Author : Anusha Guru

Published on Oct 25, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারতের বন্দর পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে বাণিজ্য ধারাবাহিকতা, জাতীয় নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকরী স্থিতিস্থাপকতা রক্ষার জন্য শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলির জরুরি ভিত্তিতে একীকরণ প্রয়োজন।

ভারতীয় বন্দরগুলির সুরক্ষা: সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতা এবং সামনের পথ

বন্দরগুলি একটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে, এবং বিশ্ব বাণিজ্যকে সহজতর করে। ভারতের জন্য, ভারত মহাসাগরে তার বন্দরগুলির কৌশলগত অবস্থান দেশটিকে বিশ্বের ১৫০ টিরও বেশি দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যা দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনাকে জোরদার করে। প্রায় সমস্ত বন্দর কার্যক্রমের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাইজেশনের মধ্যে, এই গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোটি সাইবার 'হ্যাক্টিভিজম', গুপ্তচরবৃত্তি, র‍্যানসমওয়্যার এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধের মতো নতুন বিপদের মুখোমুখি হচ্ছে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে, বিশেষ করে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির কারণে, এই দুর্বলতা আরও বেড়ে যায়। সন্দেহ করা হয় ২০২০ সালে চিনা হ্যাকাররা দুটি ভারতীয় বন্দরকে লক্ষ্যবস্তু করে, যা সাইবার অভিযানগুলি কীভাবে ভয় দেখানোর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে তা তুলে ধরে। এই ধরনের ঘটনাগুলি সামুদ্রিক এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে চিনের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল প্রভাবের ঝুঁকিগুলিকে তুলে ধরে। অপারেশন  সিন্দুরের সময়, ভারত বন্দর সহ গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগুলিকে লক্ষ্য করে সমন্বিত সাইবার আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে বলে জানা গিয়েছে , যা রাষ্ট্র-সমর্থিত হ্যাকার এবং 'হ্যাক্টিভিস্ট' গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।


ভারতের বন্দর পরিকাঠামোতে সাইবার নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো সুরক্ষার একটি অবহেলিত দিক হিসেবে রয়ে গিয়েছে। ভারত যদি মেগা বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ বিকাশের লক্ষ্য রাখে, তাহলে ডিজিটাল সিস্টেমগুলি সুরক্ষিত করার বিষয়ে আর বিলম্ব করতে পারে না।



বিশ্বব্যাপী বন্দরগুলিতে সাইবার আক্রমণ, যেমন র‍্যানসমওয়্যারের ঘটনা, ২০২৩ সালে জাপানের নাগোয়া বন্দরে , ২০১৭ সালে ভারতের জওহরলাল নেহরু বন্দর টার্মিনালে (জেএনপিটি), এবং ২০২২ সালে পর্তুগালের লিসবন বন্দরে টার্মিনাল কার্যক্রম ব্যাহত করেছে, গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সিস্টেম উন্মুক্ত করেছে, এবং যথেষ্ট অর্থনৈতিক খরচ নিয়ে এসেছে। ডিএনভি মেরিটাইম সাইবার প্রায়োরিটি ২০২৪/২৫ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ৩১ শতাংশ সামুদ্রিক পেশাদার ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে কমপক্ষে একটি সাইবার আক্রমণের কথা জানিয়েছেন, যা বিশ্বব্যাপী সাইবার বিপদজনিত পরিবেশের ক্রমবর্ধমান তীব্রতা জটিলতা তুলে ধরে। এই ধরনের ঘটনার মাত্রা এবং প্রভাব সত্ত্বেও, ভারতের বন্দর পরিকাঠামোতে সাইবার নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো সুরক্ষার একটি অবহেলিত দিক হিসেবে রয়ে গিয়েছে ভারত যদি মেগা বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ বিকাশের লক্ষ্য রাখে, তাহলে ডিজিটাল সিস্টেমগুলি সুরক্ষিত করার বিষয়ে আর বিলম্ব করতে পারে না।

