Author : Kabir Taneja

Published on Feb 04, 2022 Updated 0 Hours ago

আফগানিস্তান সঙ্কট দক্ষিণ এশিয়ায় আইএস-পন্থী প্রচারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন মঞ্চ দিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামিক স্টেট-পন্থী প্রচারের বিবর্তন

মার্চ ২০১৯-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদ মাধ্যমকে একটি মানচিত্র দেখিয়েছিলেন যাতে মধ্যপ্রাচ্যে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট–এর (যা আইএস, আইএসআইএস বা আরবি ভাষায় দায়েশ নামে পরিচিত) ভৌগোলিক সংকোচন নির্দেশিত হয়েছিল। এ ভাবে বলতে চাওয়া হয়েছিল যে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটি ২০১৪ সাল থেকে তুলনাহীন গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ার পর এবার হেরে যাচ্ছে। একটি সময়ে সিরিয়া ও ইরাক জুড়ে আইএস প্রায় ইংল্যান্ডের আয়তনের বিশাল ভূমির নিয়ন্ত্রক বলে পরিচিত ছিল। যাই হোক, এরপর অনেকগুলি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক শক্তি নিজেদের নিজস্ব কারণে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়তে নামল, শুরু হল মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ও রাশিয়ার বিমান হানা এবং ইরান ও ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের স্থল অভিযান, এবং পরিণতিতে দায়েশের ‘‌রাষ্ট্র’‌ ধ্বংস হল।

ঘটনা হল, আল-কায়েদার মতো অন্যান্য বড় আন্তর্জাতিক ইসলামি গোষ্ঠীর বিপরীত পথে হেঁটে আইএস তার লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য আঞ্চলিক রাজনীতি ও মতাদর্শ ছাড়াও অন্য অনেক উপকরণ সফল ভাবে ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে প্রোপাগান্ডা একটি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে, এবং ট্রাম্পের বিজয় ঘোষণার দু’‌বছর পরে এখনও জানা নেই এমন একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে কী ভাবে মোকাবিলা করা যায় যারা আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে বেঁচে থাকতে পারে শুধু একটা ধারণা ও ব্র‌্যান্ড হিসেবে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বাস্তবের জমিতে আইএস–এর যোদ্ধাদের চলমান শক্তি তুঙ্গে পৌঁছেছিল, আর এখন তার পরিবর্তে তারা ইন্টারনেটের দৌলতে পাওয়া বিশাল ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবহার করে চলেছে। আজ, আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডে বিশ্বের ছোট ছোট আঞ্চলিক জিহাদি গোষ্ঠীগুলো নিজেদেরকে আইএস ‘সাম্রাজ্যের’ অংশ বলে ঘোষণা করছে। এই বুটিক জিহাদি গোষ্ঠীগুলির দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিয়ে বিতর্ক আছে, কিন্তু আইএস নামের ব্যবহার এবং তার বিশাল অনলাইন প্রোপাগান্ডার মধ্যে দিয়ে চরমপন্থার একটি ‘ওপেন সোর্স’ অনলাইন বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়ে যাচ্ছে;‌ আর এর মাধ্যমে মৌলবাদীরা আইএস–এর নামে যে কোনও ভূখণ্ডে আক্রমণ হানার সুযোগ পাচ্ছে। এই বিষয়টির প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে মালি, মোজাম্বিক ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর মতো আফ্রিকার দেশগুলিতে আইএস ও তার সহযোগীদের সাফল্যের প্রোপাগান্ডার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ফটোগ্রাফ ও আপডেটগুলি প্রতিদিন অন্যান্য অনেক ভাষার সঙ্গে হিন্দি ও উর্দুতে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে।

