Author : Kirill Likhachev

Published on Nov 01, 2024 Updated 0 Hours ago

পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা দ্বারা প্ররোচিত রাশিয়ার প্রাচ্যের প্রতি কেন্দ্রিকতা’ কৌশল ইন্দো-প্যাসিফিককে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

রাশিয়ার ইন্দো-প্যাসিফিক সংক্রান্ত সমস্যা

বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাশিয়া ও পাশ্চাত্যের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে, রাশিয়ার প্রাচ্যের প্রতি কেন্দ্রিকতা’ কৌশলের বাস্তবায়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আরোপ করা ক্রমবর্ধমান কঠোর নিষেধাজ্ঞার একটি উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া হিসাবে উঠে এসেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল রাশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে রাশিয়ার উচ্চতর সম্পৃক্ততা প্রয়োজনীয়তাকে দর্শিয়েছে। ফলস্বরূপ, ইন্দো-প্যাসিফিকের দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তার বর্তমান বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকার বিশ্লেষণে আরও বেশি করে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ রাশিয়ার লক্ষ্য হল পশ্চিমী দেশগুলির থেকে গভীর বিচ্ছিন্নতার মাঝেই নিজের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা। রাশিয়া, চি, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তাদের দ্বিপাক্ষিক মিথস্ক্রিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৃহত্তর উন্নয়নের উপর চতুর্পাক্ষিক সম্পর্কের প্রভাব বিবেচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিকস+ এবং এসসিও-র মতো বহুপাক্ষিক কাঠামোর উন্নয়ন হলেও নির্দিষ্ট আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার বৈদেশিক নীতি স্বার্থের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ভাবে নতুন গতি পেয়েছে এবং এশিয়ার প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে মস্কোর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তার কৌশলগত মনোভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাশিয়া পশ্চিমের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈরিতা মস্কোকে বেজিংয়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেছে। চিঅবশ্য পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে আগ্রহী। সেখানে রাশিয়াকে চিনের সরাসরি সামরিক-প্রযুক্তিগত সহায়তার কথা তো দূর অস্ত। বরং রুশ-চিনা সম্পর্ককে কিছুটা সীমিত বলে মনে করা গেলেও বিশেষ করে এশিয়ায় ভারত ও চিনের মধ্যে বিদ্যমান সীমান্ত বিরোধ কৌশলগত প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের উপর আলোকপাত করা জরুরি।

চিঅবশ্য পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে আগ্রহী। সেখানে রাশিয়াকে চিনের সরাসরি সামরিক-প্রযুক্তিগত সহায়তার কথা তো দূর অস্ত। বরং রুশ-চিনা সম্পর্ককে কিছুটা সীমিত বলে মনে করা গেলেও বিশেষ করে এশিয়ায় ভারত ও চিনের মধ্যে বিদ্যমান সীমান্ত বিরোধ কৌশলগত প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের উপর আলোকপাত করা জরুরি।

রাশিয়ার বিদেশনীতি সংশোধন

রাশিয়ার ২০২৩ সালের সংস্কারকৃত বিদেশনীতির কৌশল অনুসারে, মস্কো এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উপর বেশি জোর দিতে চায়, যেটি রাশিয়া২০১৬ সালের বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকারের সপ্তম স্থান থেকে গত বছর চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। ইতিমধ্যেই চিভারতের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ইউরেশীয় মহাদেশটি চিরাচরিত ভাবে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলকে স্থানচ্যুত করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এই কৌশলগত পরিবর্তন ৩০টি মনোনীত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে চিন ও ভারতের পর গুরুত্ব আরোপ করে, যে দুটি দেশই মূলত মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী ব্লকের রুশ-বিরোধী অবস্থানের বিরোধিতা করে এসেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে সংস্কারকৃত কৌশলটিতে ইন্দো-প্যাসিফিক শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়নি, যা আসলে ভারত মহাসাগরের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্য ভারতীয় উদ্যোগের পরিবর্তে চিনকে মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত একটি মার্কিন কৌশল হিসেবে মস্কোর ধারণাকেই দর্শায়। ওয়াশিংটনের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিত খেয়াল রাখলে, মস্কো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড অউকাসের মতো ক্ষুদ্রপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলিকে এশিয়ায় ন্যাটোর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তোলার জন্য এবং চিনকে প্রতিরোধ করার জন্য বৃহত্তর মার্কিন কৌশলের উপাদান হিসাবে বিবেচনা করে, যা ফলস্বরূপ চিনবিরোধী জোটে ভারতের সঙ্গে সহাবস্থানকেই বেছে নেয়।

