপান্তরে অবদান রাখা। একই বছরে চুংনাম ‘২০১৭ আন্তর্জাতিক কয়লা পর্যায়ক্রমিক সম্মেলন ও শক্তি রূপান্তর’ চালু করে এবং দক্ষিণ কোরীয় ও বিদেশ মন্ত্রক, আইন প্রণেতা ও অন্য উপ-জাতীয় সরকারগুলিকে ন্যায্য রূপান্তর পথগুলি অন্বেষণ করতে এবং বিশ্বব্যাপী অতিথিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খল নির্মাণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। চুংনাম সরকার সক্রিয় ভাবে ন্যায্য রূপান্তর অনুসরণ করছে, কার্বন নিরপেক্ষতার প্রচার করছে, ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলিকে সহায়তা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে এই অঞ্চলটিকে গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র করে তুলেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নির্গমন ৩৫ শতাংশ হ্রাস ও ২০৪৫ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে, যা জাতীয় লক্ষ্যের চাইতেও ৫ বছর আগে প্রতিশ্রুতি পালনের অঙ্গীকারকেই দর্শায়।
এই লক্ষ্যগুলির অংশ হিসেবে চুংনাম ১০ বিলিয়ন ওয়ান (বা ৬.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের একটি ‘জাস্ট ট্রানজিশন ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জাস্ট ট্রানজিশন অধ্যাদেশ কার্যকর করা, একটি নিবেদিত জাস্ট ট্রানজিশন কমিটি গঠন করা এবং বিশেষায়িত সংস্থা তৈরি করা। অঞ্চলটি একটি ‘জাস্ট ট্রানজিশন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম’ শুরু করা এবং রূপান্তর সম্পর্কিত প্রকল্পগুলির জন্য জনসাধারণের আহ্বানকে সমর্থন করার জন্যও কাজ করছে। এই পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল রূপান্তরের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান সঙ্কট মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য স্থিতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান নিশ্চিত করা। জাস্ট ট্রানজিশনের বিষয়টি দ্বিদলীয়ই রয়ে গিয়েছে এবং গভর্নর ইয়াং সেউং-জো-র (ডেমোক্র্যাটিক পার্টি) পরে গভর্নর কিম তাই-হিউম (পিপল পাওয়ার পার্টি) এই উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছেন। গভর্নর কিম এমনকি এই প্রচেষ্টাগুলিকে সমর্থন করার জন্য জাতীয় পরিষদের কাছ থেকে অতিরিক্ত তহবিলের অনুরোধ করেছেন, যা অঞ্চলের রূপান্তরে অব্যাহত বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তাকে দর্শায়। ২০১৮ সালে চুংনাম পাওয়ারিং পাস্ট কোল অ্যালায়েন্স-এ (পিপিসিএ) যোগদানকারী প্রথম এশীয় উপ-জাতীয় রাজ্য হয়ে ওঠে এবং ২০২১ সালে এটি এশিয়া প্যাসিফিক চেয়ার ফর আন্ডার ২ কোয়ালিশন-এর ভূমিকা পালন করে। কপ২৬-এর পরে ২০২১ সালে ২০৪৫ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করার সময় চুংনামের প্রতিশ্রুতি উচ্চাকাঙ্ক্ষার শিখর ছুঁয়েছে, যা ২০৫০ সালের জাতীয় প্রতিশ্রুতির চেয়ে পাঁচ বছর এগিয়ে।
এই পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল রূপান্তরের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান সঙ্কট মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য স্থিতিশীল ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান নিশ্চিত করা।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চুংনাম প্রদেশ নিজেকে একটি কার্বন-নিরপেক্ষ অর্থনৈতিক বিশেষ প্রদেশ ঘোষণা করে এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় কার্বন নিরপেক্ষতা বৃদ্ধিতে তার নেতৃত্বকে পুনর্ব্যক্ত করে। আরই১০০ পরিকল্পনার মাধ্যমে নতুন শিল্প কমপ্লেক্স তৈরি করা হবে, যেখানে বিদ্যমান শিল্প কমপ্লেক্সগুলি সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনাগুলিকে সমন্বিত করবে। ইতিমধ্যে, অফশোর অর্থাৎ দেশের বাইরে বায়ু প্রকল্পগুলির কাজ এগিয়ে চলেছে এবং এই বছর পাঁচটি পরিকল্পিত বায়ু খামারের মধ্যে একটির নির্মাণ শুরু হবে। উপরন্তু, একটি স্থিতিশীল হাইড্রোজেন বাস্তুতন্ত্রকে সমর্থন করার জন্য হাইড্রোজেন সিটি প্রকল্পের পাশাপাশি সবুজ হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদন করাও সম্ভব হবে।
দূষণহীন জ্বালানি রূপান্তরে এশিয়ার দেশগুলির তরফে সহযোগিতা
