-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
সোভিয়েত-পরবর্তী দেশগুলিতে ক্রমহ্রাসমান প্রভাবের মধ্যে রাশিয়ার সিআইএসকে একটি যৌথ নিরাপত্তা কাঠামোর অধীনে একত্রিত করার নতুন প্রচেষ্টা অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ও দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হচ্ছে।
নিরাপত্তা জোরদার করা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মস্কো কমনওয়েলথ অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস-এর (সিআইএস) জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মস্কোতে সিআইএস-এর সরকার প্রধানদের কাউন্সিলের বৈঠকে সমস্ত সদস্য এই যৌথ উদ্যোগের জন্য তহবিল বরাদ্দ করতে সম্মত হন, যা সদস্য দেশগুলির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা তত্ত্বাবধান করবেন। বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও আজারবাইজানের প্রধানমন্ত্রীরা, আর্মেনিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং সিআইএস-এতে তুর্কমেনিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাশিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। এই পুনর্নবীকৃত প্রচেষ্টা প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ এবং প্রজাতন্ত্রগুলিতে - বিশেষ করে বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় পশ্চিমী দখলের মধ্যেই - তার ভূ-কৌশলগত প্রভাব বজায় রাখার জন্য মস্কোর ব্যাপক কৌশলকে দর্শায়। বর্তমানে সিআইএস ন’টি সদস্য নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে তুর্কমেনিস্তান সহযোগী সদস্য। জর্জিয়া ২০০৮ সালে সংস্থাটি ত্যাগ করে। ক্রিমিয়া দখলের পর ২০১৪ সালে ইউক্রেন অংশ নেওয়া বন্ধ করে দেয় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২২ সালে মলদোভা সংস্থাটি ত্যাগ করে।
জর্জিয়া ২০০৮ সালে সংস্থাটি ত্যাগ করে। ক্রিমিয়া দখলের পর ২০১৪ সালে ইউক্রেন অংশ নেওয়া বন্ধ করে দেয় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২২ সালে মলদোভা সংস্থাটি ত্যাগ করে।
সিআইএস এবং সিএসটিও
১৯৯১ সালে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বাণিজ্য, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা সহজতর করার জন্য সিআইএস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সদস্য দেশগুলিতে পর্যায়ক্রমে সিআইএস-এর সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে, এই সভাগুলি সদস্য দেশগুলিকে সীমানার স্বীকৃতি দিতে সহায়তা করেছিল। ১৯৯৩ সালে গৃহীত কার্যক্রমের সনদে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সদস্য দেশগুলির নীতি, অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রেখে ভ্রমণকে উৎসাহিত করা এবং সদস্য দেশগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ সমাধানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সিআইএস একে অপরের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করারও ধারণা প্রদান করেছিল।
সিআইএস সনদের তৃতীয় অধ্যায়ের আওতায়, রাশিয়া বহিরাগত নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি বা যৌথ নিরাপত্তা চুক্তির (সিএসটি) অধীনে ইউরেশিয়ার প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলির সঙ্গে একটি সামরিক জোট গঠন করে। সনদের ১২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, যদি কোনও সদস্য দেশ বহিরাগত হুমকির সম্মুখীন হয়, তা হলে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে সেই হুমকি দূর করার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিএসটি-র মেয়াদ বৃদ্ধি না করা হলে পাঁচ বছরের মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ১৯৯৯ সালে কাজাখস্তান, বেলারুশ, কিরঘিজস্তান, আর্মেনিয়া, তাজিকিস্তান ও রাশিয়া পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিটির পুনর্নবীকরণ করে। তবে জর্জিয়া, উজবেকিস্তান ও আজারবাইজান তাতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃত হয় এবং সিএসটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০২ সালে সিএসটি-র আনুষ্ঠানিক ভাবে নামকরণ করা হয় কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা (সিএসটিও)। এটি যে কোনও সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হওয়া আগ্রাসনকে আসলে সকল সদস্য দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসাবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিএসটিও আসলে একটি পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় সোভিয়েত-পরবর্তী ছ’টি দেশকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, অস্ত্র তৈরি এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে একত্রিত করা হয়েছে, যেখানে রাশিয়াই হল প্রধান শক্তি।
আর্মেনিয়া ২০২৩ সালের সিএসটিও শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করে, দক্ষিণ ককেশাসে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করে এবং আজারবাইজানও তুরস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করে।