ডিজিটাইজেশন এবং দুর্বলতা

ভারতের ১২টি প্রধান এবং ২০০টি ছোট বন্দর দেশের জাহাজ চলাচল বাণিজ্যকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সরকার বন্দর কার্যক্রমে আরও দক্ষতার জন্য ডিজিটালাইজ করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ করেছে। চলতি ডিজিটাল রূপান্তর সাগরমালা কর্মসূচির অধীনে বৃহত্তর "বন্দর আধুনিকীকরণ" স্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে বন্দর কার্যক্রমের অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা, এবং রিয়েল-টাইম কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম। অতিরিক্তভাবে, সাগরমালা স্টার্টআপ অ্যান্ড ইনোভেশন ইনিশিয়েটিভ (এস২আই২)-‌এর লক্ষ্য হল সবুজ জাহাজ চলাচল, স্মার্ট বন্দর এবং সামুদ্রিক সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রযুক্তি-চালিত উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করা, আর সেই সঙ্গে স্টার্টআপগুলিকে তহবিল, পরামর্শ শিল্প সংযোগের মাধ্যমে সহায়তা করা। মেরিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন ২০৩০ (এমআইভি ২০৩০) এবং অমৃত কাল ভিশন ২০৪৭-‌এর অধীনে ভারত মেগা বন্দর, আধুনিক পরিকাঠামো এবং ট্রান্সশিপমেন্ট হাব বিকাশের আকাঙ্ক্ষা রাখে। ভারতীয় বন্দর পরিকাঠামোকে ডিজিটালাইজ করার আরও প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে ইউনিফায়েড লজিস্টিক ইন্টারফেস প্ল্যাটফর্ম চালু করা, যা এমন একটি সমন্বিত ব্যবস্থা যা লজিস্টিক পরিকল্পনায় অংশীদারদের সহায়তা করে। ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ জাতীয় -গভর্নেন্স বিভাগ এবং ইন্ডিয়ান পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএ)-‌এর মধ্যে সহযোগিতার লক্ষ্য হল সামুদ্রিক ক্ষেত্রে ডিজিটাল উদ্ভাবনকে এগিয়ে নেওয়া, বিশেষ করে উন্নত সফটওয়্যার উন্নয়ন, উদীয়মান প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।


বন্দর পরিকাঠামোর দুর্বলতা কাজে লাগানোর জন্য বিপদ সৃষ্টিকারীরা ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল-অফ-সার্ভিস (ডিডিওএস) আক্রমণ, স্পিয়ার-ফিশিং র‍্যানসমওয়্যার-অ্যাজ--সার্ভিসের মতো অত্যাধুনিক কৌশল ব্যবহার করছে;‌ তাই স্থিতিশীল বন্দর পরিকাঠামো নিশ্চিত করার জন্য ভারতে বিদ্যমান সামুদ্রিক সাইবার নিরাপত্তা কাঠামোর দিকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।



প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় সক্ষম করে এবং বন্দর কার্যক্রমকে সহজতর করে, কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) অপারেশনাল টেকনোলজি (ওটি) সিস্টেমের একত্রিতকরণ আক্রমণের প্রয়াসকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছে। আইটি সিস্টেমগুলি ডেটা যোগাযোগ পরিচালনা করে, আর ওটি সিস্টেমগুলি ভৌত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে;‌ কিন্তু তাদের একীকরণ আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করে যেখানে একটি আইটি লঙ্ঘন ওটি কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা দিতে পারে। অ্যালার্ম পর্যবেক্ষণ এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুপারভাইজারি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন (এসসিএডিএ) সিস্টেমগুলি আইটি নেটওয়ার্কগুলির মাধ্যমে উন্মুক্ত হয়ে যায়, যা কার্গো শক্তি কার্যক্রমের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যগুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এই বিকশিত ডিজিটাল ভূচিত্র বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যকারকদের আকর্ষণ করেছে, বিশেষ করে অ্যাডভান্সড পারসিস্টেন্ট থ্রেটস (এপিটি), যা দীর্ঘমেয়াদি সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম গোপন গোষ্ঠী। বন্দর পরিকাঠামোর দুর্বলতা কাজে লাগানোর জন্য বিপদ  সৃষ্টিকারীরা ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল-অফ-সার্ভিস (ডিডিওএস) আক্রমণ, স্পিয়ার-ফিশিং র‍্যানসমওয়্যার-অ্যাজ--সার্ভিসের মতো অত্যাধুনিক কৌশল ব্যবহার করছে;‌ তাই স্থিতিশীল বন্দর পরিকাঠামো নিশ্চিত করার জন্য ভারতে বিদ্যমান সামুদ্রিক সাইবার নিরাপত্তা কাঠামোর দিকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ফাঁক

