৬ জুলাই আজারবাইজান ‘পরিবহণ, সংযোগ এবং জলবায়ু কর্মসূচির মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা’-র বিষয়ে শুশায় অর্গানাইজেশন অফ টার্কিক স্টেটস-এর (ওটিএস) অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনে কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও কিরঘিজস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট উপস্থিত ছিলেন, যা ইউরেশিয়ার তুর্কি রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ২০০৯ সালে ওটিএস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে। ওটিএস অভিন্ন সাধারণ ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিচয় এবং ভাষা স্তম্ভের উপর নির্ভর করে তার বাণিজ্য, সংযোগ, বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রসারিত করেছে।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনে কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও কিরঘিজস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট উপস্থিত ছিলেন, যা ইউরেশিয়ার তুর্কি রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ২০০৯ সালে ওটিএস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে।
তুর্কিয়ে, আজারবাইজান এবং কাজাখস্তান ওটিএস চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের গভীরতর সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার লক্ষ্য হল এই অঞ্চলকে আরও নিরাপদ রাখা এবং স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য আন্তঃসংযুক্ত করা। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব, এই অঞ্চলে চিনের প্রভাবশালী অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ এবং প্রধান শক্তিগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা আসলে ওটিএস-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সমন্বিতকরণ সহজতর করা এবং সমস্যাগুলি সমাধান করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
সংযোগ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওটিএস সংযোগ, বাণিজ্য, বিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে সমন্বিতকরণের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করেছে। ২০১১ সালের শীর্ষ সম্মেলনটি ওটিএস দেশগুলির মধ্যে আন্তঃসংযোগ বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দিয়েছিল, যার ফলে ৮৬০ কিমি দীর্ঘ বাকু-তিবিলিসি-কারস রেললাইন সম্প্রসারিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে ওটিএস ট্রান্স-কাস্পিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট করিডোর (টিআইটিআর) বা মধ্য করিডোরের কৌশলগত গুরুত্ব স্বীকার করে এবং এর উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে। ২০১৭ সালে বাকু-তিবিলিসি-কারস রেললাইনের আধুনিকীকরণ এবং উদ্বোধন, জর্জিয়ার মাধ্যমে তুরস্ককে আজারবাইজানের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি ওটিএস দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করেছে এবং চিন ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করেছে। কাস্পিয়ান সাগরের তীরে বাকু বন্দর এবং আকতাউ বন্দরের উন্নয়ন ওটিএস দেশ ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য ও পণ্যসম্ভারকে আরও উন্নত করেছে, যা আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্যে ওটিএস-এর উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রভাব প্রদর্শন করে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব এবং এর ফলে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাগুলি মধ্য করিডোর বরাবর ওটিএস-এর মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওটিএস-এর মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্য ২০২২ সালে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে এবং এ সবই প্রাথমিক ভাবে মধ্য করিডোর বরাবর কন্টেনার চলাচল বৃদ্ধির কারণে ঘটেছে। ওটিএস অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সমন্বিতকরণের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সংযোগ জোরদার করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব এবং এর ফলে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাগুলি মধ্য করিডোর বরাবর ওটিএস-এর মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ওটিএস-এর সদস্য দেশগুলির মধ্যে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আজারবাইজান সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং সেই বিনিয়োগের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তুর্কিয়ের দিকে চালিত হয়েছে। বিপরীত ভাবে, আজারবাইজানে তুর্কিয়ের ৩৩০টিরও বেশি সংস্থা কাজ করে এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তুর্কিয়ে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। একই ভাবে, তুর্কিয়ে কাজাখস্তানে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং কাজাখস্তান তুর্কিয়েতে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ওটিএস রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আন্তঃ-আঞ্চলিক বিনিয়োগকে আরও উত্সাহিত করার জন্য প্রাথমিক মূলধন হিসাবে ২০২৩ সালে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে তুর্কি বিনিয়োগ তহবিল শুরু হয়েছিল। সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ তহবিলে প্রতিটি সদস্য দেশের সমান অংশ থাকবে।
