৩৭০ ধারা বাতিলের দু’বছরেরও বেশি সময় পরে কাশ্মীর এক অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাস-প্রতিরোধ সম্পর্কিত যে তথ্য সামনে উঠে আসছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, নতুন কাশ্মীরে হিংসা হ্রাস পেয়েছে। এবং সীমান্ত জুড়ে অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা, গ্রেনেড হামলা, আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ও পাথর বৃষ্টি-সহ সন্ত্রাসবাদী হিংসার প্রতিটি সূচকের ক্ষেত্রেই তীব্র হ্রাস লক্ষ করা গেছে। এর ব্যতিক্রম শুধু মাত্র ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আই ই ডি) ব্যবহার করে আক্রমণ, যে ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধি লক্ষ করা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও এই সাফল্যের ফলাফল কাশ্মীর উপত্যকায় নাশকতাকে উস্কানি দেওয়া এবং ভারতের মূল ধারায় কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তিকরণ পাকিস্তানের নতুন ছদ্ম প্রকল্পের ফলে প্রভাবিত হয়েছে। আধিকারিকদের মতে যা একটি ‘স্থিতিশীল অথচ সংবেদনশীল’ পরিস্থিতি রূপে তুলে ধরা হচ্ছে, তা বাস্তবে কাশ্মীরের জন্য সাম্প্রতিক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন নিরাপত্তা সঙ্কট। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাই এই হত্যাকাণ্ডের শিকার। আর এর দায়িত্ব স্বীকার করেছে একটি অপেক্ষাকৃত নতুন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’(টি আর এফ)।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার দায়িত্ব গ্রহণের পরে, টি আর এফ সম্প্রতি ব্যাপক ভাবে প্রচারের আলোয় এসেছে।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার দায়িত্ব গ্রহণের পরে, টি আর এফ সম্প্রতি ব্যাপক ভাবে প্রচারের আলোয় এসেছে। সংগঠনটি হুমকি দিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে যে, ‘খেলা সবে শুরু হয়েছে’ এবং তারা এর পর আরও ‘আক্রমণাত্মক ভাবে আঘাত’ করবে। এই সব কিছুর ফলে প্রশ্ন উঠেছে যে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের বৃহত্তর প্রেক্ষিতে এই নতুন দলটির অবস্থান ঠিক কী হতে চলেছে?
স্থানীয় সন্ত্রাসের পুনরুজ্জীবন
সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে, চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল এম এম নারাভানে বলেছেন যে, তিনি টি আর এফ-কে ‘টেরর রিভাইভাল ফ্রন্ট’ নামেই অভিহিত করতে চাইবেন। এর সপক্ষে তিনি কাশ্মীরে পুনর্বাসন নীতি, মৌলবাদ অপসারণের প্রচেষ্টা, পরিকাঠামোর উন্নয়ন, সীমা নির্ধারণের প্রক্রিয়ার মতো ক্রমবর্ধমান উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের এবং অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ সময়ে এই গোষ্ঠীর নিজেদের জাহির করাকে দর্শিয়েছেন। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং ৩৫-এ ধারা বাতিল করার পরে এই সংস্থাটি গড়ে ওঠে এবং তারা টেলিগ্রাম নামক এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর শ্রীনগরের লাল চকে হওয়া গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে। এই হামলায় আট জন নাগরিক আহত হন এবং টি আর এফ-এর আবির্ভাবকে ‘কাশ্মীরের মাটিতে একটি স্থানীয় প্রতিরোধের সূচনা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট সব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর বিধিনিষেধ জারি করার কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ কাশ্মীরে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে কৌশলগত ভাবে পিছু হঠতে বাধ্য করে। সরকারের এই যোগাযোগ অবরোধের সময় সীমান্তের ওপারে হ্যান্ডলাররা (জঙ্গি প্রশিক্ষকেরা) লস্কর-ই-তইবা (এল ই টি), হিজবুল মুজাহিদিন (এইচ এম) এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের ব্যবহার করে ‘ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স’ (ও জি ডব্লিউ) এর মাধ্যমে