Author : Anirban Sarma

Published on Nov 17, 2021 Updated 0 Hours ago

বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারত তার সর্বজনীন ব্রডব্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও যথাযথ নেটওয়ার্কের অভাব এখনও এক মুখ্য প্রতিবন্ধক।

গুণমান ছাপিয়ে সংখ্যায় জোর? ভারতে সর্বজনীন ব্রডব্যান্ড চালু করার অভিমুখে যাত্রা

নতুন গ্রাহকদের সংখ্যায় জোয়ার আসার ফলে এই বছরের আগস্ট মাসে ভারতে ব্রডব্যান্ড সংযোগের সংখ্যা ৮০ কোটি ৮০ লক্ষ অতিক্রম করেছে। আপাত দৃষ্টিতে ভারত তার সকলের জন্য ব্রডব্যান্ড সংযোগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে। এই মাইলফলক অতিক্রম করার বিজয়োল্লাসে যদিও থাবা বসিয়েছে ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২১-এর (ডি কিউ এল) গবেষণালব্ধ পরিসংখ্যান। ডি কিউ এল একটি বার্ষিক বিশ্বজনীন ক্রমতালিকা, যেটি সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছে।

ডি কিউ এল ক্রমতালিকায় ১১০টি দেশের মধ্যে ভারত গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ নেমে বর্তমানে ৫৯তম স্থানে আছে। যে কটি মাপকাঠির উপর নির্ভর করে একজন মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা যাচাই করা হয়, সেগুলির মধ্যে ভারতে ব্রডব্যান্ডের গতি এবং স্থিতিশীলতার মাঝে সামঞ্জস্য বিধানের অভাব সুস্পষ্ট। এই সূচক অনুসারে ভারতে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পরিষেবা স্থিতিশীল হলেও তার গতি একটি অন্যতম বড় সমস্যা। ফলে ভারতে ইন্টারনেট সংযোগের গুণমান, যা ডি কিউ এল সূচকের একটি প্রধান মাপকাঠি, তার প্রেক্ষিতে ভারত সারা বিশ্বের মধ্যে ৬৭তম স্থানে আছে, যা অবশ্যই সমীক্ষার আওতাভুক্ত দেশগুলির নিম্ন অর্ধ ভাগের অন্তর্গত।

প্রথাগত ভাবে ভারতীয় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান করার দাবিকেই তাদের ইউ এস পি বা ইউনিক সেলিং পয়েন্ট রূপে প্রচার চালালেও ইন্টারনেটের গতি একটি অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ। এই সমস্যাটি নিয়ে বর্তমানে গবেষণাও চলছে। ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবস্থার অংশীদারদের মধ্যে পরিষেবার গুণগত মান, নির্ভরযোগ্যতা এবং পরিষেবা ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়নের এক সার্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ভাবনা বাড়ছে। যেমন ব্রডব্যান্ড ইন্ডিয়া ফোরাম ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে অবশ্যই পৃথিবীর প্রথম ১০টি সেরা ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদানকারী দেশের মধ্যে একটি হয়ে ওঠার লক্ষ্যে ব্রতী হতে হবে। নিজের অগ্রাধিকারগুলির সময়োচিত এবং প্রয়োজনীয় পুনর্বিন্যাসের পথে এটি একটি যথার্থ পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতার কোনও হানি না ঘটিয়ে যে উন্নয়ন বর্তমানের প্রয়োজন সিদ্ধ করে, সেই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বা এস ডি জি অর্জনের ভারতীয় প্রচেষ্টায় ব্রডব্যান্ড পরিষেবার গুণমান বৃদ্ধি এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিকেও সংযুক্ত করতে পারা এক বাঁকবদলের সূচনা করতে পারে।