আইএস প্রোপাগান্ডা, আফগানিস্তান সংকট ও দক্ষিণ এশিয়া

২০২১ আফগানিস্তানের জন্য একটি বিশেষ বছর ছিল। ২০০১ সালে ৯/১১-এর পর মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে তালিবান ক্ষমতা হারিয়ে হিন্দুকুশ পর্বতমালায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তারপর ২০২১–এর ১৫ আগস্ট তারা আবারও কাবুলে পৌঁছে যায় এবং আফগানিস্তানের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এই ঘটনাগুলির পাশাপাশি, ‘‌ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্স’‌ (আইএসকেপি)–এর উত্থান ঘটেছে একটি আরও প্রাণঘাতী গোষ্ঠী হিসেবে, যারা এখন কয়েকটি প্রদেশে কাজ করার পরিবর্তে কেন্দ্রস্থলে চলে এসেছে। মতাদর্শগত ভাবে, তালিবানের উত্থান আইএস–এর প্রচারে ইন্ধন জুগিয়েছে। আইএস–এর কেন্দ্রীয় প্রধান অনলাইন প্রকাশনা আল-নাবা তাদের গত কয়েকটি সংখ্যায় তালিবানের বিরুদ্ধে আইএসকেপি-র অভিযানকে যথেষ্ট জায়গা দিয়েছে, এবং তালিবানকে দোষারোপ করেছে সামগ্রিক ইসলামি উম্মার পরিবর্তে নিজের পরিচয়ভিত্তিক শাসন ও সংকীর্ণ ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানের মধ্যে সন্ত্রাস দমনে সম্ভাব্য সহযোগিতার খবর এই ব্র্যান্ডের মতাদর্শ আরও শক্তিশালী করেছে, এবং আইএসকেপি-র সমর্থনে নতুন অনলাইন আউটলেট তৈরি হয়েছে।

আইএস-এর ব্র্যান্ড তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় অংশ ছিল ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সফল ভাবে সারা বিশ্বের সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠাগুলিতে ও টেলিভিশনের প্রাইম টাইম নেটওয়ার্কে তাদের প্রচারের জন্য জায়গা করে নেওয়া৷

অনলাইনে ও আফগানিস্তানের গোষ্ঠীবিভক্ত জিহাদি বাস্তুতন্ত্রে আইএসকেপি–র শক্তিশালী হওয়া অপ্রত্যাশিত নয়। তালিবান একটি সমজাতীয় সত্তা নয়, এবং এর ক্ষমতায় আসা অন্যদেরকে আইএসকেপি বাস্তুতন্ত্রের নিরাপত্তার দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। এই অন্যদের মধ্যে আছেন আফগান সশস্ত্র বাহিনীর কিছু প্রাক্তন সদস্য (যেমন ইরাকের পূর্ববর্তী বাথ পার্টির অনুগামী সেনারা নিরাপত্তার জন্য ২০১৩-২০১৪ সালে আইএসআইএস-এ যোগ দেন)। গত দু’‌বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় তিনটি আইএসআইএস-পন্থী প্রকাশনা প্রকাশ্যে এসেছে, আর বিশ্বের এই অংশে আফগানিস্তান ও তার আশেপাশে আল-নাবা ও অন্যদের প্রচারের আউটলেটগুলির সংখ্যাবৃদ্ধি করেছে।

ভারত

ভারত এবং বর্ধিত দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানী নয়াদিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যে শুরু করা হয়েছিল সাওত-আল-হিন্দ (এসএএইচ, ইংরেজিতে ভয়েস অফ হিন্দ)। তারপর থেকে এই প্রকাশনাটি দুটি মুখ্য বিষয় নিয়ে যথেষ্ট মুদ্রণ স্থান ব্যয় করেছে। প্রথমত, যেমন আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তালিবানের সমালোচনা করা;‌ এবং দ্বিতীয়ত, দেশের ক্ষমতায় থাকা দক্ষিণপন্থীদের হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে কেন্দ্র করে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন নিয়ে আক্রমণাত্মক প্রোপাগান্ডা। সাওত-আল-হিন্দের শেষ দুটি ইস্যুতে যে বিষয়গুলি নিয়ে লেখা বেরিয়েছে সেগুলি হল‌ বাবরি মসজিদ, মতাদর্শ, ‘সভ্যতার সংঘর্ষ’ আখ্যান এবং মলদ্বীপ ও বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ঘটনাবলি।

