১২ জুন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, রাশিয়া দিবসের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি একটি বিশেষ বার্তায় তাঁদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি 'সুদূরপ্রসারী কৌশলগত সম্পর্ক' হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্কের এই বর্ণনা দুই নেতার মধ্যে এক নতুন বন্ধুত্বের প্রতীক এবং উত্তর-পূর্ব এশীয় ভূ-রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনকে চিহ্নিত করেছে। এর পরেপরেই প্রেসিডেন্ট পুতিন পিয়ংইয়ং সফর করেন, যা ২৪ বছরের মধ্যে উত্তর কোরিয়ায় তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। সফরকালে নেতৃবৃন্দ সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিটি উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলির তালিকা করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, চুক্তিটি আক্রমণের ক্ষেত্রে পারস্পরিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার উপর জোর দেয়, যা উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় বিপদের ধারণা জোরদার করে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা ক্যালকুলাসে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, চুক্তিটি আক্রমণের ক্ষেত্রে পারস্পরিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার উপর জোর দেয়, যা উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় বিপদের ধারণা জোরদার করে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা ক্যালকুলাসে।
ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি: চুক্তির পরে কী পরিবর্তন হয়?
দুই দেশের মধ্যে সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি চুক্তির সাম্প্রতিক স্বাক্ষর ১৯৬১ ও ২০০০ সালের চুক্তি এবং ২০০০ ও ২০০১-এর মস্কো ও পিয়ংইয়ং ঘোষণাকে প্রতিস্থাপিত করে। ২০২৪ সালের চুক্তিটি উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করে, সম্পর্কের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিফলিত করে, এবং ডিপিআরকে-কে কৌশলগত বিচ্ছিন্নতার পর্যায় থেকে পুনরুত্থিত করে। উপরন্তু, এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে পূর্ববর্তী সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রগুলির বাইরে উন্নীত করে (নিচের সারণি ১ এ দেখা যায়)। বৈঠকের পর, কিম জং উন এটিকে একটি 'মহান ঘটনা' বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, 'চুক্তির সমাপ্তি দুই দেশের সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে'। মস্কোর কাছে এই চুক্তি হল রাশিয়ার বৈদেশিক নীতির বিবর্তনের প্রদর্শন, এবং পিয়ংইয়ং-এর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের একটি স্পষ্ট বিবরণ।
সারণি ১: উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার ১৯৬১ ও ২০২৪-এর চুক্তির মধ্যে তুলনা
মৈত্রী, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তার চুক্তি, ১৯৬১
|
ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি, ২০২৪
|
সামরিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তা (অনুচ্ছেদ ১)
|
রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের অনুচ্ছেদ ৫১ এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী সামরিক সহায়তা (অনুচ্ছেদ ৪)
|
দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্য (অনুচ্ছেদ ৪)
|
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নকে উন্নীত করবে (অনুচ্ছেদ ১০)
|
শান্তি ও সার্বজনীন নিরাপত্তা জোরদার করার প্রয়াসে উভয় রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রশ্নে একসাথে আলোচনা করবে (অনুচ্ছেদ ৩)
|
দৃঢ় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারস্পরিক সহযোগিতা করবে (অনুচ্ছেদ ৩)
|
প্রতিটি চুক্তিবদ্ধ দল চুক্তিকারী দুই পক্ষের বিরুদ্ধে গঠিত কোনও জোটে না-যাওয়া বা অংশগ্রহণ না করার অঙ্গীকার করে। (অনুচ্ছদ ২)
|
