এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।
অবশেষে ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার ঋষি সুনাক সম্প্রতি আগাম সাধারণ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ভাগ্যের উপর ভরসা রেখে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যখন প্রবল বৃষ্টির মাঝে ঋষি সুনাক এবং তাঁর নতুন দলীয় সঙ্গীত ‘থিংস ক্যান অনলি গেট বেটার’ নিকটস্থ লাউডস্পিকার থেকে ভেসে আসছিল, তখন টোরি নেতা ‘প্রতিটি ভোটের জন্য লড়াই করা’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ঘোষণাটি কনজারভেটিভ পার্টির একাধিক পদকর্তাদেরও অবাক করে দিয়েছে। কিন্তু টোরিদের জন্য পরিস্থিতি কেবল খারাপ থেকে খারাপতরই হয়েছে এবং তাই সুনাকের এই পদক্ষেপটিকে চারপাশের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে কনজারভেটিভদের উদ্ধার করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা যেতে পারে।
অর্থনীতির প্রেক্ষিতে
ঋষি সুনাকের জন্য একমাত্র আশা হল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভাবনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগোনো। কারণ মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে এবং ইউকে-র অর্থনীতি জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ০.৬% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত দুই বছরের সর্বোচ্চ হার। তিনি ব্রিটিশ ভোটারদের এই বিষয়ে আশ্বস্ত করার জন্য নিজের ক্ষমতার উপর বাজি ধরছেন যে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুজ্জীবনের জন্য তিনিই আদর্শতম প্রার্থী। এই ভাবে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রচারে অর্থনীতি একটি মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে।
এই পদক্ষেপ ঋষি সুনাকের পক্ষে লাভজনক না ক্ষতিকর, তা ভবিষ্যৎই বলবে। কারণ লেবার পার্টি জীবনধারণের খরচ বৃদ্ধির উপর তাদের মনোযোগ আরও গভীর করতে চলেছে। লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার বলেছেন যে, এটি ‘পরিবর্তনের সময়’। তিনি টোরিদের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এক ‘বিশৃঙ্খলা’ বলে অভিযুক্ত করেছেন এবং এই আবেদন রেখেছেন যে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে তাঁর দলকে ভোট দেওয়াই একমাত্র বিকল্প হতে পারে।
সমীক্ষা ধারাবাহিক ভাবে লেবার পার্টিকেই এগিয়ে রেখেছে এবং এটি বিরোধী দলের জন্য এক বড় মুহূর্ত। কারণ ২০০৫ সাল থেকে তারা কখনও ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেনি।
সুনাকের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাস করতেন যে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সবুজ সঙ্কেত মিললেও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না-ও হতে পারে এবং নির্বাচনকে বিলম্বিত করা কনজারভেটিভদের জন্য এক সম্ভাব্য পরাজয়ই ডেকে আনবে, বিশেষ করে নির্বাচকদের সময়োচিত মতদানের আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে। সমীক্ষা ধারাবাহিক ভাবে লেবার পার্টিকেই এগিয়ে রেখেছে এবং এটি বিরোধী দলের জন্য এক বড় মুহূর্ত। কারণ ২০০৫ সাল থেকে তারা কখনও ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেনি। দেখে মনে হতে পারে যে, দলটি শাসনভার গ্রহণ করতে প্রস্তুত। কারণ স্টারমার লেবার পার্টিকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন, যা ২০০৭ সালে টনি ব্লেয়ারের বিদায়ের পর থেকে কোনও লেবার নেতাই করতে সমর্থ হননি।
কনজারভেটিভ পার্টির অভ্যন্তরীণ লড়াই
অন্য দিকে কনজারভেটিভ পার্টি নিজেদের দলের মধ্যেই মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে এবং এটি তার অতীত গৌরবের নিরিখে একটি মলিন চিত্রকেই তুলে ধরে, যখন প্রশাসনের দায়ভার সামলানোর জন্য কনজারভেটিভকেই আদর্শ দল বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। বরিস জনসন ২০১৯ সালে টোরিদের জন্য একটি বিশাল বিজয় অর্জন করা সত্ত্বেও কেলেঙ্কারির দরুন তিনি ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন, যা ঘন ঘন নেতৃত্ব পরিবর্তনের দিকে চালিত করে। কনজারভেটিভ পার্টি গত কয়েক বছর ধরে একটি লক্ষ্যণীয় পতনের সাক্ষী থেকেছে এবং রাজনৈতিক পরিসরে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন দ্বারা তা চিহ্নিত হয়েছে। দলটি বিশেষ করে ব্রেক্সিট নিয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের মুখোমুখি হয়েছে, যা দলের ভেতরের একতায় ফাটল এনেছে এবং নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছে। উপরন্তু, কোভিড-১৯ অতিমারি, অর্থনৈতিক নীতি এবং সামাজিক বৈষম্যের মতো সমস্যাগুলি পরিচালনার বিষয়ে জনগণের অসন্তোষ ভোটারদের সমর্থনে হ্রাস ঘটিয়েছে।
