Author : SK Gadeock

Published on Jun 12, 2023 Updated 0 Hours ago
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি: ভারতের প্রয়োজন হাইব্রিড যুদ্ধের সক্ষমতার বিকাশ

সামরিক ও অ–সামরিক উপাদান সহ হাইব্রিড যুদ্ধ সারা পৃথিবীর সামনে একটি উদীয়মান চ্যালেঞ্জ। এটি গোয়েন্দা খবরাখবর, তথ্য, সাইবার, ইলেকট্রনিক, এবং প্রচলিত ও অপ্রচলিত যুদ্ধের কৌশলগুলি ব্যবহার করে অনির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের প্রয়োজন সূচিত করেছে। এই গবেষণাপত্রটি হাইব্রিড যুদ্ধের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করে, ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষের (পাকিস্তান ও চিন) হাইব্রিড যুদ্ধের ক্ষমতা অনুসন্ধান করে, এবং বিকল্প যুদ্ধের মোকাবিলায় ভারতের জন্য এই ধরনের ক্ষমতার বিকাশের পক্ষে যুক্তি দেয়।


আরোপণ: এস.কে. গ্যাডেঅক, “প্রিপেয়ারিং ফর দ্য ফিউচার: দ্য নিড ফর ইন্ডিয়া টু ডেভলপ হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার কেপেবিলিটিজ,” ওআরএফ অকেশনাল পেপার নং ৩৯৯, এপ্রিল ২০২৩, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।


ভূমিকা

‘‌হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার’‌ বা ‘‌হাইব্রিড দ্বন্দ্ব’‌ শব্দগুলির কোনও একক সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই। সাধারণত, হাইব্রিড যুদ্ধ বলতে বোঝায় সংঘাতের সময় সবথেকে বেশি সাফল্য পেতে যুদ্ধের বিভিন্ন পদ্ধতি ও সরঞ্জামের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা। হাইব্রিডকে বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ থেকে এমন একটি উপায় হিসাবেও দেখা হয় যেখানে লড়াইয়ে জড়িত না–থেকেও প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতিতে জাতীয় শক্তির ব্যাপক প্রয়োগ করা হয়।

প্রচলিত সংঘাতে হাইব্রিড কৌশলের প্রয়োজন দেখা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর, যখন সশস্ত্র বাহিনীর জনগণকে জড়িত করে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতিগুলি অপ্রতুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ২০০৬ সালের ইজরায়েল–লেবানন যুদ্ধের সময় ধারণাটি আরও প্রাধান্য পেয়েছিল, এবং তখন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লেবাননের (এবং হিজবুল্লার) অপ্রচলিত কৌশলের ব্যবহারকে —যেমন গেরিলা যুদ্ধ, প্রযুক্তির উদ্ভাবনী ব্যবহার এবং একটি কার্যকর তথ্যপ্রচার — ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’‌ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।[১]

কর্নেল জন জে ম্যাককুয়েন, একজন প্রবীণ যোদ্ধা এবং কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ও হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার বিশেষজ্ঞ, হাইব্রিড দ্বন্দ্বকে এইভাবে বর্ণনা করেছেন:‌ ‘‌‘‌…ভৌত ও ধারণাগত উভয় মাত্রাসম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ: প্রথম মাত্রাটি হল সশস্ত্র শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম,‌ এবং পরবর্তীটি যুদ্ধের অঞ্চলের অধিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করা ও সমর্থন পাওয়ার জন্য, এবং সেইসঙ্গেই হস্তক্ষেপকারী দেশগুলির হোম ফ্রন্টগুলির সমর্থন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিশ্চিত করার একটি বিস্তৃত সংগ্রাম। …অধিবাসী জনসংখ্যাকে সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল করার জন্য হস্তক্ষেপকারী বাহিনীকে অবিলম্বে নিরাপত্তা দিতে হয়, এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা, স্থানীয় সরকার, প্রতিরক্ষা বাহিনী ও অর্থনীতির অপরিহার্য উপাদানগুলির পুনর্নির্মাণ বা পুনরুদ্ধার করতে হয়।’‌’‌[২]

বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক জি হফম্যান, যিনি প্রথম হাইব্রিড যুদ্ধের ধারণাটির তাত্ত্বিক কাঠামো দিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে এটি রাজনৈতিক যুদ্ধের কৌশল ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধের (প্রচলিত, অনিয়মিত ও সাইবার যুদ্ধ সহ) সমন্বয়ের সঙ্গে অন্যান্য কৌশলও (যেমন ভুয়ো খবর ছড়ানো ও কূটনীতি) অন্তর্ভুক্ত করে।[৩]

বিক্রান্ত দেশপাণ্ডে ও শিবানী মেহতা তাঁদের বই ‘‌হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার: দ্য চেঞ্জিং ক্যারেক্টার অফ কনফ্লিক্ট’‌–এ  হাইব্রিড বা গ্রে জোন কনফ্লিক্ট [ক] এবং সংশ্লিষ্ট বিপদগুলির বিনির্মাণ করেছেন।[৪] তাঁরা লক্ষ্য করেছেন যে হাইব্রিডিটি, অর্থাৎ সংস্পর্শ ও সংস্পর্শহীন হাতিয়ারের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে[খ] সংঘাত, সমগ্র ইতিহাস জুড়ে বিদ্যমান রয়েছে, যদিও যুদ্ধের উপায় ও পদ্ধতিগুলি সমকালীন আর্থ–রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার — এবং তার পরিপূরক গ্রে জোন, অনিয়ন্ত্রিত, বা অ–রৈখিক যুদ্ধ — আধুনিক দিনের দ্বন্দ্বগুলিকে বোঝানোর একটি প্রয়াস৷ শিল্পযুগের দ্বন্দ্বের সঙ্গে মধ্যযুগীয় দ্বন্দ্বগুলির মধ্যে মূল পার্থক্যটি এগুলির হাইব্রিড প্রকৃতি বা অ–রৈখিক পদ্ধতির নয়, বরং পার্থক্য এনেছে পরিবর্তিত আর্থ–রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে তথ্যযুগের যুদ্ধ সরঞ্জামগুলির ব্যবহার। হাইব্রিড বা গ্রে জোন দ্বন্দ্বগুলিকে বিনির্মাণ করার প্রয়াস যা নির্দেশ করে তা হল কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সমন্বিত, সুসঙ্গত এবং কখনও কখনও একযোগে একাধিক ধরনের ক্ষমতার প্রয়োগ।[৫] অধিকন্তু, ‘‌অস্বীকার করা’র‌[গ] বিকল্প এবং অ–রাষ্ট্রীয় কুশীলবদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য একটি দেশের সীমিত সুযোগ ক্রমবর্ধমানভাবে আরও দেশকে তাদের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য এই জাতীয় শক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম করে তোলে।

কৌশলগত বিশ্লেষক শন মোনাগানের মতে, ‘‌‘‌হাইব্রিড যুদ্ধগুলি প্রথাগত সংঘাতের আশ্রয় না–নিয়ে মাল্টিডোমেন যুদ্ধের পন্থা ব্যবহার করে, যার মধ্যে রয়েছে সাইবার আক্রমণ, বিভ্রান্তি ও ধ্বংস, অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেল ও অন্তর্ঘাত, প্রক্সি বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা, এবং একটি সমাজ বা একটি দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে অস্থিতিশীল করার জন্য সামরিক সম্প্রসারণবাদ।’‌’‌[৬]

হাইব্রিড যুদ্ধকে, তাই, ভূ–রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং যুদ্ধের রূপান্তরকারী চরিত্রের উপর ভিত্তি করে কৌশলগত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ফোকাসড, সাবথ্রেশহোল্ড–লেভেল[ঘ] প্রয়াস হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। সমসাময়িক সময়ে গুপ্তপন্থা, গ্রে–জোন অস্পষ্টতা, আরোপণ–অযোগ্যতা ও অস্বীকৃতি ব্যবহার করে এবং সতর্কভাবে ঝুঁকি বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে অস্ত্র হিসাবে অর্থনৈতিক উপকরণ, প্রযুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর ব্যবহারকে আন্তঃপরিবর্তনযোগ্যভাবে হাইব্রিড যুদ্ধ, গ্রে জোন দ্বন্দ্ব, এবং/অথবা রাজনৈতিক যুদ্ধ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিবেশ সব সময়েই গতিশীল, যদিও কিছু নিরাপত্তা হুমকি ধ্রুবক হিসাবে থেকে যায়। যেমন, চিন ও পাকিস্তানের মধ্যেকার যোগসাজশ[ঙ] ভারতের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতকে উভয় সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য তার দুই প্রধান প্রতিপক্ষের সংশোধনবাদী প্রবণতা[চ] নস্যাৎ করতে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপসহ একটি সক্রিয় অবস্থান নিতে হবে। এই প্রবন্ধটির লক্ষ্য পাকিস্তান ও চিনের সক্ষমতার ভিত্তিতে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে হাইব্রিড যুদ্ধের খুঁটিনাটি বোঝা।

হাইব্রিড দ্বন্দ্ব অনুধাবন: ভারতীয় প্রসঙ্গ

অন্তত কৌটিল্যের (প্রাচীন ভারতীয় পলিম্যাথ যিনি চাণক্য নামেও পরিচিত) যুগ থেকে ভারতে হাইব্রিড দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যাই হোক, ভারতের বর্তমান সামরিক ব্যবস্থা একটি ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার এবং ইউরোপের সেট–পিস যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিকশিত হয়েছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল জটিল ও হাইব্রিড যুদ্ধক্ষেত্রের কাঙ্ক্ষিত মাত্রাটির সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করা। তার প্রতিপক্ষের (প্রধানত পাকিস্তান ও চিন) হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত পারমাণবিক যুদ্ধের প্রতিচ্ছায়ায় উপ–প্রথাগত ও প্রচলিত যুদ্ধকে [ছ] অগ্রাধিকার দিয়েছে। তবুও, ভবিষ্যতের বিপদগুলি সরল হবে না। সেগুলি একটি জটিল ও হাইব্রিড কাঠামোর জন্ম দেবে, যার জন্য বলপ্রয়োগ ও যুদ্ধের তত্ত্ব এবং কৌশলগুলির সম্পূর্ণ সংশোধনের প্রয়োজন হবে। একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং জাতীয় ও সামরিক লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যে কোনও যুদ্ধ বা সংঘাতের কাঙ্খিত সমাপ্তিকে সুসংজ্ঞায়িত করার জন্য (‌যা সব সময়েই সর্বোপরি এবং দর–কষাকষির ঊর্ধ্বে)‌ একাধিক উপ–শ্রেণীসহ একটি সামগ্রিক প্রচারাভিযানের ‘‌মহাকৌশল’‌ তৈরি করা প্রয়োজন। নিজের মূল জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি দেশের এক দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রয়োজন, যা তাদের একটি দৃঢ় ও সিদ্ধান্তে অবিচল যৌথ সেনাসক্ষমতা (যা স্থল, বায়ু ও সামুদ্রিক ক্ষেত্রের বাইরে যায়) দ্বারা শক্তিশালী হয়। এটি ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার উপর বর্তমান ফোকাস থেকে আরও স্বার্থভিত্তিক সক্ষমতার দিকে একটি কৌশলগত রূপান্তর বাধ্যতামূলক করে। সেই হিসাবে ভারতকে অবশ্যই এখনকার রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে এমন একটি সমন্বিত জাতীয় মানসিকতা বিকাশের লক্ষ্যে পুনর্নির্মাণ করতে হবে যা শুধুই কূটনৈতিক শক্তি বা স্থিতাবস্থার বিকল্পগুলির উপর নির্ভর করে না।

