আফ্রিকা চিনের মেরিটাইম সিল্ক রোড ইনিশিয়েটিভ (এমএসআরআই), বেজিংয়ের ফ্ল্যাগশিপ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) সামুদ্রিক পরিসরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেনিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত মোম্বাসা বন্দর হল চিনা প্রবেশের অন্যতম প্রধান স্থান। পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম ও ব্যস্ততম বন্দর মোম্বাসা আফ্রিকার ভূখণ্ডবেষ্টিত দেশগুলির জন্য একটি প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে এবং এটি আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুও বটে। সুতরাং, আফ্রিকার সঙ্গে চিনের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে বন্দরটি কী ভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে কাজ করে এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরে চিনের বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়, তা খতিয়ে দেখা অপরিহার্য।
মেরিটাইম সিল্ক রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য আফ্রিকার কৌশলগত মূল্য
মেরিটাইম সিল্ক রোড-এর (এমএসআর) জন্য আফ্রিকার কৌশলগত গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক পথ এবং সম্পদের মধ্যে নিহিত। ভারত মহাসাগর ও পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে মোম্বাসা ও জিবুতির মতো বন্দর চিনকে অত্যাবশ্যক সমুদ্রপথে প্রবেশাধিকার প্রদান করে, যা এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য চলাচলের সুবিধা দেয়। আফ্রিকার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ চিনের সম্পদ নিরাপত্তার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চিনের শিল্পের জন্য কাঁচামালের স্থিতিশীল সরবরাহ সুনিশ্চিত করে। উপরন্তু, আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান ভোক্তা বাজার চিনা বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অনুমান করা হয়েছে যে, আফ্রিকান বাজারগুলি ২০২৩ সালে চিনের মোট রফতানির ৫.১ শতাংশ পেয়েছে।
আফ্রিকার সঙ্গে চিনের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে বন্দরটি কী ভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে কাজ করে এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরে চিনের বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়, তা খতিয়ে দেখা অপরিহার্য।
ভূ-রাজনৈতিক ভাবে চিন আফ্রিকা জুড়ে দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো অংশীদারিত্ব সুরক্ষিত করে পশ্চিমী প্রভাবের ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়। এই সম্পর্কগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চিনের উপস্থিতিকে শক্তিশালী করে তোলে এবং অর্থনৈতিক নির্ভরতা বৃদ্ধি করে, যা আসলে চিনের বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেই দর্শায়। এ সব কিছুই নিশ্চিত করে যে, চিন আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে মূল সরবরাহ শৃঙ্খল এবং উদীয়মান বাজারে তার আধিপত্য বজায় রেখে চলেছে।
প্রাথমিক ভাবে, আফ্রিকায় চিনের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানানো হয়েছিল, যার প্রতীক হিসেবে বলা যেতে পারে তান-জাম রেলওয়ের মতো ঐতিহাসিক প্রকল্পের কথা। যাই হোক, সাম্প্রতিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। যেহেতু চিনা সংস্থাগুলি তাদের উপস্থিতি প্রসারিত করছে, তাই নানাবিধ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ, স্থানীয় অর্থনৈতিক সুবিধার অভাব এবং নব্য-ঔপনিবেশিকতার ভয়ের কারণে সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিশেষ করে কেনিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে চিন-বিরোধী মনোভাব উত্তরোত্তর বাড়ছে, যেখানে বিক্ষোভগুলি আসলে চিনা শ্রম অনুশীলন এবং মূলধন বিনিয়োগের প্রতি অসন্তোষকেই দর্শায়।
কেনিয়া-চিন সম্পর্ক: পূর্ব আফ্রিকার একটি কৌশলগত প্রবেশদ্বার
