Published on Feb 04, 2023 Updated 0 Hours ago

রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে আইনি ত্রুটি দূর করতে হবে

রাজনৈতিক দল এবং অস্বচ্ছ নির্বাচনী অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ

গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন ঠিক তেমনটা, যেমনটা অর্থনীতির ক্ষেত্রে আর্থিক বাজার। নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলির মাধ্যমে জনগণ থেকে সরকারের কাছে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রবাহকে চালনা করে, যা আর্থিক বাজারে সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মতো কাজ করে, বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ায় এবং স্থিতিশীলতাকে সুনিশ্চিত করে। ভারতে নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি সর্বজনীন আইনের অনুপস্থিতি এমন এক আইনি শূন্যতা যা পূরণের অপেক্ষায় রয়েছে।

ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির জন্য প্রবিধান

নির্বাচন সংক্রান্ত ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৮৮ সালে সংস্কার করে ‘রাজনৈতিক দলগুলির নিবন্ধীকরণ’ সংক্রান্ত একটি নতুন ধারা ৪ক যোগ করা হয়। এটির লক্ষ্য ছিল ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) জন্য একটি বাস্তবিক নির্দেশিকা তৈরি করা যা ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন ভারতের সংবিধানের ৩২৪ ধারার অধীনে দেওয়া দায়িত্ব অনুযায়ী নির্বাচন তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

নাগরিকদের যে কোনো সংগঠন তার মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন জমা দিয়ে এবং সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়ে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য ইসিআই-তে আবেদন জানাতে পারে। এরপর ‘স্বীকৃতি’ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি আরও কঠিন। এটির জন্য কার্যকারিতা মানদণ্ড পূরণ করা প্রয়োজন, যার মধ্যে একটি স্বীকৃত জাতীয় বা রাজ্যস্তরের দল হওয়ার জন্য পূর্ববর্তী নির্বাচনে দেওয়া ভোটের ন্যূনতম অংশ এবং জয়ী আসনের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত। এ কথা আশ্চর্যের নয় যে, বিধি মেনে চলায় ত্রুটির জন্য ইসিআই অন্যান্য ৫৩৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরে বর্তমানে ২২৫৯টি নিবন্ধিত অস্বীকৃত রাজনৈতিক দল (আরইউপিপি), মাত্র সাতটি স্বীকৃত জাতীয় দল এবং ৫৪টি রাজ্যস্তরীয় দল রয়েছে।

নিবন্ধন আয়কর থেকে প্রাপ্ত অনুদানকে এই শর্তে ছাড় দেয় যে, দল নিবন্ধীকরণের পাঁচ বছরের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং আর্থিক বছর শেষের ছ’মাসের মধ্যে অনুদানের বার্ষিক বিবরণী এবং নিরীক্ষিত বার্ষিক হিসাব জমা দেবে।

একটি নিয়ন্ত্রক ব্যবধান: পৌর রাজনৈতিক দল

তিন দশক আগে ১৯৯২ সালে, ৭৪তম সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে পৌরসভাগুলি প্রশাসনের তৃতীয় স্তরে উঠে এসেছিল। কিন্তু শুধু মাত্র পৌরস্তরে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলির জন্য একটি সমান্তরাল স্বীকৃতির কথা এখনও পর্যন্ত ভেবে দেখা হয়নি। ভারতে সুবিশাল জনসংখ্যা-সহ ৩৪৩টি শহর রয়েছে (২০১১); এগুলির মধ্যে ২ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহরের সংখ্যা ১৩, ১ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহরের সংখ্যা ৩৩, অর্ধ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহরের সংখ্যা ৪৩টি এবং ১ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহরের সংখ্যা ২৫৩টি।

ভারতের ৩৭৭ মিলিয়ন সম্মিলিত শহুরে জনসংখ্যা তৃতীয় বৃহত্তম দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ চিন ব্যতীত অন্য সমস্ত দেশের তুলনায় বেশি হলেও এখনও পৌর উদ্বেগের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলির জন্য কোনও নির্দিষ্ট প্রবিধান নেই৷

নির্বাচনের জন্য সরকারি অর্থায়ন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৪টি স্টেটের অনুশীলনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ভারত সরকার দলীয় বা নির্দল প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে সরাসরি অর্থায়ন করে না। তবে এটি রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়কর থেকে অব্যাহতি দিয়েছে, রাজনৈতিক দল গঠনে ব্যক্তিগত কর্পোরেট এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে উত্সাহিত করেছে। রাজনৈতিক দলের বৈচিত্র্য এবং সংখ্যা দর্শিয়েছে যে, এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ।