সিএসটিও-র অধীনে রাশিয়া তালিবান দ্বারা আফগানিস্তান দখলের পর যে কোনও প্রকার আক্রমণাত্মক অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য তাজিকিস্তানে ৬,০০০ সেনা সদস্য মোতায়েন করেছিল। ২০১০ সালে কিরঘিজস্তানের সঙ্কটের সময় ব্যর্থতা ও ২০২০ সালে দ্বিতীয় নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাতে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের পর কাজাখস্তানে যৌথ সামরিক অভিযান পরিচালনা করে ২০২২ সালে সিএসটিও-র ভাবমূর্তি ও প্রভাব বৃদ্ধি করে। তবে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মস্কোর ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস এবং তার প্রাক্তন প্রজাতন্ত্রগুলির মধ্যে জনসমর্থন হ্রাসের পাশাপাশিই সিএসটিও-র ভবিষ্যৎও অন্ধকার বলে মনে হচ্ছে। আর্মেনিয়া ২০২৩ সালের সিএসটিও শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করে, দক্ষিণ ককেশাসে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করে এবং আজারবাইজানও তুরস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করে। সিএসটিও সদস্যদের কেউই রাশিয়ার দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের কথিত সংযুক্তিকে স্বীকৃতি দেয়নি। পরিবর্তে, বেশিরভাগ প্রাক্তন সোভিয়েত দেশ রাশিয়া, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্য তাদের বহুমাত্রিক বিদেশনীতিকে তীব্রতর ও দ্বিগুণ মাত্রার করে তুলেছে। চিরাচরিত ভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই মস্কোর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন দেশগুলি এখন রাশিয়াকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি বলে মনে করে।
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার মনোযোগ সোভিয়েত-পরবর্তী দেশগুলিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে, যার মধ্যে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সংঘাতও রয়েছে। কিছু মধ্য এশিয়ার দেশের সার্বভৌমত্বের উদ্বেগ পশ্চিমি দেশগুলির জন্য এই শূন্যস্থান পূরণের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ তৈরি করেছে। সর্বোপরি, ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সরবরাহ হ্রাসের ফলে প্রতিবেশী দেশগুলি তুরস্ক, ভারত এবং চিনের মতো বিকল্প অস্ত্র সরবরাহকারীদের সন্ধান করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে মস্কোর উপর তাদের নির্ভরতা কমছে। এই সামরিক জোটের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সন্দেহ ও বাড়তে থাকা ব্যবধানের প্রেক্ষিতে, মস্কো বৃহত্তর ভূ-কৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক কারণে তার আঞ্চলিক আধিপত্য পুনরুদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাশিয়া সম্মিলিত নিরাপত্তার জন্য নতুন করে চাপ দিচ্ছে
অন্য দিকে, ইউক্রেন সংঘাতের পর পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞাগুলি মস্কোকে বাজার ও বাণিজ্যের জন্য প্রতিবেশীদের উপর নির্ভর করতে বাধ্য করেছে। পশ্চিমি দেশগুলির উপস্থিতি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এবং রাশিয়ার অনুমোদিত অর্থনীতিতে অবিশ্বাস ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার অনেক সিআইএস দেশ গ্যাস ও তেল রফতানির জন্য বাণিজ্য পথ ও অবকাঠামোর উপর নির্ভর করে, যা আবার রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। মস্কো মিডল করিডোরের মতো নতুন সংযোগ রুট নিয়ে উদ্বিগ্ন, যা সিআইএসের মাধ্যমে চিনকে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং রাশিয়ার আধিপত্যে থাকা বাণিজ্য পথগুলিকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
পশ্চিমি দেশগুলির উপস্থিতি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এবং রাশিয়ার অনুমোদিত অর্থনীতিতে অবিশ্বাস ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছে।
একই ভাবে, মস্কো তার আশপাশে চিনের নিরাপত্তা কার্যক্রমকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ বেজিং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বাজারে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করছে। আবার ২০২০ সালে নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাতের পর দক্ষিণ ককেশাসে আজারবাইজান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো মধ্য এশীয় দেশগুলিতে তুর্কির অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে, যেখানে ২০১৯ সালে তুর্কির অস্ত্র রফতানি প্রায় ২৩ শতাংশ ছিল। সিআইএস অঞ্চলের মধ্যে প্রতিরক্ষা সরবরাহে রাশিয়া একটি প্রভাবশালী শক্তি হলেও চিনা এবং তুর্কি সামরিক প্রযুক্তি বিক্রির ক্রমাগত বৃদ্ধি এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনকেই দর্শায়।
২০২৪ সালের প্রথম ১০ মাসে সিআইএস সদস্য দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে, যার ৮৫ শতাংশ লেনদেন জাতীয় মুদ্রায় হয়েছে। রাশিয়া সিআইএস অঞ্চলের মধ্যে বিশেষ করে ন্যাটো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক হুমকি হিসেবে বহিরাগত শক্তি বিবেচনা করে। আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কৌশলগত প্রভাব বজায় রাখার জন্য মস্কো সিআইএস সদস্য দেশগুলির মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে বহিরাগত চাপের পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৈচিত্র্যময় স্বার্থ ও দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্ব আঞ্চলিক শক্তি ও ন্যাটোকে তার আশপাশে রাশিয়ার আধিপত্যকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেয়। রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন এই উদ্যোগগুলির সাফল্য আসলে জোটের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও দ্বন্দ্ব কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।
আয়জাজ ওয়ানি (পিএইচ ডি) অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Ayjaz Wani (Phd) is a Fellow in the Strategic Studies Programme at ORF. Based out of Mumbai, he tracks China’s relations with Central Asia, Pakistan and ...
Read More +