কেনিয়া পূর্ব আফ্রিকার প্রবেশদ্বার এবং মহাদেশের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির অন্যতম। আফ্রিকার বাকি অংশে চিনের উপস্থিতি প্রসারিত করার জন্য একটি চমৎকার মঞ্চ হিসেবেও কাজ করে কেনিয়া। বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) মাধ্যমে চিনের সঙ্গে দেশটির সম্পৃক্ততা মহাদেশে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বেজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গিকেই দর্শায়। ২০০৫ সাল থেকে কেনিয়ার বৈদেশিক নীতি একটি ‘লুক ইস্ট’ বা ‘প্রাচ্য অভিমুখী’ কাঠামোর দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে, যা পশ্চিমী বিনিয়োগের বিকল্প হিসাবে চিনা ঋণ এবং চিনচালিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলির সম্প্রসারণের উপর জোর দিয়েছে। চিন কেনিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে এবং কেনিয়ার চা, কফি, ভেষজ ও অ্যাভোকাডোর রফতানি চিনা গ্রাহকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ অর্জন করেছে। তবে ২০২৩ সালে কেনিয়ার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার অর্ধেকের বেশি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, বাণিজ্য চুক্তি ও উন্নয়নমূলক সহায়তা চিন থেকে পায়।
এসজিআর তার সূচনা থেকে লোকসান করে এসেছে এবং ২০২০ সালের মে মাস থেকে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি লোকসান করেছে।
কেনিয়াতে চিনের প্রভাবের একটি প্রধান উদাহরণ হল স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে (এসজিআর), যা আদতে একটি ফ্ল্যাগশিপ বিআরআই প্রকল্প এবং এর লক্ষ্য হল মোম্বাসা থেকে নাইরোবিকে সংযুক্ত করে কেনিয়ার অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণ করা। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাঙ্ক অফ চায়না প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে, কেনিয়ার সরকার অবশিষ্ট ১০ শতাংশ প্রদান করেছে এবং চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন নির্মাণের নেতৃত্ব দিয়েছে। এসজিআর স্থানীয়দের জন্য ৩০০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং প্রথম বছরে ৫.৪ মিলিয়ন যাত্রী ও ১.৩ মিলিয়ন টিইইউ চালান পরিবহণ করেছে। যাই হোক, এই সমস্ত অর্জন সত্ত্বেও প্রকল্পটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অনেক তরুণ কেনিয়াবাসী কম বেতন ও অদক্ষ চাকরি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সর্বোপরি, এসজিআর তার সূচনার সময় থেকেই লোকসান করে এসেছে এবং ২০২০ সালের মে মাস থেকে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি লোকসান করেছে।
মোম্বাসা বন্দর: পূর্ব আফ্রিকার একটি ভূ-রাজনৈতিক নোঙর
প্রাকৃতিক ভাবে বিদ্যমান কিলিন্দিনি হারবার দ্বারা পরিবেষ্টিত মোম্বাসা পূর্ব আফ্রিকা এবং বৃহত্তর ভাবে বিশ্বের বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার, যা এই অঞ্চলের ভূখণ্ডবেষ্টিত দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এটি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, রাজস্ব উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালক। মোম্বাসা আবার আঞ্চলিক সমন্বিতকরণকেও উৎসাহিত করে, প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার প্রচার করে এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে। ফলস্বরূপ, আফ্রিকার আন্তর্জাতিক শক্তি প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে মোম্বাসা অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে।
মোম্বাসার কৌশলগত অবস্থান চিনকে সামুদ্রিক পথগুলি সুরক্ষিত করা ও তার নৌ-প্রসারকে প্রসারিত করার সুযোগ করে দেয় এবং এই অঞ্চলে তার অর্থনৈতিক ও সামরিক সুবিধাকে শক্তিশালী করে।
মোম্বাসার কৌশলগত অবস্থান চিনকে সামুদ্রিক পথগুলিকে সুরক্ষিত করা ও তার নৌ-প্রসারকে প্রসারিত করার সুযোগ করে দেয় এবং এই অঞ্চলে তার অর্থনৈতিক ও সামরিক সুবিধাকে শক্তিশালী করে। বন্দরটি পূর্ব আফ্রিকায় চিনের প্রভাব বৃদ্ধি করে, বেজিংকে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক বাণিজ্য ও সরবরাহে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্ষম করে তোলে। স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ের (এসজিআর) মতো সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো প্রকল্প-সহ বন্দরে চিনের ভারী বিনিয়োগ এই অঞ্চলে তার দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি সুনিশ্চিত করে। এই উপস্থিতি তার ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলিকে দৃঢ় করতে সাহায্য করে, যার মধ্যে এই অঞ্চলে চিনের সামরিক প্রবেশাধিকার ও অর্থনৈতিক সুবিধা বৃদ্ধি করা অন্তর্ভুক্ত। এ ভাবে আফ্রিকায় চিনের বৃহত্তর প্রভাবের ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে মোম্বাসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আফ্রিকা জুড়ে মাল্টিমোডাল সংযোগ তৈরি করা
