Author : Harsh V. Pant

Published on May 02, 2023 Updated 0 Hours ago
নির্বাচনের আগে ঋষি সুনাকের বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি

‘যথেষ্ট হয়েছে’ এবং ব্যবস্থাটি ‘ন্যায্য নয়’ বলে ঘোষণা করে ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার ঋষি সুনাক সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসন রুখতে হাউস অফ কমন্সে একটি ফাইভ পয়েন্ট প্ল্যান বা পাঁচ দফা কর্মসূচি প্রকাশ করেন। এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে একটি নতুন স্থায়ী সমন্বিত ছোট নৌকার উপর  কার্যকর আদেশের সূচনা করা, অভিবাসন আধিকারিকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রয়োগের উপর মনোনিবেশ করা, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য হোটেল ব্যবহার বন্ধ করে খরচ কমানো, অ্যাসাইলাম কেসওয়ার্কারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং ইংল্যান্ডে আগত অভিবাসীদের আলবেনিয়াতে ফেরত পাঠানোর ঘটনাকে ত্বরান্বিত করার জন্য দেশটির সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করা। ইংলিশ চ্যানেল জুড়ে অবৈধ বোট চলাচলকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করার জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি, অবৈধ অভিবাসন সমস্যা মোকাবিলার সাম্প্রতিকতম ইতিহাসে এটি যে কোনও ব্রিটিশ সরকারের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। যা এটিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে তা হল যে, এই সংশোধনের পিছনে থাকা সুনাক এবং তাঁর হোম সেক্রেটারি সুয়েলা ব্রাভারম্যান উভয়ই অভিবাসী৷

গত বছর ৪৫৭০০ জন মানুষ ছোট নৌকা ব্যবহার করে ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে  পাড়ি দেন, যা একটি অভিনব রেকর্ড। এর ফলে সুনাক সরকারের উপর এমন এক রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয় যাতে তারা সেই সমস্যার প্রেক্ষিতে নীতিগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন। ইতিপূর্বে এমনটা হয়নি তা বলাই বাহুল্য। কনজারভেটিভদের জনপ্রিয়তার তীব্র পতনের পরিপ্রেক্ষিতে সুনাক এটিকে একটি রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হিসাবেও বিবেচনা করেন। কারণ এই বিষয়টি টোরিদের পদমর্যাদা এবং ইতিহাসের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে অনুরণিত হয়।

অবৈধভাবে ইংল্যান্ডে আসা মানুষজনদের ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে’ সরিয়ে দেওয়া এবং আশ্রয় দাবি করা থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে গৃহীত একটি নতুন বিল বিশ্ব জুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে। ইউএনএইচসিআর উদ্বেগ প্রকাশ করে পরামর্শ দিয়েছে যে, এটি ‘অনিয়মিতভাবে আসা মানুষদের জন্য ইংল্যান্ডে আশ্রয়ের লভ্যতা কার্যকরভাবে বন্ধ করে দিচ্ছে’ এবং ‘তা রিফিউজি কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’ বিরোধী লেবার পার্টি বিলটিকে একটি ‘কন’ অর্থাৎ ‘অসুবিধা’ বলে বর্ণনা করেছে; শ্রমিক নেতা কিয়ার স্টারমার যুক্তি দেন যে, ‘সমস্যাটি মোকাবিলা করার সময় চ্যানেল পারাপার হওয়ার বিষয়টি কোনও মতেই একটি কার্যকরী পরিকল্পনা নয়।’

অবৈধভাবে ইংল্যান্ডে আসা মানুষজনদের ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে’ সরিয়ে দেওয়া এবং আশ্রয় দাবি করা থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে গৃহীত একটি নতুন বিল বিশ্ব জুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে।

তবুও সমালোচনার ঝড়ের মুখে সুনাক অবিচল থেকে ঘোষণা করেছেন যে তিনি ‘লড়াইয়ের জন্য’ প্রস্তুত এবং ‘এই দেশ (ইংল্যান্ড) ও আপনাদের সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এ দেশে কারা আসবেন, কোনও অপরাধী দল সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না।’ তিনি জানেন যে, এই নীতির মাধ্যমে তিনি আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের পটভূমি প্রস্তুত করেছেন এবং এমনটা করে তিনি এখনও পর্যন্ত ওপিনিয়ন পোল বা জনমতের ভিত্তিতে এগিয়ে থাকা লেবার পার্টিকে কনজারভেটিভদের দ্বারা নির্ধারিত শর্তে নির্বাচনী লড়াইয়ে লড়তে বাধ্য করবেন।

