Author : Samuel Bashfield

Published on Mar 31, 2025 Updated 13 Hours ago

সমুদ্রতলের জন্য যুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে — সমুদ্রতল যুদ্ধ এখন বিশ্বব্যাপী সংযোগ, জ্বালানি নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভবিষ্যতের জন্য বিপদস্বরূপ।

ভূ-প্রযুক্তিগত দ্বন্দ্বের এক নতুন যুগে সমুদ্রতল যুদ্ধ

Image Source: Getty

এই প্রবন্ধটি ‘‌রাইসিনা এডিট ২০২৫’‌ সিরিজের অংশ



বিশ্ব ক্রমশ আন্তঃসংযুক্ত হয়ে উঠছে, এবং তরঙ্গের নীচে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে সংঘাত তীব্রতর হচ্ছে। সমুদ্রতল যুদ্ধ আধুনিক ভূ-প্রযুক্তিগত সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যোগাযোগ কেবল, জ্বালানি পাইপলাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রতল পরিকাঠামোর উপর সমাজের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার সঙ্গে সঙ্গে দেশগুলি এখন সমুদ্রতলের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিযোগিতা করছে। যুদ্ধের এই নতুন রূপটি বিশ্বব্যাপী সংযোগের নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ফেলে এবং ভূ-রাজনৈতিক ভূদৃশ্যকে গভীরভাবে পুনর্নির্মাণ করতে পারে।

সমুদ্রতল যুদ্ধে সমুদ্রতলের পরিকাঠামোকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন ধরনের সামরিক অভিযান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই কার্যকলাপের মধ্যে যোগাযোগ কেবল ও জ্বালানি পাইপলাইন ব্যাহত করা থেকে শুরু করে সমুদ্রতলের উপর বা তার কাছাকাছি অবস্থিত নজরদারি নেটওয়ার্ক ও সামরিক স্থাপনাগুলিকে ধ্বংস করা পর্যন্ত সব কিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অভূতপূর্ব প্রযুক্তিগত অগ্রগতির যুগে, দেশগুলি কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সমুদ্রতলের গুরুত্ব সম্পর্কে ক্রমশ সচেতন হচ্ছে। আধুনিক গভীর সমুদ্র প্রযুক্তি দ্রুত এগনোর সময় সমুদ্রতল যুদ্ধের পরিধি প্রাথমিক কেবল কাটা ও সেন্সরশিপ কৌশল থেকে শুরু করে এখন নজরদারি, নিরীক্ষণ পরিক্রমা এবং এমনকি সাইবার যুদ্ধের মতো অত্যাধুনিক অভিযান পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।


আধুনিক গভীর সমুদ্র প্রযুক্তি দ্রুত এগনোর সময় সমুদ্রতল যুদ্ধের পরিধি প্রাথমিকভাবে কেবল কাটা ও সেন্সরশিপ কৌশল থেকে শুরু করে এখন নজরদারি, নিরীক্ষণ পরিক্রমা এবং এমনকি সাইবার যুদ্ধের মতো অত্যাধুনিক অভিযান পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।



১৮০০ সালে সাবমেরিন কেবল স্থাপনের পর থেকেই সমুদ্রতলের গুরুত্ব স্বীকৃত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, যুদ্ধরতরা যোগাযোগের জন্য লাইফলাইন হিসেবে সমুদ্রতলের তারের মূল্য বুঝতে পেরেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশরা যোগাযোগ ব্যাহত করতে এবং কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য জার্মানির সমুদ্রতলের টেলিগ্রাফ কেবলগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। সমুদ্রতলের যুদ্ধের এই প্রাথমিক রূপটি সংঘাতের সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ লাইনগুলি নিয়ন্ত্রণের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে চিত্রিত করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমুদ্রতলের কৌশলগুলি আরও গুরুত্ব পেয়েছিল। অক্ষ ও মিত্র বাহিনী উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রতলের যোগাযোগ লাইনগুলি রক্ষা, দখল বা বিচ্ছিন্ন করার জন্য কাজ করেছিল। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, সমুদ্রতলের যুদ্ধ কম পুনরাবৃত্ত হলেও আরও পরিশীলিত হয়ে উঠেছিল। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আইভি বেলস-‌সহ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছিল, যার মধ্যে মূল্যবান গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য সোভিয়েতের সমুদ্রতলের যোগাযোগ কেবলগুলি ট্যাপ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সাবমেরিনের গতিবিধি ট্র্যাক করার জন্যও সমুদ্রতলে নজরদারি ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছিল, যা আধুনিক নৌ-‌কৌশলের একটি মূল উপাদান হয়ে ওঠার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

