Author : Rouhin Deb

Published on Oct 07, 2021 Updated 0 Hours ago

ভারতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে সর্বজনীন কোনও পন্থা অবলম্বন করা উচিত নয়, এই পন্থাগুলিকে হতে হবে প্রাসঙ্গিক।

ভারতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আবার খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সুযোগ ও প্রতিবন্ধকতা

এই প্রবন্ধটি শিশু এবং অতিমারি: একটি দেশভিত্তিক বিশ্লেষণ সিরিজের অন্তর্গত।


বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা সমীক্ষাগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে অন্যান্য বয়ঃসীমার মানুষজনের তুলনায় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের উপর অতিমারি-জনিত সংক্রমণের প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম। উপলব্ধ তথ্যের নিরিখে এই ধারণা ঠিক হলেও এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, লকডাউনের সময় শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার উপরে অতিমারির তীব্র বিরূপ প্রভাব পড়েছে এবং গত দেড় বছরে বিশ্বব্যাপী সমস্ত ছাত্রছাত্রীকেই এই ধকল সামলাতে হয়েছে। বর্তমানে ভারতে অতিমারির দ্বিতীয় প্রবাহের সংক্রমণের হার ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়ার ফলে রাজ্যগুলিতে পর্যায়ক্রমে স্কুল ও কলেজগুলি খুলে দেওয়া হচ্ছে, যাতে ছাত্রছাত্রীদের আবার বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা যায় এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, পড়াশোনার সুবিধে এবং আর্থ-সামাজিক শিক্ষার সুবিধে-সহ সামগ্রিক বিকাশের ব্যাপারটি সুনিশ্চিত করা যায়। একাধিক রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুনরায় চালু করা হলেও অতিমারি পরিস্থিতিতে ১৮ বছরের কমবয়সি ছেলেমেয়েদের বিনা টিকাকরণে বিদ্যালয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিবেদনটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্তের সুবিধা ও অসুবিধাগুলির উপরে আলোকপাত করা হয়েছে এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে, যখন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি থেকে অতিমারির তৃতীয় প্রবাহের সংক্রমণের খবর আসতে শুরু করেছে।

ইতিবাচক দিক

ভারতের মতো বিশাল এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুনরায় চালু করার ব্যাপারটি যত সময় যাচ্ছে, ততই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে। ভারতের গ্রামাঞ্চলে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এতটাই প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করে যে, সেখানে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধে নেই অথবা পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি বেহাল হওয়ায় তাদের পক্ষে স্মার্টফোন কেনা সম্ভব নয়। ফলে এই সব ছাত্রছাত্রী ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনায় অংশ নিতে পারছে না। সারা দেশব্যাপী শহর এবং গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৫০%-এরও বেশি ছাত্রছাত্রীর কাছে ইন্টারনেটের সুবিধা উপলব্ধ নয়। স্বভাবতই কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে অফলাইন ক্লাস বন্ধ থাকার সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে সেই সব ছাত্রছাত্রীর উপরে, যারা পাহাড়ি জেলাগুলিতে অথবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে।

বর্তমানে ভারতে অতিমারির দ্বিতীয় প্রবাহের সংক্রমণের হার ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়ার ফলে রাজ্যগুলিতে পর্যায়ক্রমে স্কুল ও কলেজগুলি খুলে দেওয়া হচ্ছে, যাতে ছাত্রছাত্রীদের আবার বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা যায় এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, পড়াশোনার সুবিধে এবং আর্থ-সামাজিক শিক্ষার সুবিধে-সহ সামগ্রিক বিকাশের ব্যাপারটি সুনিশ্চিত করা যায়।

