Published on Mar 08, 2023 Updated 1 Days ago
‌থিঙ্ক২০ ইন্ডিয়া ইনসেপশন কনফারেন্স | সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতাবাদ: একটি বিশ্বব্যাপী অপরিহার্যতা

স্পটলাইট: বিজয় ঠাকুর সিং, চেয়ার টাস্ক ফোর্স ৭ – টি২০ ভারত, মহাপরিচালক, আইসিডব্লিউএ

বক্তা:

তেতসুশি সোনোবে, ডিন এবং সিইও, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট (এডিবিআই)
ফিওদোর ভয়তোলভস্কি, পরিচালক, আইএমইএমও, রাশিয়া
এবতেসাম আল–কেতবি, সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা, এমিরেটস পলিসি সেন্টার, ইউএই
স্টর্মি–আনিকা মিল্ডনার, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাস্পেন ইনস্টিটিউট, জার্মানি

সভাপতি: শিখা ভাসিন, সিনিয়র প্রোগ্রাম লিড, সিইইডব্লিউ, ভারত

যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ভূদৃশ্যের চ্যালেঞ্জগুলির সঙ্গে লড়াই করছে, সেই সময় এই প্যানেলটি ক্রমবর্ধমানভাবে বহুমুখী হয়ে–ওঠা বিশ্বে বহুপাক্ষিকতা টিকে থাকতে পারে কিনা তা অনুসন্ধান করেছে৷ এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু), বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), রাষ্ট্রপুঞ্জ (ইউএন) এবং  আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ)–এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির সংস্কারের জরুরি প্রয়োজন কীভাবে জি২০ মোকাবিলা করতে পারে, এই প্রশ্নটি সহ বিভিন্ন প্রশ্নকে সম্বোধন করেছে। জি২০ কি পুনরুদ্ধার বজায় রাখতে এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে শক্তিশালী, স্থিতিশীল, ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির দিকে চালিত করার জন্য দূরদর্শী অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে?

অধিবেশনের সূচনা করে অ্যামব্যাসাডর সিং বলেন, বৈশ্বিক ভূদৃশ্য দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং একটি নতুন ব্যবস্থা উদিত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন যে একটি বহুমেরুবিশিষ্ট বিশ্ব তৈরি হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মতো অন্যান্য চ্যালেঞ্জও উদ্ভূত হচ্ছে, যার জন্য নতুন প্রতিক্রিয়াসম্পন্ন, কার্যকর শাসনকাঠামো প্রয়োজন। তিনি অর্থনৈতিক সঙ্কট ও কোভিড–১৯ অতিমারি মোকাবিলায় জি২০–র অসাধারণ রেকর্ডের কথা উল্লেখ করেন, এবং বলেন যে এর থেকে দেখা যাচ্ছে এর একটি অগ্রদৃষ্টিসম্পন্ন মনোভাব রয়েছে। কিন্তু বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও সুসঙ্গত, কার্যকরী ও দায়বদ্ধ করতে এটি কি সেই একই কাজ করতে পারে?

তিনি বহুপাক্ষিক সংস্কারের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করেন, যার উপর ২০০০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সহস্রাব্দ সম্মেলনের সময় থেকে জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি পরামর্শ দেন যে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্কারগুলির মধ্যে এর কাজের পদ্ধতি থাকা উচিত, যা হওয়া উচিত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। উপরন্তু, এই সংস্কারগুলির আওতায় আসা উচিত হু–এর মতো বিশেষ সংস্থাগুলি, যাতে তারা উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদও এর মধ্যে থাকা উচিত, যেগুলি সমসাময়িক বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য হারিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই সংস্কারগুলি ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপুঞ্জের সামিট অফ দ্য ফিউচার–এর আগে একটি সময়োপযোগী পদ্ধতিতে হওয়া উচিত।

তারপর আলোচনাটি একটি প্যানেলের কাছে চলে যায়, যেখানে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার ভূমিকা অন্বেষণ করা হয়। প্যানেল উদবোধন করে চেয়ার শিখা ভাসিন জোর দিয়ে বলেন যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের স্থানীয় ফলাফল রয়েছে, এবং বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলি এই চ্যালেঞ্জগুলিতে সাড়া দিতে এবং তার পরিণতিগুলির মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে৷ তাহলে, জি২০এবং থিঙ্ক২০ কি বিদ্যমান বহুপাক্ষিক কাঠামোকে অতিক্রম করে বিশ্বব্যাপী শাসন কাঠামোকে রূপ দিতে পারবে, না তার এটি করা উচিত হবে?

