Author : Navdeep Suri

Published on Jul 18, 2022 Updated 0 Hours ago

প্রধানমন্ত্রী মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফর তাঁর এই বিশ্বাসের ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশের আরও শক্তিশালী জোট তৈরি হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর আবুধাবি সফর: সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত

২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরটি ২০১৪ সালের মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁর চতুর্থ সফর। এর আগে আগস্ট ২০১৫, ফেব্রুয়ারি ২০১৮ এবং আবারও আগস্ট ২০১৯–এ তিনি দেশটিতে সফর করেছিলেন। তার আগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৮১–র সফরের পর থেকে দীর্ঘ ৩৪ বছর ভারতের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী আমিরশাহি সফরে যাননি। এর বিপরীতে উপসাগরীয় দেশটির সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক সংযোগের এই রূপান্তরটি বেশ অসাধারণ।

প্রধানমন্ত্রীর চতুর্থ সফরের কারণ স্পষ্টতই শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা, এবং শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে আবুধাবির শাসক ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানানো। গতানুগতিক কূটনৈতিক প্রোটোকলের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টিকে বিশুদ্ধ ভাবে দেখলে, এই সফরের প্রয়োজন ছিল না। উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু ১৫ মে আবুধাবি গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নেতৃত্বের প্রতি ভারত সরকারের সমবেদনা জানাতে। পাশাপাশি একটি প্রথাভাঙা পথে এগিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ব্যক্তিগত ভাবে নয়াদিল্লিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দূতাবাসে গিয়েছিলেন শোক বইতে স্বাক্ষর করতে।

প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ মোহাম্মদের মধ্যে উষ্ণতা ও ব্যক্তিগত রসায়ন অকৃত্রিম এবং স্পষ্ট।

স্পষ্টতই এটি এমন একটি সম্পর্ক যা কূটনৈতিক প্রোটোকলের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। মোদী এবং শেখ মোহাম্মদের মধ্যে উষ্ণতা ও ব্যক্তিগত রসায়ন অকৃত্রিম এবং স্পষ্ট। আবুধাবিতে তাঁদের শেষ বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রীকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার অর্ডার অফ জায়েদ প্রদান করা হয়েছিল। তারপর প্রায় তিন বছর কেটে গেছে।  তিনি জানুয়ারিতে দুবাই এক্সপোতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন, তবে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। জার্মানিতে জি–৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পথে এই স্টপওভারটি শেখ মোহাম্মদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বিদেশমন্ত্রী–সহ রাজপরিবারের প্রধান সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে সম্পর্ক পুনর্নবীকরণের একটি সুযোগ তৈরি করে।

ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব

ইতিমধ্যে দ্বিপাক্ষিক ফ্রন্টে অনেক কিছু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি মোটামুটি সারগর্ভ ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন করেন, যেখনে উভয় পক্ষ একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি ( সি ই পি এ) স্বাক্ষর করে। দুই নেতা একটি উচ্চাভিলাষী, দূরদর্শী জয়েন্ট ভিশন স্টেটমেন্ট প্রকাশ করেন যার শিরোনাম ছিল:‌ ‘‌ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া: নতুন সীমানা, নতুন মাইলফলক’‌।

সি ই পি এ একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। মাত্র ৮৮ দিনের মধ্যে আলোচনা সেরে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে, এবং পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এটি ১ মে কার্যকর হয়েছে, এবং ইতিমধ্যেই ট্যারিফ লাইনের ৯৭ শতাংশের জন্য বাজারে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার চালু করেছে, যার মধ্যে আমিরশাহিতে ভারতীয় রফতানির ৯৯ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত। এটি রত্ন ও গয়না, টেক্সটাইল, চামড়া, পাদুকা, ক্রীড়া সামগ্রী, প্লাস্টিক, আসবাবপত্র, কৃষি ও কাঠের পণ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ওষুধ, চিকিৎসা যন্ত্রাদি ও অটোমোবাইলের মতো ক্ষেত্রে ভারতীয় রফতানিকে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এটি ভারতীয় পরিষেবা প্রদানকারীদের প্রবেশাধিকার ১১টি বিস্তারিত পরিষেবা ক্ষেত্রের জায়গায় প্রায় ১১১টি উপক্ষেত্রে উন্নীত করেছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ চিহ্নিত করতে, চুক্তির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে ভারতের অগ্রণী ব্যবসায়ীদের অবহিত করতে, এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে চুক্তির বিধানগুলির সুযোগ নেওয়ার উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে ১২ মে অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন তৌকের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির একটি উচ্চ–পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল ভারতে ছিল। সফরের পাশাপাশি ডিপি ওয়র্ল্ড ও ভারতের ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল বারাণসীতে স্থানীয় যুবকদের লজিস্টিক, পোর্ট অপারেশন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে স্কিল ইন্ডিয়া সেন্টার স্থাপনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর লক্ষ্য বৈদেশিক কর্মসংস্থান করা। কেন্দ্রীয় শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোগ মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোগ প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর, এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির উদ্যোক্তা ও এসএমই প্রতিমন্ত্রী ডঃ আহমেদ বেলহুল আল ফালাসির উপস্থিতিতে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ চিহ্নিত করতে, চুক্তির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে ভারতের অগ্রণী ব্যবসায়ীদের অবহিত করতে, এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে চুক্তির বিধানগুলির সুযোগ নেওয়ার উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে ১২ মে অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন তৌকের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির একটি উচ্চ-পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল ভারতে ছিল।