ব্রডব্যান্ড, আর্থ-সামাজিক বৃদ্ধি এবং এস ডি জি লক্ষ্যমাত্রাগুলি

আর্থ-সামাজিক বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রডব্যান্ড সংযোগের প্রক্রিয়াটি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সমীক্ষায় যেমনটা প্রায়শই চোখে পড়েছে যে, একটি দেশের ব্রডব্যান্ড সংযোগের ব্যাপকতা ১০ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেলে সেই দেশের জি ডি পি-তে ১.৩৮% পার্সেন্টেজ পয়েন্ট অধিক বৃদ্ধি লক্ষিত হয়। সুতরাং এস ডি জি-গুলির ৯ নম্বর ধারার ‘গ’ বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা হল সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে ‘আই সি টি বা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রসারতার ব্যাপক বৃদ্ধি এবং ২০২০ সালের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলিতে সুলভ মূল্যে সর্বজনীন ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানের’ জন্য অনুপ্রাণিত করা। সামগ্রিক ভাবে ২০৩০ সালের কর্মসূচির তুলনায় এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময়সীমা অপেক্ষাকৃত ভাবে অনেকটাই কম। এই কর্মসূচি গ্রহণের ফলে অন্যান্য এস ডি জি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সঙ্গে মানুষকে অত্যন্ত দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার প্রক্রিয়াটির আপাতনির্ভরতা সুস্পষ্ট হয়েছে।

সামগ্রিক ভাবে ২০৩০ সালের কর্মসূচির তুলনায় এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময়সীমা অপেক্ষাকৃত ভাবে অনেকটাই কম। এই কর্মসূচি গ্রহণের ফলে অন্যান্য এস ডি জি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সঙ্গে মানুষকে অত্যন্ত দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার প্রক্রিয়াটির আপাতনির্ভরতা সুস্পষ্ট হয়েছে।

এই দাবি বিশ্বব্যাপী গবেষণার দ্বারা সমর্থিত হওয়ার ফলে বর্তমানে এটি স্বতঃসিদ্ধ যে, উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড সংযোগ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ক্ষেত্রে, যেমন- প্রশাসনিক কাজকর্ম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, বিশেষ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং জি ডি পি-সহ নলেজ ইকোনমি বা তথ্য ও জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির উপরে রূপান্তরকারী প্রভাব ফেলবে। এস ডি জি-র ৯ নম্বর ধারার ‘গ’ বিভাগের প্রেক্ষিতে এই সকল উদ্দেশ্য এবং মূল ধারণা ভারতের ন্যাশনাল ডিজিটাল কমিউনিকেশনস পলিসির (এন ডি সি পি) রূপদানে সাহায্য করেছে, যা ২০২২ সালের মধ্যে ‘ব্রডব্যান্ড সংযোগকে সকল মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চালিকা শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে এবং উন্নত গুণমানের পরিষেবা প্রদান সুনিশ্চিত করে’ ভারতের সকল প্রান্তকে সংযুক্ত করার একটি প্রগতিশীল পরিকল্পনা।

আশানুরূপ ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য গুণগত মানের দিকে নজর দেওয়ার ব্যাপারটিতে আলোকপাত করতে হবে এবং ব্রডব্যান্ডভিত্তিক সামাজিক রূপান্তরের লক্ষ্য অর্জনে প্রক্রিয়াটিকে দক্ষতার সঙ্গে কার্যকর করে তুলতে হবে। এ যাবৎ টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই) ভারতে ব্রডব্যান্ড সংযোগের গুণমান উন্নত করতে একাধিক সুপারিশ করে থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা এখনও রূপায়িত হয়নি বা সেগুলিকে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি সংক্রান্ত আলোচনার মূল ধারার আওতাভুক্ত করার চেষ্টা হয়নি। তথাকথিত অধিকাংশ উল্লেখযোগ্য আদর্শ পরিকাঠামোতেও বেশ কিছু খামতি লক্ষ করা গেছে। এস ডি জি-র আওতাভুক্ত গ্লোবাল ইন্ডিকেটর ফ্রেমওয়ার্ক ব্রডব্যান্ড এবং আই সি টি-র সংশ্লিষ্ট মানুষদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার গুণমান বাড়ানোর ব্যাপারে এখনও কোনও কথা বলেনি। এস ডি জি-র টার্গেট ধারা ৯-এর ‘গ’ বিভাগটি শুধু মাত্র ‘প্রযুক্তি দ্বারা, অর্থাৎ একটি মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত জনসংখ্যার অনুপাত’-এর কথাই বলে। এমনকি জাতীয় স্তরেও নীতি আয়োগ দ্বারা গৃহীত বেশ কিছু এস ডি জি সূচকের ক্ষেত্রে একই রকমের ভ্রম চোখে পড়ে। টার্গেট ৯-এর ‘গ’ ধারার অর্জনের প্রেক্ষিতে ভারতীয় সূচকগুলি হল ‘১০০ জন মানুষ প্রতি ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা’ এবং ‘১০০ জন মানুষ প্রতি মোবাইল সংযোগের সংখ্যা’। কিন্তু এই সব পরিসংখ্যান নাগরিকদের ডিজিটাল ওয়েল বিয়িং-এর সম্যক ছবিটি তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট নয়।

