-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
রুপিকে বিশ্বমুদ্রায় পরিণত করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা তার প্রতিবেশীরা ভালভাবে গ্রহণ করছে বলে মনে হলেও এখনও অনেক পথ যেতে হবে
অন্তহীন ইউক্রেন সংঘাতের একটি অপ্রত্যাশিত ফলাফল হল, রাশিয়ার উপর একতরফা মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা ভারত ও চিনের মতো দেশগুলিকে বিশ্বের ‘রিজার্ভ কারেন্সি’ মার্কিন ডলারে বাণিজ্য করা থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে, কারণ মস্কো যে ‘সস্তা তেল’ দিতে রাজি হয়েছিল তাদের তা হাতছাড়া করার সামর্থ্য ছিল না। এইভাবে ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে সমভাবে রুপিকেও একটি ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা’য় পরিণত করার জন্য ভারতীয় প্রয়াসও শুরু হয়।
এমন ঘটনা এই প্রথম নয় যে ভারতীয় রুপি বিশ্বমুদ্রা হচ্ছে। ’৬০–এর দশকে মালয়েশিয়া, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই)–র মতো দেশগুলি ভারতীয় মুদ্রা ব্যবহার করত, এবং একে ‘গাল্ফ রুপি’ বলা হত। সময়ের সঙ্গে তারা এটিকে তাদের নিজস্ব স্বাধীন মুদ্রা দিয়ে প্রতিস্থাপন করে।
ইউক্রেন সঙ্কটের আগেও প্রতিবেশী দেশগুলি, যেমন মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং মাঝে মাঝে বাংলাদেশ, সকলেই ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্য করা বা একটি সাধারণ ‘দক্ষিণ এশিয়ার মুদ্রা’ চালু করার কথা বলেছিল।
এমনকি আজও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় রুপি প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানে একটি স্বীকৃত মুদ্রা, কিন্তু এই দেশগুলি তৃতীয় কোনও দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারে না। অন্য প্রতিবেশী দেশগুলিতেও বেসরকারিভাবে ভারতের রুপি ব্যবহৃত ও গৃহীত হয়।
ইউক্রেন সঙ্কটের আগেও প্রতিবেশী দেশগুলি, যেমন মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং মাঝে মাঝে বাংলাদেশ, সকলেই ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্য করা বা একটি সাধারণ ‘দক্ষিণ এশিয়ার মুদ্রা’ আনার কথা বলেছিল। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ (মালদ্বীপ) ও মাহিন্দা রাজাপক্ষে (শ্রীলঙ্কা) এই বিষয়টির প্রবল সমর্থক ছিলেন, এবং সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ও ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সম্ভাবনার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তবে তাঁরা ইতিবাচক সাড়া পাননি।
এর মধ্যে ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি তেহরানকে অর্থ প্রদানের পদ্ধতি তৈরি করার পরে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ ভারতীয় রুপি দিয়ে ইরানের তেলের দাম দিতে চেয়েছিল। এই পটভূমিতে ভারতের প্রতিবেশীরা কীভাবে তাদের নিজেদের আগেকার প্রস্তাবগুলি অনুসরণ করবে, যা ভারত একটি সাধারণ মুদ্রার উল্লেখ না করেও আংশিকভাবে রুপি–বাণিজ্যের মাধ্যমে পূরণ করেছে, তা ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করবে।
ভারত রুপিকে বিশ্বস্তরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি সুযোগটি গ্রহণ করেছিল। তারা ভারতীয় মুদ্রায় তাদের দ্বিপাক্ষিক এবং সম্ভাব্য তৃতীয়–দেশীয় বাণিজ্য চালনা করার জন্যও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। অবশ্যই রাশিয়ার সঙ্গে ভারত প্রথমে সম্ভাবনাটি খতিয়ে দেখেছিল। প্রতিবেদন অনুসারে, সৌদি আরবের মতো অন্য তেল–বিক্রয়কারী দেশগুলি সহ ৩৫টি দেশ অন্তত দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারতীয় রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করতে আগ্রহীদের তালিকায় মালয়েশিয়া হল সাম্প্রতিকতম দেশ।
ভারত রুপিকে বিশ্বস্তরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি সুযোগটি গ্রহণ করেছিল।
