সম্প্রতি, মাংস খাওয়ার একটি পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ স্লোভেনিয়ায় স্থিতিশীল জীবনযাপন এবং খাদ্য উৎপাদন সংক্রান্ত একটি উদ্দীপ্ত গণবিতর্কে অনুঘটকের কাজ করেছে। ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস অনুসারে, প্রত্যেক স্লোভেনীয় প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৯০ কিলোগ্রাম মাংস গ্রহণ করেন। এটি ইইউ-র মাথাপিছু বার্ষিক ৭০ কিলোগ্রাম গড় মাংস ভক্ষণের সীমাকে অনেকটাই অতিক্রম করে গিয়েছে।
নির্বাচন খাদ্য বিতর্কে পরিবর্তন এনেছে
সত্যি কথা বলতে, স্লোভেনিয়ায় মাংস ভক্ষণের পরিসংখ্যান বছরের পর বছর ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না। যেটুকু সামান্য পরিবর্তিত হয়েছে, তা হল একটি মাংসভিত্তিক খাদ্যের সংমিশ্রণ, যেখানে প্রাথমিক পছন্দ হিসেবে শূকরের মাংসের কাছাকাছি উঠে এসেছে পোলট্রি এবং অনেক দূরবর্তী তৃতীয় স্থানে রয়েছে গরুর মাংস।
এ ছাড়াও উল্লেখ্য যে, মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্লোভেনিয়া শেষ ২০০১ সালে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছিল। তারপর থেকে এই পরিসংখ্যান ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে ২০১৬ সালে তলানিতে এসে ঠেকে, যখন দেশের গবাদি পশু এবং মাংস উৎপাদনকারীরা মাংসের জাতীয় চাহিদার মাত্র ৭৬ শতাংশ পূরণ করতে সমর্থ হন। তারপর থেকে এই উৎপাদনের পরিমাণ শুধুই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২১ সালে মোট চাহিদার ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
আশ্চর্যজনক হলেও এ কথা সত্যি যে, শূকরের মাংসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন স্বয়ংসম্পূর্ণতার হার লক্ষ করা যায় (মাত্র ৪৩ শতাংশ), যেখানে গরুর মাংস এবং হাঁস-মুরগির উৎপাদন জাতীয় চাহিদার সীমাকে অতিক্রম করে যায়।
তবে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাংস উৎপাদন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খামার সংক্রান্ত নীতি এবং কৃষি অর্থনীতির নিরিখে উদ্বেগের কারণ ছিল। এমনকি এই সব বৃত্তের বাইরে গবাদি পশু উৎপাদন এবং মাংসের ব্যবহারকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা হিসাবে তুলে ধরা হয়। উন্নত বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো গরু থেকে উৎপন্ন মিথেন (গণমাধ্যমের ভাষায় ‘গরুর অন্ত্র থেকে উৎপন্ন গ্যাস বা কাউ ফ্ল্যাটুলেন্স’ হিসেবে পরিচিত) হ্রাস এবং তার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করা ছিল কম মাংস খাওয়ার আর্জির নেপথ্যে এক বিশাল প্রেরণা।
২০২২ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময়ে অন্ততপক্ষে স্লোভেনিয়ায় এই বিতর্কের প্রকৃতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। যদিও মাংসের ব্যবহার এখনও একটি পরিবেশগত এবং স্থিতিশীলতার সমস্যা, যা শক্তি খরচ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার নিরিখে একটি বৃহত্তর বিতর্কের অংশ হয়ে উঠেছে। জাতীয় আলাপ-আলোচনায় এই পরিবর্তনের নেপথ্যের কারণগুলি ছিল যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনই অনন্য।
নিরামিষ খাদ্যাভ্যাস থেকে শক্তি-স্বনির্ভরতা
সংক্ষেপে বললে অতি নির্বাচনী বছরগুলির একটি মিশ্রণ (স্লোভেনীয়রা ২০২২ সালে আট বার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন), রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক আলোড়নকারী পরিবর্তন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসন এবং নতুন উদারপন্থী প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলব-এর এক সুনির্দিষ্ট দক্ষতা… এ সবই মাংসভক্ষণ বিতর্ককে নিছক ‘কাউ ফার্ট’ (গরুর বায়ু নিঃসরণ) বিষয় থেকে ‘শক্তি সুরক্ষা’ বিষয়ে পরিবর্তিত করার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।
