Published on Jul 12, 2022 Updated 0 Hours ago
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরন্তর যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করা: বাইডেনের সোমালিয়ায় মার্কিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

সোমালিয়াকে আফ্রিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ–বিরোধী কৌশলের একটি দীর্ঘকাল ধরে উপেক্ষিত এবং বিলম্বিত অংশ বলে বিবৃত করা হয়েছে। বহুজাতিক বাহিনী ইউনাইটেড টাস্ক ফোর্স (ইউ এন আই টি এ এফ)–এর অংশ হওয়া সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যগ্রস্ত ‘‌অপারেশন রিস্টোর হোপ’‌-এর কারণে ক্রমাগত ভয়, আর ২০০১ সালের ব্ল্যাক হক ডাউন–এ স্থায়ী মাত্রা প্রাপ্তি, সোমালিয়ায় মার্কিন হস্তক্ষেপকে মার্কিন জনগণ ও নেতাদের মনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাধিকার হিসেবে দৃঢ় জায়গা তৈরি করে দিয়েছে।  ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে আবার কয়েকশো স্পেশাল অপারেশন ফোর্স মোতায়েন করার জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীকে অনুমোদন দেওয়ার একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এই পদক্ষেপটি মূলত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের ২০২০ সালে ওই দেশ থেকে ৭০০ সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে উল্টে দিল৷ ওই সিদ্ধান্তের পর সোমালি ও আফ্রিকান ইউনিয়ন বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিতেন যে মার্কিন সেনারা, তাঁরা সে দেশে পর্যায়ক্রমিক ভাবে অল্পদিনের জন্য থাকতেন৷ তবে তাঁদের সে দেশে পাঠানো, ফিরিয়ে আনা এবং তাঁদের ট্রানজিটে থাকা এই ব্যবস্থাকে বিপজ্জনক, ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর করে তুলেছে বলে মনে করা হয়েছিল। বাহিনীকে একবার নিয়ে যাওয়া এবং আবার ফিরিয়ে আনা মার্কিন ও সহযোগী সৈন্যদের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকির কাজ ছিল। তার আগে ওবামা প্রশাসন ‘বিশেষ অভিযান বাহিনী, বিমান হামলা, ব্যক্তিগত ঠিকাদার ও আফ্রিকার মিত্রদের’‌ সহায়তায় দেশটিতে লেজার অপারেশন চালিয়েছিল। অতীতে এই পদ্ধতির ফলে মিত্র সেনাদের মৃত্যু এবং ক্রমাগত সংঘাত বৃদ্ধির ঝুঁকি ছিল।

সোমালি ও আফ্রিকান ইউনিয়ন বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিতেন যে মার্কিন সৈন্যরা, তাঁরা সে দেশে পর্যায়ক্রমিক ভাবে অল্পদিনের জন্য থাকতেন৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র বাহিনীর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা সর্বাধিক করার জন্য সেখানকার জমিতে অবিরাম উপস্থিতি প্রয়োজন, যা ‘‌আল–শাবাবের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর লড়াই’‌ চালাতে সক্ষম করবে। এখন বিভিন্ন প্রতিবেদন আল–শাবাব জঙ্গিদের আক্রমণ ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়ার পর বাইডেন সক্রিয় হতে বাধ্য হয়েছেন। আল–কায়েদার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ধনী সহযোগী এই গোষ্ঠীটির প্রতিবেশী দেশগুলিতে আঘাত করার এবং মার্কিন নাগরিকদের ও স্বার্থের জন্য সরাসরি বিপদ সৃষ্টি করার ক্ষমতা অব্যাহত রয়েছে। এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছিল যখন ২০২০ সালে কেনিয়ার মান্ডা বে–তে একটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে এই গোষ্ঠীটি একটি মারাত্মক হামলা চালায়।

সোমালি নির্বাচন এবং অ্যামিসম–এর অ্যাটমিস–এ রূপান্তর

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তটি সোমালিয়ার নির্বাচনের পরে নেওয়া হয়েছে, যে নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ আবার ক্ষমতায় এসেছেন। তিনি অতীতে ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মোহামুদ অঞ্চলের বাইরের শক্তিগুলির সঙ্গে অংশীদারির ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এটি এমন একটি বিষয় যা হর্ন অফ আফ্রিকায় ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা কৌশলকে একটি নীতিগত অবস্থান দেয়। প্রেসিডেন্ট মোহামুদ সোমালিয়ায় সেনা মোতায়েন করার জন্য  বাইডেন প্রশাসনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