ভারত লক্ষ্যনির্ভর অংশীদারিত্ব, প্রশিক্ষণ উদ্যোগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে আরও নিরাপদ সামুদ্রিক ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করতে শুরু করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বন্দর সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আইআইটি-কানপুর আইপিএ-এর মধ্যে সমঝোতাপত্র (এমওইউ) এই সমঝোতাপত্রটি শক্তিশালী ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা দলগুলির মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা দক্ষতা এবং সামুদ্রিক খাতের জন্য ব্যাপক সুরক্ষা নীতি তৈরির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। রাষ্ট্রীয় রক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়, গান্ধীনগর , এবং ইন্ডিয়ান রেজিস্টার অফ শিপিং কর্তৃক বন্দর সাইবার নিরাপত্তার উপর কর্মশালা, এবং কোচিন বন্দর  কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা সম্পর্কিত বন্দর কর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, উদীয়মান ডিজিটাল হুমকির বিরুদ্ধে বন্দরগুলিকে রক্ষা করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক ক্ষমতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি। এই অভ্যন্তরীণ প্রচেষ্টার উপর ভিত্তি করে ভারত শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ মরিশাসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে কলম্বো সুরক্ষা কনক্লেভের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতাও অনুসরণ করেছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে কনক্লেভের এনএসএ-স্তরের সভায়, সাইবার নিরাপত্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো সুরক্ষাকে ফোকাসের মূল ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। ডার্ক ওয়েব বিপদ এবং সাইবার ফরেনসিক বিষয়ে ভারত একটি আঞ্চলিক কর্মশালার আয়োজন করেছে, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্মিলিত সাইবার স্থিতিস্থাপকতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।

তবে, ভারতের বন্দর সাইবার নিরাপত্তা কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য ফাঁক রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, এমআইভি ২০৩০ বন্দর আধুনিকীকরণ ডিজিটাইজেশনের রূপরেখা দেয়, কিন্তু সাইবার নিরাপত্তার জন্য একটি স্বতন্ত্র স্তম্ভ হিসেবে কৌশল তৈরির সুযোগ দেয় না। আইনি দিক থেকে, ভারতের বিস্তৃত সাইবার আইন কাঠামোযেমন তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০০, এবং জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা নীতি, ২০১৩সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিকে সম্বোধন করে ঠিকই, কিন্তু এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সামুদ্রিক সাইবার নিরাপত্তা পরিকল্পনা, ২০২০, বা যুক্তরাজ্যের জাতীয় সামুদ্রিক নিরাপত্তা কৌশল, ২০২২-‌এর মতো লক্ষ্যনির্ভর প্রচেষ্টার বিপরীতে সমুদ্র-নির্দিষ্ট ফোকাসের অভাব রয়েছে যদিও সামগ্রিক ডিজিটাল স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার জন্য সার্ট-ইন-‌এর প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, সাইবার স্বচ্ছতা কেন্দ্র এবং ভারতীয় সাইবার অপরাধ সমন্বয় কেন্দ্র-‌সহ জাতীয় উদ্যোগগুলি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এগুলি বন্দর পরিকাঠামোর জন্য নির্দিষ্ট কাঠামো বা অপারেশনাল প্রোটোকল সরবরাহ করে না।

ইউরোপের প্রধান তেল টার্মিনাল, যুক্তরাজ্যের পোর্ট অফ লন্ডন অথরিটি এবং পর্তুগালের লিসবন বন্দর গুরুতর অপারেশনাল ডেটা চ্যুতির মুখোমুখি হয়েছে। ভারতও এর থেকে মুক্ত ছিল না।

বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো লক্ষ্য করে সাইবার আক্রমণের ক্রমবর্ধমান পৌনঃপুনিকতা জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবধানগুলি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। গত পাঁচ বছরে ফ্রান্সের মার্সেই, ইরানের শহিদ রাজাই, পারস্য উপসাগরের হরমুজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেউইক এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বন্দরগুলি র‍্যানসমওয়্যার ম্যালওয়্যার আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। ইউরোপের প্রধান তেল টার্মিনাল, যুক্তরাজ্যের পোর্ট অফ লন্ডন অথরিটি এবং পর্তুগালের লিসবন বন্দর গুরুতর অপারেশনাল ডেটা চ্যুতির মুখোমুখি হয়েছে। ভারতও এর থেকে মুক্ত ছিল না। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহারাষ্ট্রের জেএনপিটি-‌কে লক্ষ্য করে একটি র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণ ঘটে, যার ফলে এর ব্যবস্থাপনা তথ্য ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। ২০২৩ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বন্দর অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ডে একটি লঙ্ঘনের ফলে তিন দিনের জন্য কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বহির্গামী পণ্য চলাচলের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যাহত হয়।

এই ঘটনাগুলি একটি বিস্তৃত ধরন প্রকাশ করে: বন্দরগুলি দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে, সাইবার আক্রমণগুলি গুরুত্বপূর্ণ চলাচল, পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যাহত করার সম্ভাবনা রাখে। আরও গুরুতর ক্ষেত্রে, একটি সু-সমন্বিত সাইবার আক্রমণ সামরিক সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে, বাণিজ্য নেটওয়ার্কগুলিকে বিকল করে দিতে পারে, অথবা চোরাচালান অবৈধ বাণিজ্যের জন্য কার্গো ডেটা হেরফের করে দিতে পারে। এই ত্রুটিগুলি দূর করার জন্য একটি সমন্বিত নীতিগত পদক্ষেপ, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং বন্দর-নির্দিষ্ট সাইবার স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার লক্ষ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা প্রয়োজন।

