Published on Aug 21, 2024 Updated 2 Hours ago

নারীবাদী বিদেশনীতির পথ ধরে কূটনীতিতে নারীদের অন্তর্ভুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উদাহরণ প্রদর্শন করে ভারতের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।

বিশ্ব পরিচালনা: কূটনীতিতে নারী

স্থিতিশীল উন্নয়ন এবং লিঙ্গ সমতার প্রচার সমসাময়িক সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, লিঙ্গ সম্পর্কিত বিস্তৃত আলোচনা এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ প্রাসঙ্গিক ভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেই তুলে ধরে: লিঙ্গ সমতা ছাড়া স্থিতিশীল উন্নতি সম্ভব নয়। একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্য দ্বারা চিহ্নিত বাস্তবতা সুনিশ্চিত করার জন্য উভয়ের মধ্যে একটি শক্তিশালী সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে, বহুপাক্ষিক কর্মসূচি নির্মাণ বা বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নীতি বিতর্ক গঠনের ক্ষেত্রে কূটনীতিতে নারীর উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন চলাকালীন, সদস্যরা সম্মিলিত ভাবে প্রতি বছর ২৪ জুনকে নারী কূটনীতি দিবস হিসাবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে অ্যাজেন্ডা ২০৩০ পুনঃনিশ্চিত করার জন্য তাঁদের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে চিরাচরিত ভাবে এবং এখনও কূটনীতিতে পুরুষদেরই সংরক্ষণ রয়েছে।

স্থিতিশীল উন্নয়ন এবং লিঙ্গ সমতার প্রচার সমসাময়িক সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পরিণত হয়েছে।

কূটনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর কথা বলা সত্ত্বেও, ২০২৩ সালে রাষ্ট্রদূত পদে মাত্র ২০.৫৪ শতাংশ নারী সেই ক্ষমতা পেয়েছেন (চিত্র )। সর্বোপরি, নর্ডিকের মতো কিছু অঞ্চলে নারী রাষ্ট্রদূতের অংশ সেই দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক (অর্থাৎ ২০১৯ সালে ৪২ শতাংশ); তা সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যান্য অংশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে (মধ্য এশিয়ায় ১১ শতাংশ এবং এশিয়ায় ১৩ শতাংশ)।

চিত্র ১: সমস্ত দেশ কর্তৃক প্রেরিত বিশ্বব্যাপী নারী রাষ্ট্রদূতের শতাংশ (১৯৬৮-২০২১)

উত্স: ব্রিজিটা নেকলসন এবং অ্যান ই টাউনস, ২০২৩, জেনডিপ ডেটাসেট

ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস ক্যাডারের জন্য ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত নয় বছরের মেয়াদে নারী কূটনীতিকদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ৬.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৪-য় আইএফএস ক্যাডারে ৩১.২ শতাংশ নারী ছিলেন (অর্থাৎ, ৩২ জনের মধ্যে ১০); ২০২২ সালে এই হারটি ৩৭.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে (অর্থাৎ ৩৭ জনের মধ্যে ১৪ জন নারী)। (চিত্র ২)

চিত্র ২: আইএফএস-নারী কূটনীতিকদের শতাংশ (২০১৪-২০২২)

সূত্র: দ্য প্রিন্ট

 

কূটনীতিতে নারীদের জন্য ব্যবস্থার সংস্কার

ভারতের জন্য বৃহত্তর চিত্রের দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে, ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশের জন্য আইএফএস-এর প্রতিনিধিত্ব সামান্য অর্থাৎ মাত্র ৮০০ জন। এর মধ্যে আবার মাত্র ১৪ জন নারী সেই ক্ষমতায় আসার সুযোগ পান। এটি অবশ্যই কোনও উত্সাহব্যঞ্জক ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে, কূটনীতির শিল্প - যার মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আলোচনা চালানো, সহযোগিতা গড়ে তোলা এবং দেশগুলির মধ্যে অংশীদারিত্ব দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলির জন্য উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্যগুলিকে শক্তিশালী করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রকৃতি অনুযায়ী লিঙ্গ নিরপেক্ষ। সেই অর্থে দেখতে গেলে, কূটনীতিতে লিঙ্গ সমতা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা বেশ বেমানান। কূটনীতির সাফল্যের জন্য তাই শ্রেণিবিন্যাস আধিপত্যবাদের ধারণাগুলি থেকে দূরে থাকা উচিত এবং তার পরিবর্তে সমস্ত ক্ষেত্রের বৈচিত্র্যকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