রাশিয়া-চিন সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা

২০২২ এবং ২০২৪ সালের মধ্যে রাশিয়া-চিন সম্পর্ক রাজনৈতিক সাযুজ্যের তুলনায় আদর্শগত এবং অর্থনৈতিক কারণগুলি দ্বারা চালিত বলে মনে করা হচ্ছে। উভয় দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক আধিপত্য এবং উদারনৈতিক মূল্যবোধ’-এর প্রচারের দরুন অসন্তোষ প্রকাশ করে। তা সত্ত্বেও দেশ দু’টির সহযোগিতা চিনের রফতানিমুখী অর্থনৈতিক মডেল এবং ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়া-পশ্চিম সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বেজিংয়ের স্পষ্ট অনীহা দ্বারা সীমাবদ্ধ। রাশিয়ার বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার হিসাবে বার্ষিক ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্যের পরিমাণ-সহ চিরুশ তেল (২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে) ক্রয় করে এবং ২০২৩ সালে রাশিয়ার মোটরগাড়ি বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে লাভবান হয়েছে। যাই হোক, কথাক্ষ্যণীয় যে, গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বেজিংয়ের দৃঢ় অবস্থান সম্ভবত সিলা সিবিরি ২’ প্রকল্পটিকে স্থগিত করেছে, যদিও ২০২২ সাল থেকে মস্কো এই প্রকল্পের উপর রীতিমতো জোর দিয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর - যা ১২ জুন থেকে বিদেশে ডলার ও ইউরোতে লেনদেন অবরুদ্ধ করেছে - ইউয়ান রাশিয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য প্রাথমিক মুদ্রা হয়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও, ২০২৪ সালের গস্ট মাসে রুশ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ইউয়ানের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির সম্মুখীন হতে শুরু করেকারণ চিনা ব্যাঙ্কগুলি তাদের রুশ ভোক্তাদের কাছে ইউয়ান বিক্রি করতে ক্রম অনীহা প্রদর্শন করতে শুরু করে। সম্ভাব্য মার্কিন পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার ভয়ে অর্থপ্রদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চিনা ব্যাঙ্কগুলি প্রত্যাখ্যান করার দরুন এই সমস্যাটি আরও বেড়েছে। বাস্তবতা হল এই যে, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসে ছাড় বা রুশ ভোক্তা বাজারে সম্প্রসারণের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চিনের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার রাশিয়া-চিন সামরিক-রাজনৈতিক জোটের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি এবং সম্ভবত অবাস্তব প্রকৃতিকে দর্শায়।

বাস্তবতা হল এই যে, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসে ছাড় বা রুশ ভোক্তা বাজারে সম্প্রসারণের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চিনের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার নবজাগরণ

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির সঙ্গে তার সম্পর্কের নিরিখে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক-রাজনৈতিক সহযোগিতার উপর মস্কোর সাম্প্রতিক জোর যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছেকারণ এটি দেশটির তরফে অসাধারণ কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপকেই দর্শায়, বিশেষ করে এই পূর্ব এশীয় দেশটির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থার প্রতি রাশিয়ার চিরাচরিত আনুগত্যের কারণে। ২০২৪ সালের ১৯ জুন স্বাক্ষরিত সর্বাত্মক কৌশলগত অংশীদারিত্ব সংক্রান্ত রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া চুক্তি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যকে সম্ভাব্য ভাবে বদলে দিতে পারেকারণ এটি রাশিয়াকে পূর্ব এশিয়ায় তার প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ করে দিতে পারে। যাই হোক, এই চুক্তির মধ্যে ডি ফ্যাক্টো প্রতিরক্ষা চুক্তি মস্কোকে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংঘাত বা সংঘর্ষে সরাসরি জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার সুযোগ করে দেয় এবং একই সঙ্গে ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়ার প্রতি উত্তর কোরিয়ার সমর্থনের জন্য একটি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করে। এই চুক্তির অধীনে ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের সম্ভাব্য মোতায়েন বা রুশ শিল্পে উত্তর কোরিয়ার শ্রমের ব্যবহার অনিশ্চিত এবং এ প্রসঙ্গে অসংখ্য প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। একই সময়ে, মস্কো-পিয়ংইয়ং সম্পর্ক চিন-রাশিয়া সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উত্তর কোরিয়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে বেজিং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক-রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে নতুন বিকল্প সন্ধানে পিয়ংইয়ংয়ের প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করবে না।