অর্থনৈতিকভাবেও এটি টোরিদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প। এমন একটি সময়ে যখন ব্রিটিশ অর্থনীতি এখনও ধুঁকছে, তখন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্তের জন্য জনগণের কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া সম্ভব, বিশেষ করে যেখানে স্বল্পদক্ষ কর্মীরা স্থানীয় ব্রিটিশদের কাছ থেকে চাকরি ছিনিয়ে নিচ্ছে। সুনক এ কথা স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি অত্যন্ত দক্ষ এবং প্রতিভাবান অভিবাসীদের আকৃষ্ট করতে চান, যেমনটা বেশ কিছুটা সূক্ষ্মভাবে হলেও অন্য উন্নত দেশগুলিতেও অনুসরণ করা হচ্ছে।

প্রথমত, ব্রেক্সিটের একটি বড় কারণ ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি থেকে আসা অভিবাসীদের স্থানীয় কর্মীদের কাছ থেকে চাকরি কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে ইংল্যান্ডের অসন্তোষ। প্রবৃত্তিগতভাবে একজন ব্রেক্সিটার সুনাক মূলত তাঁর নতুন অভিবাসন কর্মসূচি দিয়ে সেই নীতিটিকে যৌক্তিক উপসংহারে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

প্রস্তাবিত আইনটি হাউস অফ কমন্সে খুব বেশি বাধার সম্মুখীন হবে না, যেখানে কনজারভেটিভরা একটি বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিকারী। লেবার পার্টির বিরোধিতা সত্ত্বেও – যা প্রধানত ঘোষিত পদক্ষেপগুলির অকার্যকারিতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এবং তার নেপথ্যে থাকা মৌলিক ধারণার ভিত্তিতে নয় – সুনাক সরকার হাউসে কোনও গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হবে না। তবে হাউস অফ লর্ডসে চ্যালেঞ্জ এবং সংশোধনী থাকতেই পারে। তার পরেও আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে, বিশেষত যেহেতু হোম সেক্রেটারি পার্লামেন্টে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে অক্ষম হয়েছেন যে, পরিকল্পনাটি মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুয়েলা ব্রাভারম্যান এমনকি এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এটি বেআইনি বলে প্রমাণিত হওয়ার ‘৫০%-এরও এর বেশি সম্ভাবনা’ রয়েছে। সুনাক এই পরামর্শও দিয়েছেন যে, তিনি তাঁর অভিবাসন নীতিকে কার্যকর করে তোলার জন্য ইউরোপীয় কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর) থেকে সরে আসার কথাও বিবেচনা করছেন।

সুনাক বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করলেও এ ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন যে, নীতি গ্রহণের প্রেক্ষিতটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমস্যাটি এতটাই গুরুতর যে গত বছর ৪৫০০০ মানুষ তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে চ্যানেলটি অতিক্রম করেন।

এই অভিবাসন বিতর্কের পরিণতি রাজনৈতিক পরিসরের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি সম্প্রতি ব্রিটেনের অভিবাসন নীতির সমালোচনার কারণে সম্প্রচারকারীর সর্বোচ্চ বেতনভোগী উপস্থাপক গ্যারি লিনেকারকে বরখাস্ত করার পরে বিবিসি চাপের মধ্যে রয়েছে। লিনেকার বলেন ‘অধিকাংশ অরক্ষিত মানুষদের উপর আঘাত হানার লক্ষ্যে এটি এমন এক নিষ্ঠুর নীতি, যার ভাষা তিরিশের দশকে জার্মানির দ্বারা ব্যবহৃত নীতির চেয়ে আলাদা কিছু নয়।’

বেশ কয়েকজন উপস্থাপক তাঁর সমর্থনে বেরিয়ে যান এবং বিবিসি ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। সুনাক বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করলেও এ ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন যে, নীতি গ্রহণের প্রেক্ষিতটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমস্যাটি এতটাই গুরুতর যে গত বছর ৪৫০০০ মানুষ তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে চ্যানেলটি অতিক্রম করেন।

বিবিসি-তে সঙ্কট নতুন অভিবাসন নীতি দ্বারা সৃষ্ট উন্মাদনা এবং টোরিদের নিজের সমর্থনে কাজে লাগিয়ে এই কঠোর অবস্থান সুনাককে যে রাজনৈতিক সুবিধা করে দেবে, তাকেই দর্শায়।

২০২৩ সালের শুরুতে ছোট নৌকার মোকাবিলাকে তাঁর অগ্রাধিকারের অন্যতম হিসাবে ঘোষণা করে তিনি এখন সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছেন। রাজনৈতিকভাবে এটি সুনককে লেবার পার্টির তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে রাখলেও তাঁর অভিবাসন নীতি আসলেই ছোট নৌকাগুলিকে চ্যানেল অতিক্রম করা থেকে বাধা দেবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তা সত্ত্বেও সুনাক একটি বিশাল রাজনৈতিক ঝুঁকি নেওয়ার কথা স্থির করেছেন, যেটি নির্বাচনের সময় ফলপ্রসূ হবে বলে তিনি আশাবাদী।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে। 

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.