তৃতীয় শতাব্দীর গ্রন্থ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র,  এবং কামন্দকি (একজন কম পরিচিত সামরিক কৌশলবিদ) রচিত নীতিসার ভারতীয় যুদ্ধের ইতিহাসের অপরিহার্য পাঠ। উভয়ের মূল শিক্ষা হল সংঘাতের সময় বা তার পরে, কিন্তু কোনও প্রকৃত শক্তি ব্যবহার করার আগে, যুদ্ধক্ষেত্রকে প্রভাবিত করার জন্য জাতীয় শক্তির উপাদানগুলির একটি জটিল ও হাইব্রিড মিশ্রণের প্রয়োগ প্রয়োজন। কৌটিল্য কূটনীতি, ভিন্নমত, অর্থনৈতিক জবরদস্তি ও সংঘাতের আগে, সময়ে এবং পরে শক্তিপ্রয়োগের ধারাবাহিকতা ব্যাখ্যা করেছেন;‌ আর কামন্দকি এই ভয় দেখানোর সরঞ্জামগুলিতে প্রতারণা, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও ফলপ্রদ অবহেলা যোগ করেছেন। তথ্য যুগের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করা হলে এই ধারণাগুলির অর্থ হবে প্রতিটি আধুনিক, নতুন ও বিঘ্নকারী হাতিয়ার, প্রযুক্তি ও বাস্তুতন্ত্রকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা।

ভারতের বর্তমান জাতীয় নীতি, যুদ্ধের ধারণা ও শক্তির কাঠামো যুদ্ধের বিকশিত প্রকৃতির সঙ্গে ভালভাবে সংযুক্ত নয়। এর যৌথ যুদ্ধের তত্ত্বের সফল কৌশলীকরণের জন্য, এবং সেই লক্ষ্যে যুদ্ধের ‘‌হুমকি ও সক্ষমতা’‌র কাঠামোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য, দেশ ও তার সামরিক বাহিনীকে ‘‌সর্বোচ্চ লাভ’‌ তোলার উপযোগী একটি সমন্বিত বহুমুখী পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যা শুধুমাত্র পেশাদার সামরিক শিক্ষা[জ] ও বেসামরিক–সামরিক সংমিশ্রণ থেকে উদ্ভূত হতে পারে।[ঝ]  প্রতিপক্ষ যেহেতু নানা ধরনের বিপদ নিয়ে আসতে পারে — কম খরচের কম প্রযুক্তিগত থেকে বিশাল খরচের উচ্চ–প্রযুক্তিগত — তাই দেশটির কৌশলগত যৌথ অভিযানগত পরিকল্পনার মধ্যে একত্র করতে হবে দেশের সব ধরনের শক্তিকে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অবশ্যই এমন রাজনৈতিক–সামরিক কূটনীতি এবং সূক্ষ্ম রাষ্ট্রকৌশল নীতিগুলিকে উৎসাহিত করতে হবে যা সংঘাত রোধ করতে কূটনৈতিক শক্তির কৌশলগত যোগাযোগের আদর্শ ব্যবহারে সক্ষম, এবং যা সেইসঙ্গেই দেশের অত্যাবশ্যক স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য সামরিক সক্ষমতা ক্রমশ বিকশিত ও সংরক্ষিত করে।

ভারত সরকারকে অবশ্যই উপযুক্ত বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে বেসামরিক–সামরিক সংমিশ্রণের সমন্বয় করে আন্তঃমন্ত্রক স্তরে এবং এজেন্সিগুলিকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা ও অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রক্রিয়াগুলি কাজে লাগাতে হবে, এবং বেসরকারি সংস্থা ও অ্যাকাডেমিয়া–সহ বেসরকারি ক্ষেত্রের দক্ষতাকে সংযুক্ত করতে হবে। এই ধরনের পরিবর্ধন সংঘর্ষের বেসামরিক দিকগুলি মোকাবিলা করার ক্ষমতা বাড়াবে। অভিযানগত স্তরে যুদ্ধের জটিল ও হাইব্রিডাইজড চরিত্রের মোকাবিলার জন্য ভারতকে অবশ্যই তার সমন্বিত যৌথ যুদ্ধের নীতিগুলির পর্যালোচনা এবং আরও পরিমার্জন করতে হবে। সামরিক বাহিনীকে অবশ্যই তার নীতিগুলির পুনরায় মূল্যায়ন করতে হবে, কারণ সেগুলি অভিযানগত শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং কৌশলগত পরিকল্পনার ক্যানভাসে সেগুলি জাতীয় শক্তির নতুন স্তম্ভগুলিকে অনবদ্যভাবে একীভূত করার চেষ্টা করে। এই অতি–গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত জরুরি হল সামরিক পেশায় কৌশল প্রণয়ন কীভাবে সংগঠিত ও পরিচালিত হয় সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে, এবং এই কৌশল ও নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত উপায়গুলি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুধাবনের জন্য সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতাদের প্রস্তুত করা। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস)–এর প্রাণবন্ত নেতৃত্বের অধীনে ভারতের যৌথ ও সমন্বিত সামরিক পরিকল্পনা কোনও নির্দিষ্ট কৌশলগত প্রেক্ষাপটে তত্ত্বগতভাবে আরও সুস্পষ্ট, অভিযোজিত, সমন্বিত ও  যুদ্ধ–প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে।

হাইব্রিড দ্বন্দ্বের কারণে উদ্ভূত পরিবেশে ভারতের সাফল্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল ক্রমবর্ধমান সংস্পর্শহীন, অ–গতিশীল ও হাইব্রিড যুদ্ধের কর্মবিধির নতুন দিকগুলি উপলব্ধি করার ক্ষমতা, এবং সেইসঙ্গে এ কথা স্বীকার করা যে যুদ্ধ এখন স্থল, সমুদ্র ও আকাশের প্রচলিত মাত্রাগুলি ছাড়িয়ে মহাকাশ ও তথ্যের মধ্যে প্রসারিত হয়েছে। ভারত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ধরনের বহুবর্ণীয় যুদ্ধে জড়িত হওয়ার কারণে তার এমন পেশাদারদের প্রয়োজন হবে যারা অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, জটিলতা ও অস্পষ্টতার মধ্যেও (যা জনপ্রিয়ভাবে একটি ভিইউসিএ পরিবেশ হিসাবে পরিচিত) শত্রুকে অতিক্রম করে যেতে পারে। হাইব্রিড হুমকির জটিলতা ভবিষ্যৎ নেতাদের জন্য এটা অপরিহার্য করে তোলে যে তাঁরা যেমন প্রচলিত ধারায় ক্রমাগত উন্নতি বজায় রাখবেন, তেমনই বিদ্রোহ প্রতিরোধ, অংশীদার–নির্মাণ, ও স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপগুলির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ও তা চালনা করার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, ক্রমিক প্রভাব ও দেওয়া–নেওয়াগুলি বুঝবেন, এবং সেইসঙ্গে সাইবার ও তথ্য ক্ষমতা বিকশিত করবেন৷ ফলস্বরূপ, ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সক্ষমতা বিকাশ অপরিহার্য, এবং তখন তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে হাইব্রিড যুদ্ধের পরিবেশে বহুমুখী পরিস্থিতির মুখোমুখি কার্যকর অভিযানগত প্রস্তুতি অর্জনের জন্য কোন স্তরের জ্ঞান ও সক্ষমতার সংমিশ্রণ প্রয়োজন।

পশ্চিম ফ্রন্ট: পাকিস্তান–কেন্দ্রিক হুমকি
পাকিস্তান অভূতপূর্ব অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মধ্যেও ভারতের বিরুদ্ধে বিরোধিতামূলক কাজকর্মে লিপ্ত রয়েছে।[৭] পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বর্তমানে দেশটির পশ্চিম ফ্রন্টে (আফগানিস্তান) তালিবানের বিরুদ্ধে এবং পূর্ব ফ্রন্টে ভারতের বিরুদ্ধে হাইব্রিড কৌশল বজায় রাখার দিকে মনোনিবেশ করছে। স্বাধীন দেশ হিসাবে পাকিস্তানের জন্মের প্রেক্ষাপটে ভারতের বিরুদ্ধে তার হাইব্রিড যুদ্ধ ব্যবহার করার বিষয়টি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। দেশভাগের পর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিপরীতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রাজনীতিকরণ ঘটে, এবং তা দেশের শাসন কাঠামোতে (যাতে এখন সরকার, বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনী অন্তর্ভুক্ত) একটি প্রধান শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়।

পাকিস্তানের সৃষ্ট হুমকি বোঝার জন্য ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করে এমন কিছু ভূ–রাজনৈতিক ও কৌশলগত বাধ্যবাধকতা পরীক্ষা করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জম্মু ও কাশ্মীর ভূ–কৌশলগত, আর্থ–সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জনসংখ্যাগত কারণে পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে ‘‌কৌশলগত গভীরতার’‌ অভাবের ভয়ে ভুগছে।[ঞ] একটি অতিরিক্ত উদ্বেগ ছিল যে বিশাল ভারতীয় স্ট্রাইক ফরমেশন পাকিস্তানের একটি সমৃদ্ধ রাজ্যের কেন্দ্রস্থল পঞ্জাবকে বিপন্ন করতে পারে। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের নৈকট্য, এবং এর বৃহৎ পশতুন জনসংখ্যাও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের জন্য জনসংখ্যাগত ও ভূ–রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। জল–রাজনীতি পাকিস্তানের জন্য আরেকটি সমস্যা, কারণ এটি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি খালসেচের দেশ, এবং প্লাবন ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক সেখানে রয়েছে। সিন্ধু নদীর জল এবং এর উপনদীগুলি, যা জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত, দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি নদীপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের কাছে কিন্তু খোলাখুলিভাবে জলপথ নিয়ন্ত্রণ এবং ‘‌জলকে অস্ত্র’‌ হিসাবে ব্যবহার করার বিকল্প রয়েছে।[৮]

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান সে দেশের আর কোনও সম্ভাব্য বিভাজন রোধ করতে ধর্মীয় মতাদর্শ ও মৌলবাদকে অস্ত্র করে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ জিয়া–উল–হক শুধু ইসলামিকরণের দর্শন ও কোরানের শিক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত ইসলামি অনুশীলনগুলি মেনে চলার জন্য কঠোর নিয়ম আরোপ করে একটি ইসলামি সেনাবাহিনীই গড়ে তুলতে চাননি, তার বাইরেও চলে গিয়েছিলেন। এটি পাকিস্তানের গোপন যুদ্ধের নীতিগত কৌশলের একটি উল্লেখযোগ্য দিক।

পাকিস্তান এরপর ভারতের বিরুদ্ধে অপ্রতিসম/প্রক্সি যুদ্ধের কৌশল অনুসরণ করতে শুরু করে, কারণ এটি ঠান্ডা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি জোটের অংশ হয়েছিল, যার ফলে ইসলামাবাদে অস্ত্র বিক্রি এবং সাহায্য হস্তান্তর করা হয়েছিল। উপরন্তু, চিন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানকে বড় ধরনের সামরিক, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহায়তার পাশাপাশি পারমাণবিক উপাদান দিয়ে আসছে, যার মধ্যে সংবেদনশীল পারমাণবিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম রয়েছে।

পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীর দখল করার উপায় হিসাবে একটি সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্র খলিস্তানের ধারণা প্রচার করে ভারতের পঞ্জাব রাজ্যের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদকেও কাজে লাগিয়েছে ।[৯] ১৯৮০–র দশকের শেষের দিকে, জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তানের গোপন যুদ্ধ কাশ্মীর উপত্যকায় একটি বিদ্রোহ হিসাবে প্রতিভাত হতে শুরু করে। পাকিস্তানের ইন্টার–সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি ও সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্রোহকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চৌকাঠের নিচে রাখার জন্য নিয়োজিত থেকেছে, যার জন্য গোপন অভিযানগুলিকে পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে পরিণত হতে দেওয়া হয়নি। বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও মাদক–সহ সন্ত্রাসবাদীদের ভারতে ঢোকানোর ক্ষেত্রে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল জম্মু ও কাশ্মীরে এবং পুরো দেশে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করা। ভারত পাকিস্তানের হাইব্রিড যুদ্ধকে এমন একটি সুপরিকল্পিত ও সংগঠিত কৌশল হিসাবে দেখে যার দৃষ্টি নিবদ্ধ স্থানীয় (পাকিস্তানি) জনগণ ও পরিকাঠামোগত সমর্থনের উপর, এবং যা চালানো হয় প্রক্সির মাধ্যমে গোপনে।

