রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সর্বাত্মক কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করার দরুন এশিয়া-প্যাসিফিক জুড়ে তরঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার পর পুতিন সাত বছরের ব্যবধানে ২০২৪ সালের ২০ জুন ভিয়েতনাম সফর করেন। এই সময়ের মাঝে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে: ইউক্রেনে একটি যুদ্ধ এবং পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া রাশিয়ার বিদেশনীতিতে একটি নতুন জোর পেয়েছে, যেমনটা রাশিয়ান কনসেপ্ট অব ফরেন পলিসি ২০২৩-এ প্রতিফলিত হয়েছে। সেখানে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পাশাপাশি আসিয়ান সদস্য দেশগুলির সঙ্গে নিরাপত্তা এবং মানবিক সহযোগিতার উপর উল্লেখযোগ্য জোর দেওয়া হয়েছিল। তাই সফরের প্রভাবকে কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বোঝার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জন্য এর অর্থ কী, সেই দিক থেকেও মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
এক নজরে রাশিয়া-ভিয়েতনাম সম্পর্ক
রাশিয়া এবং ভিয়েতনামের মধ্যে চিরাচরিত সম্পর্ক রয়েছে, মস্কো ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট বাহিনীকে সমর্থন করেছিল এবং ভিয়েতনামের প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর ১৯৯০-এর দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সামান্য পতন ঘটলেও সম্পর্কের উষ্ণতা অব্যাহত ছিল। ২০০১ সালে পুতিন যখন হ্যানয় সফর করেন, তখন উভয় দেশ একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব সম্পন্ন করে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করে তোলে। রাশিয়ান গ্যাস জায়ান্ট গ্যাজপ্রম এবং পেট্রোভিয়েতনাম একটি আধুনিক শোধনাগার তৈরি করার পরে শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার হয়। এর পাশাপাশি পেট্রোভিয়েতনাম ২০০৮ সাল থেকে রাশিয়ান আর্কটিকের নেনেট অটোনোমাস অক্রুগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মস্কো সন লা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ভিয়েতনামকে সহায়তা করেছে। ভিয়েতনাম দক্ষিণ চিন সাগরে তেল খনন প্রকল্পে রুশ সংস্থা এবং রুশ বিনিয়োগকে কৌশলগত ভাবে ব্যবহার করেছে, যাতে ভিয়েতনাম তার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে পারে এবং চিনকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে।
রাশিয়া এবং ভিয়েতনামের মধ্যে চিরাচরিত সম্পর্ক রয়েছে, মস্কো ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট বাহিনীকে সমর্থন করেছিল এবং ভিয়েতনামের প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার ছিল।
রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক অংশীদারিত্ব এই সম্পর্কের আর একটি প্রধান চালক, মস্কো হ্যানয়কে এসইউ-২৭, এসইউ-৩৯, এসইউ-৩০ এমকেআই, এস-৩০০ মিসাইল সিস্টেম, কর্ভেট, গেপার্ড ক্লাস ফ্রিগেট, স্বেতলিয়াক শ্রেণির টহলদার নৌকা, কিলো শ্রেণির ডুবোজাহাজ, টি-৯০ ট্যাঙ্ক ইত্যাদির মতো সামরিক মঞ্চ সরবরাহ করে। ২০১২ সালে রাশিয়া একটি সর্বাত্মক কৌশলগত চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। হ্যানয় ছিল একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, যেটি ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) স্বাক্ষর করে। ২০১৬ সালে একটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং রাশিয়াকে পছন্দের ভিত্তিতে ক্যাম রান নৌ ঘাঁটিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সফর
এই সফরে পুতিন এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট টু লাম শিক্ষা, পারমাণবিক প্রযুক্তি গবেষণা, রোগ প্রতিরোধ, তেল অনুসন্ধান এবং ন্যায়বিচারে ১১টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক কোম্পানি রোসাটম, প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি নোভাটেক এবং রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত তেল সংস্থা জারুবেজনেফ্টের মতো নেতৃস্থানীয় রুশ সংস্থার অংশগ্রহণ প্রত্যক্ষ করেছে। রাশিয়া এবং ভিয়েতনামের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তেল ও গ্যাস সহযোগিতার বিষয়ে নোভাটেক এবং পেট্রোভিয়েতনামের মধ্যে একটি সমঝোতাপত্রও স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে মস্কো ভিয়েতনামে একটি ১০ মেগাওয়াট পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করবে এবং কর প্রশাসন ও শুল্ক অপরাধের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে আর একটি চুক্তি করবে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের মতে, ৪০ শতাংশ বাণিজ্য জাতীয় মুদ্রায় সংঘটিত হয়েছে এবং ভ্লাদিভোস্টক ও হো চি মিন সামুদ্রিক করিডোরে সেই সহযোগিতা আশাব্যঞ্জক।