সাওত-আল-হিন্দ ‌‌পত্রিকার প্রচ্ছদ, ডিসেম্বর ২০২১।

ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সাওত-আল-হিন্দের বিষয়ে ওয়াকিবহাল রয়েছে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি (এনআইএ) দক্ষিণ কাশ্মীর ও কর্ণাটকের ভাটকাল থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি স্পষ্ট করে বলেনি যে সংস্থাটি কি বিশ্বাস করে যে এই লোকেরা এসএএইচ প্রকাশে জড়িত ছিল, নাকি জড়িত ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় এর বিতরণে। যাই হোক, এই গ্রেপ্তারির পরে ম্যাগাজিনের পরবর্তী সংখ্যাটি প্রোপাগান্ডার ক্ষমতার প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল, আর অনুগামীদের এই ধরনের কাজ চালিয়ে যেতে বলেছিল। ইস্যুটির শিরোনাম ছিল ‘‌আমাদের কলম কাফেরদের বুকে খঞ্জর’‌। আইএসআইএস ঐতিহাসিক ভাবে তার ‘‌অনলাইন যোদ্ধাদের’‌ আর মাটিতে হামলা চালানোর কাজ যারা করে তাদের সমান ওজনদার বলে মনে করেছে। কাশ্মীরে তার উপস্থিতি ঘিরে একটি পৃথক আইএস হিন্দ প্রভিন্স–এর ব্র্যান্ড তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে, এবং ২০১৪ সাল থেকে উপত্যকায় কিছু আক্রমণের ক্ষেত্রে নতুন নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি কাশ্মীরে এদের সংগঠিত সন্ত্রাসবাদী কাজের ক্ষেত্রে ‘‌আইএস জম্মু ও কাশ্মীর’‌ নামটি ব্যবহার করে।

পাকিস্তান

তালিবান মূলত ছিল একটি পাকিস্তানি প্রকল্প। এই ধরনের প্রকল্পগুলির গতিপথের অবশ্য কোনও চরম নিশ্চয়তা থাকে না। এর উদাহরণ হল শাসন ক্ষমতায় তালিবানের উত্থান, এবং যারা প্রায়শই পাকিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে মুক্ত করার আহ্বান জানায় সেই তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)–কে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেওয়া। বালুচিস্তান থেকে ফাটা পর্যন্ত বিস্তৃত পাকিস্তানের স্বনির্মিত অসুস্থতার প্রাঙ্গনে, যার মধ্যে আছে রাষ্ট্রের মদতপুষ্ট ইসলামি বাস্তুতন্ত্র, সেখানে ‘‌আইএস পাকিস্তান প্রভিন্স’‌ (আইএসপিপি)‌ সম্প্রতি এমন লোকেদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে যাদের তারা হয় তালিবান সদস্য বলে বর্ণনা করছে, অথবা বলেছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে (‌বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও তার আশেপাশে)‌ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গুপ্তচর ও তথ্যদাতা । এই ঘটনার পাশাপাশি, উর্দুতে শুধু পাকিস্তানের জন্য একটি আইএস-পন্থী অনলাইন ম্যাগাজিন ‘‌ইয়ালঘর’‌ চালু করা হয়েছিল। এর দ্বিতীয় সংখ্যাটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল (প্রথম সংখ্যাটি এসেছিল ২০২১ সালের এপ্রিলে)। বিশেষজ্ঞ রিকার্ডো ভ্যালে জানিয়েছেন, ইস্যুটি ছিল মূলত ‘‌পাকিস্তান রাষ্ট্র, রাজনীতি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের’‌ বিরুদ্ধে প্রচার। আদর্শগত ও ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ধর্মীয় পণ্ডিতদের অভিযুক্ত করেছিল ইসলামি উম্মাহকে ‘‌প্রতারণা’‌ করার দায়ে, এবং তাদের এই যুক্তি ছিল সাওত-আল-হিন্দের অনেক ইস্যুতে দেওয়া যুক্তির ধারাবাহিকতা।

ইয়ালগার–এর প্রচ্ছদ, ডিসেম্বর ২০২১।

মায়ানমার

এটা সম্ভবত আশ্চর্যের কিছু নয় যে আল-কায়দা ও আইএস-এর মতো আন্তর্জাতিক জিহাদি গোষ্ঠীগুলো ২০১৭ সালে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা সংকটের পরে মায়ানমারের মুসলমানদের নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করেছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের কাতিবা আল-মাহদি ফি বিলাদ আল-আরাকান (কেএমবিএ, বা আরাকান রাজ্যের আল-মাহদির ব্রিগেড) নাম দিয়েছে, তারা ইসলামিক স্টেট–এর নতুন প্রধান আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরেশির কাছে বায়াত (আনুগত্য) প্রস্তাব করেছে। এটি করেছেন গ্রুপের মুখপাত্র আবু লুত আল-মুহাজির। কেএমবিএ–র নেতৃত্ব এবং শ্রেণিবিন্যাস এখনও প্রায় অজানা। যাই হোক, তথ্যের অভাব সত্ত্বেও কেএমবিএ তার ‘আরকান’ নামক প্রচার পত্রিকার দুটি সংখ্যা প্রকাশ করেছে। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, ম্যাগাজিনটি ইংরাজিতে প্রকাশিত হয়। এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ জসমিন্দর সিং ও মোহম্মদ হাজিক জানি বলেছেন, মুখপাত্রের নামের সঙ্গে ‘আল-মুহাজির’ বা ‘দি ইমিগ্র্যান্ট’ যুক্ত থাকায় এটা সম্ভব যে গোষ্ঠীটি পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাতের থেকে বা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) থেকে স্থানীয় ভাবে ভেঙে তৈরি হয়নি। এআরএসএ দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান সশস্ত্র মিলিশিয়া ছিল। তবে এই ঘটনার উপর গুরুত্ব আরোপ করা যেতে পারে যে আইএস-এর প্রতি কেএমবিএ-র আনুগত্য এখনও গোষ্ঠীর নেতৃত্বের প্রকাশ্য স্বীকৃতি পায়নি।