নিম্ন গুণমানের ব্রডব্যান্ডের মানবিক মূল্য

ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চললেও কোভিড-১৯ অতিমারির পরবর্তী সময়ে ব্রডব্যান্ড সংযোগের বিপুল চাহিদা এবং ব্যবহারে তীব্র বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট পরিষেবার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সকল ক্ষেত্রব্যাপী খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থা বা ইন্টারনেট পরিষেবার মূল্য স্পষ্টতই চোকাতে হয়েছে মানুষকে।

খারাপ ইন্টারনেট সংযোগের জন্য পড়াশোনার ক্ষেত্রটি সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেখানে অতিমারির জন্য অনলাইন পদ্ধতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অনলাইন পড়াশোনার ভাল ও খারাপ দিকগুলি নির্ধারণে গুজরাটে ২২০০ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৫৬%-এরও বেশি সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা মনে করেন যে কম গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা সুস্থ ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়। ভারতের একাধিক প্রান্ত থেকে উঠে আসা ছবিগুলির মধ্যে গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি বিশেষ ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। ঘটনাটিতে দেখা যায়, মিজোরামের একটি গ্রামে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে ক্লাস করতে এবং পরীক্ষা দিতে তীব্র অসুবিধের সম্মুখীন হয়েছে। নেটওয়ার্ক পেতে তাদের পাহাড়ের মাথায় একটি জঙ্গল অধ্যুষিত জায়গায় যেতে হত, যেখানে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক কখনও সখনও পাওয়া যেত।

প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্থানীয় কার্যালয়গুলিও ইন্টারনেট সংযোগের গুণমানের ওঠানামার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে গ্রামীণ অঞ্চলে কোভিড-১৯ টিকাকরণের প্রক্রিয়াটি যে কারণগুলির জন্য ব্যাহত হয়েছে, সেগুলির অন্যতম হল দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইন্টারনেট পরিষেবা আদৌ উপলব্ধ না হওয়ার মতো ব্যাপারগুলি। ভারতনেট গ্রামীণ ব্রডব্যান্ড সংযোগের আওতাভুক্ত ২.৫ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে অর্ধেকেরও কম জায়গায় ওয়াই ফাই হটস্পট আছে। এই সকল গ্রামে ওয়াই ফাই হটস্পটের পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলির মধ্যে মাত্র ৬৫,০০০ হটস্পট কার্যকর অবস্থায় রয়েছে। রায়বরেলির এক গ্রাম প্রধান জানান যে, তাঁদের গ্রামে কিছু দিন আগে হটস্পট তৈরি করা হলেও সেটি এখন অকেজো

আশ্চর্যজনক ভাবে সরকারের তরফে এস ডি জি ৯-এর ‘গ’ ধারার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী সূচকের আওতায় সকলের জন্য ব্রডব্যান্ড পরিষেবার জাতীয় প্রচেষ্টার সুফল ভোগ করছেন এমন মানুষদের মধ্যে এ রকম অনেক গ্রামীণ গোষ্ঠীকে গণ্য করা হবে।

আগামী দিনের লক্ষ্য

দেশে ব্রডব্যান্ড সংযোগের সংখ্যা ৯০ কোটির সীমার দিকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বজনীন ব্রডব্যান্ড পরিষেবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ভারত অগ্রসর হয়েছে। এই উৎসাহব্যঞ্জক পরিসংখ্যান যদিও ভৌগোলিক, উপার্জনভিত্তিক এবং লিঙ্গভিত্তিক ডিজিটাল ডিভাইড বা প্রযুক্তিগত পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের কালো ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছে। এই অসাম্যের সমতা বিধান অত্যন্ত জরুরি।