সর্বোপরি, কূটনীতিতে নারীদের সম্পৃক্ততাকে উত্সাহিত করার জন্য বৃহত্তর সংস্কারের সূচনা করার আহ্বান ভিত্তি লাভ করছে। অর্থাৎ শীর্ষস্থানীয় পরিষেবাগুলিতে নারীদের আরও বেশি পদের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে (সেটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হোক বা উচ্চ-স্তরের রাষ্ট্রদূত নিয়োগই হোক না কেন)নারী কূটনীতিকদের শিশু কল্যাণ বা লিঙ্গ সংক্রান্ত সমস্যার মতো তুলনামূলক ‘সফট’ বা ‘সহজ’ পোর্টফোলিওতে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিরক্ষা বা নিরাপত্তার মতো ‘হার্ড’ বা ‘কঠিনপোর্টফোলিওর জন্যও বিবেচনা করা উচিত। শুধুমাত্র সঙ্কটের সময়েই নয়, বরং আরও ঘন ঘন নেতৃত্বে নারীদের প্রবেশাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি কর্মজীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পরিসর প্রদান করা এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অসম শ্রেণিবিন্যাস লিঙ্গভিত্তিক ক্ষমতা সংক্রান্ত চিরাচরিত প্রথা ভাঙা প্রাথমিক বিষয় হতে পারে।

কূটনীতিতে নারীদের সম্পৃক্ততাকে উত্সাহিত করার জন্য বৃহত্তর সংস্কারের সূচনা করার আহ্বান ভিত্তি লাভ করছে। অর্থাৎ শীর্ষস্থানীয় পরিষেবাগুলিতে নারীদের আরও বেশি পদের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে

লিঙ্গ-নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে কূটনীতিকে দেখার বা বোঝার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করা জরুরি। তবে বৃহত্তর আখ্যানের স্বার্থে নারীদের অন্তর্ভুক্তির উপরেও স্পষ্টতই মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক পরিসরের মাঝে দেশগুলি কূটনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সেই অর্থে, একটি নারীবাদী বিদেশনীতি বা ফেমিনিস্ট ফরেন পলিসি (এফএফপি) গ্রহণ একটি প্রাসঙ্গিক কৌশল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে

নারীবাদী বিদেশনীতির দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করা

অন্যান্য শক্তির সঙ্গে এর সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করার জন্য লিঙ্গকে একটি প্রধান বিবেচনার আওতায় এনে এফএফপি-কে একটি রাষ্ট্রের অনুশীলন হিসাবে দেখা যেতে পারে এই পদ্ধতিটি চিরাচরিত ক্ষমতা কাঠামোর পুনর্বিবেচনা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার প্রচারের পাশাপাশি উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, বাণিজ্য চুক্তি জলবায়ু নীতির মতো নারীদের উপকারী নীতির ফলাফলগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি বটম-আপ অ্যাপ্রোচ (বা নীচের স্তর থেকে উপরের স্তর) গ্রহণ করে।

ভারতের নিজস্ব কোন এফএফপি নেই। তা সত্ত্বেও লিঙ্গ সমতার প্রতি দেশটির প্রতিশ্রুতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিবাচক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন-এর কথা তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে নারীদেরকে শুধুমাত্র সাহায্যের গ্রহীতা হিসাবে নয় বরং পরিবর্তনের সক্রিয় চালিকাশক্তি বলেও মনে করে এবং অভ্যন্তরীণ ভাবে নারীদের  ইতিবাচক উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। আন্তর্জাতিক স্তরে, উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বে ভারতের জরুরি ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ভাবে লিঙ্গকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে।

ভারতের নিজস্ব কোন এফএফপি নেই। তা সত্ত্বেও লিঙ্গ সমতার প্রতি দেশটির প্রতিশ্রুতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিবাচক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কূটনৈতিক ভূমিকায় আরও বেশি সংখ্যক নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা আসলে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অভিজ্ঞতার সাহায্যে আলোচনাকে সমৃদ্ধ করা, আরও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি উদ্ভাবনী সমাধান প্রদান করার মাধ্যমে আরও ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহণকে উত্সাহিত করার মতো উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শান্তির প্রতি কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনায় এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে নারীরা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেসর্বোপরি, কূটনীতিতে নারীদের একটি ডমিনো প্রভাব দেখা যায়কারণ তাঁরা লিঙ্গ সমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠ হয়ে ওঠে

অতএব, ভারতের জন্য এফএফপি দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করা শুধুমাত্র নীতিনির্ধারণ কূটনীতিতে নারীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরিই করবে না, বরং এসডিজি ৫ অর্জনের লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য ফলপ্রসূ হবে

জি২০ প্রেসিডেন্সিতে একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থান এবং গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হিসাবে উত্থানের পরে, এফএফপি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে ভারত বিশ্বব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক কূটনীতির প্রচারে উদাহরণ হিসাবে নেতৃত্ব দিতে পারে। কূটনীতিতে নারীদের অন্তর্ভুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি আসলে ভারতের আন্তর্জাতিক প্রসারকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, দেশটির কূটনৈতিক শক্তিকে শক্তিশালী করবে, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে ত্বরান্বিত করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনার পাশাপাশি বিশ্বে শান্তি ও উন্নয়নে অবদান রাখবে।

 


স্বাতী প্রভু অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির (সিএনইডি) অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

শ্যারন সারা থাওয়ানে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, কলকাতার ডিরেক্টরের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.