ভারতে জনসংখ্যা ও জিডিপি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে জ্বালানির চাহিদাও বেড়েছে। ফলে সরকার ২০৭০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য নির্গমন অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জ্বালানি ক্ষমতার ৫০ শতাংশ পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারত পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে নেতৃত্ব দেখিয়েছে এবং তার ক্ষমতা স্থাপনে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এটি উন্নয়ন ও জলবায়ু কর্মের দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। জ্বালানি সরবরাহের ব্যবধান পূরণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা এখনও উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পায়নি।
ভারতের জ্বালানি রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন, যা দেশকে দূষণহীন হাইড্রোজেনের উৎপাদন, ব্যবহার ও রফতানির জন্য একটি বিশ্বব্যাপী কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। উপ-জাতীয় সরকারগুলি সবুজ হাইড্রোজেন উন্নয়নকে সমর্থন করার আগ্রহ দেখিয়েছে। গুজরাতের মতো অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে দূষণহীন হাইড্রোজেন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার ক্ষমতা ২১.৬ গিগাওয়াট। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষমতা ১০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করারও পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যগুলিকে শক্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা সমন্বিত করা ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করার উপর মনোযোগ দিতে হবে।
ভারতের জ্বালানি রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন, যা দেশকে দূষণহীন হাইড্রোজেনের উৎপাদন, ব্যবহার ও রফতানির জন্য একটি বিশ্বব্যাপী কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
এই বছর দক্ষিণ কোরিয়ার উচিত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা, বিশেষ করে এনডিসিকে শক্তিশালী করা এবং নেট-শূন্য নির্গমন অর্জনের জন্য একটি শক্তিশালী দীর্ঘমেয়াদি হ্রাস কৌশল তৈরির জরুরি কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতাও অপরিহার্য। একই রকম অর্থনৈতিক গতিপথ, শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সুপ্রতিষ্ঠিত জ্বালানি সহযোগিতার কারণে ভারতও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে।
সৌরশক্তি স্থাপনে ভারতের নেতৃত্ব এবং রুফটপ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোলার নীতিতে প্রগতিশীল নীতি কাঠামো দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য অনুমতি প্রদানকে সহজতর করা, প্রযুক্তিগত নির্ভরযোগ্যতা উন্নত করা এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে জনসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করে। ভারতের আন্তর্জাতিক সৌর জোট (আইএসএ) দক্ষিণ কোরিয়ার পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ২০৩০ পরিকল্পনার সঙ্গে নিবিড় ভাবে সামঞ্জস্য রেখে রুফটপ সোলার, মিনি-গ্রিড এবং সৌর তাপীকরণ ব্যবস্থার মাত্রার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি মঞ্চও প্রদান করে। উপ-জাতীয় স্তরে গুজরাত, রাজস্থান ও তামিলনাড়ুর মতো ভারতীয় রাজ্যগুলি সৌর ও বায়ুশক্তি সম্প্রসারণে পথিকৃৎ এবং কর্নাটক ও মহারাষ্ট্র পুনর্নবীকরণযোগ্য-বান্ধব নিয়মকানুন ও বিনিয়োগ আকর্ষণে নেতৃত্ব দেয়। এই উদ্যোগগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানিকে ত্বরান্বিত করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার আঞ্চলিক জ্বালানি রূপান্তর কৌশলগুলির জন্য অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। ইতিমধ্যেই একাধিক অংশীদারদের মধ্যে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ন্যায্য রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার আঞ্চলিক প্রচেষ্টা থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতার কারণে আটকে থাকা সম্পদের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল শিক্ষা নিতে পারে।
শক্তিশালী বিশ্বস্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, জলবায়ু কূটনীতি, দূষণহীন জ্বালানি নীতি এবং উপ-জাতীয় উদ্যোগের ক্ষেত্রে বর্ধিত সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য নেট-জিরো লক্ষ্যের দিকে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য ভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে।
উপসংহার
