Author : Hari Bansh Jha

Published on Jul 06, 2024 Updated 0 Hours ago

নেপালে রেল সংযোগে ক্রমবর্ধমান চিন-ভারত বৈরিতা সম্ভাব্যভাবে এর সংযোগে অগ্রগতি আনতে পারে। তবুও, নেপালের সতর্কতার সঙ্গে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া উচিত।

নেপালে রেল সংযোগে চিন-ভারত বিরোধ

গত কয়েক দশক ধরে ভারত রেলওয়ে ক্ষেত্রসহ পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলির উন্নয়নের জন্য নেপালকে প্রচুর পরিমাণে সহযোগিতা করেছে। রেলওয়ে ক্ষেত্রে ভারত-নেপাল সহযোগিতার ইতিহাস প্রায় ১০০ বছর পুরনো;‌ তবে সম্প্রতি চিন তিব্বতের কেরুং হয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু পর্যন্ত চিনা রেললাইন সম্প্রসারণে তার আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে একটি রেলওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিষয়ে ভারত ইতিমধ্যে আরও এক ধাপ এগিয়েছে এবং সম্ভবত তার সীমান্ত শহর রাক্সাউলকে কাঠমান্ডুর সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারে, কারণ ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) তৈরি করেছে।


৩৯ কিলোমিটার প্রসারিত
নেপাল গভর্নমেন্ট রেলওয়ে লাইন, যা ব্রিটিশরা নেপালে ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের রাক্সাউলকে নেপালের আমলেখগঞ্জ-এর সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য নির্মাণ করেছিল, ছিল নেপালের প্রথম ন্যারোগেজ রেললাইন। এক দশক পরে ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশরা বিহারের জয়নগর থেকে নেপালের ধর্মীয় কেন্দ্র জনকপুরকে সংযুক্ত করতে  জনকপুর-জয়নগর রেলওয়ে নামে দ্বিতীয় ন্যারোগেজ রেললাইন তৈরি করতে নেপালকে সহায়তা করে। ১৯৫৭ সালে কোশি রেলওয়ে লাইনটি ধারন ও চাতরা থেকে কোশি ব্যারেজের নির্মাণস্থল পর্যন্ত পাথর এবং নুড়ি বহন করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা ভারতের বীরপুর এবং ভীমনগরের সঙ্গেও যুক্ত ছিল।


এক দশক পরে ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশরা বিহারের জয়নগর থেকে নেপালের ধর্মীয় কেন্দ্র জনকপুরকে সংযুক্ত করতে জনকপুর-জয়নগর রেলওয়ে নামে দ্বিতীয় ন্যারোগেজ রেললাইন তৈরি করতে নেপালকে সহায়তা করে।



১৯৫০-এর দশকে ত্রিভুবন হাইওয়ে নির্মাণের পর, যা রাক্সাউলকে কাঠমান্ডুর সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল, রাক্সৌল-আমলেখগঞ্জ রেললাইনটি অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। একইভাবে, জনকপুর-জয়নগর রেলপথটিও ২০০০-এর দশকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। যাই হোক, নেপাল সরকারের অনুরোধে, ভারত সরকার জনকপুর এবং জয়নগরের মধ্যে একটি ব্রডগেজ রেললাইন দিয়ে পুরনো ন্যারোগেজ রেললাইনটি প্রতিস্থাপন করে, এবং এটি বিজলপুরা পর্যন্ত প্রসারিত করে, যা ভবিষ্যতে বারদিবাস পর্যন্ত প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত
জয়নগর-বিজলপুরা-বারদিবাস আন্তঃসীমান্ত রেল লাইনের ৫২ কিলোমিটার অংশে যাত্রী রেল পরিষেবা চালু করা হয়েছিল। ভারত এই আন্তঃসীমান্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ৭৮৩.৮৩ কোটি ভারতীয় রুপি অনুদান সহায়তা প্রদান করেছে।

অন্যদিকে, কেরুং (তিব্বত)-কাঠমান্ডু রেলপথ নির্মাণে নেপালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছে চিন। নেপাল এবং চিন ২০১৭ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর দুই দেশ ২১ জুন ২০১৮-এ রেলওয়ে প্রকল্পে সহযোগিতার বিষয়ে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করে। সে সময় কেপি শর্মা ওলি নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রাদুর্ভাবের কারণে যেহেতু দুই দেশের সীমান্ত প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাই ট্রান্স-হিমালয়ান রেলওয়ে প্রকল্পের ডিপিআর শুরু করা যায়নি।

তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটে যখন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, পুষ্প কমল দাহাল 'প্রচণ্ড' তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই, ৪২ মাসের মধ্যে ট্রান্স-হিমালয়ান রেলওয়ে প্রকল্পের বিস্তারিত সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন করার জন্য নেপাল চিনকে অনুমতি দেয়। এর পরপরই, চিন এই কাজটি করার জন্য
২০৯.৩৭ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি অনুদান দিতে সম্মত হয়। এরপর থেকে চিনা কারিগরি দল নেপালে কাজ করছে। প্রত্যাশা ছিল যে চিনা দল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তাবিত কেরুং-কাঠমান্ডু ক্রস-বর্ডার রেলওয়ের একটি এরিয়াল সার্ভে শেষ করবে।