আল–কায়েদার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ধনী সহযোগী এই গোষ্ঠীটির প্রতিবেশী দেশগুলিতে আঘাত করার এবং মার্কিন নাগরিকদের ও স্বার্থের জন্য সরাসরি বিপদ সৃষ্টি করার ক্ষমতা অব্যাহত রয়েছে।

এই ঘটনার সমাপতন হয়েছে ১ এপ্রিল ২০২২–এ তৈরি দ্য আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশন ইন সোমালিয়া (অ্যামিসাম) এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন ট্রানজিশন মিশন ইন সোমালিয়া (অ্যাটমিস)–র পুনর্গঠন এবং রূপান্তরের সঙ্গে। অ্যাটমিস–এর কার্যক্রমের ফোকাস হল আল–শাবাবের ব্যাঘাতের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা, সোমালিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, এবং তাদের সঙ্গে যৌথ পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া। কোনও সন্দেহ নেই, আল–শাবাবের বিপদ নতুন সোমালি সরকারের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সকলকে নিয়ে একটি রাজনৈতিক চুক্তি তৈরি করার প্রয়োজন তুলে ধরে, যা সোমালি–নেতৃত্বাধীন নিজস্ব সোমালি নিরাপত্তা ব্যবস্থার স্থিতিশীল রূপান্তরকে সহজতর করবে। এটি অর্জনের জন্য তহবিলের একটি নিয়মিত উৎস, সরঞ্জাম সংগ্রহ, এবং বিশেষত হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আকাশপথে কৌশলগত সমর্থন অপরিহার্য হবে।

কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে

স্থলে মার্কিন সেনাদের নিয়ে প্রচুর উদ্বেগ রয়েছে, যার মধ্যে আছে মোতায়েনের জন্য কোনও স্পষ্ট সময়সীমা না–থাকা, ১৯৯০–এর অপারেশনের পরাজয়ের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা, এবং এই মোতায়েনের ফলে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি জড়িয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে সেই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বক্তব্যকে বৈধতা দেওয়ার সম্ভাবনা । তা ছাড়া সম্পদের বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রশ্নটি এমন সময়ে উত্থাপিত হতে পারে যখন ইউরোপ একটি চলতি যুদ্ধের সাক্ষী হচ্ছে এবং সোমালিয়ায় বাহিনী মোতায়েনের ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে সেখানে ‘‌চিরকালীন যুদ্ধ’‌ এখনও চলছে

উপরন্তু, আল–শাবাব সোমালিয়ায় একটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, এবং সেই জন্য, আরও সূক্ষ্ম প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। এটি আংশিক ভাবে সেনা মোতায়েন দিয়ে মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা দেশের ‘‌দুর্বল সরকার এবং অন্যান্য অংশীদারেরা যাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাতে পারে তার জন্য’‌ সক্ষমতা তৈরির কাজে জড়িত থাকবে। কিন্তু দেশটি নিজেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের জন্য সংবেদনশীল, যেমন দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত, খরা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুতি। এদিকে অভিযোগের সুরাহার জন্য যে ব্যবস্থাগত ভিত্তি থাকা দরকার তা সীমিত হওয়ায় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি একটি প্রবেশবিন্দু পেয়ে যায়, এবং ফলস্বরূপ দেশে মার্কিন সৈন্যদের প্রয়োজন পড়ে।

সম্পদের বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রশ্নটি এমন সময়ে উত্থাপিত হতে পারে যখন ইউরোপ একটি চলতি যুদ্ধের সাক্ষী হচ্ছে এবং সোমালিয়ায় বাহিনী মোতায়েনের ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে সেখানে ‘‌চিরকালীন যুদ্ধ’‌ এখনও চলছে।

