Author : Shivam Shekhawat

Published on Feb 03, 2023 Updated 0 Hours ago

স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি এবং সাধারণ আফগানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ মিলে দীর্ঘমেয়াদে তালিবানের ঐক্যের জন্য বিপদ তৈরি করতে পারে

তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ: বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

নিজেদের প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে গিয়ে স্বঘোষিত ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান (আইইএ)–এর উচ্চশিক্ষা মন্ত্রক ‘‌পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত’‌ মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে। এর পরে আফগানিস্তানের জনজীবন থেকে তাঁদের মুছে ফেলার প্রয়াস ত্বরান্বিত করে এনজিও বা মানবিক সংস্থাগুলির সঙ্গে মহিলাদের কাজ করা নিষিদ্ধ করে আরেকটি আদেশ জারি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সাধারণ আফগানদের দ্বারা সমালোচিত এই সিদ্ধান্ত সংকটে জর্জরিত দেশটির উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। অনেক সহায়তা সংস্থাকে তাদের কর্মসূচি বন্ধ করতে হয়েছে, আর মহিলারা তাঁদের স্থান পুনরুদ্ধার করতে রাস্তায় নেমেছেন। আফগানিস্তানকে আরও অতল গহ্বরে ঠেলে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকার কারণে এই সিদ্ধান্তগুলি অনেকের এই আশাকেও ভেঙ্গে দেয় যে গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করতে তার কট্টরপন্থী প্রবণতাগুলিকে লঘু করবে। পরিবর্তে, তালিবান বহিরাগত চাপের মুখে বরং তাদের অনমনীয়তা প্রদর্শন করেছে।

তাদের সংগ্রামকে গৃহযুদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত করতে অস্বীকার করে মাসুদ একে সামগ্রিক ‘‌সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের’‌ মধ্যে স্থান দিয়েছেন, এবং এইভাবে কার্যত তালিবানকে বিচ্ছিন্ন করেছেন এবং নিজেদের জন্য শেষ সন্ত্রাসবিরোধী শক্তির শিরোনাম দাবি করেছেন।

২০২২–এ আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে কোনও অগ্রগতি দেখা না–গেলেও আফগান সমাজের অংশগুলি তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে তালিবান যে দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা আসছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলির থেকে। প্রভাব বিস্তারের জন্য ইসলামিক স্টেট – খোরাসান প্রদেশের (আইএসকেপি) সঙ্গে বিরোধ নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত আছে, তবে তাদের পাশাপাশি বিপদের কারণ হিসাবে আছে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উপস্থিতি, যেমন ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ), যাদের কাবুলে তালিবান-পরবর্তী সরকারের জন্য বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। তালিবানকে দুর্বল করার ক্ষেত্রে এনআরএফ–এর সম্ভাবনা বর্তমান সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ;‌ কিন্তু সাধারণ আফগানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ, যা এখন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে, তা এনআরএফ–কে দীর্ঘমেয়াদে তালিবানের ঐক্য ও শক্তির জন্য বিপদস্বরূপ এক শক্তিতে পরিণত করতে পারে।

