Author : Sayantan Haldar

Published on Feb 04, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারত মহাসাগরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা এই অঞ্চলে ভারতের নিরাপত্তা সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক হয়ে উঠেছে

ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া

Image Source: Getty

২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বারা আয়োজিত ইনফর্মেশন ফিউশন সেন্টার - ইন্ডিয়ান ওশান রিজিয়ন (আইএফসি-আইওআর) ভারত মহাসাগরে ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারনেস বা সামুদ্রিক পরিসরের সচেতনতার (এমডিআই) উপর ক্রমবর্ধমান অগ্রাধিকারের প্রেক্ষিতে, আইএফসি-আইওআর তথ্য আদান-প্রদান এবং সমুদ্রে আসন্ন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রচারের কাজ সহজতর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ হেন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি সামুদ্রিক সহযোগিতায় একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিকেই দর্শায়।

ভারতের সামুদ্রিক ভৌগোলিক পরিসর তার বৃহত্তর জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনায় সামুদ্রিক নিরাপত্তাকে প্রধান অগ্রাধিকার দেয়। সমুদ্রে জটিল চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষার জন্য সামুদ্রিক পরিসরে সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক সন্ত্রাস, জলদস্যুতা, পাচার এবং আইইউইউ (অবৈধ, অপ্রতিবেদিত ও অনিয়ন্ত্রিত) মাছ ধরার মতো মতো অপ্রচলিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ক্রমশ বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা সামুদ্রিক নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে রিয়েল-টাইম ডেটা এজেন্সি ও সংস্থানগুলির মধ্যে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে মহাসাগরের পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত সহযোগিতার সুযোগ প্রদান করেছে। ভারতের সাগর (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন বা অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা ও বৃদ্ধি) দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রচারও সামুদ্রিক নিরাপত্তায় সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে।

সমুদ্রে জটিল চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষার জন্য সামুদ্রিক পরিসরে সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই আলোকে, আইএফসি-আইওআর সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি বৃদ্ধির প্রয়াস অব্যাহত রাখার কাজে ভারতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ভারত মহাসাগরের বিশাল ব্যাপ্তি আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতার পার্থক্যের কারণে, তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা ভারত তার অংশীদারদের সমন্বিত হওয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করেছে। সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতার বিষয়ে সমন্বয় ও সহযোগিতা করার জন্য ভারত ২০১৭ সালে জাকার্তায় ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে আইএফসি-আইওআর প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিল। বিষয়টি এই প্রশ্ন উস্কে দেয় যে, কেন সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ? মহাসাগরগুলি সমীকরণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ-সহ এমন সুবিশাল জটিল পরিসর, যা একটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা রাখে। সুতরাং, সমুদ্রের বিকশিত সমীকরণ উপলব্ধি করা অপরিহার্য। এই সচেতনতা সমুদ্র থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলির প্রতিক্রিয়াকে আকার দিতে পারে।

সামুদ্রিক দেশগুলির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এটি শুধুমাত্র চিরাচরিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা নয়, বরং পরিবেশগত নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, মানব নিরাপত্তা খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও একটি উদ্বেগজনক হুমকি তৈরি করেভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা তার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধির পর গতি অর্জন করেছে। এই অঞ্চলটি ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী সময়ে কৌশলগত জড়তা সূচনা দ্বারা চিহ্নিত করা হলেও নতুন অর্থনৈতিক শক্তিদের উত্থান এবং এই অঞ্চলে সি লাইন অফ কমিউনিকেশন-এর (এসএলওসি) ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের দরুন ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা তার অংশীদারদের জন্য একটি মূল অগ্রাধিকার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে উঠে এসেছে। এটি এই অঞ্চলের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ভাল ভাবে সাযুজ্যপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে এমডিএ শুধুমাত্র ভারতের নিজস্ব সামুদ্রিক স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রস্তুতির সুবিধার্থে তার বিবৃত লক্ষ্যের অভিমুখে কাজ করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সমুদ্রে উদ্ভূত আসন্ন হুমকিগুলি আঞ্চলিক উপকূলীয় দেশগুলির জাতীয় নিরাপত্তার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর পাশাপাশি এই দেশগুলির উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকাকে বিপন্ন করে তোলে

