Published on Jun 26, 2022 Updated 0 Hours ago

ভারত যখন তার জলবায়ু প্রতিশ্রুতিগুলি অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, সেই সময় বছরের পর বছর কেন্দ্রীয় বাজেটে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির তাৎপর্য ক্রমশই বেশি করে প্রতিফলিত হয়েছে।

ইউনিয়ন বাজেটে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি —২০০০ থেকে ২০২২–এর আখ্যান

সামগ্রিক ভাবে ইতিমধ্যেই স্থাপিত (‌ইনস্টল্‌ড)‌ পুনর্নবীকরণযোগ্য ক্ষমতার নিরিখে ভারত বিশ্বে চতুর্থ   স্থানে রয়েছে। ২০০০ সালে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির (শুধু বায়ু) মোট স্থাপিত ক্ষমতা ছিল ১,১৫৫ মেগাওয়াট, যা ছিল মোট ক্ষমতার প্রায় ১.২ শতাংশ। ২০২২ সালে বায়ু, সৌর ও অন্যান্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির স্থাপিত উৎসগুলির উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ১০৫,৮৫৪ মেগাওয়াট, যা মোট স্থাপিত  উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ২৭ শতাংশ। বিশেষ করে গত দশকে ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য–ভিত্তিক স্থাপিত ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে।

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ভারতে মোট স্থাপিত ক্ষমতার নিরিখে  উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, এবং তা প্রতিফলিত হয়েছে বাজেট ভাষণে যা দক্ষ উপায়ে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, বিশেষ করে সৌরশক্তি, ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন সংস্থান এবং নীতি প্রক্রিয়াগুলির অন্বেষণ করেছে।

ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২২-২৩ ঘোষণা করা হয়েছিল৷ যে কোনও ক্ষেত্রের অগ্রগতি বা দিকনির্দেশ বোঝার জন্য ইউনিয়ন বাজেটগুলি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড৷ এই নিবন্ধে ২০০০ সাল থেকে বাজেট ভাষণগুলির পর্যালোচনা করা হয়েছে দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে: (১) একটি সামগ্রিক বিবরণ উপস্থাপন করা এবং (২) কেন্দ্রীয় বাজেটগুলিতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির নির্দেশিত গতিপথের উপর দৃষ্টিপাত করা।

২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাজেট ভাষণগুলির সমস্ত প্রস্তাবনা, সংশোধন ও ঘোষণাগুলি চারটি প্রধান শিরোনামে বিভক্ত করা হয়েছে: (১) পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা ও সক্ষমতা সংযোজন, (২) শুল্ক ও কর, (3) সক্ষমতা তৈরি করা এবং (৪) প্রণোদনা (‌ইনসেন্টিভ)‌। চিত্র ১ বাজেট ভাষণগুলিতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সঙ্গে যুক্ত বিন্দুগুলির পৃথকীকরণ উপস্থাপন করে।

চিত্র ১: ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাজেট ভাষণে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পর্কিত প্রস্তাবনা, সংশোধন ও ঘোষণা

সূত্র ১: ২০০০ থেকে ২০২২ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট ভাষণের উপর ভিত্তি করে লেখকের নিজস্ব

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা এবং ক্ষমতা সংযোজন: প্রাথমিক ভাবে ভারতে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বায়ুর প্রাধান্য ছিল। ২০০৬ সালে ভারত তার বায়ু শক্তির লক্ষ্যমাত্রা ৩,০৭৫ মেগাওয়াট (দশম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উল্লিখিত) অর্জন করেছিল, এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির জন্য প্রায় ৫৯৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে মনোযোগ স্থানান্তরিত হয় সৌরশক্তিতে। ২০১৫ সালের বাজেট ভাষণটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কারণ এতে ২০২২ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ১৭৫,০০০ মেগাওয়াট করা হয়, যার মধ্যে ১০০,০০০ মেগাওয়াট সৌরশক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইউনিয়ন বাজেট ভাষণগুলিতে উল্লেখিত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা ও ক্ষমতা সংযোজন উপস্থাপন করা হয়েছে চিত্র 2-এ ।

চিত্র ২: ইউনিয়ন বাজেট ভাষণে (‌২০০০ থেকে ২০২০)‌ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্য এবং  সক্ষমতা সংযোজন

সূত্র ২: ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাজেট ভাষণের উপর ভিত্তি করে লেখক দ্বারা একত্রিত

শুল্ক  কর: পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে গতি আনতে সৌর ও বায়ু শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদানগুলির জন্য কাস্টমস ও উৎপাদন শুল্ক ছাড় বা হ্রাস করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় বাজেটে কাস্টমস ও উৎপাদন শুল্কের সংশোধনগুলি সারণি ১–এ উপস্থাপন করা হয়েছে।

সারণি ১: ইউনিয়ন বাজেটে (২০০০ থেকে ২০২২) পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পর্কিত কাস্টমস ও উৎপাদন শুল্কের সংশোধন

সূত্র ৩: ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাজেট ভাষণের  উপর ভিত্তি করে লেখক দ্বারা একত্রিত