একটি নতুন দল তৈরি করে। ফলে টি আর এফ (আদতে লস্কর-ই-তইবার একটি শাখা) কাশ্মীরিদের চাহিদাকে ‘স্বদেশী’ এবং ‘স্থানীয়’ রূপ দেওয়ার এক আবরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়। প্রকৃতপক্ষে, টি আর এফ পাকিস্তানস্থিত জঙ্গিদের দ্বারা গঠিত এক মাত্র দল নয় যারা নিজেদেরকে স্থানীয় হিসেবে তুলে ধরছে। পিপলস অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফোর্স (পি এ এফ এফ), জয়েন্ট কাশ্মীর ফ্রন্ট (জে কে এফ), কাশ্মীর গজনভি ফোর্সের (কে জি এফ) মতো অন্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিও সম্প্রতি প্রচারের আলোয় এসেছে। বিগত দু’বছরে টি আর এফ একটি ‘স্থানীয় অভ্যুত্থান’-এর প্রতিভূ হিসেবে নজর কাড়লেও তার কার্যকলাপে লস্কর-ই-তইবার প্রভাব সুস্পষ্ট।
স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার বিভাজনমূলক এবং স্বতন্ত্র কৌশল
ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কিং ফোর্স-এর (এফ এ টি এফ) ধূসর তালিকা থেকে অদূর ভবিষ্যতেও যে পাকিস্তান মুক্ত হবে না, এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরে, রাওয়ালপিন্ডি দ্বারা নিজ ভূখণ্ডের বাইরে নাশকতামূলক কার্যকলাপের নব কৌশল সিদ্ধ করার জন্য এই নতুন সংগঠনগুলির জন্ম হয়। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি, একাধিক জঙ্গি সংগঠনের স্বীকৃতি, অভ্যুত্থান সীমিত করে নিরাপত্তা জোরদার করা এবং অবৈধ আন্তঃসীমান্ত কার্যকলাপ প্রতিহত হওয়ার ফলে ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আই এস আই) নতুন করে নিজেদের কৌশল তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে। তাই এফ এ টি এফ থেকে পাকিস্তানকে আড়াল করার জন্য টি আর এফ এবং একই রকমের অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলি গড়ে তোলা হয়।
কাশ্মীরে ব্যাপক হিংসাত্মক আক্রমণের ঘটনায় যুক্ত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির তুলনায় টি আর এফ-এর নিশানায় রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, স্থানীয় নয় এমন মানুষ, পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মী ও কাশ্মীরে স্থানান্তরিত আবাসিকদের মতো নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এমনকি এই কারণেই আই এস আই কাশ্মীরের অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে এক বিভাজনমূলক কৌশলের মাধ্যমে টি আর এফ-এর জন্ম দিয়েছে। প্রথমত, সংগঠনটির নামেই তার উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে। পাকিস্তান বর্তমানে তার জঙ্গি সংগঠনগুলির জন্য ইংরেজি শীর্ষক পছন্দ করে, যাতে এই ধরনের গোষ্ঠীগুলি পশ্চিমী দুনিয়া দ্বারা স্বাগত হয়, যেমনটা তাদের পূর্বসূরি জেহাদি দলগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। লস্কর-ই-তইবা যা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘আর্মি অফ দ্য পিওর’ বা ‘শুদ্ধ সেনাবাহিনী’ অথবা হিজবুল মুজাহিদিন যার নামের অর্থ ‘পার্টি অব হোলি ফাইটার্স’ বা ‘পবিত্র যোদ্ধাদের দল’, তার চেয়ে টি আর এফ-এর নামকরণ সম্পূর্ণ রূপে আলাদা। টি আর এফ-এর নামকরণ আরবি নয়, অসাম্প্রদায়িক এবং অধর্মীয়। এর মাধ্যমে দলটি নিজেদের একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং জেহাদি নয় এমন অভ্যুত্থানের প্রতিভূ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