ভিশন স্টেটমেন্টটি অংশীদারিত্বের নতুন ক্ষেত্রগুলির জন্ম দিচ্ছে, এবং একটি ক্ষেত্র যেটি বেশ দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করেছে তা হল আই আই টি দিল্লির আমিরশাহিতে একটি বিশ্বমানের ক্যাম্পাসের মাধ্যমে বিদেশে প্রথম উপস্থিতি। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির জলবায়ু দূত এবং শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তি মন্ত্রী ডক্টর সুলতান আল জাবেরও ২৬ মে ভারতে এসেছিলেন আবু ধাবিতে অনুষ্ঠিতব্য কপ২৮–এর প্রস্তুতিপর্বে জলবায়ু সক্রিয়তা সংক্রান্ত একটি এম ও ইউ স্বাক্ষর করতে। প্রযুক্তিতে সহযোগিতা, যা গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনে আয়তনের মিতব্যয়িতা নিয়ে আসবে, তা চলতি কথোপকথনের একটি মূল অংশ।

আঞ্চলিক ফ্রন্টে, ২০২০ সালের আগস্টে আব্রাহাম চুক্তির পর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ইজরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের দ্রুত স্বাভাবিকীকরণ ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার নতুন পথ খুলে দিয়েছে। কিছু ইজরায়েলি প্রযুক্তি সংস্থা ইতিমধ্যেই দুবাইতে বেস অফিস তৈরি করেছে, এবং আমিরশাহির মূলধন ও ভারতীয় আয়তনের সঙ্গে বিশেষ প্রযুক্তিগুলির মিলন ঘটাতে চাইছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আসন্ন পশ্চিম এশিয়া সফরে ভারত, ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও  সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নতুন গ্রুপিং আইটুইউটু–এর একটি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন হবে। চারটি দেশের বিদেশমন্ত্রীরা তাঁদের প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন ২০২১ সালের অক্টোবরে ডক্টর জয়শঙ্করের তেল আভিভ সফরের সময়। সেই বৈঠকে মূল নজর ছিল যৌথ বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবহণ এবং পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির উপর। এই ধরনের একটি গ্রুপ কয়েক বছর আগে অকল্পনীয় ছিল, কিন্তু আব্রাহাম অ্যাকর্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ইজরায়েল উভয়ের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে।

বিজেপি–র দুই কর্মকর্তার নবি মহম্মদ সম্পর্কে সমালোচনামূলক মন্তব্যের কারণে সৃষ্ট অশান্তির মধ্যে এই ইতিবাচক ঘটনাগুলি ঘটেছে। যদিও কাতার ও কুয়েত প্রথমেই ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করেছিল এবং কড়া বিবৃতি জারি করেছিল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিদেশ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রক বিজেপি মুখপাত্রদের মন্তব্যের নিন্দা করে বিবৃতি দেওয়ার আগে ৬ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‌‘‌মন্ত্রক এই বিষয়টির উপর জোর দেয় যে ধর্মীয় প্রতীককে সম্মান করা এবং সেগুলি লঙ্ঘন না–করা উচিত, এবং তার পাশাপাশি ঘৃণামূলক বক্তব্য ও হিংসার মোকাবিলা করা প্রয়োজন। মন্ত্রক সহনশীলতা এবং মানব সহাবস্থানের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অভিন্ন আন্তর্জাতিক দায়িত্ব জোরদার করার গুরুত্বও উল্লেখ করছে। সেই সঙ্গেই বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের অনুভূতিকে উস্কে দেয় এমন কোনও অনুশীলনকে বাধা দেওয়া উচিত।’‌’‌ অন্য বিক্ষুব্ধ দেশগুলির থেকে ভিন্নপথে হেঁটে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায়নি বা প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়নি।

মন্ত্রক সহনশীলতা এবং মানব সহাবস্থানের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অভিন্ন আন্তর্জাতিক দায়িত্ব জোরদার করার গুরুত্বও উল্লেখ করছে। সেই সঙ্গেই বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের অনুভূতিকে উস্কে দেয় এমন কোনও অনুশীলনকে বাধা দেওয়া উচিত।‌

গত কয়েক বছরে আরব বিশ্বে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হয়ে উঠেছে, এবং দলের মুখপাত্রদের বিকর্ষণকারী মন্তব্যের কারণে সৃষ্ট অভিঘাততরঙ্গ সহ্য করার জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্থিতিস্থাপকতা আছে। দলীয় মুখপাত্রদের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে তাঁরা আবু ধাবিতে ও আই সি বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে আমাদের প্রয়াত প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে এবং তারপর জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রেক্ষিতে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ইসলামিক বিশ্বে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলি ভারতকে যে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন দিয়েছে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। সব মিলিয়ে অনেক সাধারণ আমিরশাহিবাসীর হৃদয় ও মনে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রথমে দুটি বিবৃতি এবং পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে দক্ষিণপন্থী ট্রোলগুলির একটি অংশের কুরুচিপূর্ণ এবং ইসলামোফোবিক মন্তব্যের ফলে দুবাই, আবু ধাবি এবং অন্যত্র বসবাসকারী হাজার হাজার ভারতীয় শঙ্কিত তাঁদের স্বার্থের ক্ষেত্রে প্ররোচনা ছাড়াই ইচ্ছাকৃত অপ্রীতিকর আঘাতে। এটি একটি প্রান্তিক ক্ষুদ্র শক্তি হতে পারে, তবে এটি এমন একটি শক্তি যাতে লাগাম লাগাতে হবে৷

ক্ষতির কিছুটা ২৮ জুনের প্রধানমন্ত্রীর সফর এবং নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত রসায়ন সংশোধন করবে, তবে ক্ষত সারানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ গণকূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন হবে। উপসাগরীয় অন্যান্য দেশে কাজটি অনেক বেশি কঠিন হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.