তালিবান–বিরোধী বিদ্রোহের অবস্থা

সম্প্রতি, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে, তালিবান ও এনআরএফ বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের খবর অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। আন্দারাবে ঘাঁটি গেড়ে এনআরএফ বাহিনী তালিবানের স্থল ও বিমান উভয় আক্রমণ প্রতিহত করেছে, এবং উভয় পক্ষেই বিরাট সংখ্যায় হতাহত হয়েছে। তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে উভয়ের মধ্যে প্রায়শই সংঘর্ষ হয়েছে। আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে এনআরএফ তালিবানকে পরাজিত করার জন্য উত্তরে তার শক্ত ঘাঁটি থেকে বিদ্রোহ শুরু করেছে। একটি দুই–পর্যায়ের লড়াইয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে গোষ্ঠীটি চাইছে স্বল্পমেয়াদে লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা চালিয়ে শত্রুদের ক্রমাগত ক্ষয়সাধন, এবং তারপরে অঞ্চলগুলিকে মুক্ত করে ভবিষ্যতে একটি পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের প্রস্তুতির জন্য সম্পদ সংগ্রহ করা। যদিও মাসুদ তাঁদের সংগ্রামের সঙ্গে নর্দার্ন অ্যালায়েল্স–এর উত্তরাধিকারকে যুক্ত করার জন্য খুবই চেষ্টা করছেন, অনেক বিশ্লেষক কিন্তু মনে করেন যে এনআরএফ কমান্ডাররা একই ধরনের বৈধতা ভোগ করেন না। একটি অল্পবয়স্ক জনসংখ্যার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে এনআরএফ আফগানিস্তানে একটি ‘‌ফেডারেল, বিকেন্দ্রীভূত, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’‌ স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারিত করেছে। তাদের সংগ্রামকে গৃহযুদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত করতে অস্বীকার করে মাসুদ একে সামগ্রিক ‘‌সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের’‌ মধ্যে স্থান দিয়েছেন, এবং এইভাবে কার্যত তালিবানকে বিচ্ছিন্ন করেছেন এবং নিজেদের   জন্য শেষ সন্ত্রাসবিরোধী শক্তির শিরোনাম দাবি করেছেন। ক্ষমতা একচেটিয়া করার জন্য পাশতুনদের বিদ্রুপ করে এনআরএফ জাতিগত সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলে। যদিও প্রতিরোধের জন্য আর্থিক বা বস্তুগত সমর্থন উভয়ই খুবই কম, তাহলেও তারা ২০২৩ সালে তাদের লড়াইকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী, এবং তালিবানের শোষণ শেষ করতে না–পারা পর্যন্ত থামতে নারাজ।

‘‌কাবুলের পতন’‌–এর পরে আবির্ভূত অন্য গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান ফ্রিডম ফ্রন্ট, যারা দাবি করে ৩৪টি প্রদেশের সবকটিতেই তাদের উপস্থিতি রয়েছে;‌ আফগানিস্তান ইসলামিক ন্যাশনাল অ্যান্ড লিবারেশন মুভমেন্ট, যারা লড়াই করে তালিবানের হাতে নিহত প্রাক্তন নিরাপত্তা অফিসারদের জন্য;‌ এবং সোলজারস অফ হাজারিস্তান, ফ্রিডম কোর, লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আফগানিস্তান ইত্যাদি ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলি। এদের সদস্যদের বা মাটিতে তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না, এবং তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলগুলি কখনও কখনও তাদের অস্তিত্বের একমাত্র প্রমাণ, যেখানে তারা কোনও আক্রমণের জন্য দায়িত্ব দাবি করার বা যুদ্ধের তারিখহীন ভিডিও পোস্টগুলি শেয়ার করে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সাবেক সদস্যও তালিবানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন।

তালিবান ধারাবাহিকভাবে কোনও বিদ্রোহের কারণে সৃষ্ট বিপদের সম্ভাবনা খারিজ করেছে ঠিকই, কিন্তু তাদের উত্তরে সৈন্য মোতায়েন করা, যার সংখ্যা ফেব্রুয়ারি ২০২২–এ ১০,০০০–এ পৌঁছেছিল, এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ কারি ফয়জুদ্দিন বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুবের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সেখানে পাঠানো অন্য ইঙ্গিতবাহী। যদিও তারা এনআরএফ–কে বিদেশ থেকে আদেশ গ্রহণকারী যুদ্ধবাজ হিসেবে নিন্দা করে, নেতৃত্ব কিন্তু এর বিপদ সম্পর্কে সচেতন, এবং তা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছিল। কিন্তু বিদ্রোহ দমনে তাদের পদক্ষেপগুলি ব্যর্থ হয়েছে উভয় পক্ষের যোদ্ধাদের জাতিগত গঠনের কারণে। উত্তরে তাজিক বংশোদ্ভত তালিবান সৈন্যরা এনআরএফ–এর সঙ্গে লড়াই করতে অস্বীকার করেছে, এবং কেউ কেউ এমনকি পরবর্তীতে এনআরএফ–এ যোগ দিয়েছে। এরপর উত্তরে জাতিগত পাশতুনদের মোতায়েন শুধুমাত্র পার্থক্যকেই উস্কে দিয়েছে। পুরো বিষয়টি তালিবানকে উভয়সঙ্কটে ফেলেছে, এবং কিছু স্থানীয় ইউনিট জুলাই মাসে তাদের অগ্রবর্তী পোস্ট থেকে একতরফাভাবে পিছিয়ে এসেছে।

আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য লবি

দশম হেরাত নিরাপত্তা সংলাপের সময় তালিবান ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আফগানিস্তানের রাজনৈতিক বর্ণালী জুড়ে বিভিন্ন নেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলে প্রবাসী আফগান ও প্রাক্তন প্রতিরোধ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য একত্র হয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা নিয়ে আলোচনা করা। আহমেদ মাসুদ আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অভিন্ন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর জোর দেন। তিনি ভারতকে তার বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করার এবং গতবারের মতো প্রতিরোধকে সমর্থন করার আহ্বান জানান।

সংহতি জানিয়ে অনেক পুরুষ ছাত্র কান্দাহার বিশ্ববিদ্যালয় ও নানগারহার মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বসতে অস্বীকৃতি জানায়, ওয়াকআউট করে চলে যায়, এবং মেয়েদের পড়াশুনার অনুমতি না–দিলে তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে অস্বীকার করে।

যদিও তালিবান দেশের সমস্ত বিরোধী দলগুলির সাধারণ প্রতিপক্ষ, তবুও প্রজাতন্ত্র নিয়ে হতাশাজনক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আগে থেকে বিদ্যমান বিভাজনগুলি তাদের ঐকমত্যে পৌঁছনো অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে বলে একটি সাধারণ পদ্ধতির বিষয়ে এখনও পার্থক্য রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিরোধ গোষ্ঠী তাজিক ও উজবেকদের মতো জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে গঠিত, যদিও তালিবান–বিরোধী পাশতুন প্রতিরোধ গোষ্ঠীও রয়েছে। কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা পরিবর্তিত হয়, বিশেষত কেন্দ্রীকরণের মাত্রার প্রশ্নে। এই জাতিগত বিভাজনগুলি ঐক্যের প্রচেষ্টার মতোই দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতাকে কঠিন করে তোলে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলিকে সরাসরি সমর্থন করার বিরুদ্ধে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশগুলি তাদের সঙ্গে সীমিত যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে। দেশের মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের আহ্বান জানিয়ে রাশিয়া আয়োজিত মস্কো ফরম্যাট আলোচনার মতো সমান্তরাল প্রয়াসও অব্যাহত রয়েছে।

‘‌হয় আমরা সবাই অথবা কেউ না’‌

বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার নতুন আদেশ ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনেক পুরুষ ছাত্র কান্দাহার বিশ্ববিদ্যালয় ও নানগারহার মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বসতে অস্বীকৃতি জানায়, ওয়াকআউট করে চলে যায়, এবং মেয়েদের পড়াশুনার অনুমতি না–দিলে তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে অস্বীকার করে। কিছু পুরুষ অধ্যাপক ও লেকচারার নীতি পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন, এবং তাঁদের অসন্তোষ নথিভুক্ত করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বা প্রতীকী প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ জানিয়েছেন।