ভারতীয় রুপিতে লেনদেন ভারত এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক। কারণ, ব্যবসা বা ভ্রমণ যাই হোক না কেন, ডলারের বিনিময় হারের জন্য ব্যক্তি, ব্যবসা ও সরকার দুই দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ তাদের প্রথমে তাদের দেশে ডলার কিনতে হয় এবং পরে এর অন্তত একটি অংশ তাদের গন্তব্য দেশে স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত করতে হয়। শ্রীলঙ্কার ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ক্লিয়ারিং ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পেমেন্ট নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্য করা হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা লেনদেনের খরচের ৫০ শতাংশ সাশ্রয় করবে।
মুম্বইতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের সঙ্গে এক বৈঠকে শ্রীলঙ্কার হাই–কমিশনার মিলিন্দা মোরাগোদা ভারতীয় রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করার বিষয়ে আলোচনা করেন। এদিকে কলম্বোতে দেশের বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের সামনে একটি যৌথ উপস্থাপনায় শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহে ও ট্রেজারি সেক্রেটারি মাহিন্দা সিরিবর্ধন আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ‘পুনর্গঠনের জন্য রুপি–ঋণ বিবেচনা করার ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছেন’।
ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেনের জন্য ভারত–সহ বিভিন্ন দেশকে তাদের ব্যাঙ্কগুলিকে ‘বিশেষ ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ খোলার অনুমতি দিতে হবে, শুধু যার মাধ্যমে এই ধরনের লেনদেন পরিচালনা করা যেতে পারে। যেহেতু ডলারের বিশাল ঘাটতি শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণ ও ফলাফল দুটোই, কাজেই দেশটি যে কোনও বিকল্প আঁকড়ে ধরতে আগ্রহী ছিল।
ভারতের প্রতিবেশী যেমন বাংলাদেশ, মায়ানমার ও নেপালও ক্রমাগত ডলারের ঘাটতির সম্মুখীন হয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য হত।
যেহেতু ডলারের বিশাল ঘাটতি শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণ ও ফলাফল দুটোই, কাজেই দেশটি যে কোনও বিকল্প আঁকড়ে ধরতে আগ্রহী ছিল।
তবে ভারতের দিক থেকে সতর্ক আশাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। আগের শতাব্দীতে দেশটি রুপি–রুবল বাণিজ্যে যুক্ত ছিল। কিন্তু পরে মস্কোর আগ্রহ কমে গিয়েছিল, কারণ ভারতের উচ্চমূল্যের আমদানির বিনিময়ে তাদের ভারত থেকে কেনার মতো তেমন কিছুই ছিল না। সংবাদ প্রতিবেদনে এখন বলা হচ্ছে যে রাশিয়ার তেল ভারতীয় রুপিতে নয়, আমেরিকান ডলারে লেনদেন হচ্ছে।
মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক বৈঠকের পর, যেখানে মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য বেজিংয়ের ১২ দফা শান্তি প্রস্তাবের উপর নজর ছিল, রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য নিষিদ্ধ ডলারের বিকল্প হিসাবে ইউয়ানকে গ্রহণ করেছে বলে জানা গিয়েছে। সৌদি আরবও ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে তেল কেনাবেচা করার কথা ভাবছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে, ভারতের জন্য বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ভূ–রাজনীতি এবং ভূ–অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক কিছু তুলে ধরছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে সব দিক ভাল করে জানতে হবে। ভারতীয় রুপিকে বিশ্বমুদ্রা হিসাবে ব্যবহারের বিষয়টির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সত্ত্বেও এটি দৈনিক গড় বিশ্ব বাণিজ্যের মাত্র ১.৬ শতাংশ। ২০০৭ সালে এই অঙ্ক ছিল ০.