বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ। সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে জয়ী হয়েছেন, আর তাঁর দল আওয়ামি লিগ জাতীয় সংসদে ২২৩ বা তিন–চতুর্থাংশ আসন পেয়েছে। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ধারাবাহিক নির্বাচনী বিজয়ের পর তাঁর টানা চতুর্থ মেয়াদ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের রাজনীতি ও বিদেশনীতিতে ধারাবাহিকতা আশা করা যায়। ঢাকা তার পরিকাঠামোগত বৃদ্ধির জন্য বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়নমূলক সহযোগিতার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, যা একে সমস্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে নেট অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ)–এর বৃহত্তম প্রাপক করে তুলেছে। যাই হোক, যে গতিশীলতা বর্তমান নির্বাচনকে আকার দিয়েছে তা দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর একটি ছাপ রেখে যাবে না এমনটা হওয়া অসম্ভব, এবং তা কার্যত এর উন্নয়নমূলক দৃশ্যপটেও প্রতিফলন খুঁজে পাবে।
বাংলাদেশ এবং এর কৌশলগত অংশীদারিত্ব
বঙ্গোপসাগরের চূড়ায় এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গমের কাছাকাছি অবস্থিত বাংলাদেশ ভূ–কৌশলগতভাবে ইন্দো–প্যাসিফিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ শিপিং লেনগুলির কাছে, যেগুলির মাধ্যমে তেল উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর হয়ে পূর্ব এশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। শক্তির নিরাপত্তাহীনতায় ভরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ তাই এমন অনেক বড় শক্তির জন্যই একটি লোভনীয় অংশীদার যারা তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও উচ্চ–ঘনত্বের জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ চাইছে। বঙ্গোপসাগরে ঢাকার অব্যবহৃত হাইড্রোকার্বন রিজার্ভ জ্বালানি সহযোগিতায় সম্ভাব্য মিত্র হিসাবে এর যোগ্যতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, সস্তা শ্রম খরচ, কঠোর পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণের অভাব, এবং উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের প্রচারে আগ্রহী সরকারের উপস্থিতি একটি প্রলুব্ধকারী বিনিয়োগ গন্তব্য হিসাবে বাংলাদেশের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বঙ্গোপসাগরের চূড়ায় এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গমের কাছাকাছি অবস্থিত বাংলাদেশ ভূ–কৌশলগতভাবে ইন্দো–প্যাসিফিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ।
ইন্দো–প্যাসিফিকের প্রধান শক্তিগুলির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, ভারত ও জাপান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাণিজ্য, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক সহায়তাসহ এর বৈদেশিক আয়ের সব ক্ষেত্রজুড়ে সবচেয়ে বড় অবদানকারী। আকর্ষক বিষয় হল, ফোর্বসের মতে এই চারটি দেশ ২০২৪ সালে তাদের জিডিপি–র পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে৷ চিনের জন্য বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ পা রাখার জায়গা, এবং এর ফ্ল্যাগশিপ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি৷ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, শ্রীলঙ্কার ঋণের সংকটে জর্জরিত হওয়া এবং মায়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হওয়ার পর বাংলাদেশ এখন চিনের জন্য ‘পূর্ব এশিয়ার ছাঁচ’ থেকে বেরিয়ে ভারত মহাসাগরে তার সামুদ্রিক উপস্থিতি জোরদার করার সেরা বিকল্প। এর বাইরে, বাকি দক্ষিণ এশিয়ার মতো বাংলাদেশও চিনা পণ্যের জন্য একটি তৈরি বাজার, এবং চিন তার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।
চিনের উত্থানের কারণে ভূ–রাজনৈতিক মন্থনের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আবারও ঢাকা হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলে তার অবস্থান সুসংহত করার মাধ্যম। এটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াশিংটন ডিসি–র অন্যতম প্রধান অংশীদার। বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার, এবং তার মূল রপ্তানি পণ্য রেডিমেড পোশাকের জন্য বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। আবার ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ায় ইউএসএড–এর বৃহত্তম প্রাপক। বাংলাদেশ জাপানের কাছেও একটি সম্ভাব্য সংযোগগ্রন্থির প্রতিনিধিত্ব করে যার মাধ্যমে এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে, এবং তাদের বাজারে প্রবেশাধিকার লাভ করতে পারে। বিপরীতভাবে, জাপান বাংলাদেশের ওডিএ–র সবচেয়ে বড় উৎস।