নির্বাচনী প্রচারে ব্যক্তিগত, বিশেষ করে কর্পোরেট তহবিল, ধোঁয়াশাময় অনিবার্য আশঙ্কার জন্ম দেয়। এটি ব্যক্তিগত এবং জনস্বার্থ দুই পক্ষের মাঝেই লাল সঙ্কেত প্রদর্শন করে, বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলির সরকার গঠনের পর। এই পদ্ধতির একটি সহজ বিকল্প হতে পারে সরকারের তরফে প্রত্যেক নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীকে ন্যায়সঙ্গত নির্বাচনী খরচের জন্য একটি পূর্বনির্ধারিত অর্থ প্রদান করা। সরকারি তহবিলের অপব্যবহার রুখতে সরকারি অর্থায়নের আগে প্রার্থীর প্রতি জনসমর্থন সুনিশ্চিত করতে প্রার্থীদের জনসাধারণের কাছ থেকে একটি ন্যূনতম তহবিল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তারপর একটি নির্দিষ্ট সীমা অবধি সমপরিমাণ সরকারি অর্থের লভ্যতা থাকবে। ভারতে সমস্যাটি সরকারি বাজেটের আর্থিক টানাটানি এবং বিকল্প বিনিয়োগ অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারে ব্যক্তিগত, বিশেষ করে কর্পোরেট তহবিল, ধোঁয়াশাময় অনিবার্য আশঙ্কার জন্ম দেয়। এটি ব্যক্তিগত এবং জনস্বার্থ দুই পক্ষের মাঝেই লাল সঙ্কেত প্রদর্শন করে, বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলির সরকার গঠনের পর।

ইসিআই সংসদীয় আসনগুলিতে নির্বাচনী প্রচার-ব্যয়ের ঊর্ধ্বসীমা (২০২২ সালের জানুয়ারি মাস) নির্ধারণ করেছে ৯.৫ মিলিয়ন টাকা এবং রাজ্য বিধানসভা আসনগুলিতে ৪ মিলিয়ন টাকা৷ সংসদীয় আসনগুলিতে গড় ভোটার সংখ্যা হল ১.৭ মিলিয়ন যার মধ্যে লক্ষদ্বীপে মাত্র ৫৫০০০ ভোটারের মতো স্বল্প সংখ্যা থেকে শুরু করে দিল্লিতে ২ মিলিয়নের বেশি উচ্চ জনসংখ্যাবিশিষ্ট কেন্দ্র রয়েছে।

প্রার্থী প্রতি ৯.৫ মিলিয়ন টাকা ইসিআই নির্ধারিত খরচ সীমার ৫০ শতাংশ ‘খরচ সমান ভাগে ভাগ করে নেওয়ার ভিত্তিতে’ যদি  সরকারি নির্বাচনী অনুদান হিসেবে প্রত্যেক প্রার্থীকে দেওয়া হয়, তাহলে ২০১৯ সালের ৫৪২টি লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৮,০৫৪ জন প্রার্থীর হিসেবে মোট ৩৮.৩ বিলিয়ন টাকা ব্যয় করতে হবে। এটি ২০২০ সালে ইসিআই-এর ২.৬ বিলিয়ন টাকার বার্ষিক বাজেটের প্রায় ১৪  গুণ।

একটি সংসদীয় নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীকে ৪.৮ মিলিয়ন টাকা হস্তান্তর করা প্রার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে তোলার কারণ হয়ে উঠতে পারে, যার ফলে এটি অনুৎপাদনশীল হলেও লাভজনক  পঞ্চবার্ষিক কুটিরশিল্পে পরিণত হতে পারে। এ কথা মনে রাখতে হবে যে একজন গড় ভারতীয় প্রতি বছরে মাত্র ০.১৫ মিলিয়ন টাকা বা পাঁচ বছরে এই পরিমাণের এক-ষষ্ঠাংশ উপার্জন করে এবং চাকরির জোগানও কম।