৭ শতাংশ। রুপি কিছুটা উন্নতি করেছে, কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বা অন্য দেশগুলির তার পক্ষে বাজি ধরার জন্য তা যথেষ্ট নয়। এভাবে প্রতিদিনের গড় বিশ্ব বাণিজ্যের অংশ হিসাবে রুপি মার্কিন ডলার (৮৮ শতাংশ), ইউরো (৩১ শতাংশ), ইয়েন (১৭ শতাংশ) ও পাউন্ড–স্টার্লিং (১৩ শতাংশ)–এর থেকে অনেক বেশি প্রতিকূল অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়া, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) রুপি–ভিত্তিক বাণিজ্য প্রসারের চেষ্টা করা সত্ত্বেও পুঁজির অন্যত্র চলে যাওয়া ও অপ্রত্যাশিত বিনিময় ধাক্কার ভয়ে এখনও সম্পূর্ণ রূপান্তরযোগ্যতার অনুমতি দিতে অনিচ্ছুক। এই প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক কুশীলবেরা চাইবে, এই বিষয়ে আরবিআই সঙ্কেত দিক। এটি এখন ‘মুরগি আগে না ডিম আগে’ পরিস্থিতি, এবং এমনকি প্রতিবেশীরাও বিকাশমান পরিস্থিতিতে কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখতে চাইতে পারে।
তবুও, ভারতে অভ্যন্তরীণভাবে সব পক্ষের লাভজনক এই প্রক্রিয়ার রাজনীতিকরণ না করা জরুরি। যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রীলঙ্কার কিছু অর্থনীতিবিদ দেশের সমস্ত বাণিজ্য ও উপার্জন এক ঝুড়িতে, অর্থাৎ ভারতীয় রুপিতে, রাখার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তাঁদের যুক্তি, ভারতীয় রুপির ভিত্তিতে বাণিজ্যের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা ব্যালান্স অফ পেমেন্ট-এর সমস্যা তৈরি করতে পারে, যেখানে দেশটিকে খাদ্য, ওষুধ ও শিল্প সামগ্রী–সহ তার সমস্ত সরবরাহের উৎস করতে হতে পারে ভারতকে (বা তার জায়গায় অন্য কোনও দেশকে)।
তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে সব দিক ভাল করে জানতে হবে। ভারতীয় রুপিকে বিশ্বমুদ্রা হিসাবে ব্যবহারের বিষয়টির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সত্ত্বেও এটি দৈনিক গড় বিশ্ব বাণিজ্যের মাত্র ১.৬ শতাংশ।
এটি এমন একটি পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে যেখানে দেশের কাছে পর্যাপ্ত ডলার থাকবে না, যা এখনও বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে গণ্য, এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির জন্য ও বিদ্যমান ঋণ পরিশোধ ও সুদ দেওয়ার জন্য সে দেশের প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন হবে। তারা অন্তত মাঝারি মেয়াদে এমন একটি পরিস্থিতির কথা ভাবছে। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে যা সত্য তা অন্য প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রেও সত্য।
কয়েক মাস ধরে শ্রীলঙ্কার রুপি ও অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হওয়ার পর থেকে সরকার বাণিজ্যিক সংস্থা ও ব্যক্তিদের শ্রীলঙ্কার অস্থিরতার সময় বিদেশের ব্যাঙ্কে বা ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছে রাখা ডলার আবার দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছে। আগে শ্রীলঙ্কার রুপির ওঠাপড়া এবং স্থানীয় ব্যাঙ্কগুলিকে ডলার ক্রয় বা বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশও ছিল এর কারণ। এটি এমন একটি পরিস্থিতির দিকে পরিচালিত করেছে যেখানে শ্রীলঙ্কার ব্যবসাগুলি রুপি–বাণিজ্যকে স্বাগত জানালেও এখনও বড় পদক্ষেপ করতে পারেনি।
এ সবের অর্থ হল ভারতীয় রুপিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য এক অপরিচিত পথ ধরে দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করতে হবে। এই ধরনের একটি পথ তার বাণিজ্য অংশীদারদের ক্ষেত্রেও সত্য। ডলার, ইউরো ও পাউন্ড–স্টার্লিং–এর উপর রুপি তার নির্ভরতা শেষ করবে ঠিকই, তবে তা বাস্তব করতে দেশগুলিকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সম্ভাবনাগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। ভারতেরও একই কাজ করা উচিত, এবং একই সময়ে রূপান্তরের গতিশীলতা বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া তৈরি করা উচিত, এবং সেই লক্ষ্যে ধীর কিন্তু নিশ্চিত পদক্ষেপ করা উচিত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
N. Sathiya Moorthy is a policy analyst and commentator based in Chennai.
Read More +