একটি জটিল প্রেক্ষাপট এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মাঝে পথ খুঁজে নেওয়া
ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে আন্তর্জাতিক আইনের প্রশাসন সঙ্কট প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে ওটিএস সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে নিবিড় আঞ্চলিক সহযোগিতাকে চালিত করেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক প্রত্যাহার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তাদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও) এবং নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) মতো বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলির উপর ওটিএস-এর আস্থা হ্রাস পেয়েছে। তুর্কিয়ে ন্যাটোর সদস্য এবং প্রাথমিক ভাবে এই সংস্থায় একটি সামরিক অবদানকারী। আবার অন্য দিকে কাজাখস্তান এবং কিরঘিজস্তান সিএসটিও-র সদস্য। আজারবাইজান ১৯৯৯ সালে সিএসটিও ত্যাগ করে এবং জোটনিরপেক্ষ অবস্থা থেকে উপকৃত হয়েছে। উজবেকিস্তান ২০১২ সালে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ) তৈরির পর সিএসটিও ত্যাগ করে। চিন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও), বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে এই অঞ্চলে তার প্রভাব বৃদ্ধি করেছে। চিন এসসিও-র কাঠামোর মধ্যে এবং দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক ভাবে অনেক যৌথ সামরিক মহড়া করেছে। ২০০৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বেজিং মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে এই ধরনের ৪৫টি সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে।
এই জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে নিজের পথ খুঁজে নেওয়ার জন্য ওটিএস মূলত দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা চুক্তির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে এবং স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে। এই পদ্ধতিটি একটি বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা বা সামরিক জোট থেকে ভিন্ন হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে সিএসটিও, ন্যাটো এবং চিনের সঙ্গে জড়িত থাকার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের জন্য একটি কৌশলগত পছন্দও বটে। তুর্কিয়ে এবং আজারবাইজানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কের প্রেক্ষিতে অনেক তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থা আজারবাইজানে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, ড্রোন ইত্যাদি তৈরির জন্য কাজ করে।
এই জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে নিজের পথ খুঁজে নেওয়ার জন্য ওটিএস মূলত দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা চুক্তির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে এবং স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে।
কাজাখস্তান আঙ্কারার সঙ্গে একটি বর্ধিত কৌশলগত অংশীদারিত্বে স্বাক্ষর করেছে এবং তুর্কিয়ের বাইরে এই প্রথম তুর্কির ড্রোন তৈরি করবে। প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা হস্তান্তরের দরুন কাজাখস্তান স্বাধীন ভাবে ড্রোন তৈরি করতে পারে। উভয় দেশ যুদ্ধ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার উন্নতির জন্য একটি সামরিক সহযোগিতা পরিকল্পনাতেও স্বাক্ষর করেছে। ২০২২ সালে তাসখন্দ আঙ্কারার সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করে নেওয়া, লজিস্টিক প্রকল্প এবং যৌথ প্রশিক্ষণে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অবশেষে ২০২৩ সালে উজবেকিস্তান তার যুদ্ধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তুর্কি ড্রোন নিয়েছে।
নিজের কৌশলগত অবস্থানের কারণে আজারবাইজান সদস্য দেশগুলির মধ্যে ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক পথের উপর ভিত্তি করে ওটিএসকে এই অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসাবে মনে করে। বিশাল ভৌগোলিক পরিসর, বিস্তৃত হাইড্রোকার্বন সম্পদ এবং ক্রমবর্ধমান সংযোগ সংস্থার ভবিষ্যৎকে শক্তিশালী করেছে। তুর্কিয়ের প্রভাব রাশিয়া ও চিনের প্রভাবশালী সহযোগিতামূলক আধিপত্যের বিরুদ্ধে তুর্কি রাষ্ট্রগুলিকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে। বেজিং বা মস্কোর তত্ত্বাবধানের পরিবর্তে তুর্কিয়ের মতো একটি শক্তিশালী ন্যাটো অংশীদারের অধীনে তাদের কৌশলগত নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বিকাশ করা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সুবিধাজনক হতে পারে। যাই হোক, বেজিং এবং মস্কো কোন আলোকে এটির বিচার করবে, বিশেষ করে অঞ্চলটির ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং মধ্য করিডোরের মাধ্যমে ওটিএস-এর পারস্পরিক নির্ভরতার আলোকে এই গোষ্ঠীটির দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্যগুলি নির্ধারিত হবে।
আয়জাজ ওয়ানি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.