-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
রাজস্থানের স্বাস্থ্য অধিকার আইনে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বিনামূল্যে আপৎকালীন পরিষেবা প্রদানে বাধ্য করার চেষ্টা আদতে বেসরকারি চিকিত্সকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাঁরা সংশ্লিষ্ট খরচ পরিশোধে সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দিহান। কিন্তু চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপক খরচ দেউলিয়া করে দেবে, নাগরিকদের এই ভয়ের প্রেক্ষাপটে রাজ্য দ্বারা আপৎকালীন পরিষেবার খরচ প্রদান এক স্বাগত সুরক্ষা বলয়
রাজস্থান বিধানসভায় অনুমোদিত স্বাস্থ্যের অধিকার আইনটি সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলেছে এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিবাদের আলোড়ন উঠেছে। রাজস্থানই ভারতের প্রথম রাজ্য, যেখানে এ হেন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। রাজস্থান সরকার বিলটির খসড়া তৈরির জন্য গবেষক এবং কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছে এবং প্রক্রিয়াটি বহু দফা সংশোধনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।
বিলটি পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশাদার সংগঠনগুলি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে একটি কঠোর আইন হিসাবে অভিহিত করে এবং এর ফলে রাজ্য জুড়ে চিকিৎসা পরিষেবা প্রায় ভেঙে পড়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে একই সময়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন যে, আইনটি তাঁদের দ্বারা প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত খসড়ার লঘু সংস্করণ।
বেসরকারি হাসপাতাল এবং রাজস্থান সরকারের মধ্যে মতবিরোধের ইতিহাস দীর্ঘ। রাজস্থানের ফ্ল্যাগশিপ স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের মাধ্যমে ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’ প্রদানের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টায় এমন ঘটনাও দেখা গিয়েছে, যেখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলি বিমা প্রকল্পের অংশ হওয়া সত্ত্বেও রোগীদের পরিষেবা প্রদানে অস্বীকার করেছে। এর ফলে সরকার স্বাস্থ্য আইনের অধিকার বলবৎ করার পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ঘটনাকেন্দ্রিক বিতর্কে মেরুকরণের বিষয়টি বোঝায় জন্য এটির প্রস্তাবিত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই আইন অনুযায়ী রাজস্থানের প্রত্যেক বাসিন্দা তাদের স্বাস্থ্যসেবার স্তরের ভিত্তিতে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওপিডি পরিষেবা, আইপিডি পরিষেবা পরামর্শ, ওষুধ, পরীক্ষানিরীক্ষা, আপৎকালীন পরিবহণ, চিকিৎসা এবং জরুরি পরিষেবার সুযোগ পাবেন।
আইন অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও আপৎকালীন চিকিৎসা ও পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া সম্ভব। এটিতে বলা হয়েছে যে, রোগী অর্থপ্রদানে অক্ষম হলে বেসরকারি হাসপাতালগুলি রাজস্থান সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ফি, চার্জ এবং উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ পাবে।
আইনটি এমন এক সময়ে বলবৎ হয়েছিল, যখন কোভিড-১৯ অতিমারি সকল মানুষকেই ধাক্কা দিয়েছিল এবং তীব্র প্রয়োজনের মুহূর্তে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার অক্ষমতার রূঢ় বাস্তবকে প্রকাশ্যে তুলে এনেছিল। অতিমারিটি বহু ব্যক্তি এবং পরিবারকে কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা এবং অসহায়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে, যা কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এমনকি ‘স্বাভাবিক’ সময়েও এটি ভারতে কোনও নতুন সমস্যা নয়। কারণ বহু মানুষ সর্বক্ষণ আপৎকালীন চিকিৎসা অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে ভীত থাকেন, যা তাঁদের আর্থিক চাপের মুখে ফেলতে পারে।
অনেক পরিবার, এমনকি যাঁরা ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্গত, তাঁরাও সম্ভাব্য দেউলিয়া হওয়া থেকে শুধুমাত্র একটি আপৎকালীন চিকিৎসা পরিস্থিতির দূরত্বে রয়েছেন। বহু গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে গুণমানসম্পন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা ভারতে এখনও একটি বিলাসবহুল পণ্য হয়ে রয়ে গিয়েছে, যা শুধুমাত্র ধনীদের কাছে এবং যাঁদের পর্যাপ্ত বিমা সুরক্ষা রয়েছে, তাঁদের কাছেই লব্ধ।