লক্ষণীয় ঘটনা হল, পাকিস্তান সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করার জন্য, যাতে দেশটি সামরিক সাহায়তা পায় ও ক্ষয়প্রাপ্ত হার্ডওয়্যার প্রতিস্থাপন করতে পারে। একই সময়ে দেশটি ভারত ও আফগানিস্তানে তার স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কৌশলগত সম্পদ হিসাবে তালিবান, লস্কর–এ–তৈবা (এলইটি), জইশ–এ–মহম্মদ (জেইএম) ও হিজবুল মুজাহিদিন (এইচএম)–এর মতো জিহাদি সংগঠনগুলিকে ব্যবহার করাও অব্যাহত রেখেছে। ভারতকে সংঘাতে জড়াতে হাইব্রিড যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানের সম্ভাব্য পরিকল্পনার রূপ ও সুযোগের পূর্বাভাস পেলে তা নয়াদিল্লিকে আরও দক্ষ প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করবে।

পাকিস্তান–অধিকৃত কাশ্মীরের উপর ইসলামাবাদের অবৈধ নিয়ন্ত্রণ, এবং দেশে চলতি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিবেশ সন্ত্রাসবাদীদের জন্য পারমাণবিক সরঞ্জামগুলির উপর অধিকার স্থাপনের সুযোগ পাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা পাকিস্তানের নিজেরই অন্তর্নিহিত আশঙ্কাগুলির মধ্যে একটি। তেমনটি ঘটলে এরা ভারতের বিরুদ্ধে একটি রাসায়নিক, জৈবিক, রেডিওলজিকাল, এবং পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে কোনও শিল্প দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বা রাসায়নিক ও জৈবিক এজেন্ট ব্যবহার করে (যেমন মাস্টার্ড গ্যাস, ভিএক্স নার্ভ গ্যাস বা অ্যানথ্রাক্স)।

অন্য একটি সম্ভাবনা হল এলইটি, এইচএম এবং কিছু আরব দেশভিত্তিক অপরাধ সিন্ডিকেটের মতো প্রক্সিগুলির মাধ্যমে পাকিস্তান একটি বড় জাহাজ (সম্ভবত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসবাহী) হাইজ্যাক করে এবং একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভারতীয় অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারে, যার ফলে ভারতের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক বন্দরগুলির এলাকায় সমান্তরাল ক্ষতি হয়।

জম্মু ও কাশ্মীরের অবস্থা পরিবর্তন করার আগেকার প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ার পর পাকিস্তান প্রক্সি যুদ্ধ এবং অন্যান্য ধরনের অসম যুদ্ধের দিকে সরে যায়, কিন্তু এই প্রচেষ্টাগুলি এই অঞ্চলে ভারতের অটল থাকার সংকল্পের কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে আটকে রাখার জন্য এরপর হিংস্রতার উপর জোর কমিয়ে ইন্তিফাদা–শৈলীর গণবিক্ষোভ, মিডিয়ার ব্যবহার এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের উপর জোর দেওয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলার ধরন এই সম্ভাবনার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছিল যে বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠী তাদের মনোযোগ জম্মু ও কাশ্মীর–কেন্দ্রিক গ্রামীণ বিদ্রোহ থেকে একটি সর্বভারতীয় শহুরে সন্ত্রাসের দিকে সরিয়ে নিয়েছে। এও সম্ভব ছিল যে পাকিস্তান ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর জন্য ভারতের দেশীয় গোষ্ঠীগুলিকে (যেমন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ও স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া) ব্যবহার করতে চাইবে। উপরন্তু, ভারতজুড়ে নকশাল হুমকির ভৌগোলিক বিস্তার এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান এই ধরনের সংগঠনগুলিকে সমর্থন দিতে পারত।

ভারত এখন পাকিস্তানের সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর সীমানার পুরো অংশে বেড়া দিয়েছে, এবং আশেপাশের জলের উপর অবিরাম নজরদারি চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সম্ভবত ছিদ্রযুক্ত ভারত–নেপাল সীমান্ত ভারতে ভবিষ্যতে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলা চালাতে প্রবেশের পথ হয়ে উঠবে। ভারতের আর্থিক, সামরিক ও অন্য অতি–গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কগুলিতে সাইবার আক্রমণের, এবং সেইসঙ্গে আরও বেশি অশান্তি সৃষ্টির জন্য ভারতীয় মুদ্রার জাল নোট এবং মাদকদ্রব্যের বৃহত্তর প্রবাহের সম্ভাবনাও রয়েছে।

ভারতের পাল্টা ব্যবস্থা

বৈশ্বিক ক্ষোভ এবং আফগানিস্তান–পাকিস্তান অঞ্চলকে এখন প্রায়ই ‘‌সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল’‌ হিসাবে উল্লেখ সত্ত্বেও পাকিস্তানের তরফে ভারতের প্রতি তার দ্বন্দ্বমূলক অবস্থান পরিবর্তন করার সম্ভাবনা কম।[১০]  কাজেই ভারতকে স্মার্ট শক্তি[ট] ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সক্রিয় কঠোর পন্থা অবলম্বন করে, এবং সমস্ত উপলব্ধ সরঞ্জাম (যেমন কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, তথ্যগত, পরিকাঠামোগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক–সামরিক) ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়ার বিকল্পগুলির একটি সেট তৈরি করতে হবে, যাতে নিজের নিরাপত্তা স্বার্থরক্ষার জন্য দেশ প্রস্তুত থাকে। উপযুক্ত পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যগুলিতে মনোনীত বিশেষ বাহিনীর জোরালো গোপন অভিযান দ্বারা এর পরিপূরণ করা প্রয়োজন। বৃহত্তর লক্ষ্য হওয়া উচিত ভারতকে এমন একটি নিষ্ক্রিয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া থেকে বিরত রাখা, যে রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিশোধ নেয় না।

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য দুটি সম্ভাব্য পন্থা রয়েছে। প্রথমত, পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের কৌশল এবং অপ্রতিসম যুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ করা, যাতে দেশ শুধু প্রতিক্রিয়া না–জানিয়ে আগে থেকেই সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধমূলক কাজকর্ম করে।[ঠ] এর অর্থ হল সংকট পরিস্থিতি আগে থেকে দেখতে পাওয়া এবং বহুমাত্রিক কৌশল ব্যবহার করে তা অতিক্রম করা, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে সবচেয়ে মূল্যবান স্বয়ংক্রিয় রণ–প্রযুক্তির ব্যবহার এবং একটি সঠিক নিবারণমূলক ‘‌প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত বিকল্প ম্যাট্রিক্স’‌ তৈরি করা।[ড] দ্বিতীয়ত, একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে, যেখানে পাকিস্তান ভারতে একটি বড় সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়, সম্ভাব্য সর্বোত্তম পদক্ষেপ হবে পূর্ব–পরিকল্পিত কৌশলগত উপাদানগুলির সামরিক ব্যবহার এবং সঠিক বহুমাত্রিক আঘাত–সহ দ্রুত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ করা। আঘাত হানার পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নের মাধ্যমে কতটা ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে তা নিশ্চিত করা যাবে।

পাকিস্তানের হাইব্রিড যুদ্ধের পদ্ধতিতে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক যুদ্ধ অন্তর্ভুক্ত। এই কারণে সামরিক কাজকর্মের প্রচলিত উপায়ের পাশাপাশি নিষ্পেশন, অস্বীকৃতি ও অন্তর্ঘাতের সংমিশ্রণের মাধ্যমে জবরদস্তিমূলক কৌশল ও গেরিলা যুদ্ধের মতো অপ্রচলিত যুদ্ধপদ্ধতি ব্যবহার করে একটি সমন্বিত আক্রমণাত্মক–প্রতিরক্ষা কৌশল অনুশীলন করা ভারতের জন্য অপরিহার্য। তদুপরি, ভারত প্রচলিত যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে থেকেও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে। যদিও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে একটি হাইব্রিড যুদ্ধ অপ্রত্যাশিতভাবে শুরু হতে পারে, তবে ভারতের কাছে এই ধরনের যুদ্ধের বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে, যার জন্য কিছুটা রাজনৈতিক–সামরিক সমন্বয় প্রয়োজন হবে। আরেকটি বিদ্যমান বিপদ হল যে কিছু (অনিয়মিত) উপাদান (যেমন অ–রাষ্ট্রীয় খেলোয়াড়) তাদের নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জনের জন্য হঠাৎ জোট পরিবর্তন করতে পারে, যেমন দেশকে অস্থিতিশীল করা বা এর শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষতি করা। অতএব, বিকল্প যুদ্ধ এবং অ–রৈখিক সংঘাতের জন্য একটি খুব শক্তিশালী কমান্ড–অ্যান্ড–কন্ট্রোল কাঠামো ও অভিযানের সুসংজ্ঞায়িত সীমা প্রয়োজন, যাতে দায় নিতে বাধ্য হওয়া বা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপসের ঘটনা কোনওভাবেই না–ঘটে।

বেশিরভাগ সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপ্রতিসম ও হাইব্রিড যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল প্রচলিত ধরনের। হাইব্রিড দ্বন্দ্বের সময় প্রচলিত শক্তির মোতায়েন কিন্তু কৌশলের অভাব, সম্পদের অদক্ষ ব্যবহার এবং শক্তির অননুপ্রাণিত ব্যবহারকেই প্রকট করে। ভারতকে অবশ্যই আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক উভয় ক্ষমতাসহ হাইব্রিড বিকল্প যুদ্ধের জন্য নিবেদিত একটি বিভাগ তৈরি করতে হবে। বিভাগের বিভিন্ন উপাদানের গোপনে কাজ করতে সক্ষম হওয়া উচিত, বিশেষ করে যখন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ ধারাবাহিকভাবে বিপদের মুখে রয়েছে। পদাতিক ডিভিশনের তিনটি ব্রিগেড থাকা প্রয়োজন, যার মধ্যে দুটি ব্রিগেডের সাইবার, ইলেকট্রনিক, তথ্য, মহাকাশ, যোগাযোগ, বিশেষ বাহিনী, গোয়েন্দা, নজরদারি ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের উপাদানগুলির সমন্বয়ে আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক অভিযানের জন্য নিবেদিত হওয়া উচিত। এর পাশাপাশি ভৌগোলিকভাবে নির্দিষ্ট বায়ুসেনা, নৌবাহিনী ও লজিস্টিক উপাদান থাকা প্রয়োজন। তা ছাড়া বিদেশমন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সামরিক কাঠামোগুলির সঙ্গে সমন্বিত থাকা প্রয়োজন, যাতে যে কোনও হাইব্রিড হুমকি মোকাবিলায় একটি বিশেষ বাহিনী কাঠামো গড়ে তোলা যায়। অভিযানগত গবেষণা ও সহায়তা পড়া উচিত তৃতীয় ব্রিগেডের পরিধির মধ্যে। এই ব্রিগেডের উচিত কার্যকর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের থিম তৈরি করা, সংস্কৃতির উপর বুদ্ধিমত্তা সংগ্রহ করা, লক্ষ্যবস্তু হিসাবে চিহ্নিত এলাকায় ত্রুটিবিচ্যুতি নির্ণয় করা, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করার জন্য সাইবার চ্যুতিরেখাগুলিকে কাজে লাগানো, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কেন্দ্র ও অভিযানগত ডেটার রক্ষক হিসাবে কাজ করা। এই বিভাগের অভিযানগত প্রভাব মূল্যায়ন, অভিযানগত গবেষণা, এবং অভিযানের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রগুলির মূল্যায়নেরও তদারকি করা উচিত। সম্পূর্ণ কাঠামোটির প্রকৃতি গোপনীয় হওয়া উচিত, এবং কঠোর রাজনৈতিক–সামরিক নিয়ন্ত্রণে তা পরিচালিত হওয়া উচিত। শান্তি এবং সংঘাত, উভয় সময়ে আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক হাইব্রিড যুদ্ধ অপারেশন পরিচালনা করার জন্য কাঠামোটির প্রাণবন্ত, অভিযোজিত এবং ভবিষ্যতের জন্য নিয়োজিত হওয়া উচিত। সংস্থাটির ‘‌প্লাগ–অ্যান্ড–ফাইট'[ঢ] কার্যকারিতার জন্য বেসামরিক ও সামরিক উপাদানগুলিকে একত্র করতে যথেষ্ট অভিযোজিত করা উচিত।

