Published on Jul 30, 2024 Updated 0 Hours ago

চিন-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা চলতে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তার পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য দিল্লির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সেলা টানেল: ভারতের সীমান্ত পরিকাঠামো প্রয়াসের অগ্রগতি

মার্চের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিন-ভারত সীমান্তের কাছে ভারতের উত্তর-পূর্বে অরুণাচল প্রদেশে সেলা টানেলের উদ্বোধন করেন। টানেলটি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন দ্বারা নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি
প্রেস রিলিজ অনুসারে, ১৩,০০০ ফুট উচ্চতায় নির্মিত টানেলটি প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি হয়েছে। টানেলটির উদ্দেশ্য "বালিপাড়া - চারিদুয়ার - তাওয়াং [বিসিটি] রোডের সেলা পাস জুড়ে তাওয়াং-এ সর্ব-আবহাওয়া সংযোগ প্রদান করা," এবং অসমের তেজপুরকে অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলার তাওয়াংয়ের সঙ্গে যুক্ত করা৷ টানেলটি অস্ট্রিয়ান টানেলিং পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে, এবং এটি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানের। এই টানেলটি ভারতীয় সৈন্য ও সরঞ্জামের গতিশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে, আর এইভাবে এই অঞ্চলে আরও দক্ষ ও দ্রুত সংযোগ প্রদানের পাশাপাশি চিনের প্রেক্ষিতে ভারতের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি সংহত করবে।


টানেলটি অস্ট্রিয়ান টানেলিং পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানের।



একটি ভারতীয়
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে টানেলগুলি-‌সহ সেলা টানেল প্রকল্পটি  — একটি প্রধান টানেল এবং জরুরি পরিষেবার জন্য একটি এসকেপ টানেল — অ্যাপ্রোচ ও লিঙ্ক রোড প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ। টানেল অনেক সুবিধা করে দিয়েছে। যেমন এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মঠ শহর তাওয়াং ও দিরাংবির মধ্যে দূরত্ব ১২ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে, এবং প্রতিটি দিকে ভ্রমণকারীদের জন্য প্রায় ৯০ মিনিট বাঁচাবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ, টানেলটি আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা থেকে একটি বিশাল ত্রাণ প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, শীতের মাসগুলিতে ভারী তুষারপাতের কারণে বিসিটি রোডটি সেলা পাসে বাধার সম্মুখীন হত। এই ধরনের ব্যাঘাতগুলি স্থানীয়দের জীবন ব্যাহত করেছিল, এবং সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বড় ধরনের লজিস্টিক ব্যাঘাত সৃষ্টি করত। তৃতীয়ত, টানেল ছাড়া, চিন মাটির উপরে ভারতীয় সৈন্যদের সমস্ত গতিবিধি দেখতে পেত, যা সামরিকভাবে ভারতের জন্য একটি অসুবিধা ছিল। এখন সুড়ঙ্গটি থাকায় চিনের চোখের সামনে এই ট্যাকটিকাল এক্সপোজার–এর অবসান হয়েছে।

চিন টানেল প্রকল্প বা ভারতের বৃহত্তর পরিকাঠামোগত প্রয়াসে সন্তুষ্ট ছিল না। চিনের দিক থেকে বিদ্যমান পরিকাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা ভারতকে একটি অসুবিধার মধ্যে ফেলেছিল, এবং চিন তা পছন্দ করত যাতে বেজিং চিন-ভারত সীমান্তে বাড়তি সুবিধা বজায় রাখতে পারে। চিন সেলা টানেলের ভারতীয় উন্নয়নে 
অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এবং চিনের বিদেশ মন্ত্রক (এমএফএ)-‌এর মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, "ভারতের প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপগুলি শুধু সীমান্ত প্রশ্নকে জটিল করে এবং দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি ব্যাহত করে।"

টানেলটি উদ্বোধনের জন্য মোদীর অরুণাচল প্রদেশ সফরেরও চিন সমালোচনা করেছিল, এবং বলেছিল যে দেশটি "চিন-ভারত সীমান্তের পূর্ব অংশে ভারতীয় নেতার সফরের তীব্র নিন্দা ও দৃঢ় বিরোধিতা করে।"

চিন সমগ্র অরুণাচল প্রদেশকে তার নিজস্ব এলাকা বলে দাবি করে এবং একে দক্ষিণ তিব্বত বা জাংনান বলে। বেজিংয়ের অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে এবং অরুণাচল প্রদেশকে ভারতীয় ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেটাও চিনকে খুশি করেনি।