আইএফসি-আইওআর সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা প্রচেষ্টায় সহযোগিতা সহজতর করার জন্য অগ্রগতি দর্শিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যখন প্রথম সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন আইএফসি-আইওআর কার্যত অংশীদারদের সঙ্গে তথ্য ভাগ করে নিয়েছিল। বর্তমানে ১২টি অংশীদার দেশ থেকে আন্তর্জাতিক লিয়াজঁ অফিসার রয়েছেন, যাঁদের মাধ্যমে তথ্য প্রচার সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে এমডিএ-তে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য আর কটি বড় অগ্রগতি হল, টিকে বহুপাক্ষিক এবং ক্ষুদ্রপাক্ষিক জোটে অন্তর্ভুক্ত করা। সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা সামুদ্রিক সুরক্ষা নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসাবে উঠে এসেছে এবং ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতার পার্থক্যের প্রেক্ষিতে, ভারতের মতো দেশগুলি সমুদ্র সতর্কতা এবং তথ্য আদান-প্রদানের সহযোগিতাকে সক্ষম করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চেয়েছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন একমাত্র সর্বভারতীয় সামুদ্রিক আঞ্চলিক মঞ্চ হিসেবে এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তার প্রচেষ্টা জোরদার করতে চায় সমুদ্রে উদ্ভূত আসন্ন হুমকিগুলি আঞ্চলিক উপকূলীয় দেশগুলির জাতীয় নিরাপত্তার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর পাশাপাশি এই দেশগুলির উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকাকে বিপন্ন করে তোলে। তাই সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা জোরদার করতে ইচ্ছুক এমন একটি আঞ্চলিক সংস্থার জন্য এমডিএ স্বাভাবিক ভাবেই একটি প্রধান অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে। এটি ভারতের সাগর দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতার বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণসর্বোপরি, সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করতে গঠিত অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জোট কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে উইলমিংটনে সাম্প্রতিক কোয়াড নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে আইএফসি-আইওআর-এর সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতার জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরে ভারতের ভূমিকা এখনও গুরুত্বপূর্ণউল্লেখযোগ্য ভাবে, ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রে ভারতের অবস্থান দেশটিকে এই অঞ্চলে এমডিএ প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া অপরিহার্য করে তোলে। আইএফসি-আইওআর-এর মতো মঞ্চ এবং সমমনস্ক দেশগুলিতে তাদের সহযোগীদের মধ্যে সমন্বয় কার্যকর ভাবে মহাসাগরগুলি পর্যবেক্ষণ করতে এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য তথ্য ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত মহাসাগরে ভারতের নিজস্ব সামুদ্রিক নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের উপর নজর রাখা জরুরি।

আগামিদিনে গতিশীল সামুদ্রিক চ্যালেঞ্জের উদ্ভব সামুদ্রিক নিরাপত্তায় তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করতে পারে। ভারত মহাসাগরে ভারতের নিজস্ব সামুদ্রিক নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের উপর নজর রাখা জরুরি। দক্ষিণ চিন সাগরের বিপরীতে, ভারত মহাসাগর চিনের নৌ আগ্রাসনের সাক্ষী থাকেনি। বরং চিন ভারত মহাসাগরে গবেষণা সমীক্ষার উদ্দেশ্যে জাহাজ পাঠানোর একটি কৌশল গ্রহণ করেছে, যে জাহাজগুলি মাঝে মাঝে শ্রীলঙ্কা এবং মলদ্বীপের মতো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বিন্দুগুলিতে নোঙর করেছে। এটি ভারতের জন্য এক নিরাপত্তামূলক দ্বন্দ্বকে উস্কে দিয়েছে। কারণ নয়াদিল্লি সব সময়ই ভারত মহাসাগরে চিনের উপস্থিতি নিয়ে চিন্তায় থাকে। এই অঞ্চলে চিনা অগ্রগতির উপর নিরীক্ষণ সেই অনুযায়ী সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি বৃদ্ধি করার জন্য সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ। সমষ্টিগত পর্যায়ে জলদস্যুতা, সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ এবং আইইউইউ-তে মাছ ধরার ক্রমবর্ধমান হুমকি ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক নিরাপত্তা পরিবেশকে শক্তিশালী করার জন্য একটি সম্মিলিত পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা দর্শিয়েছে। ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতিতে অগ্রণী প্রচেষ্টার জন্য ভারতের বিবৃত উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আইএফসি-আইওআর-এর মাধ্যমে এমডিএ আরও গতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

 


সায়ন্তন হালদার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sayantan Haldar

Sayantan Haldar

Sayantan Haldar is a Research Assistant at ORF’s Strategic Studies Programme. At ORF, Sayantan’s research focuses on Maritime Studies. He is interested in questions of ...

Read More +