সর্বোপরি, আন্তঃসীমান্তবর্তী কার্যকলাপের উপরে কড়াকড়ি জারি হওয়ার পরে আই এস আই-এর জন্য দলের কর্মী বৃদ্ধি, অস্ত্রশস্ত্রের লেনদেন এবং একাধিক স্থানীয় সংগঠনগুলির সশক্তিকরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অস্ত্র চোরাচালান বা বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে পাকিস্তান ‘সফট কিলিং’ বা ‘গুপ্ত হত্যা’য় লিপ্ত হয়েছে। কাশ্মীরে ব্যাপক হিংসাত্মক আক্রমণের ঘটনায় যুক্ত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির তুলনায় টি আর এফ-এর নিশানায় রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, স্থানীয় নন এমন মানুষ, পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মী ও কাশ্মীরে স্থানান্তরিত আবাসিকদের মতো নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এই হত্যাকাণ্ডগুলি ও জি ডব্লিউ দ্বারা পরিচালিত, যেখানে বৃহত্তর ক্ষেত্রে এই নাশকতার নেপথ্যে দায়ী গোষ্ঠীগুলির প্রকৃত উদ্দেশ্য গোপন রেখেই আক্রমণ চালানো হয়। পরিকল্পনার এই নতুন কৌশলকে আধিকারিকরা ‘হাইব্রিড মিলিট্যান্সি’ বা ‘মিশ্র জঙ্গিবাদ’ নামে অভিহিত করছেন। কারণ এই কৌশলে এমন ব্যক্তিরা জড়িত যাদের নাম পুলিশের তালিকাভুক্ত নয়, এবং যারা নির্দিষ্ট পরিচয়বিহীন। ফলে এদের খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। টি আর এফ-এর তরফে এই সুবিধা ধরে রাখার জন্য তার সদস্যদের পরিচয় গোপন রাখা হয় এবং তারা নিজেদের একটি ‘মুখবিহীন শক্তি’ এবং ‘অদৃশ্য সংগঠন’ হিসেবে তুলে ধরে। অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি যারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের সদস্যপদকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করে, টি আর এফ তাদের বিপরীতে হেঁটে দলীয় সদস্যদের পরিচয় গোপন রাখে। তারা পাকিস্তানের পুরনো চক্রান্তকারীদের পরিচয় আড়াল করার পাশাপাশি অন্য ভূখণ্ডে চালানো নাশকতাকে এক স্থানীয় পরিচিতি দেয়।
এর অর্থ এই নয় যে দলটি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষ্ক্রিয়। টি আর এফ টুইটার, ফেসবুক এবং টেলিগ্রামের মতো মঞ্চ ব্যবহার করে হুমকি দেয় এবং হামলার দায় স্বীকার করে। দলটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল যে, কী ভাবে তারা নির্দিষ্ট ভাবে প্রতিটি হামলার দায় স্বীকার করে এবং প্রত্যেকটি পদক্ষেপের সমর্থনে যুক্তি দর্শায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে টি আর এফ সৎপাল নিচাল নামে একজন গয়না ব্যবসায়ীকে হত্যা করে এবং ফেসবুকে এই হত্যার কারণ স্বরূপ ‘কাশ্মীরে ঔপনিবেশিক প্রকল্পে সহায়তা এবং এক আর এস এস-এর কর্মী হওয়ার’ কারণ তুলে ধরে। আর একটি সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে টি আর এফ মাখন লাল বিন্দ্রুর উপর হওয়া হামলা এবং খুনের ঘটনার কারণ হিসেবে ‘চিকিৎসক হিসেবে নিজের পরিচিতি দেওয়ার জন্য’ এবং ‘গোপনে আর এস এস-এর বৈঠক আয়োজনের’ অভিযোগ দর্শায়। এই সব কারণ তুলে ধরার মাধ্যমে টি আর এফ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ধারণ করতে চাইছে, যেখানে জেহাদ বা ধর্মীয় যুদ্ধের বিপরীতে আগ্রাসন, দখলদারিত্ব, ফ্যাসিবাদ এবং হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই স্বতন্ত্র জনসংযোগ নীতির মাধ্যমেই টি আর এফ ফ্যাসিবাদী শক্তি, অনুপ্রবেশকারী অথবা দালালদের বিরুদ্ধে কাশ্মীরি নাগরিকদের প্রতিবাদের চিত্র অঙ্কন করতে চাইছে।
এই সমস্ত সমীকরণই দর্শায় যে, কাশ্মীরে নতুন করে গড়ে ওঠা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির প্রধান লক্ষ্য কাশ্মীরকে ভারতের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তিকরণে ভারত সরকারের প্রচেষ্টায় বাধা দান করা। টি আর এফ নিজেকে একটি রাজনৈতিক প্রতিরোধ শক্তি হিসেবে উপস্থাপিত করে, যার জন্ম কাশ্মীরে এবং যার লড়াই কাশ্মীরের জন্য, যারা অবৈধ ভাবে দখলদার শক্তির বিরোধী, যাদের কোনও কেন্দ্রীয় জেহাদি ব্যক্তিত্ব বা নেতৃত্ব নেই, এবং যারা সমমনস্ক জাতীয়তাবাদীদের এক জোট। এমনটা করার মাধ্যমে টি আর এফ সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে, যার ফলে বিশেষ করে কাশ্মীরি যুব সম্প্রদায়কে কাজে লাগিয়ে নাশকতামূলক কার্যকলাপ আরও বহু গুণ বাড়িয়ে তোলা যায়।
টি আর এফ নিজেকে একটি রাজনৈতিক প্রতিরোধ শক্তি হিসেবে উপস্থাপিত করে, যার জন্ম কাশ্মীরে এবং যার লড়াই কাশ্মীরের জন্য, যারা অবৈধ ভাবে দখলদার শক্তির বিরোধী, যাদের কোনও কেন্দ্রীয় জেহাদি ব্যক্তিত্ব বা নেতৃত্ব নেই, এবং যারা সমমনস্ক জাতীয়তাবাদীদের এক জোট। এমনটা করার মাধ্যমে টি আর এফ সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে, যার ফলে বিশেষ করে কাশ্মীরি যুব সম্প্রদায়কে কাজে লাগিয়ে নাশকতামূলক কার্যকলাপ আরও বহু গুণ বাড়িয়ে তোলা যায়।