স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে মুনাফা অর্জন করা বেসরকারি ক্ষেত্রের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য যা ভারতে মূলত অনিয়ন্ত্রিতই রয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে মেডিকেল পড়ার জন্য উচ্চ মূল্যের শিক্ষাখরচ চোকাতে হয়, যা এ কথাই দর্শায় যে, চিকিৎসা পরিষেবায় বিপুল অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
আধুনিক সমাজগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অর্থ প্রদানের ক্ষমতার লভ্যতাকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চালায়। স্বাস্থ্য পরিষেবা বহন করার ক্ষমতা ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা পেতে বাধা দিতে পারে না। স্বাস্থ্য পরিষেবা এমন একটি পণ্য, যা বাজারে ক্রয়-বিক্রয় করা যেতে পারে… এই ধারণাটি কেবল নৈতিকভাবে সমস্যাযুক্তই নয়, বরং পদ্ধতিগত বৈষম্যকে স্থায়ী করে।
দুই ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে এ কথা সুনিশ্চিত করা যেতে পারে যে, আয় বা আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা লাভের সমান অধিকার রয়েছে। এটি শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্যের ফলাফলকেই উন্নত করে না, বরং একটি আরও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনে সাহায্য করে, যেখানে প্রত্যেকেরই একটি সুস্থ ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের ন্যায্য সুযোগ রয়েছে। একটি পরিবারের সামাজিক গতিশীলতার সম্ভাবনা প্রায়শই চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা দ্বারা ক্ষুণ্ণ হয়, বিশেষ করে এমন সমাজে যেখানে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যয়বহুল।
বিপুল আর্থ-সামাজিক অনিশ্চয়তার এই প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র আপৎকালীন পরিষেবার কথা উঠলেও একটি স্বাস্থ্য অধিকার আইন যথেষ্ট আর্থিক জটিলতার দিকেই চালিত করবে। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ার দরুন বেসরকারি খাতের জন্য এই আশঙ্কা থাকা স্বাভাবিক যে, সরকার হয়তো নির্বাচনে জয় লাভ করার চেষ্টায় বেসরকারি ক্ষেত্রকে প্রকৃত খরচ কম করে দেখাতে বাধ্য করছে।
পর্যাপ্ত অর্থায়ন এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণের একটি শক্তিশালী ভিত্তি ছাড়া বেসরকারি ক্ষেত্রের সাথে প্রস্তাবিত অর্থপ্রদান/পরিশোধ ব্যবস্থাটি প্রতিবন্ধকতাময় হয়ে উঠতে পারে। যদিও প্রতিবাদী চিকিৎসক এবং তাঁদের সংগঠনগুলির দ্বারা যে উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে, সেটি আইনটির এখনও পর্যন্ত অনির্ধারিত খসড়ার কার্যপ্রণালী সংক্রান্ত এবং আইনের বিদ্যমান কোনও ধারার বিরুদ্ধে নয়। ফলে এ সবই কাল্পনিক উদ্বেগ হয়েই থেকে গিয়েছে।
এই আইনের বয়ানে এ কথা বেশ স্পষ্ট যে, কর্মপদ্ধতিগত খুঁটিনাটি আইনের বিধিগুলি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, যেটির প্রথমে খসড়া বানানো হবে ও পরে চূড়ান্ত করা হবে। এর পাশাপাশি রাজস্থানের প্রেক্ষিতে ‘আপৎকালীন পরিষেবা’র মতো শব্দবন্ধের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হবে প্রস্তাবিত স্টেট হেলথ অথরিটি দ্বারা, যেখানে আইএমএ-সহ অন্যান্য পেশাদার সংস্থার সদস্যরাও অংশ নেবেন।
স্বাস্থ্যের অধিকার আইন সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে এক বৃহৎ পদক্ষেপ, যদি তার নেপথ্যে থাকে পর্যাপ্ত অর্থায়ন, অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ, বেসরকারি ক্ষেত্রে যথাযথ অর্থ প্রদান এবং ন্যায্য মূল্য পরিশোধ। একই সঙ্গে বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রতিক্রিয়া এক অনুরণন প্রভাবের সম্ভাবনা দ্বারা অধিক অনুপ্রাণিত বলে মনে হচ্ছে, যেখানে অন্য রাজ্যগুলিও একই ধরনের আইনের কথা বিবেচনা করছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মানিকন্ট্রোল-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Oommen C. Kurian is Senior Fellow and Head of Health Initiative at ORF. He studies Indias health sector reforms within the broad context of the ...
Read More +