গোষ্ঠীকেন্দ্রিক সংস্থা এবং উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে ব্যাপক হারে অংশীদারি গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা নির্দিষ্টকরণ, নীতি নির্ধারণ পদ্ধতি এবং কার্যপরম্পরা সংশোধনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গোষ্ঠীগুলির মতামত নেওয়া অত্যন্ত আবশ্যক।

এর পাশাপাশি ব্রডব্যান্ডের গুণগত মানের সমস্যাটিও তৎপরতার সঙ্গে সমাধান করতে হবে। ট্রাই সম্প্রতি ভারতে ডাউনলোড স্পিডের প্রেক্ষিতে মিনিমাম ম্যান্ডেটেড থ্রেশোল্ড-এর মাত্রা ৫১২ কে বি পি এস থেকে বাড়িয়ে ২ এম বি পি এস ধার্য করেছে। সমস্যা সমাধানে এটি একটি কার্যকর পদক্ষেপ হলেও ইতিমধ্যেই ভারতে অধিকাংশ ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা এই ২ এম বি পি এস-এর নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে উচ্চ গতি সম্পন্ন পরিষেবা প্রদান করে। তাই ব্রডব্যান্ড শব্দটির সংজ্ঞার পুনর্মূল্যায়ন করা এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর প্রেক্ষিতে ঐকমত্য গড়ে তোলার সময় উপস্থিত হয়েছে। অতিমারি-পরবর্তী দুনিয়ায় নতুনতর চাহিদার কথা মাথায় রাখলে ইন্টারনেট সংযোগের আপলোড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির দিকটিও মনোযোগের দাবি রাখে।

নেটওয়ার্ক প্রদানকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ (কিউ ও এস) চুক্তি মজবুত করা এবং কিউ ও এস-এর নিয়মাবলি মেনে চলা হচ্ছে কি না তা তদারক করার জন্য একটি শক্তিশালী প্রক্রিয়ার সূচনা করার নীতি গ্রহণের মাধ্যমে উপভোক্তাদের ন্যায্য প্রাপ্য সুনিশ্চিত করা যেতে পারে।

সর্বোপরি, পরিষেবার গুণমান উন্নত করার জন্য একটি মানবকেন্দ্রিক পন্থা অবলম্বন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ব্রডব্যান্ড সংযোগের বিন্যাস এবং পরিষেবার গুণমান যাচাইয়ের জন্য স্থানীয় মানুষ ও গোষ্ঠীগুলির প্রয়োজন এবং তাদের ইন্টারনেটের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। গোষ্ঠীকেন্দ্রিক সংস্থা এবং উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে ব্যাপক হারে অংশীদারি গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা নির্দিষ্টকরণ, নীতি নির্ধারণ পদ্ধতি এবং কার্যপরম্পরা সংশোধনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গোষ্ঠীগুলির মতামত নেওয়া অত্যন্ত আবশ্যক।

এস ডি জি-র ৯-এর ‘গ’ ধারার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময়সীমা অর্থাৎ ২০২০ সাল এখন অতীত। কিন্তু ভারতের সামনে এখনও অনেকগুলি সম্ভাব্য ‘আনতি বিন্দু’ (ইনফ্লেকশন পয়েন্ট) বর্তমান। ২০২২ সালের মধ্যে এন ডি সি পি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা, ২০২৫ সালের মধ্যে ব্রডব্যান্ড কমিশনের অ্যাডভোকেসি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এস ডি জি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ভারতকে এগোতে হবে অনেকটা। ফলে ভারতের পক্ষে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীদের সংখ্যার তুলনায় ব্রডব্যান্ডের গুণগত মানের উপরে জোর দেওয়া বেশি প্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ নিছক ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের সুযোগ নয়, ব্রডব্যান্ড সংযোগের গুণগত মানের বৃদ্ধিই ভারতের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.