এর প্রতিটি আখ্যান এবং প্রচারের মূল লক্ষ্যই হল কাশ্মীরকে ভারতের মূল ধারার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার সমস্ত প্রচেষ্টাকে সীমিত করা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, তাদের সাম্প্রতিক আক্রমণের পর টি আর এফ একটি ‘কৌশলগত বিবৃতি’ জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, তারা যে কোনও রকম অস্থানীয় ব্যবসায়িক উদ্যোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং ভিনরাজ্যের মানুষদের আবাসিক শংসাপত্র (ডোমিসাইল সার্টিফিকেট) বরাদ্দ করায় বাধা দেবে। এর অনেক আগে, ২০১৯ সালের ৩০ মে টি আর এফ একটি বিবৃতি জারি করে বলেছিল— ‘আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করছি যে কাশ্মীরে পাকাপাকি ভাবে থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে আসা যে কোনও ভারতীয়কেই নাগরিক হিসেবে নয়, বরং আর এস এস-এর চর হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘বিজয় ইস্তক প্রতিরোধ’-এর মতো প্রচারমূলক বক্তব্যের সাহায্যে টি আর এফ কাশ্মীরের উন্নয়ন প্রতিরোধ এবং কাশ্মীর ইস্যু টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে ব্রতী। এটি পাকিস্তানের স্বার্থের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মতবাদ গড়ে তোলার আই এস আই-এর অভিসন্ধিকেই চিত্রিত করে। কাশ্মীরে পাকিস্তানি নাশকতার একচেটিয়া অধিকারের জন্য এবং হুরিয়াতের মধ্যে কুখ্যাত দল— যা এইচ এম এবং ইসলামিক স্টেট (আই এস) ও আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দের (কাশ্মীরে আল কায়দার সহযোগী) মতো ছড়িয়ে থাকা গোষ্ঠীগুলির একত্রিতকরণের জন্যও এটি প্রয়োজন।
উপসংহার
টি আর এফ হল আই এস আই-এর দ্বারা গড়ে তোলা একটি স্বদেশি আন্দোলন অথবা কাশ্মীরি জঙ্গিবাদকে ধর্মনিরপেক্ষ রূপ দেওয়ার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা৷ প্রথমত, বেশ কয়েকটি জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এন আই এ) এবং সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান লস্কর-ই-তইবা এবং হিজবুল মুজাহিদিন-এর মতো সংগঠনগুলির অন্তর্গত বিদেশি সন্ত্রাসবাদীদের ভূমিকাকে স্পষ্ট করেছে৷ পাশাপাশি, টি আর এফ-এর কৌশল এবং আক্রমণের ধরন স্পষ্ট ভাবে এটাই দর্শায় যে, আন্দোলনটি ধর্মের কারণেই গড়ে উঠছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর দলটির ‘শহিদ গাজি স্কোয়াড’ শ্রীনগরের সঙ্গম এলাকায় গভর্নমেন্ট বয়েজ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ সুপিন্দর কৌর এবং একজন শিক্ষক দীপক চন্দকে গুলি করে হত্যা করে। খুনিরা মুসলিমদের থেকে সংখ্যালঘুদের চিহ্নিত করার জন্য পরিচয় জানতে চেয়েছিল এবং এ ক্ষেত্রে দু’জনেই যথাক্রমে হিন্দু এবং শিখ ছিলেন। এ বিষয়ে তর্ক হতে পারে যে, আই এস আই-এর মতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেশের পক্ষে পাল্লা ভারী করতে পারে, কিন্তু স্পষ্টতই পাকিস্তান কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী হানাকে সেই রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবুও ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ কাশ্মীরির নিজেদের শিকড়হীন হওয়ার কথা মাথায় রাখলে এই দলটি ধর্ম নিরপেক্ষ অথবা স্থানীয় না হওয়া সত্ত্বেও জন সমর্থন পাবে, এমনটাই স্পষ্ট। কাশ্মীরের এই নতুন পরিস্থিতি গজিয়ে ওঠা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির জন্য আরও বেশি করে কাশ্মীরি যুব সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে এবং তাঁদের সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও মৌলবাদে উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.