Published on May 04, 2023 Updated 0 Hours ago

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সক্ষমতা স্থাপনের তাড়াহুড়োর মূল্য দিতে হতে পারে বনভূমিকে, এবং এইভাবে ভারতের বার্ষিক কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পেতে পারে

ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি: জমির চাহিদা

এই নিবন্ধটি ‘‌কম্প্রিহেনসিভ এনার্জি মনিটর: ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ওয়র্ল্ড’‌ সিরিজের অংশ


গত একশো বছরে শক্তির রূপান্তরগুলি ছিল বাজারচালিত ধীর প্রক্রিয়া। বাজার, সংজ্ঞা অনুসারে, শক্তি উৎপাদন ও শক্তির ব্যবহারের নেতিবাচক বাহ্যিকতাগুলিকে উপেক্ষা করে, যার মধ্যে আছে স্থানীয় দূষণ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (‘‌কার্বন’‌) নির্গমন। বর্তমান বৈশ্বিক শক্তি রূপান্তর আগের রূপান্তরগুলির থেকে ভিন্ন, কারণ এটি প্রাথমিকভাবে দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ সীমিত করার ক্ষেত্রে বাজারের ব্যর্থতা মোকাবিলার নীতি দ্বারা চালিত। নীতিচালিত শক্তি রূপান্তর এইভাবে প্রাথমিক বাহক হিসাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বন নির্গমন সীমিত করতে প্রায় একচেটিয়াভাবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির (আরই) উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। কিন্তু  আরই–র অত্যন্ত বিচ্ছুরিত প্রকৃতির জন্য সৌর প্যানেল বা বায়ু টারবাইনের মতো বিস্তৃত স্থাপনার প্রয়োজন হয়, যা সূর্যের আলোক শক্তি বা বায়ুর গতিশক্তি ধারণ করে এবং তাকে ব্যবহারযোগ্য পরিমাণে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে। এর অর্থ হল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনায় আরই–র এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপাদান ও প্রাকৃতিক সম্পদের (প্রাথমিকভাবে জমি) খরচ যথেষ্ট বেশি। আরই প্রকল্পের জন্য জমির এই বর্ধিত চাহিদা ভারতের আপডেট করা জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি)–এর অংশ হিসাবে বনভূমির পুনর্নবায়ন অঙ্গীকারের  জন্য প্রয়োজনীয় জমির চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি  জমি

অতীতের শক্তির রূপান্তরগুলি দহনের (অক্সিডেশন) কারণে নির্গত শক্তির উল্লেখযোগ্য উন্নতি, এবং প্রতিটি ধাপে হাইড্রোজেন উপাদান বৃদ্ধির কারণে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের সঙ্গে জড়িত ছিল। কাঠ, যার হাইড্রোজেন থেকে কার্বন অনুপাত (এইচ/সি) প্রায় ০.১, তা দিয়ে শুরু করে বাজার চলে যায় কয়লায় যার এইচ/সি অনুপাত ১, এবং তারপরে তেলের দিকে, যার অনুপাত ২, এবং তারও পরে প্রাকৃতিক গ্যাসে, যেখানে হাইড্রোজেন থেকে কার্বন অনুপাত ৪। এইচ/সি অনুপাতের পদ্ধতিগত বৃদ্ধি  এই দৃষ্টিভঙ্গির দিকে চালিত করে যে হাইড্রোজেন শক্তি বাজারে ‘‌জয়ী’‌ হয়েছে, এবং অবশেষে শক্তির একমাত্র বাহক হয়ে উঠবে। গত দুই দশকে শুরু হওয়া আরই–র দিকে নীতিচালিত রূপান্তর, কিছু অর্থে, হাইড্রোজেনের পরিবর্তে প্রাথমিক শক্তি বাহক হিসাবে বিদ্যুৎকে নিয়ে এসে বাজারভিত্তিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