বিশেষত শেষ দু’টি বিষয়, ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে গোলব-এর অভিজ্ঞতা সত্যিই এই বিতর্কের পর্দা উন্মোচন করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, স্লোভেনিয়ায় ২০২২ সালের পার্লামেন্টারি নির্বাচনী প্রচার প্রতিবেশীর উপর প্রথম দফার রুশ হামলার সঙ্গে সমাপতিত হয়। সেই সময়ে ইউক্রেনীয় শস্যের নির্ভরযোগ্য রফতানির আকস্মিক ক্ষতিতে বিশ্ব অথৈ জলে পড়ে এবং প্রথমবারের জন্য রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার সুদূরপ্রসারী জোরালো ক্ষতিকর প্রভাব অনুভব করে। একই সঙ্গে রবার্ট গোলব – যিনি দক্ষিণপন্থী জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জানেজ জানসা-র বাম-উদারপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী – শক্তির চাহিদা কমানোর উপায় হিসেবে মাংসভক্ষণের পরিমাণ হ্রাসের বিষয়টিকে তুলে ধরতে সক্ষম হন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, দেশের অন্যতম বৃহৎ পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি সংস্থার সিইও হিসেবে গোলব-এর বছরগুলি এই বিষয়ে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতাকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। এর ফলে তাঁকে শুধুমাত্র একজন বৃক্ষপ্রেমী, শাকাহারী পরিবেশপন্থী বলে দাগিয়ে দিয়ে হাসির খোরাক করে তোলা সম্ভব ছিল না। বরং তিনি এপ্রিল মাসের নির্বাচনে জয়লাভ করে জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠেন। এর সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণ স্লোভেনীয়র দৈনিক খাদ্যে মাংসের পরিমাণ হ্রাস করার বিষয়টি প্রচারাভিযানের মোড়ক থেকে বেরিয়ে সরকারি নীতির অংশ হয়ে ওঠে।
মিশন লাইফের প্রতিধ্বনি
সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত ভাবেই এর ফলে গোলব মিশন লাইফের সুরকেই প্রতিধ্বনিত করেছেন, যা ২০২৩ সালে ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের অন্যতম স্তম্ভ।
বিশেষত মিশন লাইফই প্রত্যেক মানুষকে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখার আর্জি জানিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে গণতান্ত্রিক করে তোলে। তা সে খরচ হ্রাস হোক, জোগানের সঙ্গে অভিযোজন হোক অথবা নীতি সংশোধন করেই হোক না কেন, আপাতদৃষ্টিতে ছোট স্বতন্ত্র পদক্ষেপগুলি একত্র হলে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব।
দুই মিলিয়ন জনসংখ্যাবিশিষ্ট একটি পৃথক দেশ এবং ৫২.২ বিলিয়ন ইউরো (৫৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) জিডিপিসম্পন্ন স্লোভেনিয়ার অবশ্যই জি২০ সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্যতা বা অর্থনীতি নেই। কিন্তু জি২০-র এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসাবে তার কণ্ঠস্বর পরোক্ষ ভাবে হলেও শোনা যেতে পারে।
এবং ইইউ-এর মধ্যে নতুন স্লোভেনীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন দক্ষতা রয়েছে, যা তাঁকে বর্তমান প্রতিবন্ধকতার উত্তরের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে অনন্যভাবে পারদর্শী করে তোলে। যেমন, রবার্ট গোলব শক্তির বাজার এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতাকে চমৎকার ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। এবং এ কাজে তিনি দৃশ্যত এতটাই সফল হয়েছেন যে, অপেক্ষাকৃত দীর্ঘমেয়াদসম্পন্ন ইইউ নেতাদের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।
