Author : Kabir Taneja

Published on Jan 13, 2022 Updated 0 Hours ago

দুই মুখ্য শক্তি আলোচনার টেবিলে ফিরলেও বর্তমানে তাদের পক্ষে একে অন্যের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালানো আগের চেয়েও কঠিন হয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে।

ইরান পরমাণু চুক্তির পুনর্বিবেচনা এবং পশ্চিম এশিয়ায় সুরক্ষার গতিপথ

যৌথ সর্বাত্মক কর্মসূচি (জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন বা জে সি পি ও এ) যা সাধারণ ভাবে ইরান পরমাণু চুক্তি বলে পরিচিত — সেটি দীর্ঘমেয়াদি ভূ-রাজনৈতিক টানাপড়েন, তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং পি৫ + ১ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের আলাপ-আলোচনার পর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ২০১৫ সালে স্বাক্ষরের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়। কেউ কেউ এই চুক্তিটি সমর্থন করেছেন, আবার কেউ প্রবল ভাবে সমালোচনা করেছেন। তবে এই চুক্তিটির ফলে ইরানের পক্ষে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং অর্থনীতির মূলস্রোতে ফেরা এবং সামরিক সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুক্তি থেকে আমেরিকার সরে আসার একতরফা, অনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলে পরিস্থিতি ফের পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়।

বর্তমানে যদিও পি৫ + ১ এবং ইরানের মধ্যে পুনরায় আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে এবং উভয় পক্ষই এর মধ্যে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার কথা মাথায় রেখে সম্পর্কের উন্নতিসাধনে আগ্রহী, তবুও দুই পক্ষের সামনেই এক কঠিন বন্ধুর পথ বর্তমান। বিগত বছরগুলিতে ইরানের উপরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সৃষ্টি করা প্রবল চাপ — যা কখনও কখনও প্রায় সামরিক সংঘাতের পর্যায়ে পৌঁছেছিল — তেহরানে প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির ক্ষমতাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। রৌহানি এক জন নরমপন্থী রাজনীতিক যিনি আলোচনার সময়ে (একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত) দেশের ক্ষমতাশালী রক্ষণশীল সম্প্রদায় এবং আয়াতোল্লার সমর্থন পেয়েছেন, যে আলোচনা অবশেষে পরমাণু চুক্তিতে বাস্তবায়িত হয়। এই চুক্তিটি ত্রুটিপূর্ণ হলেও শিয়া-ইসলাম এবং পশ্চিমি গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রটির স্থিতাবস্থা ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রথম পদক্ষেপ। আরও গুরুত্বপূর্ণ, এর ফলে শিয়া-ইসলামের পরমাণু পরিকল্পনাও আন্তর্জাতিক নিয়মবিধি এবং পর্যবেক্ষণের আওতাভুক্ত হয়েছে।

বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির নতুন শাসনকালে ইরান ইতিমধ্যেই দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে। ইরান ফিরে যেতে চায় সেই সব শর্তে যা ২০১৭ সালে স্থির করা হয়েছিল এবং এই নিশ্চয়তা চায় যে ভবিষ্যতে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট পারস্পরিক আলোচনা ছাড়া এই সব শর্ত পরিবর্তন করতে পারবেন না।

বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির নতুন শাসনকালে ইরান ইতিমধ্যেই দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে। ইরান ফিরে যেতে চায় সেই সব শর্তে যা ২০১৭ সালে স্থির করা হয়েছিল এবং এই নিশ্চয়তা চায় যে ভবিষ্যতে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট পারস্পরিক আলোচনা ছাড়া এই সব শর্ত পরিবর্তন করতে পারবেন না। অন্যান্য শর্তের সঙ্গে ইরানের এ হেন দাবি পেশ করা ইউরোপীয় কূটনীতিকদের দ্বারা ইতিমধ্যেই ‘অগ্রহণযোগ্য পরিবর্তন’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। কেউ কেউ এমনটাও বলছেন যে, এই অছিলায় তেহরান আসলে তার পরমাণু কর্মসূচিকেই ত্বরান্বিত করছে। ভারত-সহ পৃথিবীর অন্য দেশগুলি জে সি পি ও এ-র বাস্তবায়নের জন্য উঠে পড়ে লাগলেও ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে কাজটি মোটেও ততটা সহজ নয়। এমনকি চিনও — ইরানের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব থাকা এবং ক্রমবর্ধমান আমেরিকা-চিন দ্বৈরথের প্রেক্ষিতে তেহরানের অন্যতম প্রধান সুবিধা প্রদানকারী হিসেবে বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও — পারস্পরিক আলোচনার প্রতি ইরানের মনোভাব নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছে

মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া) অঞ্চলে একটি স্থিতিশীল সুরক্ষার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে জে সি পি ও এ-কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ রূপে গণ্য করা হয়। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আব্রাহাম চুক্তির সইসাবুদের ব্যাপারটি তদারকি করেন। ফলে ইউ এ ই বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নেতৃত্বে আরব দেশগুলির সন্নিবেশ সুনিশ্চিত হয় এবং দশকব্যাপী আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্বকে সরিয়ে রেখে ইজরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা সম্ভব হয়। যদিও অন্য দিকে ইজরায়েলের কাছ থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার উপরে নির্ভর করে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে আরও কোণঠাসা করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে একটি ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, আজ পর্যন্ত ইরানের সমস্ত আঞ্চলিক অভিযান — ইয়েমেন এবং সিরিয়ায় যুদ্ধ থেকে শুরু করে লেবাননে হেজবোল্লাহ এবং প্যালেস্তাইনের ক্ষেত্রে হামাস-এর অবস্থান — আরব দেশগুলি এবং ইজরায়েল উভয়েই প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেছে। বাস্তবে, ইরান এবং ইজরায়েল দু’দেশই বেশ কিছু সময় ধরে পারস্পরিক সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। যদিও এই সংঘাতের সিংহ ভাগই ঘটেছে চোখের আড়ালে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশই অঞ্চলটির মধ্যে ও অঞ্চলটির বাইরে একে অন্যের বিরুদ্ধে গোপন কৌশল অবলম্বন করেছে। ইরানের সীমানার অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলিকে — বিশেষত পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত — লক্ষ্যবস্তু করার ব্যাপারে ইজরায়েলের ব্যাপক ক্ষমতা নিঃসন্দেহে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

যদিও অন্য দিকে ইজরায়েলের কাছ থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার উপরে নির্ভর করে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে আরও কোণঠাসা করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে একটি ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে।

যদিও ইউ এ ই বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির অবলম্বন করা সাম্প্রতিক কৌশল — তা তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক নমনীয় করার চেষ্টাই হোক বা সাম্প্রতিক কালে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সংহতি স্থাপনই হোক — আসলে দেখায় যে, অঞ্চলটির একক সংঘর্ষ কেন্দ্র থেকে উদ্ভূত সংঘাতের সম্ভাবনা কমানোর প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এর ফলে ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ফলে আবু ধাবি এক উল্লেখযোগ্য অবস্থান লাভ করেছে, যা অনেকেরই নজর কেড়েছে। এমনকি সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও রিয়াধের সরাসরি ইরানের সঙ্গে সংযোগ সাধনের পথে বাগদাদের মধ্যস্থতা এক সঠিক পদক্ষেপ। পাশাপাশি, মধ্য প্রাচ্যের চিরাচরিত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের একগুচ্ছ আঞ্চলিক পরিবর্তন — যেমন অর্থনৈতিক কৌশলের জন্য তেলের উপরে নির্ভর করা, অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই সুরক্ষার জন্য মার্কিন সেনা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার উপরে অতিরিক্ত নির্ভরতা — সবই দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তব। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনার আচমকা প্রত্যাহার সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরবের মতো মার্কিন বন্ধুদেশগুলি এবং অঞ্চলটিতে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র শক্তি ইজরায়েলকেও কৌশলগত এবং পন্থাগত সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে মার্কিন শক্তির উপরে নির্ভরতা নিয়ে পুনরায় ভাবতে বাধ্য করেছে।