কনজারভেটিভ পার্টি গত কয়েক বছর ধরে একটি লক্ষ্যণীয় পতনের সাক্ষী থেকেছে এবং রাজনৈতিক পরিসরে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন দ্বারা তা চিহ্নিত হয়েছে।
সুনাকের জন্য রাজনৈতিক সফর বরাবর বন্ধুরই থেকেছে, যিনি টোরিদের টালমাটাল পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্য সত্ত্বেও তাঁকে নেতা হিসেবে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কনজারভেটিভদের পদকর্তারা সুনাককে এমন ব্যক্তি বলে মনে করেন না, যিনি দলকে বিজয়ের দিকে চালিত করতে পারেন। এবং তা সত্ত্বেও বিকল্পের অভাবের জন্য দল সুনাককে প্রতিস্থাপনের বিষয়েও তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কনজারভেটিভদের মতো নির্মম দলের জন্য – যারা নির্বাচনী সাফল্যের জন্য তাদের নেতৃত্ব বদলের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র পিছপা হয় না – এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া দুঃসহ হয়ে উঠছে। এই টানাপড়েন কনজারভেটিভদের আত্মবিশ্বাসের অভাবেও সুস্পষ্ট।
ভারতের জন্য নগণ্য পরিবর্তন
বিগত কয়েক বছর ধরে ব্রেক্সিটের ফলে উদ্ভূত বাহ্যিক বিষয়গুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের ব্যস্ততা সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক শক্তিশালীই হয়েছে। ব্রিটেন ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি তার ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অভিমুখী’ কৌশলে প্রতিফলিত হয়, যার লক্ষ্য হল একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সম্পৃক্ততার অংশ হিসাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গভীরতর করা। ভারত ও ব্রিটেন যৌথ সামরিক মহড়া, প্রতিরক্ষা আলোচনা এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। সাইবার নিরাপত্তায় সহযোগিতা অগ্রাধিকার পেয়েছে, উভয় দেশ তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এবং সাইবার হুমকি মোকাবিলায় সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি ভাগ করে নিয়েছে। উভয় দেশই সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করে নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উভয় দিকে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রবাহিত হয়েছে। ব্রিটেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে পরিষেবা, প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে। এর বিপরীতে ভারতীয় সংস্থাগুলি ব্রিটেনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে, বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধ এবং স্বয়ংচালিত ক্ষেত্রে। একটি সর্বাঙ্গীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনার প্রচেষ্টা অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অংশীদারিত্ব, ছাত্র বিনিময় কর্মসূচি এবং সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষাগত সম্পর্কও জোরদার করা হয়েছে।
ভারত ও ব্রিটেন যৌথ সামরিক মহড়া, প্রতিরক্ষা আলোচনা এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে।
ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততার মধ্যে একটি নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা লক্ষ করা গিয়েছে এবং যা আনন্দদায়ক তা হল এই যে, ডেভিড ক্যামেরনের সময় থেকে দেশটির ভারত নীতি সঠিক পথে চালিত হওয়ার কৃতিত্ব কনজারভেটিভদেরই। স্টারমারের অধীনে লেবার পার্টিও ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটিশ ভোটাররা যে দলকেই পছন্দ করুন না কেন, ভারত ও ব্রিটেনের সম্পর্ক বিকশিতই হতে থাকবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.