-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের উত্তর-পূর্বে উন্নয়ন আর নিরপেক্ষ নয়। এটি রাষ্ট্রীয় কৌশলের একটি হাতিয়ার, যা নিরাপত্তা যুক্তি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দ্বারা গঠিত।
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় ‘নিরাপত্তা-উন্নয়ন সম্পর্ক’-এর আলোচনার নেপথ্যে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এবং পরিস্থিতিগত জটিলতার অবদান রয়েছে। ঐতিহাসিক পরিস্থিতি ও ভৌগোলিক কল্পনার মতো বিষয়গুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বে উন্নয়ন ও নিরাপত্তার মধ্যে সংযোগ সহিংস সংঘাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়ন নীতিকে নিরাপত্তামূলক করার কথা বলে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে একটি রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত গঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিবেশীদের, বিশেষ করে ভুটান, পূর্ববঙ্গ (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্য ও অন্যান্য বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এর ‘সংযুক্ত ইতিহাস’ রয়েছে বলে জানা যায়। তবে ‘সাধারণ আলোচনা’ হল যে, এই অঞ্চলটি মূলত ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা ও প্রান্তিক অ্যাকাডেমিক মনোযোগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে চা, রেলওয়ে শৃঙ্খল এবং তেল আবিষ্কারের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের কারণে এটি ১৯০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী সম্পর্কের সংস্পর্শে এসেছে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সংযোগ এবং উন্নয়নমূলক অবকাঠামো প্রকল্পগুলিকে আধুনিকীকরণের জন্য এই অঞ্চলটি ব্যাপক হারে নীতি-সম্পর্কিত মনোযোগ অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ - ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ব্যবহারের জন্য দায়ী নোডাল সংস্থাগুলির অন্যতম - প্রকাশ করেছে যে, উত্তর-পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় ‘জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অব্যবহৃত সম্ভাবনার সিংহভাগ’ই বিদ্যমান।
ভারতের উত্তর-পূর্বে উন্নয়ন ও নিরাপত্তার মধ্যে সংযোগ সহিংস সংঘাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়ন নীতিকে নিরাপত্তামূলক করার কথা বলে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে একটি রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত গঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উন্নয়নমূলক বিনিয়োগ
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারতের পূর্বমুখী নীতি হল ব্যাপক অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা, যাতে ‘সহিংসতার উৎসকে অত্যাশ্চর্য ভাবে নির্মূল করা যায়’ এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর করা যায়। কেন্দ্রীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রক (এমডিওএনইআর) অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামোর জন্য সহায়তার মাধ্যমে এই অঞ্চলের উন্নয়নের ব্যবধান পূরণ করার দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভুক্ত করে। সড়কের জন্য উত্তর-পূর্ব বিশেষ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এনইআইডিএস) অধীনে ২০২২ সালের ১ এপ্রিল থেকে এমডিওএনইআর দ্বারা পরিবহণ এবং যোগাযোগের উদ্দেশ্যে ১১টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, যার মোট আনুমানিক ব্যয় ৬২৫.৩৪কোটি টাকা (প্রায় ৭৬২.৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। তবে একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি এবং বিভিন্ন সংস্থাগুলি এখনও এমডিওএনইআর তহবিলের ৯৫৩৬ কোটি টাকা (১১,৬২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যবহার করেনি।
২০২৪ সালে অসমের গুয়াহাটি শহরের সিকসাকু বিল, বোরসোলা বিল এবং পশ্চিম বোরাগাঁওতে তিনটি পয়ঃনিষ্কাশন কেন্দ্র-সহ জিআইসিএ সহায়তাপ্রাপ্ত গুয়াহাটি পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পটি ভারত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল, যার আনুমানিক মূল্য ১,১৭৮.৭৫ কোটি টাকা (১,৪৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (জিআইসিএ) - যা অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স বাস্তবায়ন করে - উত্তর-পূর্ব সড়ক শৃঙ্খল সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের (পর্ব ৭) জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে ১৫,৫৬১ মিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৮৭৭ কোটি টাকা বা ১,০৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ‘উত্তর-পূর্ব সড়ক শৃঙ্খল সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্প’-এর অধীনে ৬৭ বিলিয়ন ইয়েন (৬১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) (প্রথম পর্যায়) প্রদানের জন্য নয়াদিল্লির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার পর ২০১৭ সাল থেকে উত্তর-পূর্বে এই ধরনের সড়ক সংযোগ প্রকল্পে জড়িত রয়েছে জিআইসিএ। সড়ক অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য রূপান্তর এখনও দেখা যায়নি এবং জাতীয় মহাসড়কের অবকাঠামো এখনও অনুন্নত রয়েছে। উত্তর-পূর্বে মোট সড়কের পরিমাণ ৩৩.৭ শতাংশ, যেখানে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৬৯ শতাংশ। ২০২৪ সালে অসমের গুয়াহাটি শহরের সিকসাকু বিল, বোরসোলা বিল এবং পশ্চিম বোরাগাঁওতে তিনটি পয়ঃনিষ্কাশন কেন্দ্র-সহ জিআইসিএ সহায়তাপ্রাপ্ত গুয়াহাটি পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পটি ভারত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল, যার আনুমানিক মূল্য ১,১৭৮.৭৫ কোটি টাকা (১,৪৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এর আগে জিআইসিএ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) গুয়াহাটি শহরে জল সরবরাহ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছিল। তবে নগর অবকাঠামো-সহ সামগ্রিক উন্নয়নের পরিসরগুলি দুর্বল ও এখনও অগ্রগতি হয়নি।
