Published on Aug 19, 2024 Updated 0 Hours ago

চিনের উপর আফ্রিকার অর্থনৈতিক নির্ভরতার অর্থ হল চিনের মন্থরতা এবং সবুজ ও উচ্চ প্রযুক্তির দিকে স্থানান্তর আফ্রিকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

চিনা চাহিদার সঙ্কোচন, ঋণের পরিমাণ আফ্রিকার বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে দুর্বল করছে

এটি “চায়না ক্রনিকলস” সিরিজের ১৫৯তম নিবন্ধ।


চিনের অর্থনৈতিক উত্থানকে প্রায়ই অর্থনৈতিক অলৌকিক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। দেশটি ১৯৭৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গড় বার্ষিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধির হার রেকর্ড করেছে, এবং ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বার করে এনেছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক চিনের অর্থনৈতিক সাফল্যকে "ইতিহাসের একটি প্রধান অর্থনীতির দ্রুততম স্থিতিশীল সম্প্রসারণ" বলে বর্ণনা করেছে। চিনের উত্থান অন্য উন্নয়নশীল অঞ্চলগুলিতেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে আফ্রিকায়, যেটি এমন একটি অঞ্চল যা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আফ্রিকা কিন্তু চিন থেকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন অর্থের প্রবাহে অতুলনীয় বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে।


প্রাথমিক পণ্যের জন্য চিনা চাহিদা আফ্রিকার দেশগুলিতে একটি বিশাল পরিমাণগত প্রভাব ফেলেছিল, এবং তা বিশ্বব্যাপী পণ্যের দামকে প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, যার ফলে আফ্রিকার দেশগুলির জন্যও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নাটকীয় উন্নতি হয়েছিল।



২০০০ সাল থেকে চিন ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য সংযোগ দ্রুত প্রসারিত হয়, এবং চিন ওই মহাদেশের পুরনো অর্থনৈতিক অংশীদার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিস্থাপিত করে আফ্রিকার বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসাবে আবির্ভূত হয়। চিন ও আফ্রিকার মধ্যে পণ্য বাণিজ্যের মূল্য ১৬.১ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০০০ সালের প্রায় ৯.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২৬০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে (চিত্র ১)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, চিন এই অঞ্চলের পণ্য রপ্তানির প্রায়
১৩ শতাংশ এবং তার মোট পণ্য আমদানির ১৬ শতাংশ। আফ্রিকার দেশগুলি প্রধানত প্রাথমিক পণ্য (অশোধিত তেল, তামা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তিল ইত্যাদি) রপ্তানি করে এবং চিনে উৎপাদিত পণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে। প্রাথমিক পণ্যের জন্য চিনা চাহিদা আফ্রিকার দেশগুলিতে একটি বিশাল পরিমাণগত প্রভাব ফেলেছিল, এবং তা বিশ্বব্যাপী পণ্যের দামকে প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ছিল,  যার ফলে আফ্রিকার দেশগুলিরও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নাটকীয় উন্নতি হয়েছিল। বর্ধিত রপ্তানি রাজস্ব আফ্রিকার উচ্চ হারে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দিকে চালিত করে, এবং অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া ও নাইজেরিয়ার মতো কিছু দেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশ হয়ে ওঠে। চিনা চাহিদা আফ্রিকার দেশগুলিকে ২০০৮-০৯ সালে বিশ্ব মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করেছিল। 

চিত্র ১: আফ্রিকার সঙ্গে চিনের বাণিজ্য ১৯৯২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে)
 Shrinking Chinese Demand Loan Volumes Weaken Africa S Growth Prospects
সূত্র:
চায়না-আফ্রিকা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ  

