Published on Oct 22, 2021 Updated 0 Hours ago

সংযোগের বিষয়টিকে কিন্তু শুধু আশু কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য বস্তুগত পরিকাঠামো হিসেবে না–দেখে এমন একটা সার্বিক ধারণা হিসেবে দেখা খুবই দরকার যা মানুষের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোয় ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের ভূমিকা

আন্তঃসীমান্ত সংযোগ কী ভাবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য বিভিন্ন ভাবে লাভদায়ক হয়ে ওঠে তার অজস্র প্রমাণ আছে। বঙ্গোপসাগর ও ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মতো ভূকৌশলগত ও অর্থনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এলাকার দেশগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠতর যোগাযোগের বিষয়টি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই রিপোর্টে ভারত, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় তার পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশগুলি ও জাপানের মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক কাঠামোর ভিত্তিতে উপসাগরীয় অঞ্চলে ঘনিষ্ঠতর সংযোগের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এই ধরনের প্রয়াসের বাহক হিসেবে বিশেষ ভাবে নজরে রাখা হয়েছে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে।

অম্বর কুমার ঘোষ ও অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, ‘দ্য রোল অফ ইন্ডিয়া’জ নর্থইস্ট ইন দ্য রিজিওনাল কোঅপারেশন আর্কিটেকচার’, ওআরএফ স্পেশাল রিপোর্ট নাম্বার ১৫২, জুন ২০২১, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।


ভূমিকা

আঞ্চলিক স্তরে পারস্পরিক মেলামেশার সুবিধা পেতে হলে এক ধরনের সংযোগ–ব্যবস্থা থাকা দরকার। জাতীয় স্বার্থ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, এবং তার মধ্যে থাকে ভূ–রাজনৈতিক, ভূ–কৌশলগত ও ভূ–অর্থনৈতিক বিবেচনা। সংযোগের বিষয়টিকে কিন্তু শুধু আশু কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য বস্তুগত পরিকাঠামো হিসেবে না–দেখে এমন একটা সার্বিক ধারণা হিসেবে দেখা খুবই দরকার যা মানুষের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

একই সঙ্গে, এখনকার ভূ–রাজনৈতিক দৃশ্যপটে ভারতের আরও উল্লেখযোগ্য ও স্বয়ংসক্রিয় ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। তার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর, বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে নানা পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। এই ধরনের যোগাযোগের ফলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে আঞ্চলিক সংহতি আরও দৃঢ় হবে। বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি–সেকটোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন (বিমস্টেক), যা এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বহুপাক্ষিক মঞ্চগুলির মধ্যে সর্বপ্রধান হয়ে উঠছে, তা আঞ্চলিক সংহতি সুদৃঢ় করার প্রশ্নে অনেকটা গঠনমূলক ভূমিকা নিতে তৈরি। বিমস্টেক ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও ভারত মহাসাগরীয় সম্প্রদায় গড়ে তোলার ভূ–কৌশলগত লক্ষ্য পূরণেও সাহায্য করতে পারে। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চল হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে এর ভূ–প্রাকৃতিক যোগসূত্র।

এই রিপোর্টে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে এই উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে। এখানে উত্তর–পূর্বাঞ্চলের অনন্য সামাজিক–রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক গতিশীলতার বিশ্লেষণ করা হয়েছে, এবং জোর দেওয়া হয়েছে এই অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সম্ভাবনা ও বাধাবিপত্তির উপরে। তা ছাড়া এখানে আলোচিত হয়েছে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের ভূমিকা, এবং খতিয়ে দেখা হয়েছে কী ভাবে আসিয়ান (ASEAN) দেশগুলি ও জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তোলা বা বিমস্টেকে নিজস্ব ভূমিকা পালন করার মধ্যে দিয়ে ভারত এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আরও জোরদার করতে পারে।

আঞ্চলিক সংযোগের ভরকেন্দ্র হিসেবে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চল

ভারতের পূর্ব সীমান্তের শেষ প্রান্তের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে আছে আটটি, বেশিরভাগই পাহাড়ি, রাজ্য — অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, ত্রিপুরা, সিকিম ও নাগাল্যান্ড। এই অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিবেশী চিন, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও মায়ানমার মিলিয়ে মোট ৫,৮১২ কিমি আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে। সমুদ্রের থেকে বিচ্ছিন্ন উত্তর–পূর্বাঞ্চল ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ২২ কিমি দীর্ঘ অপ্রশস্ত শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে। নেপাল ও বাংলাদেশের মাঝখানে থাকা এই করিডরকে ‘চিকেন্‌স নেক’ও বলা হয়।[১]

উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সামাজিক–জনগোষ্ঠীগত গঠন বেশ জটিল। এর মধ্যে আছে বিরাট সংখ্যক আদিবাসী জনগোষ্ঠী যাঁরা কথা বলেন মোটের উপর ২২০টি ভাষায়।[২] এই জনগোষ্ঠীগুলির প্রত্যেকের স্বতন্ত্র সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিন্যাস আছে, যার অনেকগুলিই মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের থেকে পৃথক।[৩] অংশত ভারতের একটি প্রান্তে অবস্থিত হওয়ার কারণে, এবং অংশত নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য, জটিল জনগোষ্ঠীগত গঠন ও পর্যাপ্ত পরিকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভাবে উত্তর–পূর্বাঞ্চল ভারতের প্রধান রাজনৈতিক ও উন্নয়নগত ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে গেছে। রাজনৈতিক হিংসা, সশস্ত্র বিদ্রোহ, জনগোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের চ্যালেঞ্জ ও অনথিভুক্ত মানুষের সমাগমের চাপ এই অঞ্চলের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে। তা ছাড়া বেশিটাই আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে ঘেরা এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান সব সময়েই নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণ।

‘বহিরাগত’দের থেকে এই অঞ্চল, এখানকার মানুষ ও তাঁদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে ব্রিটিশ শাসকেরা এখানকার অনেকটা এলাকা ‘ব্যাকওয়র্ড ট্র‌্যাক্ট্‌স’, ‘এক্সক্লুডেড‌ এরিয়াজ’ ও ‘পার্শিয়ালি এক্সক্লুডেড‌ এরিয়াজ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এই সব এলাকার জনজাতিদের একেকটিকে এক এক ধরনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল স্বায়ত্তশাসনের জন্য। ১৮৭৩ সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে একটা ‘ইনার লাইন’ও টানা হয়েছিল, যার ভেতরে বাইরের লোকেদের, বিশেষ করে যাঁদের কোনও বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে, তাঁদের পারমিট ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হত না।[৪]