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি জলবায়ু কর্মকাণ্ডে দায়বদ্ধতা ও অগ্রগতি সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উপ-জাতীয় নেতৃত্ব ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। জলবায়ু উদ্যোগ ও নীতি উন্নয়নে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের উপ-জাতীয় সরকারগুলির প্রচেষ্টা জলবায়ু কর্মকাণ্ডের গুরুত্বকেই দর্শায়। উভয় উপ-জাতীয় সরকারই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু পরিকল্পনার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে এবং জাতীয় জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সর্বাত্মক কৌশল তৈরি করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংযোগ - বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান - সবুজ হাইড্রোজেনের (জিএইচ২) চাহিদা কেন্দ্র হিসাবে শিল্প কার্বনমুক্তকরণের জন্য একটি কৌশলগত সুযোগ উপস্থাপন করে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান তাদের ভারী শিল্পগুলিকে কার্বনমুক্ত করার জন্য জিএইচ২-র স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে। অন্য দিকে ভারত উদীয়মান বৈশ্বিক হাইড্রোজেন বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। আঞ্চলিক ভাবে নির্দিষ্ট জ্ঞান ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা-সহ ভারতের আঞ্চলিক সরকারগুলি জিএইচ২ উৎপাদন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তা উভয় দেশের বৃহত্তর জলবায়ু প্রতিশ্রুতিকে সশক্ত করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান তাদের ভারী শিল্পগুলিকে কার্বনমুক্ত করার জন্য জিএইচ২-র স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে। অন্য দিকে ভারত উদীয়মান বৈশ্বিক হাইড্রোজেন বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে।
জাতীয় সরকারগুলির জন্য আঞ্চলিক সরকারগুলির অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রেরণাগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের আঞ্চলিক জ্ঞান স্থানীয় স্বার্থকে সর্বোত্তম ভাবে পরিবেশন করতে সক্ষম এমন ভৌগোলিক ভাবে উপযুক্ত জলবায়ু সমাধানের সুযোগ করে দেয়। জাতীয় সরকারগুলিকে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ করে এই প্রচেষ্টাগুলিকে সক্রিয় ভাবে সমর্থন করতে হবে। উন্নত অর্থনীতির অন্যতম ও প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত উভয়ই তাদের শিল্প কার্বনমুক্তকরণ কৌশলের মূল স্তম্ভ হিসাবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে মসৃণ রূপান্তর নিশ্চিতকারী বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার দায়িত্ব ভাগ করে নেয়।
কপ২৮ ও তার পরেও এশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্ভরতা হ্রাস করা একটি প্রধান লক্ষ্য হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা অপরিহার্য। কপ২৮ ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষমতা তিন গুণ ও শক্তি দক্ষতা দ্বিগুণ করার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্ভরতা হ্রাস করা এবং তাদের জাতীয় প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য এশীয় দেশগুলির মতাদেশকে সশক্ত করেছে। দক্ষতা ভাগ করে নেওয়া, প্রযুক্তি বিনিময় করা এবং একে অপরের শক্তি পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত দূষণহীন শক্তি গ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং অঞ্চলে যৌথ জলবায়ু নেতৃত্ব প্রদর্শন করার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে এই বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতিগুলির সফল বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত করতে পারে।
গিওরি কিম দক্ষিণ কোরিয়ার সলিউশনস ফর আওয়ার ক্লাইমেট-এর (এসএফওসি) ক্লাইমেট ডিপ্লোমেসি অ্যাসোসিয়েট এবং আর্বান স্টাডিজ, ভূগোল ও ভূ-স্থানিক ক্ষেত্র বিশেষজ্ঞ।
মায়া লিসেট দক্ষিণ কোরিয়ার সলিউশনস ফর আওয়ার ক্লাইমেট-এর (এসএফওসি) ক্লাইমেট ডিপ্লোমেসি বিভাগের ইন্টার্ন এবং জলবায়ু নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গবেষণা করছেন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Gyoorie Kim is a Climate Diplomacy Associate at Solutions For Our Climate (SFOC) in South Korea, with expertise in urban studies, geography, and spatial analysis. ...
Read More +Maya Lycett is an intern with the Climate Diplomacy Team at Solutions For Our Climate (SFOC) in South Korea, focusing on environmental policy and international ...
Read More +