এই সময়ের মধ্যে আফ্রিকাতে চিনা প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (ওডিআই) প্রবাহও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আফ্রিকাতে চিনা ওডিআই স্টক পরিমিত, এবং এই অঞ্চলটি এখনও চিনের মোট ওডিআই প্রবাহের
শতাংশের মতো পেয়ে থাকে। চিন-আফ্রিকা সম্পর্কের সবচেয়ে বিতর্কিত দিকটি ছিল পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আফ্রিকায় চিনা সরকারি আর্থিক সম্পদের বিশাল প্রবাহ। এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও পরিবহণ পরিকাঠামো এবং খনির কার্যক্রমে অর্থায়ন করে চিন আফ্রিকার জন্য সবচেয়ে বড় সরকারি ঋণদাতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। গোপনীয়তা ধারা, নিম্ন অনুদান উপাদান ও গ্রেস পিরিয়ড, ঋণ সংক্রান্ত তথ্যের অভাব, এবং এমনকি চিনা প্রকল্পগুলিতে পরিবেশগত ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের কারণে ঋণদান কর্মসূচি নিয়ে চিন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। যাই হোক, প্রায়শই বেশ বৈধ এই সব সমালোচনা সত্ত্বেও, চিন আফ্রিকার দেশগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো বিকাশের সুযোগ দেয়। এটি এমন একটি এলাকা যা পশ্চিমী দাতা ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির সহায়তার উচ্চ খরচ এবং ঝুঁকির কারণে অবহেলিত।
 
কিন্তু বিষয়গুলি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। চিন এখন আর বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির ইঞ্জিন নেই, যা সে একসময় ছিল। বিশ্ব অর্থনীতি আরেকটি মন্দার দিকে তাকিয়ে আছে, এবং এখন চিনের নেতৃত্বে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম। চিনের অর্থনীতি মন্থর হয়েছে এবং পণ্যের জন্য এর ক্ষুধাও হ্রাস পেয়েছে। দেশটি ২০২২ সালে ৩ শতাংশ পরিমিত বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। অধিকন্তু, এটি অতীতের রপ্তানি এবং বিনিয়োগ-নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধির কৌশল থেকে সরে গিয়ে উচ্চতর অভ্যন্তরীণ উপভোগ ও 'উন্নত মানের বৃদ্ধি'র মাধ্যমে স্থায়িত্ব ও উচ্চতর প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তার অর্থনীতিতে নতুন ভারসাম্য বজায় রাখছে। এর দ্রুত বার্ধক্য ও ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা এর ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেও মেঘাচ্ছন্ন করে। চিনের বিশাল অর্থনৈতিক ওজনের পরিপ্রেক্ষিতে, এর অর্থনৈতিক মন্দা ও স্থানান্তর বিশ্বব্যাপী গভীর প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আফ্রিকার বৃদ্ধির গতিপথের জন্য এর অর্থ কী?


এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও পরিবহণ পরিকাঠামো এবং খনির কার্যক্রমে অর্থায়ন করে চিন আফ্রিকার জন্য সবচেয়ে বড় সরকারি ঋণদাতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। 