স্বাধীন ভারতেও একই নীতি অনুসরণ করা হল এবং ১৯৪৭–এর আগের ইনার লাইন ব্যবস্থা বজায় থাকল। আগেকার এক্সক্লুডেড‌ এরিয়াজ ও পার্শিয়ালি এক্সক্লুডেড‌ এরিয়াজ–এ চিরাচরিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হল স্বশাসিত পরিষদ তৈরি করে। এর লক্ষ্য ছিল বহিরাগতরা যাতে সেখানে জমি কিনতে না–পারেন তা নিশ্চিত করা। এই সব ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সব অঞ্চলে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হল, এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ যাতে জমি কিনতে না–পারে তার জন্য কড়াকড়ি করা হল।[৫] অবশ্যই এর ফলে এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বিশুদ্ধতা খানিকটা রক্ষা করা গেল;(ক) কিন্তু এ সবের কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিকাঠামোগত বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হল।

ঐতিহাসিক ভাবে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ছিল, এবং এক্ষেত্রে সেতু হিসেবে কাজ করেছিল মণিপুর ও অসম। ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বণিকদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল সাধারণাব্দের তৃতীয় শতাব্দী থেকে। একথা সুবিদিত যে ‘ভারতীয় ধ্যানধারণা, শিল্পশৈলী ও রাজনৈতিক সংগঠনের ধরন’ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় সংস্কৃতিতে মিশে গিয়েছিল, এবং তা চলেছিল ঔপনিবেশিক যুগেও।[৬] উপনিবেশ–উত্তর যুগে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি ইন্দোনেশিয়ায় ঐতিহাসিক বানদুং সম্মেলনের সময় (১৯৫৫) ভারতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতি সমর্থন করেছিল।

১৯৬০–এর দশক থেকে ভারতের সঙ্গে “দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপিত হল বিচ্ছিন্নতার বিভিন্ন পর্ব দ্বারা, কারণ আদর্শগত সঙ্ঘাত ও মহাশক্তি গতিশীলতা ভৌগোলিক ভাবে সংলগ্ন অঞ্চলগুলিকে ঠান্ডা যুদ্ধের বিভাজনরেখায় বিভক্ত করে দিল।”[৭] তারপর ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান হলে ভূ–রাজনৈতিক গতিশীলতা বদলে গেল, এবং ক্রমশ–বিশ্বায়িত অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাপে ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার পারস্পরিক যোগাযোগ আবার শক্তিশালী হল, আর ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চল এই যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল।

ভারতের আঞ্চলিক সংযোগ ভাবনায় উত্তর–পূর্বাঞ্চলের এই প্রাধান্য কোনও নতুন বিষয় নয়। ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিক থেকেই ‘লুক ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ–পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার প্রতি ভারতের কূটনৈতিক অগ্রাধিকার প্রতিফলিত হয়েছে। পরে তা আরও জোরদার হয়েছে ২০১৪–র ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে, যা কি না উপসাগরীয় অঞ্চলে এবং বৃহত্তর ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলবর্তী দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও নিবিড় করার ক্ষেত্রে ভারতের একটি অন্যতম প্রধান কর্মসূচি।(খ)[৮] আগের নীতির ভিত্তি ও লক্ষ্যসমূহ একই আছে, শুধু সেগুলোকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ও সেগুলোকে আরও গুরুত্ব ও গতি দেওয়া হয়েছে। ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করবে তিনটি ক্ষেত্রে: বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও সংযোগ।[৯]

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে মায়ানমার ও তাইল্যান্ডের সঙ্গে ফের সংযুক্ত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় মোদী সরকারের মাথায় রয়েছে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মাধ্যমে সড়ক, রেল, আকাশ ও জলপথে সরাসরি ও পরিকাঠামোগত যোগাযোগ। বাংলাদেশের সহযোগিতা ছাড়া ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে যাওয়ার সহজ রাস্তা নেই, আর তাই ওই দেশের সঙ্গে সদর্থক সম্পর্ক রাখাও খুব জরুরি।

মোদী তাঁর শাসনের শুরু থেকেই ‘লুক ইস্ট, লিঙ্ক ওয়েস্ট’ নীতির কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে ভারতকে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার শিল্প ও বিনিয়োগের বিশ্বজনীন গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে।[১০] এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ভিশন ২০২০ উদ্যোগের মাধ্যমে উত্তর–পূর্বাঞ্চলের জন্য তিনটে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে: কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্প, ভারত–মায়ানমার রেল যোগাযোগ, এবং ভারত, মায়ানমার ও তাইল্যান্ডের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক হাইওয়ে প্রকল্প। ভারতের একটি ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতিও আছে, যার মধ্যে পুবের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, আর তার জন্যও উত্তর–পূর্বাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ।

তবে নানা নীতিগত উদ্যোগ সত্ত্বেও উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে আঞ্চলিক যোগাযোগের ভরকেন্দ্র হিসেবে এখনও পর্যাপ্ত ভাবে ব্যবহার করা যায়নি। উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে শুধু ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সঙ্গে মানুষের চলাচল ও বাণিজ্যিক পরিবহণের অতিক্রমণ বিন্দু হিসেবে না–দেখে দেখা উচিত নিজস্ব আর্থসামাজিক অগ্রাধিকার–বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা একটি বিশিষ্ট অঞ্চল হিসেবে।[১১]

পরিকাঠামোগত যোগাযোগ জোরদার করা

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি ও মানুষের–সঙ্গে–মানুষের সংযোগ তৈরি করা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যক‌। এই অঞ্চলের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে শক্তিশালী করে তোলা দরকার। প্রথমত, এই অঞ্চলটিতে যেখানে বহু বছর ধরে উন্নয়ন হয়নি, যেখানে উগ্রপন্থার দাপট ছিল এবং যেখানে প্রান্তিকীকরণ ঘটেছে, সেখানকার অভ্যন্তরীণ সংযোগের উন্নয়ন জরুরি। দ্বিতীয়ত, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের যোগাযোগ এবং পারস্পরিক সংযোগ অবশ্যই আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তৃতীয়ত, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলিকে যুক্ত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে করে এই অঞ্চলটিতে— যেখানে শিল্পের বৃদ্ধি কম হয়েছে এবং কাজের সুযোগ সীমিত রয়ে গেছে— সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ যথেষ্ট বাড়ে।[১২]

রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০৩০ অ্যাজেন্ডা ফর সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট-এ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ভারত চেষ্টা করছে উন্নত পরিকাঠামো তৈরি করার এবং কাজ করছে সমন্বিত ও স্থিতিশীল শিল্পায়নের লক্ষ্যে, আর উৎসাহ দিচ্ছে উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে (সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল ৯)। এই কাজটাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ক্ষেত্রে করার জন্য সীমান্ত অঞ্চলের উন্নয়ন প্রয়োজন, এবং সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্যের ব্যবস্থা করা দরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য অনেকটা বেড়েছে, যা প্রমাণ করছে এই ধরনের বাণিজ্যের কতটা সুযোগ রয়েছে।[১৩]

ভারত ইতিমধ্যে মায়ানমারের সঙ্গে স্থলপথ–সংযোগ তৈরি করেছে (মণিপুর সীমান্তের মোরে থেকে মায়ানমার সীমান্তের তামু হয়ে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণের কালেওয়া পর্যন্ত)। সেই সঙ্গেই সমন্বিত চেকপোস্ট তৈরির মাধ্যমে বাণিজ্যের ব্যবস্থা হয়েছে মোরে-তামু এবং মায়ানমারের সঙ্গে মিজোরামের সীমান্তের এদিকে যৌখাঠার ও ওপারে রি–তে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অনেক বিস্তৃত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে রেল চলছে এবং অনেকগুলি জলপথ ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকগুলি সীমান্ত চেকপোস্ট তৈরি হয়েছে, এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ মংলা ও চট্টগ্রাম(গ) বন্দরগুলিকে ব্যবহার করতে দিচ্ছে। এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ফলে অনেকগুলো চুক্তি হয়েছে, যেমন বাংলাদেশ–ভুটান–ভারত–নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেহিকেলস এগ্রিমেন্ট, ভারত-বাংলাদেশ উপকূলবর্তী জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত বোঝাপড়া, যৌথ শক্তি প্রকল্প এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে হাইড্রোকার্বন সরবরাহের জন্য পাইপলাইন প্রকল্প। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দ্বিপাক্ষিক প্রয়াসগুলিকে আরও শক্তিশালী করেছে বাংলাদেশের কক্সবাজার হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে অধিকতর ডিজিটাল সংযোগ। বাংলাদেশ চায় ভারত–মায়ানমার–তাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক সড়ক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে, যাতে দক্ষিণ এশিয়া এবং আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে তার নিজের সংযোগ আরও উন্নত হয়।

নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিল (এনইসি) এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করছে। এই এনইসি, যার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্যে আছেন আটটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালেরা, এই অঞ্চলের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের অর্থ সংস্থান করছে। এনইসি–র সাম্প্রতিক উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে:[১৪]

  • বিমানবন্দর প্রকল্প: এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে মিলে এই অঞ্চলের পাঁচটি বিমানবন্দরের (গুয়াহাটি, ডিব্রুগড়, জোরহাট, ইম্ফল ও উমরোই) উন্নয়ন। এনইসি–র অর্থে অরুণাচল প্রদেশের তেজু–তে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরির কাজ চলছে।[১৫]
  • রাস্তা তৈরির প্রকল্প: উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ১০,৫০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি ও উন্নয়নের কাজ শেষ করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজ্য সরকারগুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এনইসি–র অন্যান্য উন্নয়ন সংক্রান্ত উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে নর্থ ইস্ট রোড সেক্টর ডেভেলপমেন্ট স্কিম–এর আওতায় ব্রহ্মপুত্র নদী বরাবর একটি এক্সপ্রেস হাইওয়ে তৈরির প্রকল্প; কয়েকটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা তৈরি করা, যার মধ্যে আছে দইমুখ (অরুণাচল প্রদেশ)–হার্মুটি (অসম) রোড, তুরা (মেঘালয়)–মানকাচার (অসম) রোড, এবং ওখা (নাগাল্যান্ড) থেকে মেরাপানি হয়ে গোলাঘাট (অসম) রোড। ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এনএইচআইডিসিএল)–এর ১৪টি প্রকল্প; ট্রান্স–অরুণাচল হাইওয়ে প্রকল্পের সম্প্রসারণ; অরুণাচল ফ্রন্টিয়ার হাইওয়ে ও ইস্ট ওয়েস্ট করিডর (প্রস্তাবিত) নির্মাণ। এসএআরডিপি–এনই ২০১৯ পর্যন্ত যে সমস্ত রাস্তা ও হাইওয়ে তৈরি করবে বলে স্থির করা হয়েছিল সেগুলির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এমনকি এনইসি–র উদ্যোগে তৈরি পার্সপেক্টিভ প্ল্যান ২০০১–এর বিষয়টি এখন এই অঞ্চলের সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রকের বিবেচনাধীন রয়েছে।[১৬]
  • রেল প্রকল্প: অসমে ব্রহ্মপুত্রের ওপর বোগিবিল রেল/রাস্তা সেতু নির্মাণ (সম্পূর্ণ); ১৩টি নতুন লাইন, দুটি গেজ কনভার্শন এবং পাঁচটি লাইনের ডাবলিং–সহ মোট ২০টি রেল–সংযোগ প্রকল্প, যার দৈর্ঘ্য ২,৬২৪ কিমি (কাজ চলছে); মিজোরামের বাইরাবিটো থেকে সাইরাং ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ (কাজ চলছে); নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেল জোন তৈরি করা।[১৭] তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেকগুলি বাধা রয়েছে যেগুলো সমাধান করতে হবে। আর তারপরেই এই ক্ষেত্রে এই অঞ্চলটি তার ক্ষমতার সর্বাধিক স্তরে উন্নীত হবে।

জলপথে সংযুক্তি

১৯৪৭–এ ভারত ভাগ হওয়ার আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য চলত প্রধানত এখনকার বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে দিয়ে। ১৯৬৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের মাধ্যমে রেল ও জলপথে যোগাযোগ বজায় ছিল। তারপর ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকল এবং কয়েক মাস পর যুদ্ধ বাধল। তখন থেকে সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেল। বাংলাদেশের জন্মের পর ১৯৭২ সালে খুব সীমিত ভাবে জলপথে যোগাযোগ ফের চালু হল। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভাল হলে যে দু’দেশেরই লাভ, তা বুঝে নয়া দিল্লি ও ঢাকা সাম্প্রতিক কালে তা ফের চালু করতে সক্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত ও জাহাজ–পরিবর্তন সম্ভব হলে তা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছনোর সুযোগ করে দিয়ে সেখানকার অর্থনীতিকে অনেকটা চাঙ্গা করতে পারে।[১৮] উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চার রাজ্যের—অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের—সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত আছে। মেঘালয়ের সীমান্তে শুধু স্থল থাকলেও বাকি রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে স্থল ও নদী দুটোই আছে। ত্রিপুরা ও মিজোরামের আছে দীর্ঘতম এমন সীমান্ত, যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে যাতায়াতে বাধা না–থাকলে তারা খুবই লাভবান হবে। আগরতলা থেকে গুয়াহাটি ও শিলং ঘুরে ‘চিকেন্‌স নেক’ হয়ে কলকাতার দূরত্ব ১,৬৫০ কিমি, আর বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে এলে ৩৫০ কিমি।[১৯]