চিনা এমএফএ মুখপাত্র লিন জিয়ান
বলেছেন, "চিন কড়াভাবে এর নিন্দা করে এবং দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। চিন-ভারত সীমানা কখনও চিহ্নিত করা হয়নি। জাংনান সর্বদা চিনের ভূখণ্ড ছিল এটি একটি মৌলিক সত্য যা অনস্বীকার্য। চিন-ভারত সীমান্ত প্রশ্ন দুই দেশের মধ্যেকার একটি বিষয় এবং মার্কিন পক্ষের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। এটা সকলেরই জানা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থপর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের জন্য অন্যান্য দেশের সংঘাতকে উস্কে দেওয়া এবং সুবিধা নেওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে কোনো প্রচেষ্টাই করতে ছাড়েনি।”


চিন-ভারত সীমান্ত প্রশ্ন দুই দেশের মধ্যেকার একটি বিষয় এবং মার্কিন পক্ষের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।



সেলা টানেলটি চিনের সঙ্গে পরিকাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা সংশোধন করার জন্য একটি বিস্তৃত ভারতীয় সংযোগ এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের
একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, বিআরও প্রায় $১ বিলিয়ন ব্যয়ে ৩৩০টি পরিকাঠামো প্রকল্প সম্পন্ন করেছে, যদিও সমস্ত প্রকল্পগুলি চিন-ভারত সীমান্ত এলাকায় ছিল কি না তা স্পষ্ট নয়।

চিন চিন-ভারত সীমান্তের পাশাপাশি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে (টিএআর) অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করেছে, যা সীমান্তে সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। চিন তিব্বতে একটি বিস্তৃত সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে, যা কৌশলগত প্রেক্ষাপটে ব্যাপকভাবে উপকারী।‌ সেইসঙ্গেই এটি রেল সংযোগও স্থাপন করেছে। ফলে আদেশ দেওয়া হলে একসঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ও রেলপথে চিনের সৈন্য চলাচল সহজ হবে। চিন সীমান্ত এলাকা ও টিএআর জুড়ে অনেক লজিস্টিক ও তেল ডিপো তৈরি করেছে, যা সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী সেনা মোতায়েনের জন্য পদ্ধতিগত পরিকল্পনা প্রদর্শন করে। এর বিরুদ্ধে ভারত এখনও পর্যন্ত তেমন কিছুই করে উঠতে পারেনি।

ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের প্রতিকূল প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, যা অদূর ভবিষ্যতে গুরুতর উন্নতির কোনও লক্ষণ দেখায় না, নয়াদিল্লি চিন-ভারত সীমান্তে কৌশলগত পরিকাঠামো নির্মাণের
প্রচেষ্টাকে  আরও দৃঢ় করেছে। কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা ভারতকে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে টানেল, সেতু ও রাস্তা তৈরি করতে বাধ্য করেছে, যা দ্রুত সৈন্য চলাচলকে সহজতর করবে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তার
বছর শেষের পর্যালোচনা ২০২৩-এ ভারত সরকারের চিন-ভারত সীমান্তের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক প্রকল্পগুলিসহ সারা দেশে গৃহীত বিভিন্ন কৌশলগত প্রকল্পের বিশদ প্রদান করেছে।

বর্তমান জোরালো প্রয়াস শুরু হয়েছে আরও বেশি আর্থিক বরাদ্দ ও সরকারের তরফ থেকে তীক্ষ্ণ মনোযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি হল ভারতীয় রাজ্য লাদাখ ও হিমাচল প্রদেশের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় শিনকুন লা পাসের নীচে একটি ৪.১ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ। সম্পূর্ণ হলে, এই টানেল হিমাচল প্রদেশের লাহুল উপত্যকা এবং লাদাখের জান্সকার উপত্যকার মধ্যে একটি সর্ব-আবহাওয়া সংযোগ প্রদান করবে। দু-এক বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ
শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সীমান্তে ভারত ও চিনের চলতি সংঘর্ষের কারণে, এবং উত্তেজনা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি বলে, ভারতের সীমান্ত সংযোগ প্রয়াসের গতি অক্ষুণ্ণ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চুশুল-মোল্ডো সীমান্তে কোর কমান্ডার পর্যায়ের ২১তম দফার আলোচনা হয়। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের
একটি বিবৃতি অনুসারে, বৈঠকটি ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং "পূর্ববর্তী রাউন্ডগুলির ভিত্তিতে আরও অগ্রসর হয়ে ভারত-চিন সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও নিস্তব্ধতার একটি অপরিহার্য ভিত্তি হিসাবে পূর্ব লাদাখের এলএসি বরাবর অবশিষ্ট অঞ্চলগুলিতে সেনা দূরে সরানোর প্রয়াস চালানো হয়েছিল।" আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হওয়ার স্বাভাবিক ভাষার বাইরে বৈঠকটিতে উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটেনি।



এই ভাষ্যটি প্রথম
দ্য ডিপ্লোম্যাট  -‌এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.