ঠিক এই কারণেই ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তাঁর সাম্প্রতিকতম ভাষণ এতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বক্তব্যের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে শক্তি নিরাপত্তা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা উল্লেখ করে তিনি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের লভ্যতা সুরক্ষিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি স্পষ্টতই কম মাংসভক্ষণের কথা এবং বিকল্প হিসাবে উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। গোলবের মতে, এটি ইইউ-এর দূষণহীন রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি শক্তির চাহিদার উপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে, সেই সঙ্গে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উত্সগুলির রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করবে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তাঁর বক্তব্যে গোলব জোর দিয়েছিলেন যে, তিনি মাংসভক্ষণ বন্ধ করার কথা বলেননি, তার পরিমাণ হ্রাস করার কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন যে, ব্যক্তিগত স্তরে এই ধরনের পরিবর্তনগুলি আনা জরুরি হলেও তা অবশ্যই স্বেচ্ছায় এবং ধীর গতিতেই হওয়া উচিত।
এই সকল বিষয়ের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী গোলব ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর মিশন লাইফের প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত পদক্ষেপের পক্ষাবলম্বন করেছেন, শক্তি উৎপাদন এবং সরবরাহে পরিবর্তন আনার জন্য জোর দিয়েছেন এবং উপরোক্ত পদক্ষেপগুলিকে সমর্থনের জন্য খসড়া নীতি তৈরি করেছেন।
নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া
এ কথা বলাও অত্যুক্তি হবে না যে, নতুন স্লোভেনিয়া সরকারের অগ্রাধিকারগুলি আরও বিস্তৃত ভাবে ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির অগ্রাধিকারের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানোর উপায় হিসাবে সৌরশক্তির উপর মনোনিবেশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ কথাও সত্যি যে, দূষণহীন রূপান্তর শুধুমাত্র শক্তির এক উৎস থেকে অপর উৎসে যাওয়া নয়, বরং আরও পরিশ্রুত শক্তির ব্যবহার।
দূষণহীন রূপান্তরের অর্থ হল ধাপে ধাপে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিন্যাসে ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিবর্তন আনা।
এ কথা মাথায় রেখে বলা যায়, দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের নতুন প্রেসিডেন্টের সপ্তাহে অন্তত একবার তাঁর রোজকার খাদ্যতালিকা থেকে মাংস অপসারণ করার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আমিষাশী ও মাংসভক্ষণকারী প্রেসিডেন্ট নাতাশা পিরক মুসার একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাত্কারে গোলবের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে উল্লেখ করেন যে, এই পদক্ষেপ প্রতি সপ্তাহে তাঁর ব্যক্তিগত মাংস ভক্ষণের পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি হ্রাস করবে।
গোলব তাঁর দর্শনকে ‘মাংসের পরিমাণ হ্রাসের অর্থ শক্তি সঞ্চয় বৃদ্ধি’ বলে ব্যাখ্যা করলেও এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক ও ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
অর্থাৎ এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, আজকের বিশ্বে সবচেয়ে ভাল অর্থপূর্ণ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক মূল্যায়নকে একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধের বিষয়ে রূপান্তরিত করা যায়। এটি দ্বিগুণভাবে সত্যি বলে প্রমাণিত হয় যখন প্রাথমিক নীতি পদক্ষেপগুলি কার্যকর করা হয়, ততটা চিত্তাকর্ষক বলে মনে হয় না।
চক্রান্ত ঘনিয়ে ওঠা
যেমনটা ঠিক রবার্ট গোলবের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তাঁর ভাষণের মাত্র কয়েক দিন আগে, তাঁর সরকার পুষ্টি সংক্রান্ত একটি স্ট্র্যাটেজিক কাউন্সিল চালু করে, যার কাজ ছিল জাতীয় খাদ্যতালিকা সংক্রান্ত নির্দেশিকার সংস্কার। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন পরিষদ সদস্য নিরামিষবাদ এবং / অথবা নিরামিষভোজীদের প্রবল সমর্থক, তাই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের এই দাবি তুলতে বেশি সময় লাগেনি যে ‘উদারপন্থীরা আপনার মাংস কেড়ে নিতে আসছে।’