প্রতিবেশীদের মধ্যে আলোড়ন
এই চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও ভারত সরকারের ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ রোডম্যাপের জন্য উত্তর-পূর্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় সরকার টাটা গ্রুপ অফ ইলেকট্রনিক্সের নেতৃত্বে একটি আদিবাসী ‘সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বলি অ্যান্ড টেস্ট ফেসিলিটি’র জন্য ২৭,০০০ কোটি টাকা মূল্যের প্রকল্পের (৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ভারত সরকার তার সক্রিয় অর্ধপরিবাহী নীতির জন্য অসমকে অর্ধপরিবাহী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর ‘আস্থা লক্ষ্মী’ রাজ্যগুলির উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই উদ্যোগটি সশক্ত করে।
ভারত যখন গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে উঠে আসছে, তখন দেশটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত মাত্রার উপর মনোযোগ দিয়ে তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ সম্পৃক্ততা সম্প্রসারণ করতে চাইছে, যার মূল কেন্দ্রবিন্দু সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস অ্যাসোসিয়েশন (আসিয়ান)। ভারতের প্রতিবেশ অঞ্চলে উন্নয়ন সহায়তার মধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, মংলা বন্দরের উন্নয়ন এবং উচ্চ প্রভাবশালী সম্প্রদায়মূলক উন্নয়ন প্রকল্পের মতো অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলিতে বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত অনুদান সহায়তা। ভারত-মায়ানমার-তাইল্যান্ড (আইএমটি) ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক হল ‘পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করার ভারতের মহা উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য, যেখানে ভারত উল্লিখিত দু’টি অংশকে সংযুক্ত করবে।’ তবে ‘মণিপুরের মোরেকে তাইল্যান্ডের মায়ে সোট’-এর সঙ্গে সংযুক্তকারী এই মহাসড়কের কাজ শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে মূলত ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য মণিপুর এবং প্রতিবেশী মায়ানমারের অস্থিতিশীলতার কারণে।
ভারত তার ইন্দো-প্যাসিফিক সম্ভাবনার বাস্তবায়ন ও বহুমুখী আঞ্চলিক সংযোগ বজায় রাখতে এবং কার্গো জাহাজের ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য সক্রিয় সমুদ্রবন্দর মংলা ও চট্টগ্রামের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার বজায় রাখতে চাইলে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৪ সালের অগস্ট মাসে শেখ হাসিনা সরকারের বলপূর্বক পদচ্যুতির পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি, পরিবহণ ও ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্প-সহ ভৌত সংযোগ প্রকল্পগুলি নিয়েও একই রকম উদ্বেগ রয়েছে। ভারত তার ইন্দো-প্যাসিফিক সম্ভাবনার বাস্তবায়ন ও বহুমুখী আঞ্চলিক সংযোগ বজায় রাখতে এবং কার্গো জাহাজের ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য সক্রিয় সমুদ্রবন্দর মংলা ও চট্টগ্রামের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার বজায় রাখতে চাইলে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্দরগুলিকে বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বে অসম (সুতারকান্দি), মেঘালয় (ডাউকি) এবং ত্রিপুরা (আগরতলা) রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এমন পথই চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৪ মে ভারত সরকার বাণিজ্য ও পর্যটন বৃদ্ধির জন্য পশ্চিম খাসি পাহাড়ের ডাউকিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দশম স্থলবন্দর উদ্বোধন করে। বর্তমানে জিআইসিএ-র আংশিক সহায়তায় ১.০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণাধীন, যা এই অঞ্চলের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্ভাবনাকেই দর্শায়। ত্রিপুরার মাধ্যমে এই বন্দরে প্রবেশাধিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাগজে-কলমে এখনও প্রতিশ্রুতি
তবে এই ঘোষণা সত্ত্বেও আক্ষরিক ভাবে কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে। জমি অধিগ্রহণ, বন উজাড়, জলবায়ু-সৃষ্ট দুর্যোগ, ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ, কাজের ধীর গতি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলির কাজের মানের সঙ্গে আপসের সমস্যার কারণে এই অঞ্চলে ভৌত যোগাযোগ, বিশেষ করে মহাসড়ক নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আন্তঃরাজ্য মহাসড়কের অবস্থা অসম্পূর্ণ ও জরাজীর্ণ, যা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিটি রাজ্য এবং প্রশাসনিক কেন্দ্রকে সংযুক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, মেঘালয়ের শিলং-ডাউকি মহাসড়ক, অসম ও মিজোরামের মধ্যে আন্তঃরাজ্য জাতীয় মহাসড়ক ৬ (পূর্বে এনএইচ ১৫৪ নামে পরিচিত), অসম, মণিপুর এবং ত্রিপুরার মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৬, অসম ও মণিপুরকে সংযুক্তকারী জাতীয় মহাসড়ক ৩৭ এই সংযোগ প্রকল্পগুলির অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বহিরাগত অর্থায়নে চলমান সংযোগ প্রকল্পগুলির কঠোর পর্যবেক্ষণ এবং রাজনৈতিক নির্বাহীদের একটি দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ শ্রেণির দ্বারা বাস্তবায়ন ছাড়া বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক এবং অ্যাক্ট ইস্ট কাঠামোতে উত্তর-পূর্বকে সমন্বিত করার ভারতের মহা উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রতীকীই থেকে যাবে।
পাহি শইকিয়া ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, গুয়াহাটির (আইআটিজি) পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Pahi Saikia is a Professor of Political Science at the Indian Institute of Technology Guwahati (IITG). Her academic specialization lies in Comparative Politics and International ...
Read More +