Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 11, 2024 Updated 0 Hours ago
ঋষি সুনাকের বড় সাহসী চাল — নাকি একটি মরিয়া পদক্ষেপ?

নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মন্ত্রিসভায় রদবদল থেকে ব্রিটিশ রাজনীতি আবারও মোড় নিয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব পদ থেকে সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানকে বরখাস্ত করা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে বিদেশসচিব হিসেবে ফিরিয়ে আনা পার্টির অভ্যন্তরে এবং বাইরে সুনাকের নিজের নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি দেখা যেতে পারে একটি নাটকীয় পদক্ষেপ হিসাবে, যা ২০২৪-এর নির্বাচনের আগে উদীয়মান রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার রূপরেখা এঁকে দেবে। আপনি যে দিকেই তাকান না কেন, স্পটলাইট এখন সুনাকের দিকে ফিরে এসেছে, কারণ তিনি যে সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছেন তার পরিণতি নিয়ে তাঁকেই ভাবতে হবে।

প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব ব্র্যাভারম্যান ইতিমধ্যেই সুনাককে একটি চিঠি দিয়ে বলেছেন যে তাঁর ‘‌পরিকল্পনা কাজ করছে না’‌। এর পাশাপাশি তিনি ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে আসা ছোট নৌকাগুলিকে থামানোর জন্য ‘‌যা কিছু প্রয়োজন করতে হবে’‌ বলে নিজের প্রতিশ্রুতি সুনাক ভঙ্গ করছেন বলে অভিযোগ এনেছেন। সুনাককে জনসমক্ষে লক্ষ্যবস্তু করে তিনি লিখেছেন, ‘‌‘‌একজনকে সৎ হতে হবে: আপনার পরিকল্পনা কাজ করছে না, আমরা রেকর্ড নির্বাচনী পরাজয় সহ্য করেছি, আপনার রিসেট ব্যর্থ হয়েছে এবং আমাদের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আপনাকে জরুরি তৎপরতায় পথ পরিবর্তন করতে হবে।’‌’‌

ব্র্যাভারম্যান সব সময়ই একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদ। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে দক্ষিণপন্থী অবস্থানে রয়েছেন, এবং গত কয়েক বছরে একটি প্রধান কণ্ঠস্বর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। গোপন নথি শেয়ার করার কথা স্বীকার করার পর তাঁকে অতীতে লিজ ট্রাস মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রসচিব পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। এইবার প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ভাষা নরম করতে বললেও ‘টাইমস’ পত্রিকার একটি নিবন্ধে বিক্ষোভ মোকাবিলায় মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের  অভিযোগ করার পর তিনি চাকরি হারান। সুনাক, যাঁকে আগেও তাঁর লাগাম টানতে হয়েছিল, সম্ভবত দেখেছিলেন যে তাঁর নেতৃত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, এবং তাই ব্র্যাভারম্যানকে যেতে হল।

তিনি সুনাকের পথে কাঁটা হয়েই থাকবেন। তাঁর চিঠিতে ব্র্যাভারম্যান বলেছেন যে তিনি সুনাক সরকারে সুস্পষ্ট শর্তাবলিসহ যোগদান করেছিলেন, যার মধ্যে আইনি অভিবাসন কমানোর আশ্বাস এবং জৈবিক যৌনতা রক্ষা ও একক লিঙ্গের স্থানগুলিকে সুরক্ষিত করার বিষয়ে স্কুলগুলির কাছে নির্দেশিকা পাঠানো অন্তর্ভুক্ত ছিল। এগুলি হল রক্ষণশীল অধিকারের মূল অ্যাজেন্ডা, এবং তিনি স্পষ্টতই তাদের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছেন। সুনাক এটা ভেবে থাকলে ভুল করেছেন যে ব্র্যাভারম্যানকে বরখাস্ত করায় তাঁর সমস্যা কমবে।

যাই হোক, সুনাকের ব্র্যাভারম্যানকে ছেড়ে দেওয়া এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে বিদেশসচিব হিসাবে আনার সিদ্ধান্তও টোরিদের রাজনৈতিক অবস্থান নির্দিষ্ট করার চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। তিনি যা তুলে ধরতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে তা হল আরও মধ্যপন্থী টোরি পার্টির আগামী পুনর্নির্বাচনে আরও ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যামেরনই টোরিদের কেন্দ্রমঞ্চে নিয়ে আসতে এবং ব্লেয়ারপন্থী লেবার পার্টির বিরুদ্ধে অনেক বছর হারের পরে দলকে বিজয়ী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর প্রত্যাবর্তন অবশ্য ততটা ঐতিহাসিক নয় যতটা মনে হবে, কারণ অন্যান্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও আছেন যাঁরা প্রধানমন্ত্রিত্বের পর অন্য পদে ফিরে এসেছিলেন, যেমন অ্যালেক ডগলাস–হোম ও আর্থার বেলফোর। এই বারের ঘটনাটি অবশ্যই নাটকীয়, কারণ হাউস অফ লর্ডসের মাধ্যমে ক্যামেরন এত বছরের মধ্যে চতুর্থ বিদেশসচিব হবেন এমন কোনও ইঙ্গিত কারও কাছে ছিল না।