একটি অভিযানের সময় রাজনৈতিক–সামরিক তত্ত্বাবধান অবশ্যই থাকা উচিত, এবং নিয়ন্ত্রণের স্বল্পমেয়দি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত স্তরের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য করা প্রয়োজন। কৌশলগত পর্যায়ে সক্রিয়তার বেশিটাই হবে পরিকল্পনা তৈরি করা। সিডিএস অফিসের মহাকাশ, সাইবার, বিশেষ বাহিনী ও বিকল্প যুদ্ধ বিভাগগুলিকে নীতি ও কৌশল প্রণয়নের জন্য দায়িত্বশীল করা উচিত। অধিকন্তু, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে সামরিক বিষয়ক বিভাগকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাসহ একটি বিশেষ বাহিনীর সদর দপ্তর সংযোজিত করতে দেওয়া যেতে পারে। উল্লেখযোগ্যভাবে, হাইব্রিড আক্রমণের জন্য কৌশল তৈরি করার সময় এই ধরনের পরিস্থিতিতে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে একটি প্রাক–অনুমোদিত পরিকল্পনা তৈরি রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বিভাগীয় কমান্ডারকে হাইব্রিড ও কাউন্টার–হাইব্রিড যুদ্ধ চালানো এবং অভিযানগুলির প্রতিদিনের সমন্বয়ের জন্য কৌশলগত দায়িত্ব দেওয়া উচিত। একজন তিন তারকা সামরিক কমান্ডারকে নতুন বাহিনীর (যাকে ‘তথ্য ও গতিশীল সহায়তা বাহিনী’ বলা যেতে পারে) কমান্ডার–ইন–চিফ হিসাবে মনোনীত করা যেতে পারে। তাঁর সিডিএস–কে রিপোর্ট করা উচিত।[১১] ভারতে এখন সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ বাহিনী বিভাগের আকারে একটি কাঠামোর শুধু কঙ্কালটুকু রয়েছে, যার ক্ষমতা সীমিত এবং সক্ষমতা নগণ্য। এই কারণে সেটি পুনর্গঠিত করা প্রয়োজন। প্রতিবেশী এলাকা থেকে উদ্ভূত হাইব্রিড হুমকি মোকাবিলায় ভারতের ‘তথ্য ও গতিশীল সহায়তা বাহিনী’ তৈরি করার সময়ে বেশ কিছু নীতিগত বিকল্প বিবেচনার সুযোগ আছে।

  • যৌথ সামরিক পরিকল্পনা এবং পাল্টা ব্যবস্থা

যদি তারা ঝুঁকি নির্মূল করার জন্য দৃঢ়, প্রাণঘাতী এবং তীক্ষ্ণভাবে কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়, তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অবশ্যই তাদের পরিকল্পনার ‌কাঠামোয় পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত প্রতিটি হাইব্রিড হুমকি বিশ্লেষণ এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই ধারণাগত ভিত্তিগুলির কিন্তু পাল্টা কৌশলগুলিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা আছে, যা প্রতিরক্ষা নীতি, কৌশল ও সক্ষমতা বিকাশের উদ্দেশ্যে আরও উন্নত করা যেতে পারে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া বিশেষ বাহিনীর দ্রুত গোপন অভিযান, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বর্তমান যুদ্ধবিরতি বাতিল করা বা চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদী শিবিরে ড্রোন দিয়ে বহুমাত্রিক সারজিকাল/নির্ভুল স্ট্রাইক থেকে শুরু করে পারমাণবিক পটভূমিতে একটি সীমিত/সর্বাত্মক যুদ্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ক্রমবর্ধমান হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এটি কার্যকরভাবে প্রস্তুত রাখা অপরিহার্য। গণ–যোগাযোগের আধুনিক মাধ্যম ও ড্রোন প্রযুক্তি হাইব্রিড যুদ্ধের সাফল্যের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। যেমন, ড্রোন প্রযুক্তির বর্তমান পরিবেশে শুধু একটি শক্তিগুণক না হয়ে একটি বিশেষ বাহিনী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তান কর্তৃক সংঘটিত যুদ্ধের জটিল ও পরিবর্তনশীল প্রকৃতি ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছ থেকে একটি অভিযোজিত, সাবধানতার সঙ্গে বিবেচিত পেশাদার প্রতিক্রিয়ার দাবি রাখে। ভারত যে ঘন ঘন পাকিস্তানের হাইব্রিড ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে, তা বিবেচনা করে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত যৌথ কৌশলগত উদ্যোগের অংশ হিসেবে সক্রিয় আক্রমণাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই কাজটি একটি সুনির্মিত জাতীয় সংকর যুদ্ধ কৌশল অনুসারে করা উচিত, যা আবার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত।

  • রাজনৈতিক–সামরিক কূটনীতি

রাজনৈতিক–সামরিক কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আস্থানির্মাণের পদক্ষেপ, আন্তঃসীমান্ত রেল ও বাস পরিষেবা, ক্রীড়া ইভেন্ট, সাংস্কৃতিক বিনিময়, ট্র্যাক টু চ্যানেল এবং দুই দেশের মধ্যে একের পর এক মিথস্ক্রিয়া স্থগিত করা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। উপরন্তু, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের ক্রমাগত বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে — এমন একটি পরিস্থিতি যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলবে — বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত পাকিস্তানকে শুধু সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে দমন করার বিনিময়ে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা। পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে তার প্রচলিত সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সামরিক সাহায্য বা তহবিল ব্যবহার করা থেকেও বিরত রাখা উচিত, এবং জবাবদিহিতার জন্য উপযুক্ত মানদণ্ডের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর ব্যবস্থা না–নেওয়া পর্যন্ত ভারতকে এই প্রচার জোরদার করতে হবে যে পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় যোগ দেবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বৃহত্তম সেনা–অবদানকারী হিসাবে ভারতকে অবশ্যই পুনরাবৃত্তি করতে হবে যে পাকিস্তানের মতো ‘‌সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল’‌কে রাষ্ট্রপুঞ্জের অভিযানে সেনা পাঠাতে দেওয়া উচিত নয়। এই ধরনের যে কোনও ছাঁটাই পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কারণ সামরিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর সেনাদের পারিশ্রমিকের সঞ্চয় না–আসায় পাকিস্তানি ব্যাঙ্কগুলোর ঘাটতি হবে। ভারত ট্র্যাক–২ সামরিক কূটনীতির মাধ্যমে একটি কৌশলগত সম্পৃক্ততা বিবেচনা করতে পারে। এই ধরনের সংলাপ কিন্তু আলোচনার জন্য যথেষ্ট জায়গা দেবে, কারণ উভয় পক্ষের সামরিক বাহিনী এতে ব্যাপকভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে। উপরন্তু, চিনের ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবিলায় ভারতকে তার সংস্থানগুলি কেন্দ্রীভূত করতে এবং তার সামরিক আধুনিকীকরণকে সুসংহত করতে পরিসর ও সময়ের প্রয়োজন, কিন্তু পশ্চিম সীমান্তে সম্ভাব্য সঙ্কটের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন থাকলে এই লক্ষ্যটি অর্জন করা সম্ভব নয়। এখানেই একটি ট্র্যাক–২ সংলাপ কাজে লাগতে পারে।

  • আর্থ–সামাজিক ব্যবস্থা

সর্বাধিক পছন্দের রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের মর্যাদা[ণ] রদ করার অতিরিক্ত হিসাবে ভারত আরও বেশ কিছু আর্থ–সামাজিক পদক্ষেপ করতে পারে, যেমন বাণিজ্য স্থগিত করা, এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য রাষ্ট্রের মাধ্যমে পাকিস্তানকে তার প্রতিরক্ষা বাজেট বরাদ্দ কমাতে এবং সেইসঙ্গে সামাজিক ক্ষেত্রের (বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) জন্য একটি সমানুপাতিক বৃদ্ধির জন্য চাপ প্রয়োগ ইত্যাদি। পাকিস্তান বর্তমানে তার অর্থনীতির কাঠামোগত ত্রুটি, বহিরাগত সাহায্য ও সহায়তার উপর চরম নির্ভরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপ্রতুল কৃষি ফলন, চিন–পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পগুলির দুর্বল কার্যকারিতা, ও বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ক্ষয়প্রাপ্তির কারণে অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। তার উপর এই ধরনের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা আরও চাপ যোগ করবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিপূরক হওয়া উচিত এই ধরনের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদীদের (যেমন বালুচ লিবারেশন আর্মি) ধ্বংসাত্মক কাজকর্মের কারণে সিপিইসি প্রকল্পগুলি যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা তৈরি করা ও শ্বাসরোধ করা সম্ভব। একই প্রদেশের সোয়াট, দির ও চিত্রাল অঞ্চলে প্রকল্পগুলি বিলম্বিত করতে, এবং বিনিয়োগকারী ও শ্রমিকদের স্থবির, মনোবলহীন ও হতাশ করার জন্য একই রকম পরিস্থিতি তৈরি করা যেতে পারে। পাকিস্তানের রপ্তানি বাজার দখলের পরিকল্পনা করে তার অর্থনীতিকে আরও পঙ্গু করে দিতে হবে। তা ছাড়া, তহবিলের বহিঃপ্রবাহ শুরু করানোর জন্য অর্থনৈতিক অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যার ফলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। পাকিস্তানকে অবশ্যই সীমান্তে হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অসহনীয় অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করতে হবে। অবশেষে, ভারত সিন্ধু জল চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথাও বিবেচনা করতে পারে।[প]

  • সুসমন্বিত তথ্য যুদ্ধ

পাকিস্তানের বর্তমান অস্থিতিশীলতা হল সামাজিক ক্ষেত্রের প্রতি ক্রমাগত অবহেলা, দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি, হ্রাসপ্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি থেকে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার পরিণতি। এটি হাইব্রিড যুদ্ধের অংশ হিসাবে তথ্য যুদ্ধের জন্য একটি আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। হাইব্রিড যুদ্ধকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভারত ইতিমধ্যেই তার স্থলযুদ্ধ সংক্রান্ত মতবাদকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে। ভারত এখন সাইবার, মহাকাশ ও তথ্যের মতো সংঘাতের স্পর্শহীন ক্ষেত্রগুলি–সহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে একটি বহুমুখী পরিস্থিতিতে তার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষদের মোকাবিলা করতে পারে, এবং এটি তাকে প্রতিপক্ষদের চ্যুতিরেখাকে কাজে লাগিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার বিকল্প দেয়। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তান অভিযোগ করে আসছে যে ভারত দীর্ঘদিন ধরে তার সামাজিক–জাতিগত ও ধর্মীয় চ্যুতিরেখার সুযোগ নিয়েছে এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে বালুচিস্তান প্রদেশে, যেখানে সাম্প্রদায়িক হিংসার সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘটনা ঘটেছে।[১২]

  • কৌশলগত যোগাযোগ নীতি

বিদেশমন্ত্রককে অবশ্যই একটি জাতীয় কৌশলগত যোগাযোগ উপদেষ্টা কমিটি বা জাতীয় কৌশলগত যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি কৌশলগত যোগাযোগ নীতি আনুষ্ঠানিক করতে হবে। এই সত্তার মধ্যে ভারতের শীর্ষ থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি (সরকারি/আধা–সরকারি/ব্যক্তি মালিকানাধীন), প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক, কৌশলবিদ, শিক্ষাবিদ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ভারতকে অবশ্যই তার সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার বিরুদ্ধে জারি করা যেকোনও বিবৃতির বিশ্লেষণাত্মক, প্রামাণিক ও মেধাসম্পন্ন প্রতিক্রিয়ার পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। এই ধরনের একটি সংস্থা এবং একটি সুসংহত কৌশলগত যোগাযোগ নীতি ভারতের গর্ব ও ভাবমূর্তিকে অন্য দেশের ষড়যন্ত্র  বা ইচ্ছাকৃত মিথ্যা প্রচার থেকে রক্ষা করার জন্য অপরিহার্য।