উত্তর কোরিয়ার কাছে মস্কোর উপস্থিতি ছিল মূলত ভূ-রাজনৈতিক। কিন্তু তাঁর ভিয়েতনাম সফরে প্রতীকী ইঙ্গিত শক্তিশালী ভূ-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রটিকেও কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে। চিরাচরিত সম্পর্কের কারণে অর্থনৈতিক নির্ভরতাকেও অস্বীকার করা যায় না। ২০২৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ভিয়েতনামের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল মাত্র ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা চিনের সঙ্গে ১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১২৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের চেয়ে অনেকটাই কম। চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ভিয়েতনামের বাণিজ্যের প্রধান উৎস। এখন রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আরও কমবে। কিন্তু হ্যানয় এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে। কারণ কিছু ভিয়েতনামী ব্যাঙ্ক রুবল লেনদেন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম রুশ পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান গন্তব্য হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, পর্যটকদের সংখ্যায় এখন তারা ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার কাছে মস্কোর উপস্থিতি ছিল মূলত ভূ-রাজনৈতিক। কিন্তু তাঁর ভিয়েতনাম সফরে প্রতীকী ইঙ্গিত শক্তিশালী ভূ-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রটিকেও কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে।
রাশিয়ান কনসেপ্ট অব ফরেন পলিসি ২০২৩-এর সূচনার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ান ফেডারেশন আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে উচ্চতর সহযোগিতার উপর জোর দেয়। এক দশক আগে প্রস্তাবিত তার বৃহত্তর লুক ইস্ট বা পূর্ব অভিমুখী নীতির অংশ হিসাবে রাশিয়ার বৃহত্তর ইউরেশিয়ান অংশীদারিত্বের পরিধির মধ্যে আসিয়ান আরও একটি লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে, যা সুদূর প্রাচ্যকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করে। তাই ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাশিয়ার প্রসারে একটি প্রধান শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়। এই সফর ভিয়েতনামের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ককে দৃঢ় করে তোলে। কারণ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির বৈদেশিক নীতিতে ক্রমবর্ধমান বহুমুখিতার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ভিয়েতনামের উপর প্রভাব
পশ্চিম-আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং বিচ্ছিন্নতার প্রচেষ্টার মধ্যে ভিয়েতনামে পুতিনের সফরটি বিশেষ করে অ-পশ্চিমী দেশগুলির মধ্যে যে কূটনৈতিক সমর্থন তিনি এখনও উপভোগ করেন, তা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য দ্বারাই চালিত। এই সফরের সময় পুতিন বলেছিলেন, তিনি ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা কাঠামো’ গড়ে তুলতে চান। পুতিনকে আতিথ্য করে ভিয়েতনাম পালাক্রমে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং রাশিয়ার নেতাদের সফল ভাবে আহ্বান জানানো একমাত্র দেশ হয়ে উঠেছে। এটি স্পষ্টতই হেজিং কৌশলের প্রতিফলন করে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ এই অঞ্চলে বড় শক্তির প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করার জন্য নিযুক্ত করছে। ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি এই কৌশলটিকে ‘ব্যাম্বু ডিপ্লোমেসি’ বলে অভিহিত করে। অর্থাৎ ‘পক্ষ নিতে বাধ্য না হয়ে বৃহৎ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পালে হাওয়া লাগিয়ে গা ভাসানো।’ এটি ভিয়েতনামের বহু পুরনো বৈদেশিক নীতির বিশ্বাসের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ যে, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা এবং কোনও আনুষ্ঠানিক জোট এড়িয়ে যাওয়া’ই শ্রেয়।
ইউক্রেন সঙ্কটের কারণে এই মুহূর্তে হ্যানয়কে রাশিয়া সম্ভবত কোনও বড় অস্ত্র সরবরাহ করার অবস্থানে নেই… এ নিয়ে সংশয় এবং সচেতনতা থাকলেও বিশ্লেষকদের মতে, ‘দীর্ঘ ইন্দো-চিন যুদ্ধে ভিয়েতনামী বাহিনীর জন্য সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপক সমর্থনের কথা মাথায় রেখে ভিয়েতনাম এখনও ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ।’ এবং ঠিক এই কারণেই কেন ইউক্রেনের যুদ্ধের মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়ে ভিয়েতনাম সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে এবং তাই এই প্রসঙ্গে একটি ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’ বজায় রেখেছে। ভিয়েতনাম ইউক্রেনের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি কিয়েভকে কিছু সাহায্য পাঠিয়ে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তাব থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুতিনকে ভিয়েতনামের ‘ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান’-এর জন্য প্রশংসা করতেও দেখা গিয়েছে। ইউক্রেন সঙ্কটে ভিয়েতনামও সামরিক অস্ত্র অর্জনের জন্য বিকল্প উত্স খোঁজার চেষ্টা করছে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার নিরাপত্তা অংশীদারিত্বকে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। তবে এই দিকটিতে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা সম্পূর্ণ ভাবে খারিজ করতে এখনও সময় লাগবে।