অতীতের প্রতিটি শক্তির রূপান্তরের সঙ্গে প্রভাবশালী জ্বালানির মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ঘনত্ব (প্রতি ইউনিট ওজনের শক্তি উপাদান) বা ভলিউমেট্রিক শক্তি ঘনত্ব (প্রতি ইউনিট আয়তনে শক্তি সামগ্রী) বৃদ্ধি জড়িত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, শুকনো কাঠের শক্তির ঘনত্ব যেখানে প্রায় ১৭ মিলিয়ন জুল প্রতি কিলোগ্রাম (এমজে/কেজি), সেখানে কয়লার জন্য ২২–২৫ এমজে/কেজি এবং তেল পণ্যের জন্য ৪২ এমজে/কেজি। অপরিশোধিত তেলের জন্য ৪৫ জিজে (গিগা জুলস)/এম৩–এর তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের শক্তির ঘনত্ব ৩৫এমজে/কেজিএমজে/কিউবিক মিটার (এম৩) প্রায় ১০০০ গুণ বেশি, যার কারণে তেলের পরিবহণ খরচ প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় অনেক সস্তা। হাইড্রোজেন হল একটি শক্তির বাহক যার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ঘনত্ব ১৪৩ এমজে/কেজি, যা সর্বোচ্চগুলির মধ্যে একটি, কিন্তু জেট ফুয়েল (কেরোসিন)–এর ৩৩ এমজে/কেজি–র তুলনায় এর আয়তনের শক্তির ঘনত্ব ০.০১ এমজে/লিটার (আই)   , অর্থাৎ ৩০০০ গুণের বেশি। ফলে হাইড্রোজেনকে বিমান চলাচলের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়।

ভ্যাকলাভ স্মিল, একজন প্রভাবশালী পরিবেশবিজ্ঞানী, বিভিন্ন শক্তির উৎসের তুলনা করার জন্য প্রতি বর্গ মিটার প্রতি ইউনিট পৃষ্ঠের (জল বা জমি) অনুপাতে শক্তির প্রবাহকে (ডব্লিউ/এম২) শক্তির ঘনত্ব হিসাবে ব্যবহার করেন। বিদ্যুতের ঘনত্বের জন্য তাঁর বিশদ গণনাগুলির মধ্যে রয়েছে মাইনিং ও ড্রিলিংয়েরর মতো আপস্ট্রিম ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় জমি, এবং সেইসঙ্গে স্টোরেজ (বিশেষত কয়লা) ও বর্জ্য নিষ্পত্তির মতো ডাউনস্ট্রিম কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় জমির তুলনা। স্মিল–এর হিসাব অনুযায়ী সৌদি আরবের মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলিতে তেল উত্তোলনের জন্য অপরিশোধিত তেলের সর্বোচ্চ শক্তি ঘনত্ব ৬৫,০০০ ডব্লিউ/এম২ এবং কম সমৃদ্ধ অঞ্চলে প্রায় ৫০০ ডব্লিউ /এম২। প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য বিদ্যুতের ঘনত্ব ২০০ ডব্লিউ /এম২ থেকে ২০০০ ডব্লিউ /এম২, এবং কয়লার জন্য ১০০ ডব্লিউ /এম২ থেকে ১০০০ ডব্লিউ /এম২ পর্যন্ত। আরই সম্পদের ক্ষেত্রে সৌরশক্তির ঘনত্ব হল ৪–১০ ডব্লিউ /এম২ (ফটোভোলটাইক ও ঘনীভূত সৌর শক্তি উভয়ই), বায়ুর জন্য ০.৫–১.৫ ডব্লিউ /এম২, এবং বায়োমাসের জন্য ০.৫–০.৬ ডব্লিউ /এম২।  যদিও অতীতের শক্তির রূপান্তরগুলি উচ্চ শক্তির ঘনত্বের শক্তির উৎসগুলির দিকে চালিত হয়েছে,  বর্তমানে যে শক্তির রূপান্তর চলছে তা হল বৈশ্বিক শক্তি ব্যবস্থাকে এমন জ্বালানির দিকে রূপান্তরের চেষ্টা যেখানে শক্তির ঘনত্ব নিম্নতর। এর অর্থ হল যে একটি আরই–ভিত্তিক শক্তি ব্যবস্থার জন্য নতুন পরিকাঠামো শুধুমাত্র অনেক বড় হবে না, বরং ভারতে অন্য যে কোনও ধরনের ভূমি ব্যবহার, বিশেষ করে নতুন করে বনায়নের জন্য ভূমির প্রয়োজনকে অগ্রাহ্য করবে।