অস্ট্রেলিয়াও উন্নয়নমূলক সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারিত্ব জোরদার করার চেষ্টা করছে, কারণ তারা উত্তর–পূর্ব ভারত মহাসাগরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখাকে জাতীয় স্বার্থ বলে মনে করে।
এই দেশগুলির বিপরীতে, যারা বাংলাদেশকে কৌশলগত মিত্র হিসাবে বিবেচনা করে, সেই ভারতের জন্য ঢাকা একটি ‘প্রাকৃতিক অংশীদার’ হিসাবে বিবেচিত, কারণ এটি তার পূর্ব ভূখণ্ডের মধ্যে খোদিত। ভৌগোলিকভাবে এটি ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর–পূর্বে একটি সামুদ্রিক প্রবেশদ্বার প্রদানের জন্য এবং এর ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ ও ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতিগুলি উন্নত করার জন্য ভালভাবে অবস্থিত। বাংলাদেশের জন্য ভারত তার তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সংযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট অঞ্চল। ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়াও উন্নয়নমূলক সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারিত্ব জোরদার করার চেষ্টা করছে, কারণ তারা উত্তর–পূর্ব ভারত মহাসাগরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখাকে জাতীয় স্বার্থ বলে মনে করে। বৃহৎ শক্তিগুলি ও বাংলাদেশের মধ্যে এই পারস্পরিক নির্ভরতার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমৃদ্ধি প্রয়োজন, বিশেষ করে ঢাকার জন্য, কারণ এর অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জগুলি সামনে আসছে এবং পতনের হুমকি দিচ্ছে।
ভারসাম্যের কূটনীতি বনাম রাজনৈতিক পক্ষ নিতে চাপ
ফলত, যখন এই শক্তিগুলি ঢাকাকে রাজনৈতিক পক্ষ নেওয়ার জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে — মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন তাদের পারস্পরিক প্রতিযোগিতার কারণে — বাংলাদেশ এই দেশগুলির সঙ্গে তার মিথস্ক্রিয়ায় ভারসাম্যের কূটনীতি অনুসরণ করেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত ইন্দো–প্যাসিফিক আউটলুক ঢাকার অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা ও রাজনৈতিক জোট–বিহীনতার প্রমাণের অতিরিক্ত এই কূটনৈতিক মনোভাবেরও বহিঃপ্রকাশ। যদিও আউটলুক–এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো–প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির মতো একই রকম পরিভাষা ও অগ্রাধিকার রয়েছে, এটি বেজিংকে কোনওভাবে অসন্তুষ্ট না–করার জন্যও সতর্কতা অবলম্বন করে, কারণ চিন ইন্দো–প্যাসিফিককে তার প্রভাব প্রতিহত করার জন্য একটি মার্কিন চক্রান্ত বলে মনে করে। যাই হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলের সঙ্গে সাদৃশ্যের কারণে আউটলুক প্রকাশকে প্রায়শই বেজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার ক্রমবর্ধমান নৈকট্য নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শান্ত করার কৌশলগত প্রয়াস হিসাবে দেখা হয়েছে। মার্কিন উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলকে সমর্থন করতে বা ইন্দো–প্যাসিফিক ইকনমিক ফোরাম বা কোয়াডের (বেজিং এটিকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার চিনবিরোধী গ্রুপিং বলে মনে করে) মতো উদ্যোগে যোগদানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণ সত্ত্বেও বাংলাদেশের তা গ্রহণ করতে অনিচ্ছা।
২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সাতজন প্রাক্তন এবং বর্তমান উচ্চস্তরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