২০১০ সালের বাজেট ভাষণে ক্লিন এনার্জি ফান্ড বা পরিচ্ছন্ন শক্তি তহবিল  গঠনের জন্য আমদানি করা কয়লার উপর ক্লিন এনার্জি সেস চালু করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে বৈশ্বিক সংস্থাগুলিকে মেগা–উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আয়কর আইনের ৩৫ কঘ ধারার অধীনে বিনিয়োগ–সংযুক্ত আয়কর ছাড় ও অন্যান্য পরোক্ষ কর সুবিধা দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। বায়োমাস ব্রিকেট–গুলির জন্য ২০১৯ সালে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো হয়েছিল।

সক্ষমতা তৈরি করা: ২০০৩ সালের বাজেট ভাষণে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে সৌর শক্তি, বায়ু টারবাইন ও হাইড্রোজেন জ্বালানিতে প্রণোদনা-চালিত গবেষণার জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করা হয়। ২০১৩ সালে স্বল্প খরচের অর্থায়নের আকারে একটি বড় অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়। সরকার ন্যাশনাল ক্লিন এনার্জি ফান্ড থেকে ইন্ডিয়ান রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি লিমিটেডকে স্থিতিশীল পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য স্বল্প সুদে টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। ২০২১ সালে সোলার এনার্জি কর্পোরেশনের জন্য ১,০০০ কোটি টাকা এবং ইন্ডিয়ান রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা মূলধনের প্রস্তাব করা হয়েছিল৷

উৎপাদন এবং উৎপাদনসংযুক্ত প্রণোদনা: ২০০৯ সালের বাজেট ভাষণে একটি সমন্বিত শক্তি নীতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছিল। ২০০৬ সালে প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি পলিসি ডকুমেন্ট সুপারিশ করেছিল যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিগুলির জন্য যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে তা স্থাপিত ক্ষমতার পরিবর্তে উৎপাদিত শক্তির সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। ২০১৩ সালে বায়ুশক্তির জন্য উৎপাদন–ভিত্তিক প্রণোদনা পুনঃপ্রবর্তন করা হয়েছিল, এবং এই উদ্দেশ্যে নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রককে ৮০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ ২০২২-এর বাজেট ভাষণে সৌর মডিউল তৈরির জন্য উৎপাদন–সংযুক্ত প্রণোদনার জন্য ১৯, ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল, এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে ৫–৭ শতাংশ বায়োমাস পেলেটের কো-ফায়ারিংয়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।

প্রাথমিক ভাবে  শুল্ক ও কর কাঠামোর লক্ষ্য ছিল সাধারণ ভাবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে সক্ষমতা বৃদ্ধি, কিন্তু ২০২২ সাল নাগাদ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সঙ্গে যুক্ত দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে তার ফোকাস সরিয়ে আনা হয়েছিল।

২০১৫ সালে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির (ইউটিলিটি) মোট স্থাপিত ক্ষমতা ছিল প্রায় ৩৯,০০০ মেগাওয়াট, যার শতকরা হিসেবে বায়ুশক্তির (৬০ শতাংশ) প্রাধান্য ছিল। পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা ১৭৫,০০০ মেগাওয়াট করার পরিপ্রেক্ষিতে বছরটি উল্লেখযোগ্য ছিল। বায়ুশক্তি স্থির ভাবে অগ্রগতি করেছে, এবং এখন সৌরশক্তির মোট স্থাপিত ক্ষমতা ৫০,৩০০ মেগাওয়াট যা মোট স্থাপিত ক্ষমতার প্রায় ১৩ শতাংশ। ২০১০–এর পর থেকে বাজেটগুলি প্রাথমিক ভাবে গ্রিড-ইন্টারঅ্যাক্টিভ সৌরক্ষমতা ও সৌর পাম্প সেট বাড়ানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এর মধ্যে এমন ব্যবস্থা করা হয় যাতে কৃষকরা তাঁদের উদ্বৃত্ত সৌরবিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারেন। ২০১৩ সালের বাজেট স্বল্পমূল্যের অর্থের প্রাপ্যতার প্রশ্নে এই ক্ষেত্রটিকে উৎসাহিত করেছে। প্রাথমিক ভাবে  শুল্ক ও কর কাঠামোর লক্ষ্য ছিল সাধারণ ভাবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে সক্ষমতা বৃদ্ধি, কিন্তু ২০২২ সাল নাগাদ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সঙ্গে যুক্ত দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে তার ফোকাস সরিয়ে আনা হয়েছিল। একই ভাবে, প্রণোদনা কাঠামোও জেনারেশন লিঙ্কড থেকে হয়ে গিয়েছে প্রোডাকশন লিঙ্কড। পরবর্তী বছরগুলিতে বাজেট ভাষণগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধির কথাও বিবেচনা করেছে।

২০১৯–এর বাজেট ভাষণে উল্লেখ করা হয়েছে, “ভারতের ইনস্টল করা সৌর উৎপাদন ক্ষমতা গত পাঁচ বছরে দশ গুণ বেড়েছে। এই ক্ষেত্রটি এখন লাখ লাখ নতুন যুগের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।” পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ভারতে মোট স্থাপিত ক্ষমতার নিরিখে  উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, এবং তা প্রতিফলিত হয়েছে বাজেট ভাষণে যা দক্ষ উপায়ে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, বিশেষ করে সৌরশক্তি, ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন সংস্থান এবং নীতি প্রক্রিয়াগুলির অন্বেষণ করেছে। ভারত নেট–জিরো নির্গমনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাজেটে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ জায়গা পাবে, এটাই প্রত্যাশিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.