রাজনৈতিকভাবে এটি কনজারভেটিভ পার্টি এবং বৃহত্তর ব্রিটিশ রাজনীতি উভয়  ক্ষেত্রেই তরঙ্গ সৃষ্টি করছে। একজন টোরি ব্যাকবেঞ্চার ইতিমধ্যেই সুনাকের প্রতি অনাস্থার একটি চিঠি জমা দিয়েছেন, যদিও ৫৩ জন পার্লামেন্ট-সদস্য এই ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করলে তবেই তাঁর নেতৃত্বকে হুমকি দেওয়া সম্ভব হবে। বিরোধী দলগুলি অবশ্য ক্যামেরনের প্রত্যাবর্তনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, এবং প্রশ্ন তুলেছে যে সুনাক একটি নতুন সূচনার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর পুরনো মুখ ফিরিয়ে এনে অতীতকে ভবিষ্যৎ করার প্রয়াসী হয়েছেন কি না, বিশেষ করে যখন ক্যামেরনের নাম সম্প্রতি একটি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল।

এই সত্যটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে ক্যামেরন কূটনীতির জগতে গুরুত্ব পাবেন, কারণ তিনি একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। যখন ব্রিটিশ বিদেশনীতি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেই সময় তিনি তাঁর উপস্থিতি দিয়ে জাহাজটিকে কিছুটা স্থিতিশীল করতে পারেন। তাঁর বৃহত্তর বিদেশনীতির উত্তরাধিকার অবশ্য জটিল। তাঁর অধীনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার ফলে ব্রেক্সিট হয়। যদিও তিনি ব্রিটেনকে ইইউ–এর একটি অংশ থাকার জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন, তবুও গণভোটের আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্তের পরিণতি এখনও ব্রিটেন ও ইউরোপে অনুভূত হচ্ছে। তিনি ব্রিটেন ও চিনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের একটি ‘‌সুবর্ণ যুগ’‌ কল্পনা করার চেষ্টা করেছিলেন, যা ছিল এমন একটি নীতি যা অত্যন্ত সমস্যাযুক্ত ছিল এবং এখন নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যেও লিবিয়া থেকে সিরিয়া পর্যন্ত তাঁর সিদ্ধান্তগুলি বিতর্কিত।

ভারতের ক্ষেত্রে ক্যামেরন অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রধানমন্ত্রীদের একজন ছিলেন, কারণ তিনি শুধুমাত্র দক্ষিণ এশীয় হিসাবে নয়, বরং ভারতকে একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসাবে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে উপমহাদেশের প্রতি ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ দৃষ্টিভঙ্গিকে হ্রাস করার জন্য একটি গুরুতর প্রচেষ্টা করেছিলেন। ২০১০ সালে ভারত সফরের সময় তিনি প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে ‘‌সন্ত্রাস রপ্তানি’‌র বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন, ভারতে হোক বা অন্য কোথাও, এবং বলেছিলেন যে দেশটিকে ‘‌উভয় দিকে ফয়দা তোলার’‌ অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। ভারত–পাকিস্তান বিরোধে তাঁর দেশের জন্য কোনও ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করে তিনি ভারতের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের প্রস্তাব করেছিলেন, যা ভারত–ব্রিটেন সম্পর্কে একটি নতুন গতির সূচনা করে যা এখনও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

যদিও কনজারভেটিভ পার্টির আধুনিকীকরণের চালক হিসেবে ক্যামেরন সুনাকের জন্য একটি ভাল বাজি, তাঁর দলের মধ্যে চ্যুতিরেখাগুলি স্পষ্টতর হচ্ছে।

ব্র্যাভারম্যানের প্রস্থান এবং ক্যামেরনের প্রবেশে টোরিদের মধ্যে গতিশীলতার পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। সুনাকের সামনে চলার জন্য একটি কঠিন, দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ রয়েছে।



এই ভাষ্যটি প্রথম এনডিটিভি তে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.