চট্টগ্রাম বন্দরে এবং পানগাঁওতে নতুন কনটেনার টার্মিনাল তৈরির যে উদ্যোগ বাংলাদেশ নিয়েছে, তার লক্ষ্য এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে যাতায়াত করার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সামুদ্রিক বাণিজ্য বাড়ানো। আগে এদের মধ্যে বাণিজ্যের জন্য পণ্য জাহাজে তোলা হত কলম্বো, সিঙ্গাপুর বা ক্লাং বন্দর থেকে। এখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ভারতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যেতে পারে। কলকাতার মালবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম, মোংলা বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আনা–নেওয়ার জন্য যাতায়াতের একাধিক উপায়ের ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশ এই রুটগুলো ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে: চট্টগ্রাম/মোংলা থেকে আগরতলা (ত্রিপুরা), চট্টগ্রাম/মোংলা থেকে দওকি (মেঘালয়), চট্টগ্রাম/মোংলা থেকে সুতারকান্দি (অসম), চট্টগ্রাম/মোংলা থেকে‌ শ্রীমন্তপুর (ত্রিপুরা)। বাংলাদেশের পানগাঁওয়ের মতো ভারতের ফরাক্কা ও ব্যান্ডেলের নদীবন্দর দুটিকেও কোস্টাল শিপিং এগ্রিমেন্ট (২০১৫) অনুযায়ী ‘পোর্টস অফ কল্‌স’ (যেখানে যেখানে জলযান থামবে) ঘোষণা করা হয়েছে।[২০]

১৯৭২ সালের ইন্ডো–বাংলাদেশ প্রোটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড[২১] ছিল একটা পথপ্রদর্শক প্রয়াস। এই প্রোটোকলের আওতায় ঘোষিত জলপথের সংখ্যা ২০২০ সালে আট থেকে বাড়িয়ে দশ করা হয়েছে, এবং বর্তমান রুটগুলিতেও নতুন জায়গা যোগ করা হয়েছে: ভারত–বাংলাদেশ প্রোটোকলের রুট নম্বর ৯ ও ১০–এর আওতায় গুমতি নদীর ওপর দাউদকান্দি স্ট্রেচ (৯৩ কিমি) দুই দেশেরই সংলগ্ন পশ্চাদভূমির এবং ত্রিপুরা ও সংলগ্ন রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভাল করবে। রাজশাহি–ধুলিয়ান–রাজশাহি রুট চালু হলে এবং তা আরিচা পর্যন্ত (২৭০ কিমি) প্রসারিত হলে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উত্তরের এলাকাগুলিতে স্টোন চিপ্‌স/এগ্রেগেট নিয়ে যাওয়ার পরিবহণ খরচ কমবে, এবং তা বাংলাদেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের সহায়ক হবে। তা ছাড়াও এর দৌলতে দু’দেশে ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনগুলিতে ভিড় কমবে। রুট নম্বর ১ ও ২ (কলকাতা–শিলঘাট–কলকাতা) এবং ৩ ও ৪ (কলকাতা–করিমগঞ্জ–কলকাতা)–এর সঙ্গে ভারতের কোলাঘাটকে যুক্ত করা হয়েছে। রুট ৩ ও ৪ (কলকাতা–করিমগঞ্জ–কলকাতা) এবং রুট ৭ ও ৮ (করিমগঞ্জ–শিলঘাট– করিমগঞ্জ) প্রসারিত করা হয়েছে ভারতের বদরপুর পর্যন্ত। এই রুটগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ঘোড়াশালও যোগ করা হয়েছে। বর্তমানে এই প্রোটোকলের আওতায় ভারত ও বাংলাদেশের প্রত্যেকের ছ’টি করে পোর্টস অফ কল আছে। তার সঙ্গে আরও পাঁচটি করে পোর্টস অফ কল যোগ করা হয়েছে: বাংলাদেশে রাজশাহি, সুলতানগঞ্জ, চিলমারি, দাউদকান্দি ও বাহাদুরাবাদ, এবং ভারতে ধুলিয়ান, মাইয়া, কোলাঘাট, সোনামুড়া ও যোগীঘোপা। তা ছাড়াও অতিরিক্ত পোর্টস অফ কল হিসেবে যোগ করা হয়েছে বাংলাদেশের ঘোড়াশাল ও মুক্তারপুর এবং ভারতের ত্রিবেণী ও বদরপুর।(ঘ), [২২]

এই রুটগুলিতে বড়সড় ভাবে জায়গা পেয়েছে জাতীয় জলপথ (এনডব্লিউ) ১৬ (বরাক নদী), যা ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে কলকাতাকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বরাক নদী উত্তর–পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। নাগাল্যান্ড–মণিপুর সীমানার কাছে নাগাল্যান্ডের কোহিমার দক্ষিণ অংশে এর উৎপত্তি, এবং তারপর নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও অসম হয়ে ভাঙ্গায় এসে তা ভাগ হয়ে যায় সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি ধারায়। আবার তারা যুক্ত হয় বাংলাদেশের মারকুলিতে এবং তারপর তার নাম হয় মেঘনা। বরাক–মেঘনা নদী–ব্যবস্থার মোট দৈর্ঘ্য ৯০০ কিমি: ভারতে ৫২৪ কিমি, ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে ৩১ কিমি, এবং বাকিটা বাংলাদেশে। ভারতে বরাক নদীতে জলযাত্রার উপযুক্ত হল লখিপুর ও ভাঙ্গার মধ্যবর্তী ১২১ কিমি দৈর্ঘ্য। এটাকেই ২০১৬ সালে এনডব্লিউ–১৬ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই জলপথে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে নানা প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।[২৩]

তবে ভাগাভাগি করে নেওয়া প্রোটোকল রুটগুলির অধিকাংশই মরসুমি, এবং এগুলোর বিকল্প জরুরি। অন্তর্দেশীয় জলপথ সংযোগ আরও নিবিড় করতে ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (আইডব্লিউএআই) ভাঙ্গা (করিমগঞ্জ থেকে ১৯ কিমি উজানে) ও বদরপুরে (বরাক উপত্যকাতেই) সুযোগসুবিধা আরও উন্নত করবে।