সম্প্রতি ইউরোপে, বিশেষ করে বাল্টিক সাগরে, সমুদ্রতল যুদ্ধের ঘটনা সামনে এসেছে। বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল ঘটনা, বিশেষ করে
২০২২ সালে নর্ড স্ট্রিম ১ ও ২ গ্যাস পাইপলাইন ভেঙে দেওয়ার জন্য বিস্ফোরণ, জলের নিচের পরিকাঠামোর দুর্বলতা তুলে ধরে। এই বিস্ফোরণগুলি ব্যাপকভাবে লিকেজ সৃষ্টি করেছিল এবং এটিকে নাশকতামূলক কাজ হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছিল। যদিও কোনও গোষ্ঠী বা দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি, এই ঘটনাটি মূলত রাশিয়া, পশ্চিমী দেশগুলি ও ইউক্রেনের মধ্যে অভিযোগের জাল তৈরি করেছে। এই আক্রমণটি দেখিয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী শক্তি এবং যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলি লক্ষ্যবস্তুগত ব্যাঘাতের জন্য কতটা উন্মুক্ত।


সাবমেরিনের গতিবিধি ট্র্যাক করার জন্যও সমুদ্রতলে নজরদারি ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছিল, যা আধুনিক নৌ-‌কৌশলের একটি মূল উপাদান হয়ে ওঠার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।



নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের ঘটনাটি ছিল শুধুই শুরু।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে, বাল্টিক সাগরে সমুদ্রতলের কেবলের বিরুদ্ধে নাশকতার ঘটনাগুলির একটি সিরিজ আরও উদ্বেগ জাগিয়ে তোলে। এই আক্রমণগুলির পুনরাবৃত্তি ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে, উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো) দুর্বল সমুদ্রতল পরিকাঠামোর নজরদারি ও সুরক্ষার জন্য বাল্টিক সাগরে তার নৌ-‌উপস্থিতি বৃদ্ধি করে, এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রতল পরিকাঠামো নেটওয়ার্ক তৈরি করে। ইউরোপ, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক হটস্পট, যা সমুদ্রতল যুদ্ধের ভবিষ্যতের জন্য দ্রুত গ্রাউন্ড জিরো হয়ে উঠছে। সেইসঙ্গে ক্রমশ এমন উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে যে একই ধরনের কৌশল ইন্দো-প্যাসিফিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আধুনিক যুগে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সমুদ্রতল যুদ্ধের ঘটনা এখনও অস্বাভাবিক, তবুও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সমুদ্রতলের পরিকাঠামোকে রাডারে রাখতে শুরু করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রতলের কেবলগুলির একটি অবস্থিত, যা ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের দেশগুলিকে সংযুক্ত করে। এই কেবল, প্রয়োজনীয় পাইপলাইন ও জ্বালানি রুটগুলি এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।

ইন্দো-প্যাসিফিকে চিনের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকায় বেজিংয়ের কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য সমুদ্রতলের পরিকাঠামোকে ব্যাহত করা বা কাজে লাগানোর সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। সমুদ্রতলের গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কগুলিতে নাশকতা বা সাইবার আক্রমণের হুমকি আর তাত্ত্বিক নয়, বরং একটি ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা যার বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব থাকতে পারে।

ইন্দো-প্যাসিফিকের সরকারগুলি ইউরোপের সমুদ্রতলের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলি লক্ষ্য করছে, এবং তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব — যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে তৈরি কোয়াড — সমুদ্রতলের পরিকাঠামো সুরক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করেছে। এই দেশগুলি পরিকাঠামো ও সাবমেরিন কেবলের স্থিতিস্থাপকতার উপর জোর দিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে সামুদ্রিক নিরাপত্তার উপর মনোযোগ দিচ্ছে।