ভিয়েতনাম ইউক্রেনের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি কিয়েভকে কিছু সাহায্য পাঠিয়ে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তাব থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নিজের সফরের সময় পুতিন উল্লেখ করেছেন যে, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে কৌশলগত ব্যাপক অংশীদারিত্ব জোরদার করা সবসময়ই রাশিয়ার জন্য অগ্রাধিকার ছিল’। ভিয়েতনামের জন্য এই সফরটিকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভিয়েতনামও ব্রিকস-এ যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যেখানে মস্কো এই বছর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও দু’টি দেশ অর্থাৎ মালয়েশিয়া এবং তাইল্যান্ডের সঙ্গে পর্যায়ক্রমিক সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে।
এই সফরটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোটেও ভাল নজরে দেখেনি। ভিয়েতনামের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক একটি বিশেষ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর ভিয়েতনামে সফর করেছিলেন। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন যে, ‘কোনও দেশেরই পুতিনকে তাঁর আগ্রাসনমূলক যুদ্ধের প্রচারের জন্য মঞ্চ প্রদান করা উচিত নয় এবং এমনটা করলে আসলে পুতিনের নৃশংসতাকে স্বাভাবিকীকরণ করার কাজে সাহায্য করা হবে।’ সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্যও ত্বরান্বিত হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ভিয়েতনামের বাজার অর্থনীতির অবস্থা সংস্কার করার জন্য পর্যালোচনা করছে, যা হ্যানয়কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যের উপর কম শুল্ক দিয়ে উপকৃত হতে সাহায্য করবে।
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভিয়েতনামের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ চিন সাগরে ভিয়েতনাম ও চিনের মধ্যে সংঘর্ষ ফিলিপিন্সের মতো তীব্র না হলেও ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। কিন্তু একই সময়ে ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুব কাছাকাছি আসতে চায় না। কারণ এটি চিনকে দক্ষিণ চিন সাগরে ভিয়েতনামের উপর আরও চাপ দিতে প্ররোচিত করতে পারে, যেমনটা এখন ফিলিপিন্সের ক্ষেত্রে ঘটছে।
এ কথা স্পষ্ট যে, এই সফরটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জন্য ভাল নয়। তবে ভিয়েতনামের জন্য এটি কোনও পক্ষ বেছে নেওয়া এবং অন্য দেশকে সন্তুষ্ট করার জন্য আর এক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার বিষয় নয়। এটি মূলত ভিয়েতনামের ‘বৈচিত্র্যের বৈদেশিক নীতি এবং স্বায়ত্তশাসনের কৌশল অনুসরণ করা’র বিষয়।
এই অঞ্চলে মার্কিন-চিন মহাশক্তির প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করার জন্য একটি হেজিং কৌশল অবলম্বন করা বেশির ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলি দ্বারা গৃহীত নীতিতে দেখা গিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কারও কারও কাছে ইউক্রেন সঙ্কটকে এখনও ‘দূরবর্তী সঙ্কট’ হিসেবেও দেখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন মিত্র তাইল্যান্ডের মতো একটি দেশের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে জনমত ভিয়েতনামের মতোই বিভক্ত। যখন ভিয়েতনামের সঙ্গে মিলে মালয়েশিয়া এবং তাইল্যান্ডের মতো দেশগুলি ব্রিকসে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে, ঠিক তখনই সম্ভাব্য ভাবে রাশিয়া ব্রিকস-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করতে চলেছে। এ সব কিছুই আসলে দর্শায় যে, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই তাদের চাহিদা পূরণের জন্য যে কোনও একটি দেশের উপর নির্ভর করা থেকে দূরে সরে গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই তাদের বিকল্পগুলিকে উন্মুক্ত রাখতে চায় এবং তাদের অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য আনতে চায়।
রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
প্রেমেশা সাহা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.