অন্য পক্ষের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে এমন তৃতীয় দেশের সঙ্গে চুক্তি না করার জন্য প্রতিটি পক্ষের বাধ্যবাধকতা রয়েছে (অনুচ্ছেদ ৫)
|
কোরিয়ার সংযুক্তি (অনুচ্ছেদ ৫)
|
কোরিয়ার সংযুক্তির কোনও উল্লেখ নেই
|
অ-চিরাচরিত ইস্যুগুলির উপর জোর দেওয়া হয়নি
|
স্বাস্থ্য, মান, শিক্ষা ও শ্রম গতিশীলতার ক্ষেত্রে সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১২ এবং ১৪)
আন্তর্জাতিক তথ্য নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা; এবং অপ-তথ্যের প্রতিরোধ। (অনুচ্ছেদ ১৮ এবং ২০)
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে সহযোগিতা, পণ্য ও তহবিলের অবৈধ সঞ্চালন বিষয়ে সহযোগিতা (অনুচ্ছেদ ১৭)
দেশগুলির আইন প্রণয়ন, নির্বাহী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা (অনুচ্ছেদ ১৫)
|
|
সূত্র: ১৯৬১ চুক্তি ও ২০২৪ চুক্তি
চুক্তির ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লিখিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পাশাপাশি রাশিয়া একটি সামরিক-প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বের জন্য উন্মুক্ত, যা একটি আমূল পরিবর্তনকারী পদক্ষেপ, কারণ এটি উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ার গোলাবারুদ আমদানিকে আনুষ্ঠানিক করে। এতদিন রাশিয়া এই আমদানির কথা অস্বীকার করত। যদি এমনটা ঘটে তবে তা স্পষ্টভাবে ডিপিআরকে-এর উপর ইউএনএসসি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবে। আরও, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত চুক্তিটি শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংযোগ, স্বাস্থ্য ও শ্রমের মতো ক্ষেত্রে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উচ্চতর সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। নিরাপত্তা ক্ষেত্র ছাড়াও, উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় শ্রম গতিশীলতার আনুষ্ঠানিকীকরণও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, যেমনটি চুক্তির ১১ ও ১৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। রাশিয়ায় উচ্চ শ্রম চাহিদা এবং ২০২৩ সালে ৪.৩ মিলিয়ন চাকরির জন্য প্রার্থী না–থাকার কারণে উত্তর কোরিয়া থেকে শ্রমের প্রয়োজন। ইউক্রেনের যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। এই চুক্তির আগে, পিয়ংইয়ং ও মস্কো উভয়ই দুটি বিষয় অস্বীকার করেছিল: উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকেরা রাশিয়ায় কাজ করছে এবং রাশিয়া উত্তর কোরিয়া থেকে গোলাবারুদ আমদানি করছে। এখন, চুক্তির ১৪ অনুচ্ছেদে শ্রম গতিশীলতার জন্য একটি কাঠামো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উত্তর-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা রূপরেখার পরিবর্তন রুশ দূরপ্রাচ্যের পরিবর্তনশীল চরিত্রের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়, যেমন উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার প্রিমর্স্কি ক্রাই অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ। এটি উত্তর কোরিয়া ও চিন রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রভাব প্রতিস্থাপন করবে, যা রাশিয়ার উপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে হ্রাস পেয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত চুক্তিটি শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংযোগ, স্বাস্থ্য ও শ্রমের মতো ক্ষেত্রে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উচ্চতর সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।
চুক্তির প্রভাব