  • যুদ্ধ উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাভারতের প্রথাগত আধিপত্য সত্ত্বেও পাকিস্তান ভারতের সাবধানি ও ঝুঁকি না–নেওয়ার অবস্থানের কারণে প্রত্যাঘাতের ভয়মুক্ত হয়ে ‘‌হাজার আঘাতের মাধ্যমে ভারতের রক্তপাত’‌ ঘটানোর নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। তারপরেও পরিকল্পিত হাইব্রিড আক্রমণে সহায়তা করার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যে কোনও ধরনের প্রতিক্রিয়া ইসলামাবাদ থেকে পাল্টা জবাব পেতে পারে, বিশেষ করে যদি নয়াদিল্লি সামরিক প্রতিক্রিয়া বেছে নেয়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া ডুরান্ড লাইন (যার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষভাবে সংবেদনশীল) থেকে পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার এবং পারমাণবিক ধ্বংসের রূপ নিতে পারে। অতএব, প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি পরিসীমা তৈরি রাখা প্রয়োজন।

উত্তর এবং উত্তর–পূর্ব ফ্রন্ট: চিনা ফ্যাক্টর
চিন তার সম্প্রসারণবাদী পরিবর্ধন ও রূপান্তর নীতির মাধ্যমে সামরিক, অর্থনৈতিক, ডিজিটাল ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্থানচ্যুত করে একতরফাভাবে মহাশক্তির মর্যাদা অর্জনের চেষ্টা করছে। এই কাজটি করার চেষ্টা চলছে একটি কৌশলগত বেসামরিক–সামরিক সংমিশ্রণ মতাদর্শ, আর্থ–সামাজিক প্রবৃদ্ধির উপর দৃষ্টি, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সংস্কার, উচ্চ–মূল্য বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে অতিক্রমণ, এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির আধানের উপর ভিত্তি করে, এবং এ সবেরই লক্ষ্য শেষ পর্যন্ত এর জাতীয় শক্তির ব্যাপক বৃদ্ধি। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ও পরিকাঠামো ও আবাসন প্রকল্পগুলিতে বিপর্যয়, এবং ভীষণ খরা সত্ত্বেও চিনের একদলীয় শাসন রাষ্ট্রকে তার সম্প্রসারণবাদী লক্ষ্যগুলি অনুসরণ করে যেতে সক্ষম করেছে।

হাইব্রিড সংঘাতে চিনের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে রয়েছে ভারতের ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর সঙ্গে কিস্তিমাত অবস্থা তৈরি করা; সীমালঙ্ঘন, অনুপ্রবেশ, রাজনৈতিক ও সামরিক ফ্রন্টে ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে জাহির করা,[থ], [১৩] ভারত মহাসাগর অঞ্চলে আক্রমণ এবং দ্বীপগুলিকে হুমকি দেওয়া; ঋণ ফাঁদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন; সমমনা দেশগুলির সঙ্গে যোগসাজস;[দ] এবং সাধারণভাবে  কোয়ারসিভ গ্র‌্যাজুয়ালিজম বা জবরদস্তিমূলক ক্রমবাদী আচরণ অনুসরণ করা।[ধ] এইভাবে সাইবার যুদ্ধ, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, সমন্বিত নেটওয়ার্ক ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, তথ্য অপারেশন, ‘তিন যুদ্ধের কৌশল’ (মনস্তাত্ত্বিক, মিডিয়া, ও আইনি যুদ্ধ), রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দর–কষাকষি, অর্থনৈতিক যুদ্ধ, এবং জনসংখ্যাগত যুদ্ধের মতো সংস্পর্শহীন যুদ্ধকৌশলের মাধ্যমে চিন তার জাতীয় স্বার্থ শক্তিশালী করে চলে।

অনেক ভূ–রাজনৈতিক ও ভূ–কৌশলগত কারণ রয়েছে যা ভারতের বিরুদ্ধে চিনের হাইব্রিড যুদ্ধ কার্যক্রমকে চালিত করে। প্রথমত, ভারতীয় ভূখণ্ডে বেজিংয়ের সম্প্রসারণবাদী প্রচেষ্টা এবং জিনজিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ও তাইওয়ানে চিনের পদক্ষেপগুলি নয়াদিল্লির সঙ্গে, এবং উইঘুরদের রক্ষা করতে চাওয়া দেশ ও অ–রাষ্ট্রীয় কুশীলবদের সঙ্গে, বিরোধের জন্ম দিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, পূর্ববর্তী চিনা সম্রাটদের আত্মরক্ষামূলক নীতি অনুসরণের কারণে ঐতিহাসিক সামুদ্রিক জড়তা তৈরি হয়েছিল, এবং তার ফলে চিনের দক্ষিণ–পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলগুলি[ন] — যেগুলিতে দেশের অর্ধেকেরও বেশি অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প কর্মকাণ্ড রয়েছে — বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল (যার কারণে পশ্চিমীরা সামুদ্রিক প্রকৌশলে একটি প্রযুক্তিগত সুবিধা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল)। উপরন্তু, চিন তাইওয়ানকে তার অবস্থানের কারণে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। তাইওয়ানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে চিন দক্ষিণ চিন সাগরে যোগাযোগের প্রধান সমুদ্রপথগুলিতে (এসএলওসি’‌জ) আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সেই জলসীমায় তার নৌ–উপস্থিতি বাড়াতে পারবে। এ দিকে ভারত তাইওয়ানের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে তার সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে, এবং তাইপেই নয়াদিল্লির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে।

তৃতীয়ত, চিন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের মাধ্যমে এখন যেখান দিয়ে তার বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ যায়,[১৪] সেই মালাক্কা প্রণালীর বিকল্প খুঁজছে, কারণ সে এই অত্যাবশ্যক এসএলওসি–র উপর তার অতিরিক্ত নির্ভরতা এড়াতে চায়। এদিকে, মালাক্কা প্রণালী অবরুদ্ধ হলে ভারতের কাছে সামুদ্রিক বিকল্প রুট হিসাবে সুমাত্রা ও জাভার ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে অবস্থিত সুন্দা প্রণালী ব্যবহারের সুযোগ আছে, যা জাভা সাগর ও ভারত মহাসাগরকে পূর্ব এশিয়ার জলের সঙ্গে সংযুক্ত করে। যদিও মালাক্কা প্রণালীর মাধ্যমে চিনা বাণিজ্যের দুর্বলতা দূর করার জন্য বিআরআই–কে কল্পনা করা হয়েছিল, তবে এটি এখনও পর্যন্ত বিনিয়োগের সামান্যই লাভ দিয়েছে। পণ্য পরিবহণের অর্থনৈতিক কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে তিনটি বিকল্প, অর্থাৎ স্থল, সমুদ্র ও বায়ু, উপলব্ধ থাকলেও জল পরিবহণই এখনও সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর।[১৫] ফলে, এটা অসম্ভব যে সামুদ্রিক রুটগুলি কখনও প্রতিস্থাপিত হবে।

চতুর্থত, চিনে বিশ্বের জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ বাস করলেও সেখানে আছে আবাদযোগ্য জমির মাত্র ৭ শতাংশ (উল্লেখযোগ্য শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে), যার ফলে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাজনিত প্রয়োজনের জন্য আফ্রিকা ও ইউরোপের উপর চিনের নির্ভরতা বেড়েছে। উপরন্তু, চিনা অর্থনীতি মন্থর হচ্ছে, এবং মধ্যমেয়াদে তা ৭ শতাংশের নিচে থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।[১৬] কম ইনপুট খরচ (বিশেষ করে শ্রম) চিনকে প্রাথমিকভাবে সুবিধা দিলেও এখন আর তা ফলপ্রসূ নয়, বরং অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণ। ফলে চিন তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপায় ও পথ খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে।

ভারতের বিকল্প
চিন ভারতকে আঞ্চলিক একাধিপত্য ও নিরঙ্কুশ প্রাধান্যের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে। একটি বলশালী সামরিক শক্তি হিসেবে ভারতের ভূ–কৌশলগত অবস্থান ও বিশ্বাসযোগ্যতাও চিনা উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কাজ করে। তার সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষার আলোকে চিনের লড়াইক্ষ্যাপা মনোভাব আরও প্রকট হয়ে উঠেছে, এবং দেশটি পিএলএ–র আধুনিকীকরণ করতে শুরু করেছে। যদিও ভারত চিনের সামরিক প্রস্তুতি সম্পর্কে সচেতন, ভারতের প্রতিক্রিয়া কিন্তু এই অঞ্চলে শক্তির গতিশীলতার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট স্পষ্ট বা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যতক্ষণ না ভারত চিনের সমতুল্য হওয়ার জন্য তার সামরিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে পর্যাপ্তভাবে কাজে লাগাতে পারে, ততক্ষণ ভারতকে চিনের হুমকি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তিকালীন কেন্দ্রীভূত কৌশল তৈরি করতে হবে।

চিনে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে, এবং চিনের সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা দিতে ভারত নিম্নলিখিত বিকল্পগুলি বিবেচনা করতে পারে।

  • সংখ্যালঘুদের সমর্থন করা

হান, ঝুয়াং, হুই ও মাঞ্চু সহ বিভিন্ন বিক্ষুব্ধ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর কারণে চিন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সংখ্যালঘুরা প্রায়শই বৈষম্য ও বর্জনের সম্মুখীন হয়, এবং তাদের মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করে, এমনকি সম্পূর্ণ ও প্রশ্নাতীত নাগরিকত্বের পরিস্থিতিতেও। এরপর তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হলে তা তাদের দুর্বলতা বাড়াতে পারে, এবং সম্ভাব্যভাবে তারা ব্যাপক বহিষ্কারের সম্মুখীন হতে পারে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের দ্বারা স্বনিয়ন্ত্রণের যে কোনও দাবিকে প্রায়শই মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রচেষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, এবং সাধারণত রাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। জিনজিয়াং ও অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকারকে সমর্থন করা হলে তা যেমন অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, তেমনই পারে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ককে জটিল করে তোলার এবং এর ভূখণ্ডগত অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলার সম্ভাবনা তৈরি করতে।[১৭]

  • তিব্বতের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন সমর্থন করা

তিব্বত এবং এর ৫.২ মিলিয়ন বাসিন্দার জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের প্রচারণা এই অঞ্চলকে চিনের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করার পরেও অব্যাহত আছে। দলাই লামার পক্ষে ভারতের ওকালতি, এবং তিব্বতের অস্থির, অসন্তুষ্ট ও নিপীড়িত যুবকদের কাছে পৌঁছনোর প্রক্রিয়া, অবশ্যই চিনের ক্ষতি করবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যতা চিনকে এই ক্ষমতা দিয়েছে যে সে তিব্বতকে এমন একটি অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে দাবি করে অটল থাকতে পারে যার বাইরের কোনও সমাধানের প্রয়োজন নেই। তবুও, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভারত তিব্বতের নিপীড়িত জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রদর্শনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বন্ধু দেশগুলির সহায়তায় ‘‌তিব্বতের স্বায়ত্তশাসনের জন্য বিপ্লব’‌–এর ব্যানারে একটি বিশাল বৈশ্বিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।[১৮]

  • আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে সারিবদ্ধ হওয়া

চিনের জন্য অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) অঞ্চল অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারি এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে প্রবেশ করে, তবে এটি চিন–মায়ানমার পাইপলাইন করিডোর সহ বিভিন্ন বিআরআই পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য চিনের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করবে। আসিয়ান দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ–রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারী ইন্দো–প্যাসিফিক সারিবদ্ধতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তারা দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের উদ্দেশ্য ও কৌশল সম্পর্কে, এবং নৌ–চলাচলের স্বাধীনতা ও একটি নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতি চিনের সামগ্রিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করলেও বেজিংকে অসন্তুষ্ট করতে চায় না;‌ কারণ তারা নিশ্চিত নয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে সকলের অভিন্ন স্বার্থরক্ষায় তাদের সঙ্গে কত দূর যাবে। কোয়াড (ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি কৌশলগত নিরাপত্তা সংলাপ)–এর নানা পরিবর্তনের দীর্ঘ ইতিহাস, এবং এর নিরাপত্তা পথের ধীরগতির কারণে আস্থার অভাব তৈরি হয়েছে। সম্ভবত এটি ছিল অওকাস (অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি) তৈরির পিছনের চালিকা শক্তিগুলির মধ্যে একটি। এ ছিল এক ধরনের অতিরিক্ত ব্যবস্থা, যার লক্ষ্য মার্কিন দেশের প্রতি আরও বেশি বিশ্বাস তৈরি করা, এবং মার্কিন তরফে তার অনেক অংশীদারির উপর নির্ভর করার বার্তা দেওয়া। যাই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট যে আসিয়ান চায় না মহাশক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তার ভূখণ্ডে রক্তপাত ঘটাক। যদিও আসিয়ান তার নিজস্ব স্বার্থ বজায় রাখে, তার অনেক সদস্য দেশই তাদের ইচ্ছার কথা জানাতে দ্বিধাবোধ করে। এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আসিয়ান দেশগুলিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধা দেয়, কারণ চিন বিষয়টিকে ওই দেশগুলির চিনের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়া বলে ধরে নিতে পারে। কিন্তু এ সবের পরেও চিনকে প্রতিহত করার জন্য ভারতকে আসিয়ানের যৌথ অর্থনৈতিক সুযোগগুলিকে পুঁজি করতে আসিয়ান অঞ্চলের সঙ্গে তার সম্পর্ক বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।[১৯]