সশস্ত্র বিদ্রোহের কর্মকাণ্ড ছাড়াও তালিবানের আগমন এবং মহিলাদের অদৃশ্য করে দেওয়ার লক্ষ্যে গোষ্ঠীটির ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপগুলি মহিলাদের রাস্তায় নিয়ে এসেছে, ‘রুটি, কাজ ও স্বাধীনতা’‌ স্লোগানের জন্ম দিয়েছে এবং ন্যায়বিচারের আহ্বান সামনে নিয়ে এসেছে, যা অভূতপূর্ব। কঠোর প্রতিশোধ এবং নির্যাতন সহ্য করে তাঁরা তাঁদের আফগান রাজনীতি থেকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টাকে পিছিয়ে দিয়েছেন। এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের প্রতি তালিবানের প্রতিক্রিয়া ব্যাপ্ত কোনও অসন্তোষের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা থেকে শুরু করে প্রতিবাদকারীদের নির্বিচারে আটক করা পর্যন্ত বিস্তৃত। গোষ্ঠীটি বৈদ্যুতিক শক দেওয়া বা তাদের রাইফেলের বাঁট দিয়ে বিক্ষোভকারীদের আঘাত করার মতো নৃশংস ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এই বিক্ষোভগুলি এনআরএফ দ্বারাও সমর্থিত, যারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ‘‌যৌথ পদক্ষেপ’‌ করার আহ্বান জানিয়েছে। আফগান উপশিক্ষামন্ত্রী নারীদের ইসলামিক পোশাক-বিধি পুরোপুরি অনুসরণ না–করা এবং ‘‌শিক্ষার নামে পতিতাবৃত্তি ’‌ করার জন্য দায়ী করে নিষেধাজ্ঞার ন্যায্যতা দিয়েছেন। মেয়েদের জন্য শিক্ষায় গুরুত্ব না-দিয়ে তিনি বলেছিলেন যে একজন নারীর সর্বাগ্রে বাধ্যবাধকতা তাঁর স্বামীর প্রতি। তিনি বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য, এবং প্রয়োজন নেই এমন বিষয়গুলি অধ্যয়ন করার জন্যও মেয়েদের দোষারোপ করেছেন। নারীদের সমাজজীবন থেকে বহিষ্কার করে এবং তাঁদের পথ রুদ্ধ করে ক্ষমতার এই অনুশীলন তালিবানের প্লেবুকের একটি ধারাবাহিক পথ হয়ে উঠেছে। এই পশ্চাদমুখী নীতির বিরুদ্ধে বিধিনিষেধকে অমান্য করে, নিজেদের জীবনের প্রতি হুমকি উপেক্ষা করে পুরুষ ও মহিলা পড়ুয়াদের একসঙ্গে প্রতিবাদ করার কাজটি অতএব এক অসাধারণ সাহসী কাজ।

সামনের দিনে

গত বছর আফগানিস্তানে বিভিন্ন প্রতিরোধ গোষ্ঠীর উত্থান ঘটলেও তাদের মধ্যে সহযোগিতা ভৌগোলিক ও জাতিগত কারণে সীমিত। তাদের ক্রিয়াকলাপ ও আক্রমণগুলি তাদের ‘‌প্রভাবক্ষেত্রের’‌ মধ্যে সীমিত, এবং তাদের মধ্যে মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক পার্থক্য রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলির প্রধান দাবিগুলি কিছুটা অনুরূপ:‌ ক্ষমতার হস্তান্তর এবং সমস্ত জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব–সহ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করা। তবে অদূর ভবিষ্যতে তাদের সহযোগিতা করা বা একটি ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা অন্ধকার বলে মনে হচ্ছে। একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ছাড়া তাদের আক্রমণ ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হত্যা তালিবানের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য বিপদে পরিণত হবে না। যে দেশটি জাতিগত গঠনের কারণে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলিকে চলাচল ও সরবরাহের স্বাধীনতা দেয় সেই তাজিকিস্তান ব্যতীত এই অঞ্চলের বা পশ্চিমী দেশগুলির তরফে প্রতিরোধ প্রচেষ্টাকে সমর্থনের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে হচ্ছে। বাইরের সমর্থন ছাড়া আগামী বছরগুলিতে প্রতিরোধে একটি বড় রূপান্তর না–ও দেখা যেতে পারে।