নির্বাচনী অর্থায়নে বড় নগদ অর্থ প্রদান বন্ধ করতে নির্বাচনী বন্ডের ব্যবহার

বেহিসেবি নগদ টাকা দ্বারা অর্থায়িত নির্বাচন-সহ দুর্নীতির গভীর অবস্থার অবসান করতে ২০১৬-১৭ সালে বড় অঙ্কের নোট ডিমনিটাইজেশন করার পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলি ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের জন্য একটি ‘নির্বাচনী বন্ড’ প্রকল্প চালু করেন। এটি শুধুমাত্র একটি ব্যাঙ্কিং লেনদেনের মাধ্যমে (নগদ নয়) ক্রয়যোগ্য কাগুজে ‘প্রমিসরি নোট’ ছিল। পূর্ববর্তী নির্বাচনে অন্তত ১ শতাংশ ভোট পেয়েছে এমন কোনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা এই বন্ড কিনতে পারতেন। সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখাগুলি তার সুবিস্তৃত নেটওয়ার্কের দরুন এর এক মাত্র মনোনীত বিক্রেতা। বন্ডগুলি ১৫ দিনের জন্য বৈধ থাকে যার মধ্যে সেগুলি নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ করা সম্ভব। ক্রেতা-দাতা এর ফলে কেনা বন্ডের উপর কর ছাড় পাবেন, যেমনটা কোনও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দান করলে পাওয়া যায়।

নগদ অনুদানের বিকল্প হিসেবে নির্বাচনের সময় বড় অঙ্কের তহবিল দান করার ক্ষেত্রে দাতাদের পরিচিতি গোপন রাখাকে এই প্রক্রিয়াটি সহজ করে তোলে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) রিপোর্ট (জুলাই ২০২২) অনুসারে দাতারা পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টিকে স্বাগত  জানিয়েছেন। এর ফলে প্রত্যাশামাফিক শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে এবং তারা ২.১ বিলিয়ন টাকা অথবা ২০১৭-১৮ সালে কেনা বন্ডের ৯৫ শতাংশ পেতে সমর্থ হয়েছে৷ এই খাতে ২০১৮-১৯ সালে ১৪.৫ বিলিয়ন টাকা এবং ২০১৯-২০ সালে ২৫.৬ বিলিয়ন টাকা এসেছে।

এ কথা সত্যি যে, বিজেপি সবচেয়ে বেশি লাভবান হলেও এই প্রকল্পটির সর্বজনীন উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায় না, অর্থাৎ নির্বাচনী অর্থায়নে হিসাববিহীন নগদ টাকার ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়টি ব্যর্থ হয় না। ক্ষমতাসীন দলে কেন্দ্রীভূত কর্পোরেট অনুদান সম্ভাব্য অপ্রীতিকর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার বিপদসঙ্কেতকেই দর্শায়। কিন্তু নগদ অর্থায়ন থেকে ব্যাঙ্কভিত্তিক তহবিল ব্যবহারে পরিবর্তনকেও স্বাগত জানানো হয়েছে।

বিশেষ ব্যক্তিগত নয়

বন্ড সাধারণত নাগরিকদের কাছেই অর্থদাতার পরিচয় গোপন রাখে।  এসবিআই একটি সরকারি মালিকানাধীন ব্যাঙ্ক, যাকে রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা বন্ড কেনা এবং তার নগদীকরণ সংক্রান্ত তথ্য অনানুষ্ঠানিক ভাবে ভাগ করে নেওয়ার জন্য সরকার রাজি করাতে পারে। কিন্তু এডিআর-কে তা জানাতে অস্বীকার করতে পারে এই ব্যাঙ্ক৷ তথ্যের গোপনীয়তাকে আরও ভাল ভাবে রক্ষা করে তথ্যে প্রবেশের এই অসামঞ্জস্যতা সংশোধন করা উচিত।

এই বন্ডগুলি বিক্রির ভিত্তি বিস্তৃত করে সমস্ত ব্যাঙ্কের হাতে তুলে দিলে গোপনীয় তথ্য অনানুষ্ঠানিকভাবে একত্র করা কঠিন হতে পারে। বন্ড ডিজিটাইজ করা উচিত এবং এনক্রিপশনের মাধ্যমে হস্তান্তরের গোপনীয়তা রক্ষা করা উচিত। যেহেতু ব্যাঙ্কের শাখাগুলির মাধ্যমেই এই বন্ড ভাঙানো হবে, তাই দাতা এবং প্রাপকের অডিট সংক্রান্ত তথ্য অনুমতিসাপেক্ষে পাওয়া যাবে। পরিচয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করে স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যক্তিপরিচয়-বহির্ভূত তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের অনুমতি দেওয়া উচিত। নিরাপত্তা এবং অপরাধ তদন্ত সংস্থাগুলির কাছে ব্যক্তিগত তথ্যের লভ্যতা ইসিআই-এর নির্দিষ্ট আদেশের মাধ্যমে আসা উচিত, যাতে এ ধরনের সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক দলগুলির উপর নজরদারি জোরদার করা