তবে কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, পরিষদে গবাদি পশুপালক এবং মাংস উৎপাদনকারীদের তরফে কোনও প্রতিনিধিকে নিয়োগ করা হয়নি যা বিশেষজ্ঞ প্যানেলটিকে একটি সরকারি ধ্বজাধারীতে পরিণত করেছে।
দিন কয়েক পরে গোলবের সরকার স্ট্র্যাটেজিক কাউন্সিলের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সংশোধন করার পরে তা আরও ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু তত দিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই গিয়েছে। এমনকি উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্যের প্রচারের দরুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অপরিষদ বিশেষজ্ঞদের দূরত্ব তৈরি হয়। কৃষি অর্থনীতিবিদদের মতে, পুষ্টি সম্পর্কিত প্রধানমন্ত্রীর ধারণা সঠিক হলেও স্লোভেনিয়ার সামনে খাদ্য অপচয়ের বৃহত্তর সমস্যা বিদ্যমান, যা শুধুমাত্র মাংস/উদ্ভিদ সংক্রান্ত দ্বিধার চেয়ে প্রবলতর।
স্লোভেনীয়রা এখনও অত্যধিক পরিমাণে খাদ্য অপচয় করেন এবং এর পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, এটি শক্তি এবং অন্যান্য সম্পদ অপচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ, দীর্ঘমেয়াদি এবং তুলনামূলকভাবে সহজ সংশোধনযোগ্য কারণকেই উপস্থাপন করে। স্লোভেনীয়রা যদি কম খাবার অপচয় করেন এবং আরও পুষ্টিকর ও কম প্রক্রিয়াজাত খাবার বেছে নেন, তবে এটি শুধু মাত্র এই বিশেষ ক্ষেত্রে শক্তির চাহিদাকেই হ্রাস করবে না, বরং এটি স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও খাদ্য নিরাপত্তারও বৃদ্ধি করবে।
সংযোগ এবং সহযোগিতা
এ কথা বলা হলেও স্লোভেনিয়ার নড়বড়ে খাদ্য নিরাপত্তায় নেপথ্যের অন্যতম প্রধান কারণ হল সম্পদের অস্থিতিশীলতা। শুধুমাত্র পশুপালনই উদ্ভিদ চাষের চেয়ে বেশি পরিমাণে জল এবং অন্যান্য সংস্থান ব্যবহার করে না। এর পাশাপাশি এ কথাও প্রমাণিত হয়েছে যে, স্লোভেনীয় পশুপালনকারীরা ব্রাজিল-উত্পাদিত সয়-সহ পশুখাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করে। এর অর্থ হল যে, সামগ্রিকভাবে স্লোভেনীয়ার গবাদি পশুচাষ প্রাথমিক ভাবে যেমনটা মনে করা হয়, তার চেয়েও কম স্থিতিশীল ও কম স্বয়ংসম্পূর্ণ।
এবং এটিকে রবার্ট গোলবের পক্ষে একটি যুক্তি হিসাবে মনে করা হলেও বিশেষজ্ঞরা যেকোনও দ্রুত নীতি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। কারণ স্লোভেনিয়ায় পশুপালন শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না, বরং তার একটি সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও রয়েছে।
এটি তার ফলে পরিবর্তনের জন্য আরও জোরালো সওয়াল তোলে। এই কারণেই কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং মরসুমি খাদ্যকে সমর্থনকারী একটি বিস্তৃত তথ্য প্রচার নীতিই হল পরিবর্তনের পূর্বশর্ত। এর পাশাপাশি যেহেতু এই নীতি পরিবর্তনগুলির ক্ষেত্রে ক্রেতা ও উৎপাদক উভয়েরই হৃদয় ও মস্তিষ্ক জয় করা প্রয়োজন, তাই বিশেষজ্ঞরা খাদ্যের অপচয় এবং মাংসের ব্যবহার কমানোর জন্য একটি মৃদু এবং ধারাবাহিক পদ্ধতির পরামর্শ দেন।
এটি আমাদের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসে: পরিবর্তনের গতি যাই হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে সংযোগ এবং সহযোগিতাই হবে মূল চাবিকাঠি। স্লোভেনিয়া যদি বাস্তবিকভাবেই তার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে, শক্তির খরচ কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে চায়, তা হলে সমস্ত অংশীদারকে অবশ্যই মাংসভক্ষণ হ্রাস করার সুবিধাগুলি বুঝতে হবে এবং একটি অভিন্ন সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে একত্রে কাজ করতে হবে।
এবং যেমনটা দেখা যাচ্ছে, এগুলি ভারতের জি২০ সভাপতিত্বেরও অন্যতম প্রধান আঙ্গিক।
এই প্রতিবেদনটি ‘জি২০–থিঙ্ক২০ টাস্ক ফোর্স ৩: লাইফ, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড ভ্যালুজ ফর ওয়েলবিয়িং’ সিরিজের অংশ
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.