এই গোষ্ঠীগুলির প্রধান দাবিগুলি কিছুটা অনুরূপ:‌ ক্ষমতার হস্তান্তর এবং সমস্ত জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব সহ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করা। তবে অদূর ভবিষ্যতে তাদের সহযোগিতা করা এবং একটি ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা অন্ধকার বলে মনে হচ্ছে।

যা বর্তমান তালিবান–বিরোধী বিদ্রোহকে ১৯৯০–এর দশকের প্রতিরোধ থেকে আলাদা করে, তা হল সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি এবং বিভিন্ন প্রতিরোধ গোষ্ঠী কীভাবে তা কাজে লাগাচ্ছে সেই বিষয়টি। যদিও এটি তাদের বার্তা প্রচার করতে এবং লোকেদের তাদের কর্ম–পরিকল্পনা জানতে সাহায্য করে, তবে এই গোষ্ঠীগুলির যা তারা করেনি এমন কাজের জন্য কৃতিত্ব নেওয়ার প্রবণতা বা দুটি গোষ্ঠীর একই আক্রমণের কৃতিত্ব দাবি করা তাদের বৈধতা নষ্ট করে, এবং সেই সূত্রে দেশে তাদের ক্রমবর্ধমান পদচিহ্ন ও প্রভাব সম্পর্কিত দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। আফগান জনসাধারণ আক্রমণ ও হতাহতের সংখ্যা নিয়ে প্রচার সম্পর্কেও ভালভাবে অবগত, কারণ তাঁরা জানেন উভয়পক্ষই সাধারণ মানুষের সমর্থন পাওয়ার জন্য নিজেদের সুবিধামত সংখ্যা বাড়ায় বা কমায়। কাবুলে অবস্থিত একটি স্বাধীন গবেষণা সংস্থা আফগানিস্তান অ্যানালিস্টস নেটওয়ার্ক–এর সহ–পরিচালক কেট ক্লার্কের মতে, প্রতিরোধ ঐতিহাসিকভাবে ততটা শক্তিশালী নয়;‌ কিন্তু যেহেতু তালিবান নিজেই আবার সংগঠিত হতে কয়েক বছর সময় নিয়েছিল, তাই প্রতিরোধের আকারগুলি কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তার মানচিত্রায়ণ  অপরিহার্য। যেহেতু তালিবান মূলত অভিজ্ঞ যোদ্ধা ও জঙ্গি, তাই এই গোষ্ঠীটি নাগরিকদের আইন-অমান্য আন্দোলনের চেয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে বেশি প্রস্তুত। ঠিক এই কারণেই বর্তমান প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রতীকী কাজগুলি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যদিও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তাদের কট্টরপন্থী কাজকর্ম থেকে নিরুৎসাহিত করতে পারে না, তবে তা এখনও আফগান জনগণ ও তাদের লড়াইয়ের দিকে মনোযোগ দেয়। তালিবান ইতিমধ্যে উপদলবাদের সঙ্গে লড়াই করছে, কাজেই এই সময়ে বাহ্যিক উদ্দীপনা একটি দ্বিধারী তলোয়ার হতে পারে: এটি উপদলগুলিকে একত্রিতও করতে পারে, অথবা তাদের পার্থক্যকে বাড়িয়ে তুলতেও পারে। নারী–নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভও প্রশাসনের মধ্যে ফাটল বাড়াতে পারে। শীত কমলে বিক্ষিপ্ত আক্রমণ ও লড়াই চলতেই থাকবে, কিন্তু তালিবান–বিরোধী ‌গোষ্ঠীগুলির স্বল্পমেয়াদে আধিপত্য অর্জনের কোনও ইঙ্গিত নেই।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.