Author : Anirban Sarma

Published on Jan 01, 2022 Updated 0 Hours ago

শিক্ষার উপকরণ হাতের নাগালে পেতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার অতিমারি চলাকালীন আকাশ ছুঁয়েছে। সকলেই যাতে এগুলোর সুবিধা পেতে পারেন তা যেমন আবশ্যক, তেমনই প্রকাশকদের অধিকারও রক্ষা করতে হবে।

প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতির উত্থান এবং শিক্ষার উপকরণ পাওয়ার সুযোগ

দেড় বছরেরও বেশি সময়ের পরে ভারতের সর্বত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবারও পড়ুয়াদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিতে শুরু করেছে। পড়ুয়ারা ধীরে ধীরে ক্লাসে বসে লেখাপড়া করার চিরাচরিত পদ্ধতিতে ফিরে আসছে, এবং প্রকৃত লাইব্রেরি ও শিক্ষার উপকরণ ব্যবহার করতে পারছে।

সারা বিশ্বে, এবং সেই সঙ্গে ভারতে, কোভিড অতিমারি এমন একটি প্রবণতা ব্যাপক ভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে যা আগে ঢিমেতালে এগোচ্ছিল:‌ তা হল শিক্ষার বিষয়বস্তুর নাগাল পেতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার। এখন সুস্পষ্ট আভাস রয়েছে যে এই প্রবণতা অপরিবর্তনীয় হয়ে গিয়েছে। একটি নতুন সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে ১–১২ শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইন শিক্ষার বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ছয় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে যাবে ১৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজার, আর উচ্চশিক্ষা ওই সময়ের মধ্যে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে যেতে পারে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজার।

ভারতে প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতির উত্থান অনলাইন শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের একটি মূল চালিকাশক্তি। অ্যাপ্লিকোর সিইও অ্যালেক্স মোয়াজেদ ‘‌প্ল্যাটফর্ম’‌কে বর্ণনা করেছেন এমন এক ‘‌ব্যবসায়িক মডেল’‌ হিসেবে যা দুই বা ততোধিক পরস্পরনির্ভর গোষ্ঠীর (‌সাধারণত উৎপাদক এবং ভোক্তার)‌ মধ্যে বিনিময়ের সুবিধা তৈরি করে দিয়ে মূল্য সৃষ্টি করে। এই বিনিময় ঘটানোর জন্য প্ল্যাটফর্মগুলো তৈরি করে ব্যবহারকারী এবং সম্পদের বৃহৎ পরিবর্ধনযোগ্য নেটওয়র্ক, যা চাহিদামতো ব্যবহার করা যেতে পারে। প্ল্যাটফর্মগুলো এক গ্রাহকমণ্ডলী ও একটি বাজার তৈরি করে তাদের নেটওয়র্ক–প্রভাবের মাধ্যমে, এবং সেই নেটওয়র্কই ব্যবহারকারীদের সুযোগ করে দেয় পারস্পরিক যোগাযোগ ও লেনদেন করার৷ এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ইন্টারনেটের নেটওয়র্ক–প্রভাব কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত দ্রুত হারে মূল্য সৃষ্টি করতে থাকে।

ভারতের ১–১২ শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইন শিক্ষার বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ছয় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে যাবে ১৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজার, আর উচ্চ শিক্ষা ওই সময়ের মধ্যে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে যেতে পারে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলারের বাজার।

অতএব, অনলাইন শিক্ষার ক্ষেত্রে, একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে এমন একটি নেটওয়র্ক যা একদিকে একত্র করে শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ের প্রকাশক ও বিষয়বস্তু প্রদানকারীদের, এবং অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের। আর এ ভাবেই তাদের মধ্যে লেনদেন সহজতর হয়। প্ল্যাটফর্মে লেনদেন, প্রকাশক, এবং শিক্ষার্থীদের সংখ্যা যত বাড়তে থাকে প্ল্যাটফর্মের মূল্যও তত বাড়তে থাকে।

