Author : Harsh V. Pant

Published on Aug 23, 2021 Updated 0 Hours ago

আফগানিস্তানে মানবিকতার বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ উপেক্ষা করা হলেও তালিবান জমানা ফিরে আসার কৌশলগত পরিণতির সঙ্গে কিন্তু পশ্চিমী দুনিয়াকে দীর্ঘদিন যুঝতে হবে।

তালিবানের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে পড়ল উদারনৈতিক পশ্চিম

এখন আফগানিস্তানে পরাবাস্তবতার সময়। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরনো ব্যবস্থা  হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল, এবং গত দুই দশকে যা কিছু গড়ে উঠেছিল তার ধ্বংসস্তূপ পড়ে রইল। নতুন ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি;‌ কিন্তু আফগান রাষ্ট্র এবং ওই অঞ্চল সম্পর্কে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছে তার ভবিষ্যৎ রূপরেখা কী দাঁড়াবে। যখন তালিবান তার লক্ষ্যের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, সেই সময়েও পশ্চিমী গোয়েন্দাবাহিনী ভবিষ্যদ্বাণী করছিল কাবুল দখল করতে তালিবানের ৩০ দিন সময় লাগবে। কিন্তু তালিবান যোদ্ধাদের কাবুলের প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দরজায় পৌঁছতে ৩০ ঘণ্টারও কম সময় লাগল। তার আগেই অবশ্য প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমেরিকা অবশ্যই কঠিন পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করছিল;‌ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমেরিকাকে আবার সেই সায়গনের দিনগুলোতেই ফিরে যেতে হল। সেই কূটনীতিকদের হেলিকপ্টারে করে তুলে নিয়ে আসা, আর সমস্ত সংবেদনশীল নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলা।

এই সবের পরেও মার্কিন নীতি নির্ধারকেরা এখনও বলে চলেছেন যে তাঁদের আফগান মিশন নাকি ‘‌সফল’‌ হয়েছে, আর একরোখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তানের এই গোলমাল তাঁকে ‘আমূল নাড়া দিয়েছে’ বললেও সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়েননি।

এই গত মাস পর্যন্ত ‘তালিবানরা খুব দ্রুত আফগানিস্তান জয় করে নেবে’ জাতীয় বক্তব্যের বিরোধিতা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছিলেন, ‘‌তালিবানের পুরো দেশ দখল করে নেওয়ার সম্ভাব্যতা খুব কম।’‌ আর তার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পশ্চিমী দেশগুলোকে নিজেদের নাগরিক ও কূটনৈতিক কর্মীদের উদ্ধার করে আনার জন্য হুড়োহুড়ি করতে হচ্ছে। একই  সঙ্গে মেনে নিতে হয়েছে যে আফগানিস্তানে একটা নতুন সরকার হবে। যে ব্রিটিশ সরকার কিছুদিন আগে পর্যন্ত তালিবানকে ‘‌মানবাধিকার’‌ রক্ষার জন্য আবেদন জানাচ্ছিল, তারা এখন বাস্তব পরিস্থিতিকে স্বীকার করে নিয়ে পশ্চিমী দুনিয়াকে বলছে আফগানিস্তান যাতে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর না হয়ে ওঠে তা নিশ্চিত করতে একযোগে উদ্যোগী হতে হবে।

গত দুই দশক ধরে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলার পরেও এতে মোটেই সংশয় নেই যে পশ্চিমী দুনিয়া খুব দ্রুত তালিবান জমানার সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কঠিন টানাপড়েনের মধ্যে যেমনটা সাধারণত হয়ে থাকে, সে ভাবেই বাস্তববাদ শেষ হাসিটা হাসবে, আর তার মূল্য চোকাবে গত ২০ বছরের সব তাৎপর্যপূর্ণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রাপ্তির। যে আফগানরা এই সব আদর্শে বিশ্বাস করেছিলেন এবং তার জন্য কাজ করেছিলেন, এমনকি জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছিলেন, তাঁরা এখন সম্পূর্ণ অসহায়, কারণ যাঁরা তাঁদের রক্ষা করবেন বলে মনে হচ্ছিল তাঁরা সবাই পালিয়ে গিয়েছেন। তালিবানদের সঙ্গে সহাবস্থানের পথ বার করতে বলি দেওয়া হয়েছে মহিলা ও সংখ্যালঘুদের কষ্টার্জিত অধিকার এবং গণতন্ত্র।

যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে তার মধ্যেও কিছুটা মর্যাদা বাঁচিয়ে রাখার জন্য পশ্চিমী দুনিয়া চেষ্টা করবে, এবং বিশ্বকে বলবে এখনও আফগানিস্তানে এক ধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়া সম্ভব।

কিন্তু একটা সংগঠন, যারা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করে এই জয় পেয়েছে, তাদের কাছে চরমপন্থা থেকে সরে আসার জন্য আলোচনা নেহাতই সাময়িক একটা বিষয়। যে সমস্ত জায়গা তালিবান ইতিমধ্যেই দখল করে নিয়েছে, সেখানে তারা ফিরে গিয়েছে মহিলাদের এবং ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সেই পুরনো প্রতিক্রিয়াশীল কর্মসূচিতে, যা দেখে ১৯৯৬ থেকে ২০০১–র তালিবান জমানায় পুরো দুনিয়া স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। কমবয়সী মেয়েদের তালিবান যোদ্ধাদের বিয়ে করতে বাধ্য করা থেকে শুরু করে মহিলাদের বিরুদ্ধে নানা দমনমূলক নির্দেশ জারি করা, সেনা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বিচারে হত্যা থেকে শুরু করে গানবাজনা ও টেলিভিশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি যা কিছু ঘটেছিল, তার থেকে তালিবান ২.‌০ জমানায় মোটেই উন্নততর কিছু প্রত্যাশিত নয়।

কিন্তু পশ্চিমী সরকারগুলো নিজেদের দেশের মানুষকে বলবে যে তালিবানের সঙ্গে, তা তারা উন্নততর হোক বা না হোক, এক ধরনের বোঝাপড়া প্রয়োজন আফগান মানুষের বৃহত্তর ভালর জন্য। এর অর্থ দাঁড়াবে আফগানদের তাদের নিজেদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেওয়া।

আফগানিস্তানে মানবিকতার বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ উপেক্ষা করা হলেও তালিবান জমানা ফিরে আসার কৌশলগত পরিণতির সঙ্গে কিন্তু পশ্চিমী দুনিয়াকে দীর্ঘদিন যুঝতে হবে। বলা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ হল চিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে পুরোপুরি নজর দেওয়া। তা যদি ঠিক হয়, তা হলে এই আফগান বিপর্যয়ের পর পশ্চিমের দেওয়া কোনও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির আর কোনও দাম থাকবে না। আর চিনের উত্থানের মোকাবিলা করার জন্য পশ্চিমী দুনিয়া তার

সহযোগীদের নিয়ে যে জোট গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, তাতে ভবিষ্যতে আরও ফাটল দেখা দেবে।


প্রবন্ধের ইংরেজী সংস্করণ আগে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় প্রকাশিত (১৭ অগাস্ট ২০২১)।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.