নীতিগত সুপারিশ

বন্দরের সাইবার বিপদ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য, ভারতকে সামুদ্রিক সাইবার নিরাপত্তাকে একটি পৃথক ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং বিস্তৃত নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে কাঠামোগত ঘটনা প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, নিয়মিত ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং বন্দর পরিকাঠামো জুড়ে একটি নিরাপদ স্থিতিস্থাপক ডিজিটাল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা। নীতিগত প্রতিক্রিয়াগুলি বন্দর ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার জন্য তৈরি নিবেদিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালার উন্নয়ন এবং প্রয়োগের মাধ্যমে শুরু হওয়া উচিত। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কৌশল একটি সামুদ্রিক সাইবার নিরাপত্তা কৌশল তৈরির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থার সামুদ্রিক সাইবার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকাগুলির মতো প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া গেলে তা সামুদ্রিক কার্যক্রম জুড়ে স্পষ্ট অভিন্ন সুরক্ষা প্রোটোকলকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে পারে। ভারতের সামুদ্রিক অমৃত কাল ভিশন ২০৪৭ বন্দর আধুনিকীকরণ এবং স্থিতিস্থাপক সরবরাহের একটি মূল সক্ষমকারী হিসাবে সাইবার নিরাপত্তাকে চিহ্নিত করে এই প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরদার করেছে। এটি নিয়মিত সাইবার নিরাপত্তা নিরীক্ষা পরিচালনা, সাইবার নিরাপত্তা এবং সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলির জন্য পরামর্শ পরিষেবা, এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ পরিকাঠামো বৃদ্ধির মতো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের রূপরেখা দেয়, এবং ভারতের বিকশিত বন্দর বাস্তুতন্ত্রে সাইবার স্থিতিস্থাপকতা স্থাপনের জন্য একটি কার্যকরী রোডম্যাপ প্রদান করে।

বন্দরের সাইবার বিপদ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য, ভারতকে সামুদ্রিক সাইবার নিরাপত্তাকে একটি পৃথক ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং বিস্তৃত নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে কাঠামোগত ঘটনা প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, নিয়মিত ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং বন্দর পরিকাঠামো জুড়ে একটি নিরাপদ স্থিতিস্থাপক ডিজিটাল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা।


প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাগুলির  আইটি এবং ওটি পরিকাঠামো উন্নত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত, উন্নত হুমকি সনাক্তকরণ এবং প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এবং কঠোর অ্যাক্সেস প্রোটোকল প্রয়োগ করা উচিত। সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য এবং ক্রমবর্ধমান সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে বন্দর পরিকাঠামোর স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত নিরাপত্তা নিরীক্ষা দুর্বলতা মূল্যায়ন অপরিহার্য। তা ছাড়া,  ঘটনাভিত্তিক শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া , দুর্বলতা প্রতিবেদন এবং স্পষ্ট পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা সাইবার লঙ্ঘনের প্রভাব হ্রাস করা এবং অপারেশনাল ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বন্দর কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তা ক্ষমতা শক্তিশালী করাও অপরিহার্য, এবং এর জন্য ব্যবহারিক, সিমুলেশন-ভিত্তিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন এই ধরনের প্রশিক্ষণে সাইবার লঙ্ঘন প্রতিরোধের জন্য প্রযুক্তিগত পদ্ধতিগত ব্যবস্থা, আর সেইসাথে অপারেশনাল ব্যাঘাত কমানোর জন্য কার্যকর প্রতিক্রিয়া কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। গুরুত্বপূর্ণভাবে, সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সাইবার নিরাপত্তা পেশাদারদের বাইরেও প্রসারিত হওয়া উচিত, যাতে বন্দরের মধ্যে ডিজিটাল সিস্টেমের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এই পদক্ষেপগুলির পাশাপাশি, ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও গভীর করা গেলে তা এই অঞ্চলের সামুদ্রিক পরিকাঠামো জুড়ে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য একটি শক্তি গুণক হিসেবে কাজ করতে পারে।

ডিজিটাল হুমকির হাত থেকে সমুদ্র ক্ষেত্রকে রক্ষা করার জন্য বন্দর নিরাপত্তা পরিকাঠামো শক্তিশালী করার উপর স্থিতিশীল মনোযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যখন পরবর্তী প্রজন্মের বন্দর পরিকাঠামো তৈরি করছে, তখন এমন সাইবার স্থিতিস্থাপকতা অবশ্যই একটি কৌশলগত অপরিহার্যতা হয়ে উঠবে যা জাতীয় সামুদ্রিক ডিজিটাল নীতিতে সম্পূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত।



অনুশা গুরু অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণা ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.