সমুদ্রতলের গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কগুলিতে নাশকতা বা সাইবার আক্রমণের হুমকি আর তাত্ত্বিক নয়, বরং একটি ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা যার বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব থাকতে পারে।

 

সমুদ্রতলের পরিকাঠামোর উদীয়মান গুরুত্ব দেশগুলির জন্য ঝুঁকি ও সুযোগ উভয়ই উপস্থাপন করে। সমুদ্রতলের কেবল, শক্তি পাইপলাইন ও অন্যান্য সম্পদের দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে যারা সামরিক বা অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য এই সম্পদগুলিকে কাজে লাগাতে চায় তেমন প্রতিপক্ষদের কাছে এগুলি উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ফলস্বরূপ, কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে সমুদ্রতলের পরিকাঠামোর নজরদারি, প্রতিরক্ষা এবং সম্ভাব্যভাবে সেগুলিকে ব্যাহত করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।

আধুনিক সমুদ্রতলের যুদ্ধের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি হল নজরদারি ও প্রতিরক্ষার জন্য মনুষ্যবিহীন জলতলের যানবাহন (ইউইউভি)-‌এর মতো স্বয়ংচালিত প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার। এই উন্নত সিস্টেমগুলি সমুদ্রতলের পরিকাঠামো রক্ষা এবং শত্রু সম্পদের বিরুদ্ধে গোপন অভিযান পরিচালনার জন্য নতুন ক্ষমতা প্রদান করে।

আরেকটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ হল সমুদ্রতলের ডেটা নেটওয়ার্কগুলিকে লক্ষ্য করে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির বৃদ্ধি। দেশ, কর্পোরেশন ও অ-রাষ্ট্রীয় খেলোয়াড়েরা এই সিস্টেমগুলির দুর্বলতাগুলিকে কাজে লাগানোর জন্য ক্রমবর্ধমান পরিশীলিত উপায়গুলি তৈরি করার সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও শক্তি প্রবাহে ব্যাঘাতের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাইবার যুদ্ধ ভৌত নাশকতার সঙ্গে মিলিতভাবে ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে দেশ বা সমগ্র অঞ্চলকে পঙ্গু করে দিতে পারে।


আধুনিক সমুদ্রতলের যুদ্ধের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি হল নজরদারি ও প্রতিরক্ষার জন্য মনুষ্যবিহীন জলতলের যানবাহন (ইউইউভি)-‌এর মতো স্বয়ংচালিত প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার।



বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে সমুদ্রতলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের অর্থ হল, আগামী বছরগুলিতে সমুদ্রতলের যুদ্ধের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্রতলের পরিকাঠামোর অখণ্ডতা নিশ্চিত করার জন্য, দেশগুলিকে একাধিক ফ্রন্টে সহযোগিতা করতে হবে: বর্ধিত নজরদারি, উন্নত সাইবার নিরাপত্তা, এবং  কৌশলগত প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে।

একবিংশ শতাব্দী এগিয়ে যাওয়ার সময়, এটা স্পষ্ট যে সমুদ্রতল আর কোনও দূরবর্তী বা প্রত্যন্ত সীমান্ত নয়, বরং বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। সমুদ্রতলের নিয়ন্ত্রণের লড়াই ভূ-রাজনীতির ভবিষ্যৎ গঠন করবে, এবং যে দেশগুলি এই নতুন বিপদগুলি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হবে তারা যদি সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে না-‌পড়ে, তা হলেও গুরুতর অসুবিধার সম্মুখীন হবে। ইন্দো-প্যাসিফিকে নেতাদের ঝুঁকিগুলি স্বীকৃতি দেওয়ার এবং সংঘাতের ঢেউয়ের আগে এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটিকে সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ করার সময় এসেছে।



স্যামুয়েল ব্যাশফিল্ড অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউটের একজন রিসার্চ ফেলো, যিনি ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা, সামুদ্রিক কৌশল এবং সমুদ্রতলের ভূ-রাজনীতিতে বিশেষজ্ঞ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Samuel Bashfield

Samuel Bashfield

Samuel Bashfield is a defence researcher on the Australia India Institutes Defence Program. Sams research interests include Indo-Pacific security defence and foreign policy Indo-Pacific security ...

Read More +