এমএসআর আফ্রিকা জুড়ে মাল্টিমোডাল সংযোগের বিকাশকে চালিত করছে। সমুদ্র, রেল ও সড়ক শৃঙ্খলগুলিকে সংযুক্ত করে আরও দক্ষ বাণিজ্যপথ তৈরি করে, যা আফ্রিকার বাজারগুলিকে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এর একটি প্রধান উদাহরণ হল লামু পোর্ট-দক্ষিণ সুদান-ইথিওপিয়া-ট্রান্সপোর্ট (এলএপিএসএসইটি) করিডোর প্রকল্প, যার লক্ষ্য হল মোম্বাসার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো। এই প্রকল্পের অধীনে লামু বন্দরের মতো নতুন অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে এবং পূর্ব আফ্রিকার প্রধান দেশগুলির সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে। যখন একটি তেল পাইপলাইনের পরিকল্পনা করা হয়, তানজানিয়া বা ইথিওপিয়ার মাধ্যমে বিকল্প পথগুলিকে আরও কার্যকর বলে মনে করা হয়। এই উন্নয়নগুলি আফ্রিকার বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যগুলির একটি মসৃণ চলাচল সুনিশ্চিত করার জন্য এমএসআর-এর অধীনে দক্ষ পরিবহণ শৃঙ্খল স্থাপনের চিনা লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।
চিত্র ১: লামু বন্দর-দক্ষিণ সুদান-ইথিওপিয়া-পরিবহণ করিডোর প্রকল্প
![](https://www.orfonline.org/public/uploads/editor/20241222104131.jpg)
সূত্র: উইলি অনলাইন লাইব্রেরি
আফ্রিকান বন্দরগুলির সঙ্গে চিনের সম্পৃক্ততায় নিরাপত্তা ও কৌশল
আফ্রিকান বন্দরগুলির সঙ্গে চিনের সম্পৃক্ততা কৌশলগত ভাবে পূর্ব আফ্রিকা, ভারত মহাসাগর, লোহিত সাগর ও হর্ন অফ আফ্রিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে কেন্দ্রীভূত, যেখানে জিবুতি, মোম্বাসা এবং দার এস সালামের মতো বন্দরগুলি ভারত মহাসাগরের প্রধান সামুদ্রিক পথে প্রবেশাধিকার প্রদান করে এবং এই সব কিছুই বিশ্ব বাণিজ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক।
আফ্রিকার বন্দরে চিনের বিনিয়োগে প্রায়শই দ্বৈত ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে, যা অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয় ধরনের কাজ করে। এই বন্দরগুলি বাণিজ্যিক প্রকল্প হিসাবে তৈরি করা হলেও অধিকাংশেরই অতিরিক্ত কার্যকারিতা রয়েছে, যা শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই নয়, পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি-কেও (পিএলএএন) সমর্থন করে, চিনের নৌ-সামগ্রী বৃদ্ধি করে এবং এটিকে তার সামুদ্রিক স্বার্থ সুরক্ষিত করতে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করার সুযোগ করে দেয়। এটি বিশেষ করে জিবুতিতে দেখা যায়। জিবুতি আসলে চিনের প্রথম বিদেশি সামরিক ঘাঁটি এবং কৌশলগত ভাবে এমন একটি দেশে অবস্থিত যেখানে প্রধান শিপিং লেনের আধিক্য রয়েছে। উপরন্তু, চিন প্রায়শই অবকাঠামোর জন্য ঋণের মডেল নিয়োগ করে, বন্দর উন্নয়নের জন্য বড় ঋণ প্রদান করে। এই মডেলটি আফ্রিকায় ‘ঋণ-ফাঁদ কূটনীতি’র ঝুঁকি সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করে, যা শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে দেখা গিয়েছিল।
আফ্রিকার বন্দরে চিনের বিনিয়োগে প্রায়শই দ্বৈত ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে, যা অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয় ধরনের কাজ করে।
এলএপিএসএসইটি-র মতো প্রকল্পগুলি আফ্রিকা জুড়ে দক্ষ বাণিজ্য পথ স্থাপনের চিনা লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। যাই হোক, শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তাদের আর্থিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার সময় যে কোনও দেশেরই আরও বেশি করে সতর্ক হওয়া উচিত।
শ্রেয়াংশ কৃষ্ণ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।
সায়ন্তন হালদার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.