উন্মুক্ত ও বদ্ধ শিক্ষাগত প্ল্যাটফর্ম

উন্মুক্ত ও বদ্ধ শিক্ষাগত প্ল্যাটফর্মের মধ্যে পার্থক্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তুর নাগাল পাওয়া ও প্রকাশকদের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের উপর।

উন্মুক্ত শিক্ষাগত প্ল্যাটফর্ম বলতে বোঝায় সেইগুলোকে যাদের বিষয়বস্তু অবাধে উপলব্ধ এবং যেখানে প্রকাশক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি বিষয়বস্তু–প্রদানকারী হিসেবে পরীক্ষিত যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের একাডেমিক পণ্য রাখতে পারে। উল্টোদিকে বদ্ধ শিক্ষাগত প্ল্যাটফর্মগুলি মোটের উপর বাণিজ্যিক ভাবে চালিত হয়:‌ তাদের বিষয়বস্তুর নাগাল পাওয়া যায় টাকা দিলে। কোনও বাণিজ্যিক প্রকাশক বা এড-টেক সংস্থা এই ধরনের প্ল্যাটফর্মের মালিক হতে পারে, এবং একাধিক প্রকাশক তাদের বিষয়বস্তু বাণিজ্যিক ভাবে উপলব্ধ করার জন্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে।

ভারতে অতিমারি এই উভয় ধরনের প্ল্যাটফর্মের শিক্ষাগত বিষয়বস্তুর চাহিদার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বিশাল উন্মুক্ত অনলাইন পড়াশোনার (এমওওসিএস) জন্য সরকারের জাতীয় প্ল্যাটফর্ম ‘‌স্বয়ম’‌–এর ট্র্যাফিক দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে কোভিড ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে। একই ভাবে, আরও একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম যা ৫ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি শিক্ষাগত উপকরণ বিনামূল্যে দেয়, সেই ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরি অফ ইন্ডিয়া (এনডিএলআই)–র ব্যবহারেও ২০২০–র মার্চ থেকে অভূতপূর্ব ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছে। আর এই বছরের অক্টোবরে এনডিএলআই–এর বিষয়বস্তু দেখা বা ডাউনলোড করার সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। বদ্ধ প্ল্যাটফর্মগুলোরও বিশাল বৃদ্ধি হয়েছে। এড–টেক প্ল্যাটফর্ম আপগ্র‌্যাড-এর আয় ২০২০ সালে বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি৷ ভারতের বৃহত্তম এড-টেক কোম্পানি বাইজু’‌স জানিয়েছে, অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ কোটি নতুন ব্যবহারকারী তাদের প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছেন৷

আরও একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম যা ৫ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি শিক্ষাগত বিষয়বস্তু বিনামূল্যে দেয়, সেই ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরি অফ ইন্ডিয়া (এনডিএলআই)–র ব্যবহারেও ২০২০–র মার্চ থেকে অভূতপূর্ব ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছে।

স্পষ্টতই, সাবস্ক্রাইব করা বিষয়বস্তুর জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাজার রয়েছে, এবং কিছু মানুষের জন্য মূল্য সব সময় প্রতিবন্ধক নয়। কিন্তু যদি ভাল মানের শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু আরও বৃহত্তর ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়, এবং একই সঙ্গে প্রকাশকদের অধিকার ও উৎসাহ সুরক্ষিত রাখতে হয়, তা হলে উন্মুক্ত বিষয়বস্তু ও টাকার বিনিময়ে প্রাপ্ত উপকরণের মধ্যে আরও সংবেদনশীল ভারসাম্য খুঁজে পেতে হবে।

ভারসাম্যের খোঁজ

ইতিহাসবিদ এবং লেখক টিমোথি গার্টন অ্যাশ বলেছেন, ‘আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুতর বিভিন্ন সংঘাতের মধ্যে একটি হল উন্মুক্ত বিষয়বস্তুর জন্য আন্দোলনের সঙ্গে কপিরাইট সহ বৌদ্ধিক সম্পত্তি রক্ষার সংঘাত।’‌[১]