আর্কটিক নীতির গুরুত্ব

রাশিয়ার ২০২৩ সালের বিদেশনীতি কৌশল অগ্রাধিকারের প্রেক্ষিত থেকে আর্কটিককে চি, ভারত এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উপরে উন্নীত করেছে। দেখা যাচ্ছে যে, রাশিয়া নর্দার্ন সি রুট (এনএসআর) এবং বৃহত্তর ইউরেশীয় অংশীদারিত্ব প্রকল্পকে পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক লজিস্টিক রুটের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চায়। যাই হোক, আর্কটিক কাউন্সিল থেকে রাশিয়ার স্থগিতাদেশ এবং এনএসআর প্রকল্পের জন্য তার সীমিত উৎপাদন ক্ষমতা চিন ও ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়নর্দার্ন সি রুট ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রধান সামুদ্রিক পথের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে এবং সম্ভাব্য ভাবে মালাক্কা প্রণালী অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় চোকপয়েন্টে তেল ট্যাঙ্কার অবরোধের জন্য চিনের দুর্বলতাকে হ্রাস করতে পারে। যাইহোক, এনএসআর-এর প্রতি বেজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি মস্কোর পরিকল্পনার সঙ্গে বিরোধপূর্ণকারণ চিন এই পথটিকে যৌথ চিন-রুশ পোলার সিল্ক রোড উদ্যোগের অংশ হিসাবে মনে করে, এটিকে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে সমন্বিত করতে চায়। এই বৈপরীত্যই সম্ভবত ব্যাখ্যা দেয় যে, কেন বেজিং এখনও এনএসআর সংক্রান্ত রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের দাবিকে সমর্থন করেনি এবং এই বিশেষ প্রকল্পে যোগ দিতে সীমিত আগ্রহ দেখিয়েছে। ফলস্বরূপ, চেন্নাই-ভ্লাদিভোস্টক ইস্টার্ন মেরিটাইম করিডোরের সঙ্গে এনএসআরকে সংযুক্ত করে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়টি অদূর ভবিষ্যতে মস্কোর জন্য একটি মূল লক্ষ্য হয়ে উঠতে পারে।

আর্কটিক কাউন্সিল থেকে রাশিয়ার স্থগিতাদেশ এবং এনএসআর প্রকল্পের জন্য তার সীমিত উৎপাদন ক্ষমতা চিন ও ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়

 