প্রতিক্রিয়ায় প্যানেলিস্টরা এই বিষয়টি তুলে ধরেন যে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে, এবং তাদের সংস্কার বিলম্বিত হচ্ছে। এই বিলম্বের ফলস্বরূপ স্বল্পপাক্ষিক এবং একাধিক–পাক্ষিকগুলি আবির্ভূত হয়েছে। তবে জি২০ রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং এই উদীয়মান কাঠামোর মধ্যে সমন্বয় আনতে পারে।

স্টর্মি–আনিকা মিল্নার যে বিষয়টির উপর জোর দেন তা হল বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলি। তাই সহযোগিতার জন্য বৃহত্তর রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা দরকার। ফিওদোর ভয়তোলভস্কিও এই বিষয়টির প্রতিধ্বনি করেন, এবং যোগ করেন যে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলি সঙ্কটাপন্ন হয়েছে শুধু প্রধান শক্তিগুলির মধ্যে বিভেদের কারণে নয়, বরং আন্তর্জাতিক কাঠামোর বিবর্তনের কারণে, বিশেষ করে যেগুলি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দায়ী এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী ব্যবস্থা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তাঁর দৃষ্টিতে অন্যান্য বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানেও ঠান্ডা যুদ্ধ–পরবর্তী ব্যবস্থার উপাদান রয়েছে। ফলস্বরূপ বিদ্যমান বহুপাক্ষিক কাঠামোর মূল্যে উদীয়মান প্রতিষ্ঠানগুলি আরও নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে।

এবতেসাম আল–কেতবির মতে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলি বহুমেরু–বিশিষ্টতার জন্য তৈরি হয়নি। প্রাচ্যে ‘ফ্রি স্পিচ, ফ্রি অর্ডার ও ফ্রি ট্রেড’–ভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার বিকল্প আবির্ভূত হয়েছে। অতএব, বহুপাক্ষিকতায় পৌঁছনোর জন্য দ্বিপাক্ষিক একটি ভাল উপায় হতে পারে। এক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা হবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক।

আলোচনায় আরও তুলে ধরা হয়েছে যে গত পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কঠিন হয়ে পড়েছে। যাই হোক, জি২০ এই পরিবেশগত প্রতিকূলতার মুখেও মোটের উপর অনাক্রম্য রয়ে গেছে। তাই জি২০ প্রক্রিয়ার সমালোচনা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তন, অতিমারি, খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদির মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের জি২০–কে আরও কার্যকর করতে হবে, বিশেষ করে এনগেজমেন্ট গ্রুপগুলিকে। এই প্রসঙ্গে তেতসুশি সোনোবে বলেছেন যে আমাদের প্রয়োজন গবেষণা, ধারণা ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার মধ্যে ব্যবধান দূর করা। থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং থিঙ্ক২০ ও টি–৭–এর এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিকোলাস জে এ বাখাউড–এর মতে, থিঙ্ক২০ এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে যে জি৭ পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব হবে।

তাছাড়া থিঙ্ক২০–র উপস্থাপিত ধারণাগুলির ধারাবাহিকতা থাকা দরকার। সুতরাং, অংশীদারদের একটি বৃহত্তর অংশকে জড়িত করতে পারলে তা এই প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে। সংক্ষেপে, বহুপাক্ষিক সংস্কারের এই প্রস্তাবকে এগিয়ে নিতে জি২০ ও থিঙ্ক২০–কে সমমনা অংশীদার এবং ফোরাম খুঁজে বার করতে হবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্কার সম্পর্কে অ্যাম্বাসডর সিং–এর বক্তব্যের সাথে যুক্ত করে, ফিওদোর ভয়তোলভস্কি যুক্তি দেন যে ভারত ও ব্রাজিল–সহ ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন আরও স্থায়ী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদকে সম্প্রসারিত করা উচিত। তবে এই সম্প্রসারণে নিরাপত্তা পরিষদের কার্যকারিতা বাড়বে কি না তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।

প্যানেলিস্টরা বৈশ্বিক ট্রেডিং অর্ডার নিয়েও আলোচনা করেন, এবং একমত হন যে একটি স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য ডব্লিউটিও সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবতেসাম আল-কেতবি উল্লেখ করেন যে আর্থিক জগৎ বিকশিত হয়েছে এবং জটিল হয়ে উঠেছে। তবে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে এটি শেষ দরিদ্র ব্যক্তির কাছে এর সুবিধা পৌঁছে দেয়।

আলোচনায় ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির থেকে প্রত্যাশার কথাও উঠে আসে। স্টর্মি–আনিকা মিলডনারের মতে ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রথমবারের মতো জি২০ ত্রয়ী নেতৃত্ব উদীয়মান অর্থনীতির কাছে পৌঁছেছে। সুতরাং, এটি নতুন ধারণা আনার একটি অসাধারণ সুযোগ। এবতেসাম আল–কেতবি যোগ করেছেন যে বহুপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে ভারতীয় অভিজ্ঞতা তুলে ধরা প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার নিশ্চিত করতে বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে, এবং সেটাই হবে ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির অবদান।

এখানে. সম্পূর্ণ অধিবেশন দেখুন।


এই ইভেন্ট রিপোর্টটি সমীর পাটিল, সিনিয়র ফেলো, ওআরএফ মুম্বই দ্বারা সংকলিত হয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.