ইউনেস্কোর একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, প্রতি এক মাস অফলাইন ক্লাস বন্ধ থাকার ফলে ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ২ মাস সময়ের সমতুল্য পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। ম্যাককিনসে এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো খ্যাতনামা সংস্থাগুলির প্রকাশিত রিপোর্টেও বিশ্বব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকার দরুণ পড়াশোনার ক্ষতির উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। আধুনিকতম প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছাত্রছাত্রীদের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও অনলাইনে পড়াশোনা কখনওই স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার বিকল্প হতে পারে না, বিশেষত প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। বর্তমানে যখন অতিমারির দ্বিতীয় প্রবাহের সংক্রমণ হার নিম্নগামী এবং ছাত্রছাত্রী ও তাদের বাবা-মায়েরা ফিরতে চাইছেন পড়াশোনার সাবেকি পদ্ধতিতে, তখন দেশের প্রায় ১৪টি রাজ্যের সরকার নিজ নিজ রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুনরায় খুলে দিতে চলেছে। চিকিৎসকরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন, এবং এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে তাঁরা বিশ্বব্যাপী শিশুদের উপরে কোভিড-১৯ অতিমারির ন্যূনতম প্রভাবের পরিসংখ্যান দর্শিয়েছেন। কিছু বিধিনিষেধ এবং উপযুক্ত প্রোটোকল মেনে চললে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পুনরায় চালু হওয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য আরও একবার বাড়ির বাইরে বেরিয়ে চিরাচরিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ফেরার সুযোগ করে দেবে।

নেতিবাচক দিক

এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে একাধিক রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যথাযথ বলে মনে হলেও ভারতে অতিমারির দ্বিতীয় প্রবাহের অপ্রত্যাশিত উত্থানের পূর্ব স্মৃতি স্কুলগুলি চালু করার ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা এবং সুচিন্তিত পদ্ধতির উপরে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বাধ্য করছে। স্কুলগুলির সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সম্পূর্ণ টিকাকরণ, সুনির্দিষ্ট কোভিড-১৯ প্রোটোকল এবং স্কুল-চত্বরে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলি পুনরায় স্কুল খোলার আগে সুনিশ্চিত করতে হবে। যদিও আরও এক বার স্কুলগুলি খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল তৈরি করা নয়। বরং শিশুরা যাতে কঠোর ভাবে সেই নিয়মাবলি মেনে চলে, সেই দিকটির উপরে নজর দেওয়াই এ ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। এ ছাড়াও যে সব ছাত্রছাত্রী দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত, তারা পুনরায় স্কুলে যাওয়া শুরু করলে, তাদেরও বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এই সব ব্যবস্থা ঠিকমতো করা হচ্ছে কি না, তা দেখার মতো পরিকাঠামো সব স্কুলে মিলবে না। গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত সরকারি স্কুলগুলিতে আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলা অত্যন্ত দুরূহ হতে পারে। তাই সরকারের উচিত সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি আদর্শ আচরণবিধি চালু করার চেষ্টা না করে স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী আচরণবিধি স্থির করা।

ভবিষ্যতের পথ

শিশুদের উপরে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব, টিকাকরণের কার্যকারিতা এবং সামাজিক ও মানসিক অবস্থার উপরে দীর্ঘদিন স্কুলে না যেতে পারার প্রভাব সংক্রান্ত গবেষণায় সম্ভাব্য ঝুঁকি ও লাভের তুল্যমূল্য বিচারে পর্যায়ক্রমে স্কুলগুলি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি যথাযথ বিকল্প পথ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু দেশ জুড়ে স্কুলগুলি খোলার পাশাপাশি সরকারের তরফেও পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রাখতে হবে। এবং সংক্রমণের সংখ্যা কতটা বাড়ছে সে বিষয়েও বিশেষ তদারকি করতে হবে। সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিলেই অবিলম্বে স্কুলগুলি বন্ধ করে দিতে হবে যত দিন না অবস্থা আবার স্বাভাবিক হয়।

চিকিৎসকরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন, এবং এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে তাঁরা বিশ্বব্যাপী শিশুদের উপরে কোভিড-১৯ অতিমারির ন্যূনতম প্রভাবের পরিসংখ্যান দর্শিয়েছেন।

সর্বোপরি, যখন আমরা এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, দেশ জুড়ে স্কুলগুলির উচিত পরিকাঠামো থেকে শুরু করে প্রযুক্তির মতো একাধিক বিষয় উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া, যাতে তাঁরা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। শারীরিক ভাবে স্কুলে উপস্থিত থেকে পড়াশোনার করার বিষয়টিকে পুনরায় নিরাপদ করে তুলতে পারে এমন নতুন উদ্যোগই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.