দুর্বল আন্তঃদলীয় প্রশাসনের ঘটনাটি নিবন্ধিত অস্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির (আরইউপিপি) মধ্যেই কেন্দ্রীভূত। বেশিরভাগই তাদের পাঁচ বছরের মধ্যে নির্বাচনে লড়ার অঙ্গীকার লঙ্ঘন করে এবং তারপরেও সক্রিয় থাকে। ২০১৯ সালে এই ধরনের মাত্র ৬২৩টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল যেখানে ২,০৫৬টি আরইউপিপি তাদের বার্ষিক নিরীক্ষিত হিসাব জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসিআই-এর তথ্য অনুসারে, ১৯৯টি আরইউপিপি ২০১৮-১৯ সালে আয়কর ছাড়ে ৪.৫ বিলিয়ন টাকা দাবি করেছে৷ ২০১৯-২০ সালে ২১৯টি আরইউপিপি ৬.১ বিলিয়ন টাকা কর ছাড় দাবি করে। এর মধ্যে ৬৬টি আরইউপিপি তাদের বার্ষিক অনুদানের প্রতিবেদন জমা না দিয়েও আয়কর ছাড় দাবি করেছে।

নিয়ন্ত্রক সম্মতি অনুসরণ করার জন্য আয়করের সুবিধা

রাজনৈতিক দলগুলির জন্য নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা জোরদার করা এবং বেনামি নগদ অনুদানের সীমা বর্তমানে প্রচলিত ২০,০০০ টাকা (২৫০ মার্কিন ডলার) থেকে কমিয়ে ২০০০ টাকা করার প্রয়োজন রয়েছে৷ আয়কর ছাড়ের সুবিধা কেবলমাত্র নিবন্ধিত দলগুলির প্রবিধানগুলির সঙ্গে সম্মতির পাঁচ বছরের রেকর্ড প্রদর্শন করার পরেই পাওয়া উচিত৷ সম্মতির লঙ্ঘনের জন্য খেলাপি সত্তার আয়কর ছাড় স্থগিত করা-সহ বিপুল জরিমানা করা জরুরি।

অন্তর্দলীয় গণতন্ত্র প্রয়োগ করা

বাধ্যতামূলক পর্যায়ক্রমিক নির্বাচন-সহ অন্তর্দলীয় গণতন্ত্র এবং সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য ন্যূনতম পরামিতিগুলি নির্দিষ্ট করা জরুরি এবং দলীয় পদে অধিষ্ঠিত দলের সদস্যদের সরকারে নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা খারিজ করাও দরকার। ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারের মধ্যে কার্যাবলির সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা তৈরি করার জন্য এটি প্রয়োজনীয়।

রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইসিআই-এর ক্ষমতায়ন

ব্যক্তিগত অর্থায়নের বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে এবং নির্দিষ্ট প্রবিধানের মাধ্যমে দলগুলির অভ্যন্তরীণ কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রদত্ত আর্থিক সুবিধাগুলির অপব্যবহার সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার মাধ্যমে কমিয়ে আনা যেতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলির নিয়ন্ত্রক হিসাবে একটি সাংবিধানিক সত্তা ইসিআই-কে বাধ্যতামূলক করতে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫২ সংস্কার করা জরুরি। একই সঙ্গে সরকারের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে ইসিআই-তে নিয়োগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং তার উপর তদারকি করার ক্ষমতার প্রসার করতে হবে। একটি বিশেষ উদ্দেশ্যের মাধ্যমে যৌথ নজরদারি চালানোর জন্য সংসদে একটি সর্বদলীয় কমিটি গড়ে তোলা এক স্বাগত পদক্ষেপ হবে।

ভারতের উন্নয়নের বর্তমান পর্যায়ে নির্বাচনের জন্য সরকারি অর্থায়ন একটি অসম্ভব বিলাসিতা। তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত অর্থায়নের বিদ্যমান নির্মাণের মধ্যে এবং নির্দিষ্ট প্রবিধানের মাধ্যমে দলগুলির অভ্যন্তরীণ কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রদত্ত আর্থিক সুবিধাগুলির অপব্যবহার সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার মাধ্যমে কমিয়ে আনা যেতে পারে। তবু প্রশ্ন রয়েই যায়, রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা আদৌ আছে কি?

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.