ইরানে ক্ষমতাবদল সত্ত্বেও, ইরানের রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থায় মার্কিন বিরোধী যে তীব্র অবস্থানের কথা বলা হয় — বিশেষত ইরানে বর্তমান রক্ষণশীল নেতৃত্ব নাকি আমেরিকার সঙ্গে কোনও চুক্তিতে সম্মত হবে না — এই ব্যাপারটির বাস্তব কোনও ভিত্তি নেই। বরং তেহরানের জন্য নতুন করে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করার এখনই প্রকৃষ্ট সময় যখন ইরানে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা কট্টরপন্থীরা তাদের মতো করে চুক্তি সম্পাদন করতে পারবেন, যেমনটা পূর্বে নরমপন্থী রৌহানির সময়ে সম্ভব হয়নি।

ইরানে ক্ষমতাবদল সত্ত্বেও, ইরানের রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থায় মার্কিন বিরোধী যে তীব্র অবস্থানের কথা বলা হয় — বিশেষত ইরানে বর্তমান রক্ষণশীল নেতৃত্ব নাকি আমেরিকার সঙ্গে কোনও চুক্তিতে সম্মত হবে না — এই ব্যাপারটির বাস্তব কোনও ভিত্তি নেই।

জে সি পি ও এ-র বিরুদ্ধে একটি কট্টর সমালোচনা হল এই যে চুক্তিটি ইরানের অন্যান্য সংঘাত বিন্দুগুলির কথা, যেমন অঞ্চলটিতে ইরানের বিদেশনীতি এবং বিশেষ বিশেষ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির প্রতি ইরানের সমর্থন ইত্যাদির উপরে আলোকপাত করে না। এ রকমটা সত্যি হলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে, জে সি পি ও এ তেহরানকে শুধু মাত্র আলোচনার টেবিলে আসতেই বাধ্য করেনি, তারও ঊর্ধ্বে উঠে আঞ্চলিক সুরক্ষার বদলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে এবং পরমাণু শক্তির প্রশ্নটিতে প্রত্যক্ষ আলোকপাত করতেও বাধ্য করেছে। এই ক্ষেত্রে, জে সি পি ও এ-এর বিরুদ্ধবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ চুক্তি হলেও আসলে তা বিকল্প উপায়গুলির চেয়ে ঢের ভালো এবং সংকটের বিভিন্ন দিকগুলি নিয়ে আলাপ-আলোচনার অন্য দিক খুলে দেয়। ইয়েমেন, সিরিয়া বা তার বাইরে ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে গতিশীল পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য সীমিত ফলাফল দর্শিয়েছে। পাশাপাশি, প্রকাশ্যে বিরুদ্ধ অবস্থান সত্ত্বেও ইরান এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই আলাপ-আলোচনা করা পছন্দ করবে। সমস্ত পক্ষের দ্বারাই চুক্তির মূল ভিত্তিগুলিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা (যে ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই সামান্য সমঝোতা করতে হবে) যথেষ্ট আকর্ষক।

বর্তমানে পারস্পরিক আলোচনার জমি দুর্বল হলেও পাশ্চাত্যের কৌশলগত ধৈর্য এবং ইজরায়েলের মতো দেশের পন্থাগত স্থৈর্য স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এক কূটনৈতিক সন্ধি গড়ে তুলতে পারে, যা দুই পক্ষের জন্যই গ্রহণযোগ্য। কূটনীতি ছাড়া অন্যান্য সম্ভাব্য পথ আন্তর্জাতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.