হোয়াইট হাউসের মাধ্যমে ড্রোন হামলা চালানোর অনুমোদনের পরিবর্তে ট্রাম্প প্রশাসন কোন কোন লক্ষ্যের উপর হামলা চালানো যাবে তার একটি তালিকা তৈরি করে দিয়েছিল।  ট্রাম্প প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন গোপন মিশনের জন্য মার্কিন সামরিক ও গুপ্তচর সংস্থাগুলির পরিকল্পনা করার ও আঘাত হানার ক্ষমতা এবং হোয়াইট হাউসের কঠোর নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করেছেন। তা ছাড়া, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন বিমান হামলাগুলি মূলত তাৎক্ষণিক বিপদের সম্মুখীন অংশীদার বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য বা সোমালি বাহিনীর ‘‌সম্মিলিত’‌ আত্মরক্ষার লক্ষ্যে সীমিত রাখা হয়েছিল। ব্যবহারিক ভাবে, এর অর্থ ছিল একজন মার্কিন উপদেষ্টা সোমালি বাহিনীর পাশে দাঁড়ালে তবেই হামলা চালানো হবে। এই ধরনের পন্থা সংঘাতের মূল কারণগুলির সমাধান না–করে শুধু একটি অস্থায়ী সমাধান প্রদান করে।

সোমালিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পনেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে আল–শাবাবকে দমন করার চেষ্টা করলেও তাতে তেমন কোনও সাফল্য আসেনি। প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম, মার্কিন সেনার জীবনহানি এবং কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ কার্যত কোনও প্রতিদান দেয়নি। আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ রাষ্ট্রগঠনের মহড়া, যার ফলস্বরূপ মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই তালিবান শাসনের প্রত্যাবর্তন ঘটে, তা একটি সতর্কবার্তা হিসেবে নেওয়া উচিত এবং সোমালিয়াতে একই পথে চলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিরুৎসাহিত করা উচিত।

সেনা মোতায়েনের বর্তমান সিদ্ধান্ত এই সত্যটিকে তুলে ধরে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের অগ্রাধিকারের বিষয়টির উপর নজর রেখেছে। সোমালিয়ায় আক্রমণাত্মক অপারেশনে অংশ নিচ্ছে যে সোমালি দানাব অ্যাডভান্সড ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। এর পরিপূরক হিসেবে সোমালি নেতৃত্বের সঠিক অভিপ্রায় এবং জিবুতি, কেনিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশগুলির ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমাগত সমর্থন প্রয়োজন। সোমালিয়ায় সৈন্য পাঠানোর এই সিদ্ধান্তটি চিরস্থায়ী না–হয়ে ধারাবাহিক হওয়া সত্ত্বেও, এটি অবশ্যই আল–শাবাবের বিপদের মাত্রা কমাতে এবং হর্ন অফ আফ্রিকা অঞ্চলে অ–স্থিতিশীলতার অবসানের বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের মার্কিন আকাঙ্ক্ষার নির্দেশক।

আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ রাষ্ট্রগঠনের মহড়া, যার ফলস্বরূপ মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই তালিবান শাসনের প্রত্যাবর্তন ঘটে, তা একটি সতর্কবার্তা হিসেবে নেওয়া উচিত এবং সোমালিয়াতে একই পথে চলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিরুৎসাহিত করা উচি্ত।

যাই হোক, সোমালিয়ায় আরও মার্কিন সেনার প্রয়োজনের পক্ষে যুক্তি দেওয়া কঠিন। এর পরিবর্তে শান্তির জন্য সম্প্রদায়চালিত, নিচু তলা থেকে উপরের দিকে চালিত পদ্ধতিতে আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন, যা স্থানীয়দের বিশ্বাস অর্জন ও সংযোগ তৈরির উপর নির্ভরশীল হবে। সোমালিয়ায় মার্কিন যুদ্ধের পুনর্নবীকরণের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমেই–সেনা মানসিকতার পরিচায়ক। তা কিন্তু অতীতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। সোমালি রাষ্ট্রের বৈধতা বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপ বা প্রশিক্ষণ থেকে আসবে না। পরিবর্তে তা আসবে অ–স্থিতিশীলতা এবং সংঘাতের মূল কারণগুলিকে মোকাবিলা করার জন্য একটি সমন্বিত কূটনৈতিক প্রয়াস থেকে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Abhishek Mishra

Abhishek Mishra

Abhishek Mishra is an Associate Fellow with the Manohar Parrikar Institute for Defence Studies and Analysis (MP-IDSA). His research focuses on India and China’s engagement ...

Read More +
Arushi Singh

Arushi Singh

Arushi Singh is a writer at the Consortium of Indo-Pacific Researchers. She has graduated from the Department of Geopolitics and International Relations (GIR) at Manipal ...

Read More +