রাশিয়া ডিপিআরকে-কে এমন একটি অংশীদার হিসাবে দেখে যে মস্কোকে গোলাবারুদ ও শ্রম সরবরাহ করতে পারে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মস্কোর স্বার্থের বিরুদ্ধে ঝুঁকে থাকা ক্ষমতার ভারসাম্য বিবেচনায় পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করা অনিবার্যই ছিল। যাই হোক, মস্কোর জন্য এই সমঝোতার উদ্দেশ্য ইন্দো-প্যাসিফিকের বৃহত্তর কাঠামোর স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করা নয়; এটি মূলত একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ। কারণ ইউক্রেনের যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মস্কোর সুসম্পর্ক ছিল। যদিও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক ধাক্কা খেয়েছে, তবুও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কার্যকরী সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং, মস্কো সাবধানে এগোচ্ছে। তবে এটি শীঘ্রই পরিবর্তিত হতে পারে, কারণ সিওল ইউক্রেনে প্রাণঘাতী অস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে ইচ্ছুক, যদিও একটি চূড়ান্ত ঘোষণা এখনও আসেনি। মস্কোর জন্য ডিপিআরকে-র সঙ্গে এই চুক্তিটি মূলত প্রতীকী। এটি পশ্চিমের কাছে একটি বার্তা, এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশীদারিত্বের স্তম্ভ যুক্ত করে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রটিকে তার বিচ্ছিন্নতা থেকে বার করে আনা। এই চুক্তির উপসংহারটি উত্তর-পূর্ব এশিয়ার পরিবর্তিত বাস্তবতারও প্রতীক, যেখানে দুটি কৌশলগত ত্রিভুজ আবির্ভূত হচ্ছে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান; রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও চিন। শেষ তিন দেশের নতুন বন্ধুত্ব পূর্ববর্তী দেশগুলির উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক
যদিও এই চুক্তির সুযোগ এবং প্রভাবগুলি উন্মোচন করার সময় এখনও আসেনি, এটা বলা যেতে পারে যে এই সফর ও চুক্তি উত্তর-পূর্ব এশিয়ার স্থিতাবস্থার পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। এটি এশিয়া প্যাসিফিকের দিকে রাশিয়ার বিদেশ নীতিতে আরও একটি ঝোঁক প্রকাশ করে, যার লক্ষ্য রাশিয়ার দূর প্রাচ্য অঞ্চল এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করা। দ্বিতীয়ত, এই সফর শেষ করার পর, পুতিন ভিয়েতনামের উদ্দেশ্যে রওনা হন, যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাশিয়ার অন্যতম প্রধান অংশীদার, এটিও মস্কোর কৌশলগত ক্যালকুলাসে এশিয়া-প্যাসিফিকের ক্রমবর্ধমান প্রোফাইলের প্রতীক। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চুক্তিটি স্থিতাবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একটি 'সামরিক-প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব'-এর অতিরিক্ত সতর্কতা এই অঞ্চলে আরও উত্তেজনা বাড়াবে, যা ইতিমধ্যেই উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলটির সামরিকীকরণের দিকে পরিচালিত করবে।
চুক্তিটি এখন কার্যকর থাকায় কিম জং উনের হাতে এসেছে অভ্যন্তরীণভাবে বিক্রি করার জন্য একটি প্যাকেজ এবং একটি উন্নত কৌশলগত মর্যাদা, যার দৌলতে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যে কোনও আলোচনায় উত্তর কোরিয়া আরও গুরুত্ব পাবে।
চুক্তিটি এখন কার্যকর হওয়ার পর পিয়ংইয়ং তার বেশিরভাগ লক্ষ্য অর্জন করেছে: নিষেধাজ্ঞার শাসনকে ফাঁকি দেওয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা। কৌশলগত বিশেষত্ব ছাড়াও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দুটি প্রধান শক্তি রাশিয়া ও চিনের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়ার পর উত্তর কোরিয়া এখন তার সামরিক আধুনিকীকরণ পরিকল্পনাগুলি অনুসরণ করতে আরও সাহসী হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ কৌশলগত লাভের প্রত্যাশা নিয়ে মস্কো পুরনো অংশীদারিত্বে নতুন করে বিনিয়োগ করেছে। চুক্তিটি এখন কার্যকর থাকায় কিম জং উনের হাতে এসেছে অভ্যন্তরীণভাবে বিক্রি করার জন্য একটি প্যাকেজ এবং একটি উন্নত কৌশলগত মর্যাদা, যার দৌলতে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যে কোনও আলোচনায় উত্তর কোরিয়া আরও গুরুত্ব পাবে। এদিকে, রাশিয়া তার তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের জন্য একটি চুক্তি করেছে যা তার দূর প্রাচ্যে কৌশলগত স্বার্থ সুরক্ষিত করবে। সব মিলিয়ে উভয় পক্ষের জন্যই চুক্তিটি লাভজনক।
অভিষেক শর্মা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী
রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.