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মার্কিন ও ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উন্মুক্ত বিষয়বস্তুর জন্য (‌ওপ্‌ন অ্যাক্সেস বা ওএ)‌ আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল পাণ্ডিত্যপূর্ণ জার্নালগুলির নেওয়া অত্যন্ত চড়া হারের গ্রাহক চাঁদার প্রতিক্রিয়া হিসাবে। তারপর এই আন্দোলন বিশ্বজুড়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেছে, যার ফলে ওএ এবং উন্মুক্ত শিক্ষাগত সম্পদের (ওইআর)‌ ব্যবহার যথেষ্ট প্রসারলাভ করেছে। ওইআর সংজ্ঞায়িত হয়েছে ‘শিক্ষণ, শেখা ও গবেষণা সম্পদ’‌ হিসেবে যা ‘থাকে উন্মুক্ত ক্ষেত্রে (‌পাবলিক ডোমেন)‌ বা প্রকাশিত হয় এমন বৌদ্ধিক সম্পত্তি লাইসেন্সের আওতায় যা সেগুলিকে বিনামূল্যে ব্যবহার এবং অন্য উদ্দেশ্যে পুনরায় ব্যবহার করার অনুমতি দেয়।’‌ আজকাল ওইআর প্রায়শই ‘ক্রিয়েটিভ কমন্স’‌ (‌সকলের জন্য অবাধ সৃষ্টিশীল কাজ)‌ হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয় যা নির্ধারণ করে দেয় একটি শিক্ষাগত সম্পদ ব্যবহার, পুনর্ব্যবহার, প্রয়োজন মতো বদলে নেওয়া বা শেয়ার করা যাবে কি না।

ওএ-এর সমর্থকেরা জোর দিয়ে বলেন যে জ্ঞান অবশ্যই উম্মুক্ত হতে হবে, আর বাণিজ্যিক প্রকাশকরা মেধাসম্পত্তি রক্ষা ও তার মুদ্রাকরণের প্রয়োজনের উপর জোর দেয়।

সব মিলিয়ে উন্মুক্ত বিষয়বস্তুর এবং যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে তা পাওয়া যায় তার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা প্রকাশকদের অস্থির করে তুলছে, কারণ প্রকাশকেরা এখনও চিরাচরিত কপিরাইট আইনের ‘সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত’ ব্যবস্থাতেই নোঙর করে বসে আছেন। এর ফলে উন্মুক্ত বনাম ক্রয়যোগ্য শিক্ষাগত বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্কের তীব্র মেরুকরণ ঘটছে। ওএ-এর সমর্থকেরা জোর দিয়ে বলেন যে জ্ঞান অবশ্যই উন্মুক্ত হতে হবে, আর বাণিজ্যিক প্রকাশকরা মেধাসম্পত্তি রক্ষা ও তার মুদ্রাকরণের প্রয়োজনের উপর জোর দেয়। এখন যা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা হল একটি মধ্য পন্থা খুঁজে বার করতে হবে। যেমন গার্টন অ্যাশ বলেছেন, ‘এটি বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের মুক্তিসূচক বিস্তারের সঙ্গে পুরনো প্রতিক্রিয়াশীল সম্পত্তির অধিকারের একটি সাধারণ যুদ্ধ নয়। জ্ঞানের প্রসার ও সর্বাধিকীকরণের (গুণগত ভাবে এবং পরিমাণে) জন্যই প্রয়োজন সাবধানে নতুন চৌহদ্দিতে কঠোর ভাবে সীমিত ও একই সঙ্গে কার্যকর ভাবে প্রযুক্ত বৌদ্ধিক সম্পত্তির সুরক্ষা।’[২]