২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভারত–বাংলাদেশের শেষ শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল ভার্চুয়ালি। সেখানে দুই দেশই দ্বিপাক্ষিক সংযোগ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছে এবং মে মাসে প্রোটোকলে দ্বিতীয় সংযুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া (যেখানে সোনামুড়া–দাউদকান্দি রুটকে যোগ করা হয় এবং অন্য কয়েকটি রুটকে প্রসারিত করা হয়) ও কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে আগরতলায় ভারতীয় পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রায়াল শিপমেন্ট–এর ব্যবস্থা করার মতো ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়ে যাওয়ার সময় জাহাজ–বদলের ব্যবস্থা যাতে দ্রুত কার্যকর করা যায় সেই প্রসঙ্গে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরাই একমত হয়েছেন। ভারত আবার বাংলাদেশকে অনুরোধ করে রফতানি নিষেধাজ্ঞার তালিকা (নেগেটিভ লিস্ট) ন্যূনতম পর্যায়ে রেখে সে দেশে অন্তত একটা এমন স্থলনির্ভর বন্দর তৈরি করতে যার মাধ্যমে প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে বাণিজ্য করা যায়, এবং ভারতের আগরতলার সঙ্গে বাংলাদেশের আখাউড়া দিয়ে সেই কাজ শুরু করতে। বাংলাদেশ প্রস্তাব দেয় চট্টগ্রাম থেকে উত্তর–পূর্বাঞ্চলে পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের সংযোগকারী ফেনি সেতুকে যেন বাংলাদেশের ট্রাকের জন্য খুলে দেওয়া হয়।[২৪]

ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে কালাদান মাল্টি–মোডাল ট্রেড অ্যান্ড ট্রানজিট প্রোজেক্ট চালু হতে যখন দেরি হচ্ছে, সেই সময় উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যের রুটগুলিকে সক্রিয় করে তুলতে মায়ানমারের সিটওয়ে বন্দরের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দরকে ব্যবহার করা যায়। সন্দেহ নেই যে এখনই আশুগঞ্জ নদী–বন্দরকে খুব বেশি ব্যবহার করা যাবে না, কারণ সেখানকা অন্যান্য যোগাযোগ–ব্যবস্থা ভাল নয়। কিন্তু এর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে ত্রিপুরা ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যে মাল পরিবহণের ব্যবস্থা আরও ভাল করা যেতে পারে।

ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সংযোগ গড়ে তোলার সম্ভাবনা

‘ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয়’ কথাটাতেই এই অঞ্চলের অনেক অংশীদার আপত্তি তোলে। সাধারণ ভাবে এটাকে মনে করা হয় ‘এশিয়া ও আফ্রিকা এই দুই মহাদেশব্যাপী এবং ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী পরস্পর–সংযুক্ত স্থান’। পৃথিবীর অন্যতম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সমুদ্রপথ–বিশিষ্ট এই অঞ্চলটি হল ‘দুই মহাসমুদ্রব্যাপ্ত এক প্রবহমানতা যাকে সংযুক্ত করেছে এর মূল বাণিজ্যিক চ্যানেল মালাক্কা প্রণালী।’[২৫]

কৌশল ও কার্যকারিতাগত কারণে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সংযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রথমত, এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক উপস্থিতি এই জায়গাটিকে কৌশলগত ভারসাম্যের ক্রীড়াভূমিতে পরিণত করেছে, যার ফলে অন্যান্য আঞ্চলিক ও অঞ্চল–বহির্ভূত শক্তিকেও চিনের হানার বিরুদ্ধে একটা সুসংহত প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, আসিয়ান সদস্য দেশগুলি এবং এই অঞ্চলের অন্য উপকূলবর্তী দেশগুলিও চায় বর্ধিত পারস্পরিক মেলামেশা, সংযোগ ও বাণিজ্যিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিরাট অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সুযোগ নিতে।

ভারত এই অঞ্চলের ভূ–রাজনীতির পক্ষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই তার আরও লক্ষণীয় ও স্বয়ংসক্রিয় ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। ভারত বলেছে এই অঞ্চলে বিধিভিত্তিক শৃংখলা প্রয়োজন যাতে অঞ্চলটি থাকে মুক্ত এবং সকলকে নিয়ে চলার উপযোগী, যেন সব দেশের ভূখণ্ডগত সংহতি ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে সকলের নৌ–চালনের স্বাধীনতা থাকে, কথাবার্তার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে সব বিবাদের নিষ্পত্তি হয়, এবং যেন আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মবিধি মেনে চলা হয়। এই গঠনমূলক এবং সকলকে নিয়ে চলার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারেরাও চায় এই অঞ্চলে ভারত আরও বেশি করে নেতৃত্ব দিক। এই ঘটনাটি এই অঞ্চলের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য ভারতের কূটনৈতিক প্রয়াসেরই অনুরণন, যে প্রয়াস ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ ও ‘লুক ইস্ট’–এর মতো নীতিতে স্পষ্ট প্রতীয়মান। এই ঘনিষ্ঠতর আঞ্চলিক যোগাযোগ গড়ে তোলার দৃষ্টিভঙ্গি সাকার করতে প্রয়োজন প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আরও বেশি মেলামেশা।

একটি বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমস্টেক দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় সরাসরি, অর্থনৈতিক ও মানুষের–সঙ্গে–মানুষের যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে গঠনমূলক ভূমিকা নিতে পারে। ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আরও অর্থবহ আঞ্চলিক কাঠামো হিসেবে বিমস্টেক–কে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভারতও একটা কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিতে পারে। বঙ্গোপসাগর অবস্থিত ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের হৃদয়ক্ষেত্রে, আর তার সহযোগী আন্দামান সাগর হল আরও বড় সাগরের জন্য ভারতের কৌশলগত প্রবেশদ্বার। ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ভারত দেখছে এমন একটি প্রাকৃতিক ভৌগোলিক অঞ্চল হিসেবে যা ‘বিশ্বব্যাপী সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের ভান্ডার’, এবং সেই অনুযায়ী ভারত সাতটি স্তম্ভনির্ভর ইন্ডো–প্যাসিফিক ওশনস’ ইনিশিয়েটিভ (আইপিওআই) নিয়েছে। এই সাত স্তম্ভ হল: সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র; সামুদ্রিক সম্পদ; সামর্থ্য তৈরি করা ও সম্পদ ভাগ করে নেওয়া; বিপর্যয় সংক্রান্ত ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা; বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও অধ্যয়ন বিষয়ক সহযোগিতা; এবং সামুদ্রিক পরিবহণের মাধ্যমে বাণিজ্য সংযুক্তি।[২৬] জাপানের যে হেতু এই অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের বিরাট অভিজ্ঞতা আছে তাই আইপিওআই–এর বাণিজ্য সংযুক্তির ক্ষেত্রে জাপানের সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[২৭]