নিষেধাজ্ঞার আলোকে রাশিয়া-ভারত অংশীদারিত্ব

রাশিয়া-ভারত বিশেষ উল্লেখযোগ্য সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পিআরসি-সঙ্গে উভয়ের অংশীদারের সম্পর্ক দ্বারা উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত। যেহেতু রাশিয়া চিনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ ভাবে সহাবস্থান করছে, তাই ভারত সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের দিকেই ঝুঁকবে। বর্ধিত বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ-সহ ইন্দো-আমেরিকান সামরিক-প্রযুক্তিগত এবং উচ্চ-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার সশক্তিকরণ ভারত-রুশ সম্পর্ককে বিদ্যমান রাশিয়া-পশ্চিম বিরোধের উপর আরও নির্ভরশীল করে তোলে। এই সমীকরণ মস্কো নয়াদিল্লি উভয়কেই বেজিং ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের মিথস্ক্রিয়ায় বাধা দেয় এবং একই সঙ্গে সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার মতো চিরাচরিত ক্ষেত্রগুলি-সহ বৃহত্তর রুশ-ভারত সহযোগিতার সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেয়। আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডোরের মতো যৌথ লজিস্টিক প্রকল্পে কিছু অগ্রগতি সত্ত্বেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২৩ সালে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২২ সালের পূর্বে স্বাভাবিক ১১-১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায়) হয়েছে এবং প্রাথমিক ভাবে তা রুশ হাইড্রোকার্বন সরবরাহের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে রাশিয়া ভারতের বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে এবং নয়াদিল্লিকে ছাড়ের মূল্য পরিশোধিত পণ্যের পুনঃবিক্রয় থেকে আয়ের মাধ্যমে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সাশ্রয় করতে সাহায্য করেছে। যাই হোক, চিনের পদ্ধতির মতো রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি নিতে ভারতের দ্বিধা লক্ষ্যণীয়। এটি গত ভারতীয় অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে ভারতের তরফে কেনা রুশ তেলের জন্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থপ্রদানের দিকে চালিত করেছে বলে জানা গিয়েছে যাই হোক, রুশ অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এই পরিসংখ্যান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে, সমস্যাটির প্রকৃত মাত্রা অনেকটাই স্বল্প হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি উভয় পক্ষের জন্য কৌশলগত ভাবে ক্ষতিকারক বলে মনে করা যেতে পারে, যারা সর্বাত্মক ভাবেই এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। ২০২৪ সালে ভারতে রুশ হাইড্রোকার্বনের ক্রমাগত সরবরাহ থেকে বোঝা যায় যে, এই সমস্যাটির সমাধান করা হয়েছে। যাই হোক, নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক মিথস্ক্রিয়ায় লেনদেনের প্রক্রিয়া উন্নত করার পাশাপাশি সম্পদ ও অ-সম্পদ উভয় ক্ষেত্রেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অগ্রগতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বর্ধিত বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ-সহ ইন্দো-আমেরিকান সামরিক-প্রযুক্তিগত এবং উচ্চ-প্রযুক্তিগত সহযোগিতার সশক্তিকরণ ভারত-রুশ সম্পর্ককে বিদ্যমান রাশিয়া-পশ্চিম বিরোধের উপর আরও নির্ভরশীল করে তোলে।

ইন্দো-প্যাসিফিকের অ-বিচ্ছিন্নকরণ এবং ভারসাম্য

জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সম্মুখে রাশিয়া চিন ও ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি আপেক্ষিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছেবিশেষ করে চিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত ও চিনের সহযোগিতা এবং একক অংশীদারের উপর নির্ভরশীলতার নিরিখে অতিরিক্ত ঝুঁকিগুলি প্রশমিত করা প্রয়োজন। এই ভারসাম্য রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততার তাত্পর্যকেই দর্শায়, যেমনটা জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মস্কো সফর দ্বারা প্রমাণিত হয়, যা রাশিয়ার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাশিয়া-ইউক্রেন সামরিক সঙ্কট যখন শেষ হোক না কেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাগুলি উল্লেখযোগ্য ভাবে শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলস্বরূপ, রাশিয়ার প্রাচ্যের কেন্দ্রিকতা’ তার বৈদেশিক নীতিতে অগ্রাধিকার পেয়েছে, যার লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বহুমুখিতা বৃদ্ধি এবং এ ক্ষেত্রে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির উপর বিশেষ জোর দেওয়ার বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা হতে চলেছে নিষেধাজ্ঞাগুলি বিভিন্ন যৌথ প্রকল্পে সহযোগিতা বাধা দিলেও, তা এশিয়ায় রাশিয়ার প্রধান অংশীদার দেশগুলিকে মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের অবনমন ঘটিয়ে তাদের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে না। এই প্রেক্ষাপটে একটি অ-বিচ্ছিন্নকরণের নীতি রাশিয়ার জন্য আরও কার্যকর পদ্ধতি বলে মনে হচ্ছে, যা রাশিয়াকে পশ্চিমের সঙ্গে বিদ্যমান সংঘর্ষের মধ্যে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নের সময় একযোগে ভারত, চিন এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করতে সক্ষম করে তোলে

 


কিরিল লিখাচেভ সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটির (এসআইআর এসপিবিএসইউ) স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Kirill Likhachev

Kirill Likhachev

Kirill Likhachev is an associate professor at School of international relations, St. Petersburg State University (SIR SPbSU). Among his main research interests are foreign policy ...

Read More +