আরকান–এর প্রচ্ছদ, ডিসেম্বর ২০২১।

‌আরকান প্রকাশনাটি অন্যান্য আইএস-পন্থী প্রচারপত্রগুলির থেকে বেশ আলাদা। ইস্যুটির মূল বার্তা (এখনকার জন্য) কেএমবিএ-র কাডার সংগ্রহের জন্য মানুষকে আকৃষ্ট করার দিকে মনোনিবেশ করেছে বলে মনে হচ্ছে। উপস্থাপনাটি নিজের বক্তব্য বলতে গিয়ে অনেক বেশি শব্দ ব্যবহার করে, যার সঙ্গে কৌতূহলজনক ভাবে আইএস–এর চেয়ে আল-কায়দার প্রচার ও নির্দেশের উপকরণের সঙ্গে মিল বেশি। তুলনায় আইএস–এর প্রচার ডিজিটাল প্রবণতার সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আল-কায়দার সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গির মিল এই গোষ্ঠীর এবং এর নেতাদের অতীতের যোগসূত্র নিয়ে আকর্ষণীয় প্রশ্ন উত্থাপন করে। আইএস-এর তুলনায় মায়ানমার-বাংলাদেশ-পূর্ব ভারতের ভূগোলে (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, একত্রে ভারতের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার আবাসস্থল) আল কায়দা ইন ইনডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (‌একিউআইএস)‌–পন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনেক বেশি মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা রয়েছে। একিউআইএস‌–পন্থী সংগঠনগুলির মধ্যে আছে জামাত উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ ( জেএমবি ও নিও-জেএমবি), এবং হরকত-উল-জিহাদ আল-ইসলামি বা হুজি। সামগ্রিক ভাবে আল-শাবাব, তালিবান, হামাস ও আরও অনেক জিহাদি গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সংকটকে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে মুসলমানদের একজোট করার জন্য ব্যবহার করেছে।

উপসংহার

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রোপাগান্ডা প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে আছে আফগানিস্তানে সংঘটিত ঘটনাবলি। কিন্তু এই বৃদ্ধি সত্ত্বেও একথার কোনও সত্যিকারের প্রমাণ নেই যে এই প্রকাশনাগুলি কাডার নিয়োগে সফল হয়েছে (টাকাপয়সা তোলার প্রসঙ্গটি অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন)‌। প্রকৃত পক্ষে, এখন আইএসকেপি-র বিরুদ্ধে তালিবানদের আমরা আইএস-এর মতোই দক্ষ প্রোপাগান্ডা ভিডিও ব্যবহার করতে দেখতে পাচ্ছি। যাই হোক, এই প্রচার সামগ্রীর সাড়া ফেলার ক্ষেত্রে একটি বড় ব্যর্থতা হল মূলধারার সংবাদমাধ্যমে তাদের কভারেজ। আইএস-এর ব্র্যান্ড তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় অংশ ছিল ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সফল ভাবে সারা বিশ্বের সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠাগুলিতে ও টেলিভিশনের প্রাইম টাইম নেটওয়ার্কে তাদের প্রচারের জন্য জায়গা করে নেওয়া৷ বিশেষজ্ঞ চার্লি উইন্টার ব্যাখ্যা করেছিলেন যে আইএস সফল ভাবে মিডিয়ার বিরুদ্ধে মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে৷ এমন দক্ষ ও সুপরিকল্পিত প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে যখন নিয়ন্ত্রণের লড়াই ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে, সেই সময় এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলিকে, যাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তুতন্ত্র যথেষ্ট ভঙ্গুর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.