ভারত, এবং সেই সঙ্গেই জাপান, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ও অন্য উপকূলবর্তী দেশগুলো মিলে ফ্রি অ্যান্ড ওপন ইন্ডো–প্যাসিফিক (এফওআইপি) গড়ার কথা বলে আসছে। ভারতের উদ্যোগে তৈরি সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন (এসএজিএআর বা সাগর)–এর মতো ফোরামগুলো সুসংহত ও সমতাভিত্তিক সামুদ্রিক সংযুক্তির স্বপ্ন আরও জোরদার করছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক পর্যায়ে ভারত যোগাযোগ রাখে এবং তা ‘সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নীল অর্থনীতি, সংযুক্তি, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ও সামর্থ্য তৈরি করা সহ’ বিভিন্ন পরিমণ্ডলে।[২৮] ভবিষ্যতে যে হেতু শক্তি ও অন্যান্য সম্পদের জন্য ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হবে, তাই বঙ্গোপসাগর হাইড্রোকার্বনের ভান্ডার ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সমুদ্রপথ হওয়ার কারণে একই সঙ্গে তার অংশীদারদের মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। ভারত যখন ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি রূপায়ণের চেষ্টা করছে এবং ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকা নেওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, উপসাগর তখন ক্রমশ হয়ে উঠছে তার কৌশলগত ক্রমিক ক্রিয়াকলাপের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপ–অঞ্চল। দেশ এখন মালাক্কা প্রণালীর বাইরে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, এবং বৃহত্তর ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য উপসাগর ভৌগোলিক ভাবে একদম ঠিক জায়গায় রয়েছে।

ভারত ও অন্যান্য দেশকে আইপিওআই–এর আওতায় বিভিন্ন সংযুক্তিকরণ প্রকল্পে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাপান অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।[২৯] ভারত কী ভাবে বঙ্গোপসাগরের মালাক্কা প্রণালীর বাইরে উপকূলবর্তী এবং উপকূলবর্তী নয় এমন দেশগুলির সঙ্গে সামুদ্রিক সংযুক্তিকরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সমুদ্র–সম্বন্ধীয় প্রয়াসে প্রয়োজন উপসাগরে সহযোগিতামূলক বৃদ্ধিতে আগ্রহী অন্য আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরও বেশি ছন্দোবদ্ধ সক্রিয়তা। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল উপসাগরীয় অঞ্চলে স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বিমস্টেকের সদস্য দেশগুলির নিজেদের মধ্যে ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ আঞ্চলিক যোগাযোগ গড়ে তোলা। উপসাগরে এবং আরও বৃহত্তর ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করার পশ্চাদভূমি হিসেবে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চল কতটা সক্ষমতা দেখাতে পারবে সেটাই এখন গভীর চিন্তার বিষয়।[৩০]

উপসংহার

ভারত এবং তার গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক অংশীদারেরা, বিশেষ করে জাপান, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তিকরণের প্রশ্নে একটা সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে। উত্তর–পূর্বকে আঞ্চলিক সংযুক্তির ক্ষেত্রে নিছক অতিক্রমণ–পথ হিসেবে না–দেখে সামগ্রিক ভাবে একটা তাৎপর্যপূর্ণ জায়গা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আরও বৃহত্তর আঞ্চলিক সংযুক্তির কথা মাথায় রেখে সেখানে অনেকগুলি সংযুক্তিকরণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

তবে অনেক গুরুতর চ্যালেঞ্জও রয়েছে: অর্থের অভাব, বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতার অভাব, নির্দিষ্ট ভূমিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পরিকল্পনা ও তাৎপর্যপূর্ণ অংশগ্রহণের অভাব, আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে তথ্য ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, এবং সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ। সব অংশীদারকে এক সঙ্গে এই বিষয়গুলির মোকাবিলা করতে হবে।[৩১]

উত্তর–পূর্বের সরাসরি সংযোগ প্রকল্পগুলি অনেক সময় মার খায় বিলম্বের কারণে। এই প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা প্রয়োজন। সেখানকার পরিকাঠামোগত উদ্যোগগুলির বর্তমান অবস্থা কী, সেগুলো কী ধরনের বাধার সম্মুখীন এবং কী ভাবে তা অতিক্রম করা যায় তার বিশদ খতিয়ান রাখতে হবে। শক্তিশালী পরিকাঠামো তৈরি করে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামর্থ্য অর্জনের কাজ একই সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে।

এই অঞ্চলের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে জাপানের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপসাগরীয় অঞ্চলে সংযোগ বাড়াতে বিমস্টেকের সদস্য দেশগুলো এবং অন্য অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতার কতটা অবকাশ আছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের পুর্ব ও দক্ষিণ–পূর্বের প্রতিবেশীদের ঘনিষ্ঠ জাতিগত ও ধর্মীয় সম্পর্ক আছে। সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াও সীমান্ত দিয়ে মানুষের যাতায়াত এবং মানুষের–সঙ্গে–মানুষের ঘনিষ্ঠতর যোগাযোগ আঞ্চলিক পারস্পরিক ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়ার সুযোগের পরিধি প্রসারিত করবে।[৩২]


ঋণ স্বীকৃতি

এই রিপোর্টের কোনও কোনও অংশের ভিত্তি ৫ ও ৬ মার্চ ২০২১–এর ওআরএফ আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার ‘এক্সপ্লোরিং কানেক্টিভিটি ইন দ্য বে অফ বেঙ্গল রিজিয়ন: ইমপর্টেন্স অফ ইন্ডিয়াজ নর্থইস্ট’–এর বক্তাদের ভাবনাচিন্তা।


প্রারম্ভিক সেশন

  • নীলাঞ্জন ঘোষ, ডিরেক্টর, ওআরএফ, কলকাতা (চেয়ার)
  • অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, সিনিয়র ফেলো, ওআরএফ, কলকাতা
  • নাকামুরা ইউতাকা, কনসাল–জেনারেল, জাপানের কনস্যুলেট জেনারেল কলকাতা
  • রিভা গাঙ্গুলি দাস, সচিব (পূর্ব), বিদেশমন্ত্রক, ভারত সরকার, নয়া দিল্লি
  • তারিক করিম, রাষ্ট্রদূত (অবসরপ্রাপ্ত) রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্বাধীন উপদেষ্টা
  • সুব্রত সাহা (লেঃ জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত) পিভিএসএম, ইউওয়াইএসএম, ভিএসএম ডিরেক্টর — স্কুল অফ মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স, স্ট্র‌্যাটেজি অ্যান্ড লজিসটিক্‌স, রাষ্ট্রীয় রক্ষা ইউনিভার্সিটি; সদস্য, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজরি বোর্ড