নেপাল এবং চিন যখন ট্রান্স-হিমালয়ান রেলওয়ে প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্যে ডিপিআর তৈরির জন্য একটি কার্যকরী পদ্ধতি বিকাশের জন্য একে অপরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে, তখন ভারত নীরব দর্শক ছিল।



নেপাল এবং চিন যখন ট্রান্স-হিমালয়ান রেলওয়ে প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্যে ডিপিআর তৈরির জন্য একটি কার্যকরী পদ্ধতি বিকাশের জন্য একে অপরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে, তখন ভারত নীরব দর্শক ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে চিনের পদক্ষেপকে প্রতিহত করতে ভারত রাক্সাউল ও কাঠমান্ডুর মধ্যে রেললাইন নির্মাণে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রাথমিক অনুমান বলছে যে, ১৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললাইনের নির্মাণ কাজ শেষ করতে ভারতের পাঁচ বছর সময় লাগবে, কারণ নেপালের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ৩১টি টানেল এবং বেশ কয়েকটি সেতু তৈরি করতে হবে। প্রকল্পের মোট বিনিয়োগ ব্যয়
৪,০০০ কোটি ভারতীয় রুপি অনুমান করা হয়েছে।

বেশ কিছু নেপালি বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করেন যে কেরুং ও কাঠমান্ডুর মধ্যে ট্রান্স-হিমালয়ান রেলপথ নির্মাণ
প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক ভিত্তিতে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। হিমালয়ের কঠিন ভূখণ্ড এবং এই অঞ্চলের পরিবেশগত সংবেদনশীলতা এই প্রকল্পকে পূর্ণাঙ্গ চেহারা দেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী বাধা তৈরি করে। প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন দেখায় যে, কেরুং ও কাঠমান্ডুর মধ্যে ৭৩ কিলোমিটার রেলওয়ে নেটওয়ার্কের নেপাল অংশের ৯৫ শতাংশের জন্য টানেল নির্মাণের প্রয়োজন হবে, যার জন্য দেশকে প্রায় ৩-৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করতে হতে পারে।

ভৌগোলিক ও প্রকৌশল-সম্পর্কিত বিষয়গুলি বিবেচনা করে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছেন যে নেপালের কেরুং ও কাঠমান্ডুর মধ্যে রেল যোগাযোগের পরিবর্তে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত। চিন-নেপাল রেল সংযোগের যৌক্তিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রাক্তন মন্ত্রী এবং নেপালি কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা
মীনেন্দ্র রিজাল বলেছেন, “আমরা চিনে কী রপ্তানি করব এবং রেলপথের মাধ্যমে তিব্বত থেকে কী আমদানি করব? তাই এর বদলে রাস্তা তৈরি করি।”


প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন দেখায় যে, কেরুং ও কাঠমান্ডুর মধ্যে ৭৩ কিলোমিটার রেলওয়ে নেটওয়ার্কের নেপাল অংশের ৯৫ শতাংশের জন্য টানেল নির্মাণের প্রয়োজন হবে, যার জন্য দেশকে প্রায় ৩-৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করতে হতে পারে। 



কেরুং-কাঠমান্ডু রেলপথ নির্মাণের আলোচনা রাক্সাউল-কাঠমান্ডু প্রকল্পের অনেক আগে শুরু হলেও, রাক্সাউল-কাঠমান্ডু রেললাইনের ডিপিআর তৈরির ক্ষেত্রে ভারত অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে চিনকে ছাড়িয়ে গেছে। ভারত ইতিমধ্যে রাক্সাউল-কাঠমান্ডু আন্তঃসীমান্ত রেললাইনের জন্য ডিপিআর সম্পন্ন করেছে; যদিও চিন এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অবশ্যই, নেপালের চিন ও ভারত উভয়ের সঙ্গেই রেল যোগাযোগ প্রয়োজন, তবে এটি জাতীয় স্বার্থের মূল্যে হওয়া উচিত নয়। এই সত্যটি সম্পর্কে অবগত থাকায় এবং ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এড়াতে, শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকার ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে নেপালের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছিল যে তারা চিনের সঙ্গে রেল সংযোগ কেবলমাত্র এই শর্তে মেনে নেবে যে এটি অনুদানের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল, ঋণের মাধ্যমে নয়।

নেপালের দুই প্রতিবেশী, দক্ষিণে ভারত এবং উত্তরে চিনের মধ্যে এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেপালকে দুই দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এর ভালো-মন্দ উভয়ই থাকবে। নেপালের বর্তমান সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিপ্রেক্ষিতে দেশের জাতীয় স্বার্থকে প্রভাবিত না করে কীভাবে তাদের সঙ্গে রেল যোগাযোগের উন্নয়নে তার উত্তর ও দক্ষিণের প্রতিবেশীদের সমর্থন নেয় তা দেখতে হবে।



হরি বংশ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন ভিজিটিং ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.