  • সমন্বিত যৌথ সাইবার ওয়ারফেয়ার সক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা

পিএলএ বা ভারতীয় সেনাবাহিনী উভয়েই নেটওয়ার্ক–কেন্দ্রিক যুদ্ধের তাৎপর্য স্বীকার করে।[প] তবে পিএলএ যদিও সংগঠন এবং কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী তা করেনি। ইলেকট্রনিক যুদ্ধ যে সাইবার যুদ্ধের পরিপূরক, তা ভারতীয় সেনাবাহিনী এখনও সম্যকভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। অথচ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমস্ত স্তরে উল্লেখযোগ্য জৈব সাইবার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সক্ষমতা রয়েছে। তাই এই বিষয়ে আরও বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। স্থল সেনা এই উদ্দেশ্যে একটি ভাল প্রতিপালক ও প্রহরী সংস্থা হতে পারে। ভারতের এমন একটি নিবেদিত তথ্য যুদ্ধ পরিষেবা নেই যা পরিষেবা–নির্দিষ্ট মিশন ও সামরিক লক্ষ্যগুলিতে ব্যবহার করা যেতে পারে;‌ অন্যদিকে চিনের কৌশলগত সহায়তা বাহিনী রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের তথ্যযুদ্ধের ক্ষমতা শুধু খণ্ডিতই নয়, এর একটি সংজ্ঞায়িত কমান্ড কাঠামোরও অভাব রয়েছে;‌ এবং এর বৈদ্যুতিন যুদ্ধের ক্ষমতা চিনের মতো  দক্ষতা অর্জন করেনি। তাই এক একক অপারেশনাল কমান্ডারের নিয়ন্ত্রণে সাইবার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সম্পদ একীকরণের প্রয়োজন আছে। উপরন্তু, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এখনও চিনা সমন্বিত নেটওয়ার্ক ইলেকট্রনিক যুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির অনুরূপ কিছুই তৈরি করে উঠতে পারেনি। এদিকে ভারত প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সাইবার ও মহাকাশ সংস্থা, এবং সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ অপারেশন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর একটি সম্ভাব্য কারণ হল সশস্ত্র বাহিনী ও ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিকনায়সেন্স অর্গানাইজেশন–এর মধ্যে পর্যাপ্ত যোগাযোগ নেই। ভারত যদি ইন্টিগ্রেটেড থিয়েটার কমান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তা হলে ইন্টার–সার্ভিসেস থিয়েটার কমান্ডারকে স্বাধীনতা দিতে হবে যাতে তিনি কৌশলগত স্তরে তিনটি শাখার বৃহত্তর নেটওয়ার্ক কেন্দ্রিকতার জন্য সাইবার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সমন্বয় ঘটাতে পারেন।

  • পদাতিক ইউনিটকে বিশেষ বাহিনীতে রূপান্তর করা

ভারতীয় বাহিনীকে দীর্ঘ মিশনের জন্য, এবং উল্লেখযোগ্যভাবে আরও শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে বিতর্কিত অঞ্চলের গভীরে অবস্থানের জন্য ঝুঁকি নেওয়া এবং লড়াই ও অনিশ্চয়তাকে বরণ করার প্রশ্নে একটি বৃহত্তর সদিচ্ছা ও নির্দেশের প্রয়োজন। একটি বিস্তৃত স্তরে, কার্যকর গোপন কাজকর্ম কিন্তু স্বল্পমেয়াদি কৌশলগত লাভের উপর ফোকাস করার পরিবর্তে বিশেষ অপারেশনগুলির কৌশলগত গুরুত্বের একটি শক্তিশালী অনুধাবনের উপর কেন্দ্রীভূত হয়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করতে হবে, সে সম্পর্কে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ধারণাটি প্রচলিত বা নমনীয় নয়। বরং এটি প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডের গভীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক শুরু করা এবং সীমান্তের একাধিক অংশ জুড়ে অনুভূমিক উত্তেজনা বৃদ্ধির উদ্যোগের উপর জোর দেয়। ভারতের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এই ধরনের পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করতে ইচ্ছুক কি না তা দেখার বিষয়। এমনকি যদি ভারতের বর্তমান প্রশাসন একটি বার্তা পাঠাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় যে ঝুঁকির উপলব্ধি এবং শক্তির ব্যবহার অবিচ্ছেদ্য, তবে তারপরেও অনেক কিছু নির্ভর করবে সংঘাতের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং চিনা আগ্রাসনের সঠিক প্রকৃতির উপর।[২০]

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুস্থিত যোগাযোগ

এই অঞ্চলের জন্য নির্ভরযোগ্য মার্কিন উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল চিনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার আরেকটি উপায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের প্রত্যাশা রয়েছে যে তারা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হবে, যেমন ভ্যাকসিন, উদীয়মান প্রযুক্তি, এবং জলবায়ু। এই তিনটি ক্ষেত্রে এতদিন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়াকে সমর্থন করেছে চিন।[২১] একই সময়ে, সংযোগ ও পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি এখন চিন এবং দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, কারণ এগুলি এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। জি৭–এর ‘‌বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়র্ল্ড’‌ উদ্যোগ[ফ] এবং ব্লু ডট নেটওয়ার্ক[ব] দক্ষিণ এশিয়াকে চিনের মতো একই স্তরের সংযুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

উপরন্তু, বাইডেন প্রশাসন একটি ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশল নথি প্রকাশ করেছে,[২২] যা চিনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির মোকাবিলায় এবং ভারতকে তার উপযোগী করার জন্য ক্ষমতায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। নথিটি ভারতের সঙ্গে একটি বড় প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে, এবং এই অঞ্চলের একটি নিট নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে ভারতের ভূমিকায় সমর্থন জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে যে, নয়াদিল্লির উত্থান ও তার আঞ্চলিক নেতৃত্বকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে,[২৩] এবং ভারতকেও তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে ঋণ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রযুক্তিগত পরামর্শও দিতে পারে। তার অর্থ এই নয় যে সেগুলি বহুপাক্ষিক ঋণ ত্রাণ উদ্যোগের মতো কর্মসূচির মতো আনুষ্ঠানিক ঋণ ত্রাণ হবে। পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলিকে চিনের ঋণ গ্রহণের আগে এবং পরে সমর্থন করার প্রস্তাব দিতে পারে। এটি শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো দেশগুলিকে শর্তাদি নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে, যা চিনা পক্ষের সঙ্গে আলোচনার সময় তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। সেইসঙ্গে এটি তাদের সামগ্রিক ঋণ পরিচালনা ও পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেজারি অফিস অফ টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স উন্নয়নশীল ও উত্তরণশীল দেশগুলির অর্থ মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলিকে কার্যকরভাবে সরকারি অর্থ পরিচালনা করার এবং তাদের আর্থিক ক্ষেত্রগুলিকে সুরক্ষিত করার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতেও এই ধরনের সহায়তা প্রসারিত করতে পারে। উপরন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তরণ সহজ করতে পশ্চিমী বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির উপর তার প্রভাব ব্যবহার করতে পারে, এবং এই রাষ্ট্রগুলিকে আর্থিক সংযম ও স্থিরতার জন্য বিকল্প পথ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

  • আধুনিক পরিকাঠামো ও টেকসই ক্ষমতা তৈরি করা

সময়ের সাথে সাথে ভারত যদি প্রতিবেশী দেশগুলির সক্ষমতা তৈরি করতে পারে, তবে সেই দেশগুলির ভেতরের অংশীদারদের চিনের অস্বচ্ছ চুক্তি সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলিকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা বাড়তে পারে। এই অংশীদারেরা সম্ভবত চাইবে তাদের রাজনৈতিক প্রশাসন শুধু সেই সত্তাগুলির সঙ্গে কাজ করুক যারা স্থায়িত্ব ও জবাবদিহিতার আন্তর্জাতিক মানের প্রতি দায়বদ্ধ। উন্নয়ন সহায়তার একটি অপেক্ষাকৃত নতুন উৎস হিসেবে চিন ‌কিন্তু প্রকল্প অর্থায়ন ও প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। চায়না ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো–অপারেশন এজেন্সি বা এর প্রক্সিগুলি শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ বা বাংলাদেশে চিনা উন্নয়ন প্রকল্পের বেশিরভাগে অংশগ্রহণ করে না;‌ সেগুলির সঙ্গে যুক্ত হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের দিকে দৃষ্টি রেখে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন চিনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা।[২৪]

সামরিক বাহিনীর বিমান ও নৌ–সক্ষমতা বৃদ্ধি করা
চিনের চলতি সামরিক প্রস্তুতির লক্ষ্য হল পিএলএ–র নিজস্ব ঘাটতিগুলি কাটিয়ে ওঠা, এলএসি বরাবর সংঘাতের জন্য পিএলএ–র ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, এবং তিব্বতের উপর ভারতের বিমান শক্তির বাড়তি সুবিধা শেষ করা। খুব স্বল্পমেয়াদি দৃষ্টিকোণ দিয়ে চিনের বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা একটি গুরুতর কৌশলগত ত্রুটি হবে। ভারতকে অবশ্যই এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যা একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধক হিসেবে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। এটি এলএসি বরাবর প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর জন্য তৈরি শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতা দ্বারা সমর্থিত হওয়া উচিত। ভারতকে অবশ্যই তার এমন সামর্থ্যের উপর দৃষ্টি রাখতে হবে যা সংঘাতের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের জন্য বেদনাদায়ক পরিণতি তৈরি করতে চায়। যেহেতু এই অঞ্চলে চিনের অনেক অগ্রগামী ঘাঁটি নেই, এবং যেহেতু তিব্বতের মালভূমির কঠোর জলবায়ু সৈন্য মোতায়েন ও পরিবহণকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তোলে, তাই উচ্চতর উচ্চতায় অভিযানগত আধিপত্য নিশ্চিত করার জন্য বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রয়োজন। তাছাড়া ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের নৌ–শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। ভারতকে অবশ্যই প্রথাগত উপায়ের বাইরে যেতে হবে এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সাইবার যুদ্ধ ও মহাকাশ অস্ত্রের মাধ্যমে সংঘর্ষের তাৎক্ষণিক এলাকা ছাড়িয়ে মূল্য আরোপণের ক্ষমতা বিকাশ করতে হবে।[২৫]

উপসংহার
চিন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তীব্র দ্বন্দ্বে লিপ্ত আছে। যদিও সামরিক ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে, চিন কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্য ডিজিটাল রূপান্তর–সহ তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থা নিচ্ছে। উপরন্তু, ২০২৮ সালের মধ্যে চিন বিশ্ব জিডিপির ২৪ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ থাকবে ১৪ শতাংশ।[২৬]  তবুও, চিনকে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে, যেমন একটি ধীরগতির অর্থনীতি, রিয়েল এস্টেট সংকট এবং এক জনসংখ্যাগত কর্মশক্তি ঘাটতি।

চিনের ধীরগতির অগ্রগতির সুযোগ নিয়ে ভারত এই কৌশলগত জায়গাটির সদ্ব্যবহার করতে পারে নিজে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে। এটি নিশ্চিত করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল প্রচলিত ও হাইব্রিড ক্ষেত্রে প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করা। একইসঙ্গে ভারতকে অবশ্যই চিনা আধিপত্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপযোগী কৌশল তৈরি করতে হবে, এবং সংঘাত বা যুদ্ধের আকস্মিক পরিস্থিতিতে বিস্মিত হওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে হবে।[২৭]

হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশলের সমর্থকেরা এমন যে কোনও ধরনের যুদ্ধকৌশলের ব্যবহারকে উৎসাহিত করবেন যা সামরিক শক্তিকে এড়াতে পারে এবং প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে পারে। হাইব্রিড বর্ণালীতে অব্যাহত সাফল্যের চাবিকাঠি হল একটি অভিযোজিত কৌশলগত পদ্ধতি, যা বিস্তৃত ক্ষেত্রের ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। যেমন, ভারতকে অবশ্যই প্রতিবেশীদের জন্য তার জাতীয় কৌশলগুলি পর্যালোচনা এবং প্রণয়ন করতে হবে, যাতে আন্তঃসংস্থা, বহুজাতিক সক্ষমতা ও সমন্বয় উন্নত করার পাশাপাশি যৌথ যুদ্ধের ধারণা এবং সমন্বিত শক্তি কাঠামো অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ভারতকে তার গোয়েন্দা বুদ্ধিমত্তা এবং মন্ত্রী পর্যায়ের কাজের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে; গতিশীল সামরিক কূটনীতি ও কৌশলগত যোগাযোগের বিকাশ ঘটাতে হবে; নিজের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মূল্যায়ন করতে হবে; তার অভিযাত্রী শক্তি ক্রমশ বাড়াতে হবে; সংঘাতের সম্ভাব্য এলাকায় প্রবেশের সুযোগ বজায় রাখতে হবে; অভিযোজিত পরিকল্পনা বাড়াতে এবং কার্যক্ষেত্রে যুদ্ধের শৈলী পুনর্বিবেচনা করতে হবে; পেশাদার সামরিক শিক্ষা কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে হবে; এবং একটি অপ্রতিসম ও ডিজিটাল যুদ্ধক্ষেত্রের পরিমণ্ডলে অনিয়মিত ও স্বাবলম্বী যুদ্ধ পরিচালনার নতুন ক্ষমতা সমন্বিত সুসংহত বহুমাত্রিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া ‘‌‌কৌশলগত মহাকাশ প্রতিরোধ’‌–এর উপর বিশেষ জোর দিতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে উপগ্রহ–বিরোধী আক্রমণাত্মক অভিযান এবং স্পেস কমব্যাট প্ল্যাটফর্ম, যা বহুমাত্রিক লক্ষ্য ধ্বংসের জন্য লেজার, পার্টিকল বিম, বা গতিশক্তি অস্ত্রগুলিকে আদর্শ স্তরে নিয়ে যায়। হাইব্রিড সংঘাতে জয়ী হওয়ার জন্য ভারতের উচিত এই ক্ষমতাগুলিকে কার্যকরভাবে সমন্বিত ও একত্র করা।

ভারতকে অবশ্যই তার প্রতিপক্ষদের থেকে হাইব্রিড যুদ্ধের হুমকির মোকাবিলা করতে ‘সমগ্র সরকার’‌ দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে। যেমন এই ধরনের বিপদের মোকাবিলার জন্য তৈরি করতে হবে একটি সমন্বিত ‘‌মহা–পরিকল্পনা’‌, যার মধ্যে সব মন্ত্রক থাকবে, এবং পরিকল্পনাটি তৈরি করা হবে নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির সম্মতিক্রমে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিবালয়ের দ্বারা। একই সময়ে, হাইব্রিড হুমকি মোকাবিলা করার জন্য ভারতকে অবশ্যই সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে হবে (উপযুক্ত দক্ষতা প্রশিক্ষণ সহ একটি বিশেষ বাহিনী গঠনের মাধ্যমে)। আইএসআর ক্ষমতা, বিশেষ করে স্পেস ও এরিয়েলের মাত্রা,[ভ] আরও উন্নত করা প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনীকে অবশ্যই সকল স্তরে তথ্যযুদ্ধের সক্ষমতাকে (সাইকোলজিকাল অপারেশন এবং ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধ–সহ) অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাহিনীকে অবশ্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং হাইপারসনিক ও কোয়ান্টাম বিজ্ঞান সহ তার যুদ্ধের সক্ষমতায় নতুন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে, এবং তা অবশ্যই পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা এবং দেশীয় পণ্য গ্রহণে সেনাবাহিনীর ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত হতে হবে।

এই ধরনের ক্ষমতার বিকাশের জন্য উল্লেখযোগ্য সম্পদের প্রয়োজন হবে, তবে ভারতের সামাজিক ও পরিকাঠামোগত অগ্রাধিকারগুলি বেশি গুরুত্ব পাবে। এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের উপায় আছে। ইউরোপীয় বিশ্বযুদ্ধ–কেন্দ্রিক ধারণা এবং মতবাদ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ব্যবস্থাগুলি ত্যাগ করে কম খরচের বিকল্প ও বিশেষ প্রযুক্তির দিকে যেতে হবে। বেসামরিক–সামরিক এবং আন্তঃবাহিনী সংমিশ্রণ, রাজনৈতিক–সামরিক উদ্দেশ্যগুলিকে ‘‌সমগ্র রাষ্ট্র’‌ দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সারিবদ্ধকরণ, এবং এমনকি নিরাপত্তা প্রয়োজনের সঙ্গে উন্নয়নমূলক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলিকে একীভূত করা হল এই ধরনের কিছু পথ। তবে এই সমস্ত কিছুই তখনই অর্জন করা যেতে পারে যখন কার্যকারিতার সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অভিযানগত প্রস্তুতির ফাঁকগুলি স্বীকার করা এবং মেনে নেওয়া হবে।

হাইব্রিড যুদ্ধের ‘‌স্বল্প দায় ও উচ্চ প্রাপ্তি’‌র প্রকৃতি নিশ্চিত করে যে এটি যুদ্ধ পরিচালনার একটি পছন্দসই পদ্ধতি। ভারত এই মতাদর্শের পৃষ্ঠপোষক না–ও হতে পারে, তবে তাকে অবশ্যই এর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, বা এমনকি এর সম্ভাবনা আগে অনুমান করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমন্বিত সক্ষমতা তৈরির জন্য এবং একটি সমন্বিত জাতীয় প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়ার জন্য একটি ‘‌সমগ্র রাষ্ট্র’‌ পদ্ধতি অনুসরণ হল অন্যতম সম্ভাবনা। ভারতের উচিত আত্মমূল্যায়ন এবং বিপদ বিশ্লেষণের একটি জাতীয় পদ্ধতির বিকাশ ঘটানো এবং তার উপযোগী উপকরণ তৈরি করা। এটি হাইব্রিড যুদ্ধের প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে, স্থিতিস্থাপকতার উদ্যোগকে সমর্থন করবে, এবং এমনকি একটি যৌগিক নিবারণমূলক প্রভাবও ফেলতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, হাইব্রিড যুদ্ধ মোকাবিলা করার ক্ষমতা শুধু অভিযানগত বা স্বল্পমেয়াদি কৌশলগত ক্ষেত্রে নয়, দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতেও বিদ্যমান।


নীচের এন্ডনোটের হাইপারলিঙ্কের জন্য মূল প্রবন্ধটি এখানে  দেখুন:‌ https://www.orfonline.org/research/preparing-for-the-future/#_ftnref20


[ক] গ্রে জোন দ্বন্দ্ব হল রাষ্ট্রীয় ও অ–রাষ্ট্রীয় কুশীলবদের ক্রিয়াকলাপ, যা অ–সামরিক ও আধা–সামরিক সরঞ্জামগুলিকে একত্র করে এবং শান্তিকালীন (বা সহযোগিতার সময়) ও যুদ্ধের (বা সংঘাতের) মধ্যবর্তী সময়কালে ঘটে থাকে। এই সংঘাতগুলি সশস্ত্র সংঘাতের স্তরের নীচে থাকে, এবং যে রাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে তার দুর্বলতা বিবেচনা করে তার জন্য প্রতিবন্ধকতা বা অস্থিতিশীলতা তৈরি করা বা তাকে হীনবল করা বা আক্রমণ করার লক্ষ্য রাখে।

[খ] সংস্পর্শ যুদ্ধ হল যেখানে প্রতিপক্ষ শক্তিগুলির মধ্যে শারীরিক যোগাযোগ থাকে। সংস্পর্শহীন যুদ্ধে কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ, কম্পিউটার, গোয়েন্দা তথ্য, নজরদারি ও রিকনায়সেন্স (সি৪আইএসআর) ব্যবহার করা হয়।

[গ] অস্বীকারযোগ্যতা বা বিশ্বাসযোগ্য অস্বীকৃতি বলতে বোঝায় একটি কাজে লিপ্ত থাকার প্রমাণের অভাবের কারণে অবৈধ বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করার সুযোগ। তদ্ব্যতীত, প্রমাণের অভাব এই ধরনের অস্বীকারকে প্রশংসনীয় এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

[ঘ] যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে থ্রেশহোল্ড বা চৌকাঠ সেই স্তর বা সীমাকে বোঝায় যা পার হলে তা যুদ্ধ বলে গণ্য হয়।

[ঙ] এই গবেষণাপত্রের প্রেক্ষাপটে চিন–পাকিস্তান যোগসাজশ ভারতের বিরুদ্ধে দুই দেশের মধ্যে গোপন সহযোগিতাকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, ভারত যদি পাকিস্তানের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়, চিন সম্ভবত পাকিস্তানকে নৈতিক, বস্তুগত ও লজিস্টিক সহায়তা দেবে।

[চ] সংশোধনবাদ বা সংশোধনবাদী রাষ্ট্রগুলি প্রচলিত বিশ্বব্যবস্থার নিয়ম ও বিধির পরিবর্তনের পক্ষে। এটি পণ্য বা সুবিধা বণ্টনের পরিবর্তনের ধরন, অন্তর্নিহিত কাঠামো বা শ্রেণিবিন্যাস, এবং সার্বভৌম সত্তাগুলির মধ্যে ভূখণ্ডের বিভাজনের সঙ্গেও সম্পর্কিত। চিনকে একটি সংশোধনবাদী শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি একটি প্রভাবশালী খেলোয়াড় হয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিস্থাপন করে বিশ্বব্যাপী স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার লক্ষ্য রাখে।

[ছ] উপ–প্রচলিত যুদ্ধ হল একটি সর্বব্যাপী পরিভাষা যা এমন সশস্ত্র সংঘাতকে বোঝায় যা দেশগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের স্তরের উপরে কিন্তু যুদ্ধের চৌকাঠের নিচে। এটি জঙ্গিবাদ, বিদ্রোহ, প্রক্সি যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদকে একটি আন্দোলনের অংশ হিসাবে বা স্বাধীনভাবে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রচলিত যুদ্ধ বলতে বোঝায় যুদ্ধ করার ঐতিহ্যগত উপায়, যেখানে দুই পক্ষ যুদ্ধক্ষেত্রে একে অপরের মুখোমুখি হয় এবং এমন অস্ত্র ব্যবহার করে যা জৈবিক, রাসায়নিক বা পারমাণবিক প্রকৃতির নয়।

[জ] ভারতের প্রতিরক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি, যেমন ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি (এনডিইউ), সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, টেকনোক্র্যাট ও রাজনীতিবিদদের প্রশিক্ষণ দেয়। ভারতের প্রতিপক্ষ সহ সমস্ত বড় বৈশ্বিক শক্তিগুলির এনডিইউ–এর মতো কাঠামো আছে।

[ঝ] সিভিল–মিলিটারি ফিউশন বা সামরিক–অসামরিক সংমিশ্রণ বলতে একটি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এমন সামরিক বাহিনী গড়ে তোলাকে বোঝায় যা সামরিক ক্ষেত্রে নতুন উদীয়মান প্রযুক্তির সমস্ত হুমকির মোকাবিলা করতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রে, অসামরিক–সামরিক সংমিশ্রণের লক্ষ্য যুদ্ধ এবং শান্তির সময় দেশের ব্যাপক জাতীয় শক্তির প্রকাশ নিশ্চিত করা।

[ঞ] কৌশলগত গভীরতা সামরিক পরিকল্পনা ও অভিযানের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শত্রু বাহিনী বা একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলির মধ্যে ভৌত দূরত্বকে বোঝায়, যা সামরিক ফ্রন্টলাইন, ঘাঁটি বা শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হতে পারে।