ইস্যু

বাস্তব পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা যায় যে সারা বছর ধরে সৌর বিকিরণের অনুকূল অঞ্চলগুলির বেশিরভাগই ভারতের পতিত ভূমির সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ প্রোজেকশনে ভারতে মরুভূমি ও শুকনো ঝোপঝাড়ের মধ্যে মাত্র ১১–১২ শতাংশ সৌর প্রকল্প পাওয়া যায়। পতিত ভূমি প্রকল্প ডেভেলপারদেরও পছন্দ নয়। পতিত ভূমিতে প্রকল্পের উন্নয়নে ব্যয় বেশি হয়, আংশিকভাবে অবান্ধব ভূখণ্ডের কারণে এবং আংশিকভাবে সহায়ক পরিকাঠামোর অভাবের কারণে। উৎপাদিত বিদ্যুৎকে ভোক্তা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবহণ পরিকাঠামোও খরচ বাড়ায়। কিন্তু যখন পতিত ভূমি ব্যবহার করা হয়, তখন আরই প্রকল্পের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জড়িত ক্ষুদ্র জমির মালিকদের উপর আরোপিত আর্থ–সামাজিক খরচ এবং সেই সঙ্গে পরিবেশগত খরচ কম হয়। আরই থেকে ১৭৫ গিগাওয়াট লক্ষ্য পূরণের জন্য ভারতে প্রয়োজনীয় জমির একটি ব্যাপকভাবে উদ্ধৃত চিত্র হল ৫৫,০০০ বর্গকিলোমিটার থেকে ১২৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার। এই হিসাবের ভিত্তি বায়ু প্রকল্পের জন্য বিদ্যুতের ঘনত্ব ২ এমডব্লিউপি (মেগাওয়াট পিক)/বর্গ কিমি, এবং সৌর ফটোভোলটাইক প্রকল্পের জন্য ২৬  এমডব্লিউপি/বর্গ কিমি। প্রক্ষিপ্ত এলাকাটি বড় নয়, কারণ এটি দেশের মোট ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১–৩ শতাংশ, কিন্তু এটি পতিত ভূমির প্রায় ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ। অন্য একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে যদি ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭৮ শতাংশ সৌর পিভি দিয়ে করা হয় , এবং ২০৫০ সালে এর প্রায় ৩ শতাংশ ছাদের সৌর পিভি থেকে উদ্ভূত হয়, তাহলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি এলাকা ২০১০ সালের মোট শহুরে জমির ১৩৭–১৮২ শতাংশের বেশি হবে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি ১০০ হেক্টর সোলার পিভি প্যানেলের জন্য বৈশ্বিক স্তরে ৩১ থেকে ৪৩ হেক্টর অব্যবস্থাপিত বন সাফ করা হতে পারে। ভারতে সৌর প্রকল্পের জন্য একই পরিমাণ জমি ২৭ থেকে ৩০ হেক্টর অব্যবস্থাপিত বন সাফ করবে। এটি বাস্তবায়িত হলে তা ভারতের একটি কম আলোচিত এনডিসি অঙ্গীকারের বিরুদ্ধে যাবে, যা হল ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন বন ও গাছের আচ্ছাদনের মাধ্যমে ২.৫ থেকে ৩ বিলিয়ন টন (বিটি)‌ কার্বন ডাইঅক্সাইড সমতুল্য একটি ‘‌অতিরিক্ত কার্বন সিঙ্ক’  তৈরি করা।

ল্যান্ড গ্যাপ রিপোর্ট ২০২২ অনুসারে বনায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য ভারতের ৫৬ শতাংশ জমি নতুন বন তৈরির জন্য উৎসর্গ করতে হবে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৪ শতাংশ) ও চিনের (২ শতাংশ) মতো বৃহৎ দেশগুলির বনাঞ্চলের জন্য প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় জমির চেয়ে অনেক বড় মাত্রার একটি প্রয়োজন। অন্যান্য অনুমান অনুযায়ী নতুন করে বনায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জমির আয়তন হল ৩০–৪০ মিলিয়ন হেক্টর, যা বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মিলিত আয়তনের সমান। পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি স্পষ্টতই ভারতের আরই ইনস্টলেশন লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়নি। আরই ইনস্টলেশন আর বনভূমির মধ্যে জমির জন্য প্রতিযোগিতা সব সময় আরই ইনস্টলেশনের পক্ষে যেতে পারে, যেগুলি কিনা বড় শিল্প ও অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা সমর্থিত। অর্থাৎ,পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সক্ষমতা স্থাপনের তাড়াহুড়োর মূল্য দিতে হতে পারে বনভূমিকে, যা অন্যথায়  তাত্ত্বিকভাবে সমস্ত ভারতের বার্ষিক প্রায় ৩ বিটি কার্বন নির্গমন শোষণের জন্য একটি ‘সিঙ্ক’ হতে পারে।

সূত্র: বিশ্ব ব্যা‌ঙ্ক ডেটাবেস
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Lydia Powell

Lydia Powell

Ms Powell has been with the ORF Centre for Resources Management for over eight years working on policy issues in Energy and Climate Change. Her ...

Read More +
Akhilesh Sati

Akhilesh Sati

Akhilesh Sati is a Programme Manager working under ORFs Energy Initiative for more than fifteen years. With Statistics as academic background his core area of ...

Read More +
Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar, Assistant Manager, Energy and Climate Change Content Development of the Energy News Monitor Energy and Climate Change. Member of the Energy News Monitor production ...

Read More +