অন্তিম সেশন

  • মাতসুমোতো কাতসুয়ো, হেড অফ জেআইসিএ ইন ইন্ডিয়া

লেখক পরিচিতি

অম্বর কুমার ঘোষ: রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট, ওআরএফ, কলকাতা।

অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী: সিনিয়র ফেলো, ওআরএফ, কলকাতা।

অতিরিক্ত গবেষক: অর্চিত ভাট ও ভাবনা ভূষণ, ন্যাশনাল ল স্কুল অফ ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি, বেঙ্গালুরু।


পাদটীকা

[ক] তা সত্ত্বেও কিছু সংরক্ষিত এলাকায় বাংলাদেশ থেকে বহু মানু্ষ ঢুকে পড়েছেন, আর তার ফলে পরিচিতি ও সম্পদের মালিকানা নিয়ে গুরুতর সঙ্ঘাত দেখা দিয়েছে।

[খ] ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি ঘোষিত হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে মায়ানমারে অনুষ্ঠিত ইন্ডো–আসিয়ান শীর্ষ বৈঠকে।

[গ] বাংলাদেশ সরকার চিটাগং থেকে বদলে নাম করে চট্টগ্রাম এবং তা কার্যকর হয় ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে। দেখুন ‘পোর্ট নেম চেঞ্জেস ফ্রম চিটাগম টু চট্টগ্রাম’, ওজিয়ান।

[ঘ]এই প্রোটোকলের আওতায় উভয় দেশের ছটি পোর্টস অফ কল আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের জন্য মনোনীত হয়। দশটি জায়গায় মাল পরিবহণের জন্য ফ্লোটিং টার্মিনাল তৈরি হয়েছে: ধুবড়ি, যোগীঘোপা, তেজপুর, শিলঘাট, বিশ্বনাথঘাট, নেয়ামতি, বোগিবিল, ডিব্রুগড়, পানবাড়ি ও ওরিয়ুমঘাট। হাটসিঙ্গিমারি, ধুবড়ি, শিলঘাট, বিশ্বনাথঘাট, নেয়ামতি, ডিব্রুগড় ও ওরিয়ুমঘাটে টার্মিনাল তৈরির জন্য জমি অধিগৃহীত হয়েছে।

তথ্য সূত্র

[১] প্রতিম রঞ্জন ঘোষ, “কানেক্টিভিটি ইজ নো প্যানাসিয়া ফর এন আনপ্রিপেয়ার্ড নর্থইস্ট ইন্ডিয়া”, স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিসিস, ২০১৯, খন্ড ৪৩, সংখ্যা ৪, ৩৩৫–৩৪১।

[২] রাইল রকি জিপাও, “রোড্‌স, ট্রাইব্‌স অ্যান্ড আইডেন্টিটি ইন নর্থইস্ট ইন্ডিয়া”, এশিয়ান এথনিসিটি, ২০২০, খন্ড ২১, সংখ্যা ১, ১–২১।

[৩] রাইল রকি জিপাও, “রোড্‌স, ট্রাইব্‌স অ্যান্ড আইডেন্টিটি ইন নর্থইস্ট ইন্ডিয়া”।

[৪] “এক্সপ্লেনড: হোয়াট ইজ দা ইনার লাইন পারমিট সিস্টেম, আ্যান্ড নর্থইস্ট স্টেটস’ কনসার্ন ওভার ইট?”, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডিসেম্বর ৫, ২০১৯।

[৫] শ্রীরাধা দত্ত, “হোয়াট এল্‌স দ্য নর্থইস্ট: অ্যান এনকোঅ্যারি ইনটু দ্য ইকনমিক ফ্যাক্টর্‌স”, স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিসিস, ভলিউম ২৫, নম্বর ১।

[৬] অচিন্ত্য কুমার দত্ত ও অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, “ইন্ট্রোডাকশন: ইন্ডিয়া–সাউথ ইস্ট এশিয়া কানেক্টিভিটি থ্রু দ্য এজেস”; মূল বই: অচিন্ত্য কুমার দত্ত ও অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী সম্পাদিত কানেক্টিং নেশনস, পলিটিকো–কালচারাল ম্যাপিং ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ ইস্ট এশিয়া, দিল্লি: প্রাইমাস বুকস ২০১৮, ৪।

[৭] অচিন্ত্য কুমার দত্ত ও অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, “ইন্ট্রোডাকশন: ইন্ডিয়া–সাউথ ইস্ট এশিয়া কানেক্টিভিটি থ্রু দ্য এজেস”; ১০।

[৮] নরেন্দ্র মোদী ও গুয়েন তান দুং, নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীর সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি (নয়া দিল্লি অক্টোবর ২৮, ২০১৪), বিদেশ মন্ত্রক। নরেন্দ্র মোদী, দ্বাদশ ভারত–আসিয়ান শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী বিবৃতি (ভাষণ, ইন্ডিয়া–আসিয়ান শীর্ষ বৈঠক, নায় পি ত, মায়ানমার, নভেম্বর ১২, ২০১৪)

[৯] যদুবেন্দ্র মাথুর, “ইন্ডিয়া’জ লুক ইস্ট–অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি: আ ব্রিজ টু দ্য এশিয়ান নেবারহুড”, সিমবায়োসিস ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্‌স কনফারেন্স ২০১৪।

[১০] অসিত রঞ্জন মিশ্র, “নরেন্দ্র মোদী সেজ ইন্ডিয়া শুড লিঙ্ক ওয়েস্ট, লুক ইস্ট”, মিন্ট, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪।

[১১] অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, “কানেক্টিভিটি অ্যান্ড সাবরিজিওনাল পপুলেশন ইন দ্য ইস্ট অফ সাউথ এশিয়া: ইম্পর্টেন্স অফ ইন্ডিয়াজ নর্থ ইস্ট রিভিজিটেড”, মূল বই: অচিন্ত্য কুমার দত্ত ও অনুসূয়া বসু রায় চৌধুরী সম্পাদিত কানেক্টিং নেশনস পলিটিক্যাল ম্যাপ অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ ইস্ট এশিয়া, দিল্লি, প্রাইমাস বুকস, ২০১৮, ১৫৮।