[ট] স্মার্ট পাওয়ার বলতে বোঝায় একটি উপযুক্ত প্রেক্ষাপটে (পরিস্থিতির সাপেক্ষে) এবং এটির প্রয়োগযোগ্য পরিমাপ ও মাত্রায় নরম ও কঠিন শক্তির সংমিশ্রণ।

[ঠ] সক্রিয়তাপন্থী কৌশলটি কৌশলগত আক্রমণাত্মক কৌশল অনুসরণের বা শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে নিবারণমূলক কৌশল প্রয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত।

[ড] রেসপন্স অপশন ম্যাট্রিক্স বলতে সামরিক ভাষায় সংকট প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনাকে বোঝায়।

[ঢ] প্লাগ–অ্যান্ড–ফাইট হল প্লাগ–অ্যান্ড–প্লে’‌র সামরিক সমতুল্য, যা বৃহৎ সামরিক ব্যবস্থার (প্রায়শই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে) সক্ষমতাকে নির্দেশ করে, যেমন মাঝারি বর্ধিত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেন্সর, অস্ত্র ও কন্ট্রোল নোডের মতো সিস্টেমের বিভিন্ন উপাদানকে চিনে নিতে পারে এবং একক সমন্বিত সুপারসিস্টেম বা সিস্টেম–অফ–সিস্টেমে একত্র করে।

[ণ] মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) বা সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদাটি শুল্ক ও বাণিজ্যের সাধারণ চুক্তির (গ্যাট) অনুচ্ছেদ ১–এর অংশ হিসাবে অন্য সমস্ত সদস্য দেশের শুল্ক ও বাণিজ্য বাধার বিপরীতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলির অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য শর্তকে বোঝায়। পারস্পরিক এমএফএন মর্যাদা বাণিজ্য সুবিধা দ্বারা সমর্থিত, এবং তা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। ভারত ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে এমএফএন মর্যাদা দিয়েছিল, কিন্তু পুলওয়ামা সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ২০১৯ সালে এই মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়।

[ত] বিশ্ব ব্যাঙ্ক দ্বারা আলোচিত এবং ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদী এবং এর উপনদীগুলির জল বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে।

[থ] ২০০৭ সালের মে মাসে চিন অরুণাচল প্রদেশের একজন ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবা অফিসারকে ভিসা দিতে অস্বীকার করে এই বলে যে ব্যক্তিটি ‘‌চিনা নাগরিক’‌ এবং তাই ভিসার প্রয়োজন নেই। একই বছরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) জুড়ে ১৫০–টিরও বেশি সীমালঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল, যা ২০০৮ সালে বেড়ে ২৭০–এ দাঁড়ায়। উপরন্তু, ২০০৯ সালের নভেম্বরে চিনা সৈন্যরা এলএসি অতিক্রম করে এবং লাদাখের ডেমচোকে একটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। ২০১১ সালের আগস্টে চিনা সৈন্যরা এলএসি–র ভারতীয় অংশে অবতরণ করে এবং বাঙ্কারগুলি ভেঙে ফেলার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল বলে জানা গেছে। ২০১২ সালে এলএসি লঙ্ঘনের প্রায় অনুরূপ দৃষ্টান্ত রিপোর্ট করা হয়েছিল।

[দ] যেমন পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে।

[ধ] কোয়ারসিভ গ্র‌্যাজুয়ালিজম বা জবরদস্তিমূলক ক্রমবাদ বলতে বোঝায় একটি দেশের স্বার্থকে অন্য দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে অনুসরণ করা। এটি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র দ্বারা নির্বাচিত আগ্রাসনের একটি রূপ। একটি রাষ্ট্রের তার লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা এবং শক্তি থাকতে পারে, তবে দেশটি একটি একক অভ্যুত্থানের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে তা করতে পারে।

[ন] যেমন সাংহাই, নিংবো, ওয়েনঝো, ফুঝো, জিয়ামেন, তাইপেই, গুয়াংঝো, শেনজেন, হংকং, ঝানজিয়াং ও হাইকো।

[প] নেটওয়ার্ক–কেন্দ্রিক সংঘাত/যুদ্ধ বলতে একটি সামরিক মতবাদকে বোঝায় যার লক্ষ্য বিচ্ছুরিত বাহিনীর কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে কোনও তথ্য সুবিধাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাতে রূপান্তর করা।

[ফ] মূল্যচালিত, উচ্চমান, ও স্বচ্ছ পরিকাঠামো অংশীদারির মাধ্যমে উচ্চ মানের, স্থিতিশীল পরিকাঠামো প্রদানের জন্য জি৭ দেশগুলি বিল্ড ব্যাক বেটার ইনিশিয়েটিভ (বি৩ডবলিউ) চালু করেছিল।

[ব] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীল পরিকাঠামো উন্নয়নের নীতি প্রচারের জন্য ব্লু ডট নেটওয়ার্ক চালু করেছে। এটি আন্তর্জাতিক গুণমানের যোগ্যতা পূরণ করে এমন পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিকে প্রত্যয়িত করে।

[ভ] উদাহরণস্বরূপ, রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট সিরিজ, ইলেকট্রনিক ইনটেলিজেন্স স্যাটেলাইট, মনুষ্যবিহীন আকাশযান, স্বায়ত্তশাসিত যুদ্ধব্যবস্থা এবং দূরপাল্লার সমুদ্র টহল বিমান।

[১] স্টিফেন বিডল এবং জেফরি এ ফ্রাইডম্যান, “দ্য ২০০৬ লেবানন ক্যাম্পেন অ্যান্ড দ্য ফিউচার অফ ওয়ারফেয়ার: ইমপ্লিকেশনস ফর আর্মি অ্যান্ড ডিফেন্স পলিসি,” স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউট, সেপ্টেম্বর ২০০৮।

[২] জে জন ম্যাককুয়েন, “হাইব্রিড ওয়ারস,” মিলিটারি রিভিউ, ৮৮ (২), (২০০৮)।

[৩] ফ্র্যাঙ্ক জি হফম্যান, “একবিংশ শতাব্দীতে দ্বন্দ্ব: হাইব্রিড যুদ্ধের উত্থান,” পোটোম্যাক ইনস্টিটিউট অফ কনফ্লিক্ট স্টাডিজ, (২০০৭)।

[৪] বিক্রান্ত দেশপাণ্ডে এবং শিবানী মেহতা (সম্পাদনা), হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার: দ্য চেঞ্জিং ক্যারেক্টার অফ কনফ্লিক্ট, (নয়াদিল্লি: পেন্টাগন প্রেস, ২০১৮)।

[৫] বিক্রান্ত দেশপাণ্ডে এবং শিবানী মেহতা (সম্পাদনা), হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার: দ্য চেঞ্জিং ক্যারেক্টার অফ কনফ্লিক্ট (নয়াদিল্লি: পেন্টাগন প্রেস, ২০১৮)।

[৬] শন মোনাগান, “কাউন্টারিং হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার সো হোয়াট ফর দ্য ফিউচার জয়েন্ট ফোর্স?” ফিচারস, নং ২ (২০১৮): ৮২–৯৮।

[৭] “পাকিস্তান তার অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ সরাতে ভারতের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক প্রচারে লিপ্ত: এমইএ রিপোর্ট”, দ্য হিন্দু, ১৩ মার্চ, ২০২৩।

[৮] এ জি নুরানি, “অস্ত্র হিসাবে জল”, দ্য ফ্রন্টলাইন, অক্টোবর ১২, ২০১৬।

[৯] তভলিন সিং, “দৃঢ় প্রমাণের ভিত্তিতে পাঞ্জাবের শিখ সন্ত্রাসে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা: ভারত”, ইন্ডিয়া টুডে, ১৫ মে, ১৯৮৬; কাসওয়ার ক্লাসরা, “কাশ্মীর উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করে”, নিক্কেই এশিয়া, আগস্ট ২৯, ২০১৯; হরজিত সিং, “খালিস্তান আন্দোলন: সোভিয়েত রাশিয়ার জেনেসিস”, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, ভলিউম ৪, ইস্যু ১, ২০২১, পৃষ্ঠা ১৩৮২–১৪১৩।

[১০] ভেন্ডা ফেলবাব–ব্রাউন, “পাকিস্তান কেন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করে, এবং কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিবর্তন আনা এত কঠিন বলে মনে করে”, ব্রুকিংস, জানুয়ারি ০৫, ২০১৮।

[১১] ব্রিগেডিয়ার নরেন্দ্র কুমার, “হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার বিভাগ: ভারতের জন্য একটি জরুরি অভিযানগত প্রয়োজনীয়তা”, ইউএসআই জার্নাল, এপ্রিল ২০২০ – জুন ২০২০।

[১২] মোনা কানওয়াল শেখ ও অন্যান্য, “পাকিস্তান: আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, স্থানীয় প্রভাব”, ডিআইআইএস রিপোর্ট, নং ১২ (২০১২)।

[১৩] অমিত কুমার, “চায়নাজ টু-ফ্রন্ট কনানড্রাম: আ পার্সপেক্টিভ অন দ্য ইন্ডিয়া-চায়না বর্ডার সিচুয়েশন”, ওআরএফ অকেশনাল পেপার, নং ৩৯৩, মার্চ ২০২৩।

[১৪] ব্রিগেডিয়ার আনন্দ তিওয়ারি, চাইনিজ জিওপলিটিক্স ইন টোয়েন্টি-‌ফার্স্ট সেঞ্চুরি: এ পোস্ট-প্যান্ডেমিক পার্সপেক্টিভ (নয়াদিল্লি: পেন্টাগন প্রেস, ২০২১), পৃ. ২৫৩-২৫৪।

[১৫] “সস্তা পরিবহণ: জলে অবতরণের সময়”, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, মার্চ ১৬, ২০১৬।

[১৬] দিয়েগো এ সেরদেইরো এবং সোনালি জৈন-চন্দ্র, “চিনের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে, কিন্তু সংস্কার এখনও প্রয়োজন”, আইএমএফ, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।

[১৭] কিথ ডেডে, “চিনে জাতিগত সংখ্যালঘু: মঙ্গোল, তিব্বতি, মাঞ্চুস ও নাক্সি”, এশিয়া সোসাইটি (২০০৭), : ৬৩-৬৭।

[১৮] রব ডিকিনসন, “তিব্বতী স্ব-নিয়ন্ত্রণ: পরিত্যক্ত মানুষের জন্য একটি ভয়ঙ্কর বিকল্প,” ই-ইন্টারন্যশনাল রিলেশনস, ১৮ মে, ২০১৪।

[১৯] লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আটা হাসনাইন, “ইন্ডিয়া অ্যান্ড আসিয়ান ওভারকামিং পারসেপশনস,” দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৮ জুন, ২০২২।

[২০] ইস্কান্দার রেহমান, “হার্ড ম্যান ইন এ হার্ড এনভায়রনমেন্ট: ইন্ডিয়ান স্পেশাল অপারেটর অ্যালং দ্য বর্ডার উইথ চায়না,” ওয়ার অন দ্য রকস, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭।

[২১] সাফিয়া ঘোরি-আহমদ এবং কাইল গার্ডনার, “দক্ষিণ এশিয়ার গতিশীলতা: বাইডেন প্রশাসনের জন্য একটি রোডম্যাপ”, অ্যাটলান্টিক কাউন্সিল, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১।

[২২] “ইন্ডো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস”, হোয়াইট হাউস, ফেব্রুয়ারি ২০২২।

[২৩] ইয়েশি শেলি, “ভারতকে ক্ষমতায়ন হল মার্কিন চিনবিরোধী পরিকল্পনার অংশ,” দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

[২৪] দীপ পাল, “দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের প্রভাব: চারটি দেশের দুর্বলতা এবং স্থিতিস্থাপকতা” কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস, অক্টোবর ১৩, ২০২১।

[২৫] দীপেন্দ্র সিং হুডা, “এলএসি বরাবর চিনের পরিকাঠামো গড়ার মোকাবিলা,” হিন্দুস্তান টাইমস, ১৪ জুন, ২০২২।

[২৬] “কোভিডের কারণে চিনের অর্থনীতি ‘২০২৮ সালের মধ্যে’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে,” বিবিসি, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০।

[২৭] লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজ শুক্লা, “পারসুইট অফ গ্রেট পাওয়ারহুড,” ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২২।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.