ভারতে ভারসাম্যের মডেলের সন্ধানে

প্রকাশকদের বাণিজ্যিক স্বার্থের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের লাভের ভারসাম্য বজায় রাখে এমন সব অ্যাক্সেস মডেলের খোঁজ কোভিড আসার আগেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু অতিমারি এই সন্ধানকে একটি নতুন স্তরের আবশ্যকতার মাত্রা দিয়েছে। ভারতে নিম্নলিখিত চারটি পন্থা প্রয়োগ বা অন্বেষণ করা হচ্ছে, তবে দেশ এখনও কোনও নির্দিষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ মডেল গ্রহণ করে তার বিস্তৃত ভিত্তি তৈরির আগে জল পরীক্ষা করছে বলেই মনে হচ্ছে।

বিনামূল্যের বিষয়বস্তু সংক্রান্ত উদ্যোগ: ২০২০ সালের গোড়ার দিকে ভারতে এবং অন্যত্র বেশ কিছু প্রকাশক তাঁদের আগেকার ক্রয়যোগ্য বিষয়বস্তু বাড়িতে শিক্ষাদান বা শেখার জন্য এবং কোভিড গবেষণার জন্য বিনামূল্যে উপলব্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু বিনামূল্যে বিষয়বস্তু বিতরণ দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়, এবং সেই কারণেই এই সম্পদের অর্থায়নের কিছু উপায় তৈরি করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, অতিমারি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশকেরা বিনামূল্যের বিষয়বস্তু কমাতে শুরু করেছেন।

এক দেশ, অভিন্ন সাবস্ক্রিপশন:‌ সাহসী ‘এক দেশ, অভিন্ন সাবস্ক্রিপশন’(ওএনওএস) প্রকল্পটি এখন ভারত সরকারের বিবেচনাধীন। এতে প্রকাশক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই লাভ হতে পারে। ওএনওএস-এর জন্য সরকারকে দরাদরি করে পড়াশোনার বই ও জার্নালের প্রকাশকদের একটি কনসোর্টিয়ামের থেকে একটি সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে, এবং তারপরে সেই শিক্ষাগত সম্পদ সমস্ত নাগরিকের ও সরকারের অর্থপুষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উপলব্ধ হবে।

উল্টোদিকে গ্রিন ওএ–র ক্ষেত্রে কোনও এপিসি থাকে না, তবে এখানে লেখকদের তাঁদের অ্যাকাডেমিক পেপারের একটি প্রাক-মুদ্রণ সংস্করণ কোনও উন্মুক্ত অনলাইন ভান্ডারে পোস্ট করতে হয়, এবং কখনও কখনও তা করতে হয় লেখা প্রকাশিত হওয়ার ঠিক পরেপরেই।

জাতীয় লাইসেন্সিং: কিছুটা ওএনওএস-এর মতো হলেও জাতীয় লাইসেন্সিং আরও সীমিত পরিসরের। এটি শিক্ষা মন্ত্রক ও এনডিএলআই–এর তৈরি করা একটি সৃজনশীল ব্যবস্থা। বিভিন্ন প্রকাশক ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিকে মন্ত্রক বিশাল পরিমাণে সাবস্ক্রিপশন দিয়ে দেওয়ায় তারপর সেগুলির বিষয়বস্তু শুধু এনডিএলআই প্ল্যাটফর্মেই বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। কেউ যদি এগুলোর মূল উৎস যে সব প্ল্যাটফর্ম সেখান থেকে সরাসরি এগুলো পেতে চান, তবে তার জন্য টাকা দিতে হবে বা সাবস্ক্রাইব করতে হবে৷ পুরো দেশের জন্য লাইসেন্সকৃত বিষয়বস্তু পাওয়া গেলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।