আফ্রিকার দেশগুলি ২০১৫ সালে পণ্যের মূল্যপতনের ফলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছিল, যখন চিন থেকে এই অঞ্চলের রপ্তানি এবং আমদানি কমে গিয়েছিল (চিত্র ১)। যাই হোক, যখন চিন থেকে আফ্রিকার আমদানি ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১২ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বার্ষিক বৃদ্ধি রেকর্ড করে উল্লেখযোগ্যভাবে পুনরুদ্ধার করেছে, চিনে আফ্রিকার রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে এবং চিনের সঙ্গে তার বাণিজ্য ঘাটতি প্রশস্ত করেছে (সারণি ১)। অতিমারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আফ্রিকাকে আরও দুর্বল করেছে, কারণ আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ বর্তমানে বিশাল ঋণের বোঝায় ভারাক্রান্ত এবং উচ্চতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি। চিনের নিজের অর্থনীতিকে সবুজ এবং উচ্চ-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের দিকে চালিত করে ফের ভারসাম্য গড়ে তোলার সময় এর মন্থরতা ও পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার ঘটনাটি চিনের উপর আফ্রিকার অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে আফ্রিকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, বিশেষ করে এর পণ্য রপ্তানিকারকদের জন্য, ভাল ইঙ্গিতবাহী নয়।
আইএমএফ অনুমান অনুসারে, চিনের জিডিপি বৃদ্ধিতে ১ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস সাব-সাহারান আফ্রিকার জিডিপি বৃদ্ধিতে এক বছরের মধ্যে ০.২৫ শতাংশ পয়েন্ট পতন ঘটায়। আফ্রিকার তেল ও সম্পদ রপ্তানিকারকেরা চিনের মন্দা এবং সবুজ ও ডিজিটাল পরিকাঠামোর পক্ষে নতুন ভারসাম্য গড়ে তোলার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত, এবং চিনের জিডিপিতে শতকরা ১ পয়েন্ট পতনের ফলে এক বছরের মধ্যে তাদের জিডিপি বৃদ্ধিতে ০.৫% হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সারণি ১: আফ্রিকায় চিনের রপ্তানি এবং চিন থেকে আমদানি বৃদ্ধি 

 

চিনে আফ্রিকার রপ্তানি (%)

চিন থেকে আফ্রিকার আমদানি (%)

১৯৯২-১৯৯৭ 

২৮%

১৪%

১৯৯৭-২০০২ 

২৩%

২৪%

২০০২-২০০৭ 

৪৯%

৪০%

২০০৭-২০১২ 

১৮%

১৮%

২০১২-২০১৭

 -৫%

২%

২০১৭-২০২২ 

১০%

১২%

সূত্র: চায়না আফ্রিকা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ

 

আফ্রিকার জন্য সহজ চিনা অর্থের যুগও শেষ। আফ্রিকাতে চিনের ঋণ বিতরণ, যা ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ছিল, ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে (চিত্র ২)। ঋণ স্থায়িত্বের উদ্বেগের কারণে এবং উচ্চ মানের ও সু-লক্ষ্যযুক্ত প্রকল্পগুলিতে ফোকাস করার ইচ্ছার কারণে দেশটি বাহ্যিক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। ফোরাম ফর চায়না-আফ্রিকা কোঅপারেশন (এফওসিএসি)-‌এ চিনের নামমাত্র আর্থিক প্রতিশ্রুতিও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান আঁটোসাঁটো আন্তর্জাতিক আর্থিক অবস্থার সঙ্গে চিনা ঋণ হ্রাস মিলিত হয়ে আফ্রিকার দেশগুলির জন্য তাদের সরকারি ঋণ পুনঃঅর্থায়ন করা, ঋণের বাধ্যবাধকতা পূরণ, এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলির অর্থায়ন করা কঠিন করে তুলবে। সংক্ষেপে, চিনা অর্থনৈতিক মন্দা এবং সে দেশের পুনর্বিন্যাস আফ্রিকার জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে, যে মহাদেশটি বর্তমানে অতিমারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অর্থনৈতিক পরিণতির সঙ্গে লড়ছে। তার অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে, আফ্রিকাকে চিনের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে এবং তার অর্থনৈতিক অংশীদারদের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে হবে। গ্লোবাল সাউথের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব গড়ে তুললে তা মহাদেশটিকে আন্তর্জাতিক অর্থের আরও ন্যায়সঙ্গত বরাদ্দের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও বৈশ্বিক আর্থিক সংস্কারের জন্য জি২০-তে আফ্রিকান ইউনিয়নের আসন ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।


চিত্র ২: ২০০০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আফ্রিকাতে চিনা ঋণের মূল্য (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে)
 Shrinking Chinese Demand Loan Volumes Weaken Africa S Growth Prospects
সূত্র:
গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টার



মালঞ্চ চক্রবর্তী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো এবং ডেপুটি ডিরেক্টর (গবেষণা)।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.