Author : Harsh V. Pant

Published on Aug 01, 2022 Updated 0 Hours ago

ইন্দো-প্যাসিফিকে লড়াইয়ের প্রস্তুতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে

উত্তাল জল

গোটা বিশ্ব যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে উঠে–আসা চ্যালেঞ্জগুলির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে চলেছে, সেই সময় ইন্দো–প্যাসিফিকে লড়াইয়ের বিভাজন রেখাগুলি তীব্র ভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। জুন মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরে শাংগ্রি–লা সংলাপে ভাষণ দেওয়ার সময় মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব লয়েড অস্টিন স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান সহ তার মিত্রদের পাশে দাঁড়ানো অব্যাহত রাখবে।

অস্টিন তাঁর চিনা সমকক্ষ ওয়েই ফেংগের সঙ্গে ডায়লগ–এর সাইডলাইনে দেখা করেছিলেন, এবং দুজনেই আবার বলেছিলেন যে তাঁরা তাদের সম্পর্কে আরও উন্নতি আনতে চান। তবে পার্থক্য সমাধানের প্রশ্নে কোনও অগ্রগতি সেখানে আদৌ ছিল না। যখন ফেংগের বলার পালা এল, তিনি আক্রমণাত্মক ভাবে জানিয়ে দিলেন যে ‘‌তাইওয়ানের স্বাধীনতার অন্বেষণ একটি চোরা গলি’‌, এবং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ‘‌যদি কেউ চিন থেকে তাইওয়ানকে আলাদা করার সাহস করে, আমরা যুদ্ধ করতে দ্বিধা করব না’‌।

জাপানে তাঁর সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ানের প্রসঙ্গে চিন ‘‌বিপদ নিয়ে খেলা করছে’‌ বলে সতর্ক করে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে আক্রমণ করা হলে দ্বীপটিকে রক্ষা করতে আমেরিকার সামরিক ভাবে হস্তক্ষেপ করার অভিপ্রায় রয়েছে।

এই ঘটনা এ কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে যে তাইওয়ান এখন ইন্দো–প্যাসিফিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্ল্যাশপয়েন্ট, কারণ বিশ্বের পুরনো মহাশক্তি এবং তার দৃশ্যমান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। চিন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শক্তি প্রদর্শন করতে বার বার তাইওয়ানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করছে। মে মাসে চিনের প্রেরিত ৩০টি যুদ্ধবিমানকে ফেরত পাঠানোর জন্য তাইওয়ানকে তার আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে ২২টি যুদ্ধবিমান এবং সেই সঙ্গে ইলেকট্রনিক যুদ্ধব্যবস্থা, আগাম সতর্কতা ও অ্যান্টি–সাবমেরিন বিমান মোতায়েন করতে হয়েছিল। জাপানে তাঁর সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ানের প্রসঙ্গে চিন ‘‌বিপদ নিয়ে খেলা করছে’‌ বলে সতর্ক করে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে আক্রমণ করা হলে দ্বীপটিকে রক্ষা করতে আমেরিকার সামরিক হস্তক্ষেপ করার অভিপ্রায় রয়েছে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বাইডেন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে, যা দেশটির নীতির পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও হোয়াইট হাউসের আধিকারিকেরা পরে স্পষ্ট করেছেন যে তাইওয়ানের বিষয়ে মার্কিন নীতি অপরিবর্তিত রয়েছে, ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ভাবে অস্পষ্টতার একটি উপাদান তৈরি হচ্ছে। এই ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বাইডেন চিন–তাইওয়ান ইস্যুকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। বাইডেন বলেছিলেন, ‘‌‘‌[যদি] ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে কোনো সমঝোতা না–হয়… তাহলে তাইওয়ানকে জোর করে দখল করার বিষয়ে এটি চিনকে কী সংকেত পাঠাবে?” বেজিং এই সমান্তরালটিকে খণ্ডন করতে দ্রুত যুক্তি দিয়েছিল যে ‘তাইওয়ান প্রশ্ন ও ইউক্রেন ইস্যু মৌলিক ভাবে ভিন্ন’‌। কিন্তু তিনি তাইওয়ানকে রক্ষা করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন ইউক্রেন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে গিয়ে স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‌‘‌হ্যাঁ … আমরা এমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছি।’‌’‌

তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন নীতি চাপের মধ্যে রয়েছে, কারণ অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে শক্তিশালী চিন তাইপে-কে একাধিক ফ্রন্টে কোণঠাসা করে দিয়ে পুনর্মিলনকে ভবিতব্য হিসেবে উপস্থাপন করছে। জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে আমেরিকার তার নীতিতে নতুন করে স্পষ্টতা আনার সময় হয়েছে, এবং বেজিংকে এটি স্পষ্ট জানানো দরকার যে ওয়াশিংটন তাইওয়ানকে রক্ষা করবে। আবের মূল্যায়নে, এটি এই অঞ্চলে প্রতিরোধ বাড়াতে পারে। তবে বেজিং এই পরিবর্তনটিকে যুদ্ধের প্ররোচনা হিসেবে দেখবে এবং তাইওয়ান মহাশক্তি রাজনীতির মধ্যে পড়ে যাবে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

কয়েক ডজন চিনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের স্বঘোষিত আকাশ সুরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে ঢুকে পড়ার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘‌মুক্ত ও অবাধ ইন্দো–প্যাসিফিকের প্রতি দায়বদ্ধতা’‌ দেখানোর জন্য মার্কিন নৌবাহিনীর একটি পি–৮এ পসাইডন রিকনাইসান্স প্লেন তাইওয়ান প্রণালীর উপর দিয়ে উড়িয়েছিল।

তাইওয়ান নিয়ে বিতর্ক এখন মার্কিন–চিন সম্পর্কের রূপরেখা যেভাবে পরিবর্তন করছে, তেমন আগে কখনও হয়নি। কয়েক ডজন চিনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের স্বঘোষিত বায়ু সুরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে ঢুকে পড়ার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘‌মুক্ত ও অবাধ ইন্দো–প্যাসিফিকের প্রতি দায়বদ্ধতা’‌ দেখানোর জন্য মার্কিন নৌবাহিনীর একটি পি–৮এ পসাইডন রিকনাইসান্স প্লেন তাইওয়ান প্রণালীর উপর দিয়ে উড়িয়েছিল। এর ফলে পিপলস লিবারেশন আর্মি–র ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড তাদের বিমান ও স্থলবাহিনীকে একত্রিত করে। এই নতুন ধরনের আগ্রাসন এখন চিন–মার্কিন সম্পর্কের নতুন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চিনে উড়ে যাওয়ার এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পঞ্চাশ বছর পর এই দ্বিপাক্ষিক অংশীদারি একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তাইওয়ানের বিষয়টি এখন তাদের সম্পৃক্ততার কেন্দ্রবিন্দুতে।

ইউক্রেন সংকট সমীকরণের উভয় দিকেই নতুন শিক্ষার পাঠ তৈরি করছে। ইন্দো–প্যাসিফিকের জলরাশি উত্তাল। ভারত সহ সমস্ত আঞ্চলিক দেশগুলির জন্য এটি তাদের নিজস্ব নীতি–পছন্দের বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করার, এবং সেই অনুযায়ী দ্বন্দ্বের যে ভূ-রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি হতে শুরু করেছে তার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার সময়।


এই ভাষ্যটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘দ্য টেলিগ্রাফ’–এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.