[১২] অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, “কানেক্টিভিটি অ্যান্ড সাবরিজিওনাল পপুলেশন ইন দা ইস্ট অফ সাউথ এশিয়া: ইম্পর্টেন্স অফ ইন্ডিয়াজ নর্থ ইস্ট রিভিজিটেড”।

[১৩] প্রবীর দে, “রোল অফ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন প্রোমেটিং এসডিজি ৯ ইন ইন্ডিয়া’জ নর্থইস্ট”, ওআরএস এক্সপার্ট স্পিক, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০।

[১৪] হারিনী বালাসুব্রামানিয়ান, “আ লুক অ্যাট ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভলপমেন্ট প্রোজেক্টস ইন নর্থ ইস্টার্ন স্টেটস অফ ইন্ডিয়া”, প্রপটাইগার, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮।

[১৫] উত্তর-পূর্ব পরিষদ, ভারত সরকার, অ্যাচিভমেন্টস অফ এনইসি।

[১৬] উত্তর-পূর্ব পরিষদ, ভারত সরকার, অ্যাচিভমেন্টস অফ এনইসি।

[১৭] হারিনী বালাসুব্রামানিয়ান, “আ লুক অ্যাট ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভলপমেন্ট প্রোজেক্টস ইন নর্থ ইস্টার্ন স্টেটস অফ ইন্ডিয়া”, প্রপটাইগার, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮।

[১৮] অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, “রিকানেক্টিং নেবারস: ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ রিলেশনস @ ফিফটি অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, ইন্ডিয়ান ফরেন অ্যাফেয়ার্‌স জার্নাল, খণ্ড ১৫, সংখ্যা ৩, জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১৯–২২৭।

[১৯] অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী, “রিকানেক্টিং নেবারস: ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ রিলেশনস @ ফিফটি অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী”, ২২৫।

[২০] বিদেশ মন্ত্রক, নয়াদিল্লি, “এগ্রিমেন্ট অন কোস্টাল শিপিং বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অফ রিপাবলিক অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ”(ঢাকা জুন ৬,২০১৫)।

[২১] বিদেশ মন্ত্রক, নয়া দিল্লি, “ট্রেড এগ্রিমেন্ট প্রোটোকল (নভেম্বর ১, ১৯৭২ নয়া দিল্লি)।

[২২] বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রক, “সেকেন্ড অ্যাডেনডাম অন প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ ২০২০”।

[২৩] ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (আইডব্লিউএআই), ন্যাশনাল ওয়াটার ওয়েজ ১৬।

[২৪] বিদেশ মন্ত্রক, নয়াদিল্লি, “জয়েন্ট স্টেটমেন্ট অফ ইন্ডিয়া–বাংলাদেশ ভার্চুয়াল সামিট”, (ডিসেম্বর ১৭, ২০২০)।

[২৫] উদয়ন দাস, “হোয়াট ইজ দ্য ইন্ডো–প্যাসেফিক”, দ্য ডিপ্লোম্যাট, জুলাই ১৩, ২০১৯।

[২৬] কনস্যুলেট জেনারেল অফ জাপান ও ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের সহযোগিতায় অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত “এক্সপ্লোরিং কানেক্টিভিটি ইন দ্য বে অফ বেঙ্গল রিজিয়ন: ইমপর্টেন্স অফ দ্য ইন্ডিয়া’জ নর্থইস্ট” শীর্ষক আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল কনফারেন্স (৫ ও ৬ মার্চ, ২০২১)–এর উদ্ধৃতাংশ।

[২৭] ফয়জল ইয়াহিয়া, “বিমস্টেক অ্যান্ড ইমার্জিং প্যাটার্নস অফ এশিয়ান রিজিওনাল অ্যান্ড ইন্টাররিজিওনাল কোঅপারেশন”, অস্ট্রেলিয়ান জারনাল অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স, খণ্ড ৪০, নম্বর ৩, সেপ্টেম্বর, পৃষ্ঠা ৩৯১–৪১০।

[২৮] প্রেমেশা সাহা ও অভিষেক মিশ্র, “দ্য ইন্ডো–প্যাসিফিক ওশন্‌স ইনিশিয়েটিভ: টুওর্ডস আ কোহেরেন্ট ইন্ডো–প্যাসিফিক পলিসি ফর ইন্ডিয়া”, ওআরএফ অকেশনাল পেপার, ইস্যু নাম্বার ২৯২, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০।

[২৯] “এক্সপ্লোরিং কানেক্টিভিটি ইন দ্য বে অফ বেঙ্গল রিজিয়ন: ইমপর্টেন্স অফ দ্য ইন্ডিয়া’জ নর্থইস্ট” শীর্ষক আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল কনফারেন্স (৫ ও ৬ মার্চ, ২০২১)–এর উদ্ধৃতাংশ।

[৩০] “এক্সপ্লোরিং কানেক্টিভিটি ইন দ্য বে অফ বেঙ্গল রিজিয়ন: ইমপর্টেন্স অফ দ্য ইন্ডিয়া’জ নর্থইস্ট” শীর্ষক আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল কনফারেন্স (৫ ও ৬ মার্চ, ২০২১)–এর উদ্ধৃতাংশ।

[৩১] “এক্সপ্লোরিং কানেক্টিভিটি ইন দ্য বে অফ বেঙ্গল রিজিয়ন: ইমপর্টেন্স অফ দ্য ইন্ডিয়া’জ নর্থইস্ট” শীর্ষক আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল কনফারেন্স (৫ ও ৬ মার্চ, ২০২১)–এর উদ্ধৃতাংশ।

[৩২] “এক্সপ্লোরিং কানেক্টিভিটি ইন দ্য বে অফ বেঙ্গল রিজিয়ন: ইমপর্টেন্স অফ দ্য ইন্ডিয়া’জ নর্থইস্ট” শীর্ষক আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল কনফারেন্স (৫ ও ৬ মার্চ, ২০২১)–এর উদ্ধৃতাংশ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Anasua Basu Ray Chaudhury

Anasua Basu Ray Chaudhury

Anasua Basu Ray Chaudhury is Senior Fellow with ORF’s Neighbourhood Initiative. She is the Editor, ORF Bangla. She specialises in regional and sub-regional cooperation in ...

Read More +
Ambar Kumar Ghosh

Ambar Kumar Ghosh

Ambar Kumar Ghosh is an Associate Fellow under the Political Reforms and Governance Initiative at ORF Kolkata. His primary areas of research interest include studying ...

Read More +