গোল্ড অ্যান্ড গ্রিন উন্মুক্ত প্রাপ্যতা:‌ গোল্ড ওপ্‌ন অ্যাক্সেস বলতে বোঝায় লেখকেরা বা তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক অর্থদাতারা জার্নালগুলিকে আর্টিকল প্রসেসিং চার্জ (এপিসি) দেবেন, এবং তারপর তাঁদের নিবন্ধগুলি উন্মুক্ত ভিত্তিতে উপলব্ধ হবে। এই পদ্ধতিটি উন্নত দেশগুলিতে বেশ সাধারণ একটা ঘটনা হলেও ভারতে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি, কারণ এপিসি বেশ চড়া হওয়ায় তা প্রায়শই লেখক বা তাঁদের অর্থদাতাদের নাগালের বাইরে থাকে। উল্টোদিকে গ্রিন ওএ–র ক্ষেত্রে কোনও এপিসি থাকে না, তবে সেখানে লেখকদের তাঁদের অ্যাকাডেমিক পেপারের একটি প্রাক-মুদ্রণ সংস্করণ কোনও উন্মুক্ত অনলাইন ভান্ডারে পোস্ট করতে হয়, এবং কখনও কখনও তা করতে হয় লেখা প্রকাশিত হওয়ার ঠিক পরেপরেই। একটি প্রকাশনা ব্যবস্থা হিসাবে ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রিন ওপ্‌ন অ্যাক্সেস গ্রহণ করে কিনা তা দেখতে হবে।

শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবা

লকডাউনের শীর্ষ সময়ে চালু করা রূপান্তরকামী জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি) ২০২০ ভবিষ্যতের জন্য ভারতের শিক্ষাকে নতুন জায়গায় নিয়ে এসেছে।। এনইপি–তে বলা হয়েছে যে ‘সকলের জন্য ভাল মানের শিক্ষার ব্যবস্থার পথে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং আইসিটি-ভিত্তিক শিক্ষামূলক উদ্যোগগুলিকে অবশ্যই সব থেকে ভাল ভাবে ব্যবহার করা ও প্রসারিত করা উচিত।’‌ প্ল্যাটফর্মগুলি সব থেকে ভাল ভাবে ব্যবহার করা তখনই সম্ভব হয় যখন সেখানে সহজে প্রাপ্য বিষয়বস্তুর নির্দিষ্ট আয়তনের একটি ভান্ডার গড়ে ওঠে এবং নতুন বিষয়বস্তুর নিয়মিত প্রবাহ থাকে। এনইপি এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য বিষয়বস্তু–প্রদানকারীদের সক্ষমতা সৃষ্টির পথ তৈরি করতে আগ্রহী, যাতে তাঁরা ‘ব্যবহারকারী–বান্ধব উচ্চমানের বিষয়বস্তু’‌ সরবরাহ করতে পারেন।

এখন ক্রমেই বেশি সংখ্যায় পড়ুয়ারা প্ল্যাটফর্মগুলোয় আসছেন, এবং প্রকাশকেরা বিষয়বস্তুর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নিজেদের প্রোগ্রামগুলোকে আরও বিস্তৃত করছেন। আমাদের কিন্তু এই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে যে শিক্ষার্থীরা সর্বত্র যেন তাঁদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত সম্পদ ব্যবহার করতে পারেন, এবং সেই সঙ্গেই যে প্রকাশকেরা তাঁদের জন্য এই সম্পদ তৈরি করেন তাঁরাও যেন উপকৃত হন। সকলের নাগালের মধ্যে বিষয়বস্তু এনে দেওয়ার বিষয়টি যেন প্রকাশকদের শ্বাসরুদ্ধ না করে; আবার মানসম্পন্ন অ্যাকাডেমিক বিষয়বস্তুও যেন শিক্ষার্থীদের সামর্থ্যের বাইরে না থেকে যায়। শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হলে এই দুইয়ের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।


[১] টিমোথি গার্টন অ্যাশ, ফ্রি স্পিচ: টেন প্রিন্সিপলস ফর আ কানেক্টেড ওয়র্ল্ড (লন্ডন: অ্যাটলান্টিক বুকস, ২০১৬), পৃ ১৬৪।
[২] গার্টন অ্যাশ, ফ্রি স্পিচ, পৃ ১৬৭।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.