তার আশঙ্কার কারণে গত কয়েক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সরকারের উপর আরও প্রভাব বিস্তারের জন্য ঢাকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সাত জন প্রাক্তন ও বর্তমান উচ্চস্তরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের পরিবারসহ কথিত অপহরণের শিকার বিভিন্ন পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশকে তার গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো থেকে বিরত ছিল, এবং দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনের আগে সর্বশেষ পদক্ষেপে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টার জন্য সন্দেহভাজন বাংলাদেশি ব্যক্তিদের মার্কিন ভিসা প্রদানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্রাথমিক অনুবর্তিতা সত্ত্বেও হাসিনা শীঘ্রই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভর্ৎসনা করেন। ফলস্বরূপ, বর্তমানে মার্কিন–বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে স্পষ্টতই বিরূপতা রয়েছে। উল্লেখ্য, অতিমারির দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় বাংলাদেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের পরপরই চিন কোয়াডে যোগদানের বিরুদ্ধে দেশটিকে সতর্ক করার সুযোগ নিয়েছিল। যাই হোক, নিজের দেশের সার্বভৌমত্বের কথা বলে ঢাকার দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার পরে বেজিং প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে আশ্বস্ত করার ক্ষেত্রে সংযত হয় যে তিনি মার্কিন চাপ প্রতিরোধ করতে এবং দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে চিনের উপর নির্ভর করতে পারেন।
বিদেশনীতিতে নির্বাচন–পরবর্তী চ্যালেঞ্জের মূল্যায়ন
বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার প্রয়োজন উপলব্ধি করে, যা হাসিনা সরকার গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে আনতে সফল হয়েছে, অন্য বড় শক্তিগুলি তাঁর ক্ষমতায় ফিরে আসা দেখতে আগ্রহী ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে দেখেছে। ভারত হাসিনা সরকারের উপর খুব বেশি চাপ না–দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছিল, কারণ এটি সমাজের মৌলবাদী উপাদানগুলিকে সামনে আসতে উত্সাহিত করবে, এবং তার ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপদের মুখে পড়বে। অস্ট্রেলিয়া এই ইস্যুতে কোনও নির্দিষ্ট অবস্থান নেয়নি। নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে তাই এই দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক সমৃদ্ধ হবে। ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ‘স্বর্নালি অধ্যায়’ বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলিতে আরও নিবিড় সহযোগিতা গড়তে এবং নতুন নতুন উপায়ে সহযোগিতা সম্প্রসারণে উৎসাহিত হবে। জাপানের সঙ্গে সম্পর্কও নতুন মাত্রায় বিস্তৃত হবে, এবং ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চল হবে বাংলাদেশ, জাপান ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার একটি প্রধান অঞ্চল। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্পর্কও মজবুত হবে। তবে বাংলাদেশ–মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একই ধারণা করা যায় না। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিবৃতি জারি করে যে ঢাকায় নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি, এবং প্রতিবেদিত নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যদিও হাসিনা সরকার এই মন্তব্যে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা দেখা এখনও বাকি আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবভঙ্গি সম্ভবত ঢাকাকে আরও বেশি করে বেজিংয়ের দিকে ঠেলে দেবে। যাই হোক, প্রতিবেশী এলাকায় চিনা উপস্থিতি ভারতের জন্য অস্বস্তির কারণ হবে। এইভাবে এটা সম্ভব যে আগামী বছরগুলিতে ঢাকাকে তার ভারসাম্যের কূটনীতিকে ক্রমশ বেশি করে চিন ও ভারতের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার দিকে চালিত করতে হবে। যাই হোক, ঢাকা চিনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যদি মার্কিন সহায়তার ঘাটতি থাকে। তবে হাসিনা সরকার বেজিংয়ের কাছে ঋণগ্রস্ত দেশগুলিকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সম্পর্কে ভালভাবে সচেতন। এইভাবে দেশটি চিনের সঙ্গে সহযোগিতা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবে, এবং শুধু চিনের উপর নির্ভরতা রোধ করতে এবং রাজনৈতিক অ–সংলিপ্ততা বজায় রাখতে বিকল্প উন্নয়নমূলক অংশীদার হিসাবে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সহযোগিতাও প্রসারিত করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কও পারস্পরিক স্বার্থে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, তবে তার জন্য ওয়াশিংটন ডিসি থেকে কিছু পুনর্মিলনমূলক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। তারপরেও, এটি একটি ধীরগতির প্রক্রিয়া হবে, কারণ বর্তমানে এটি অসম্ভাব্য যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বা একটি নতুন বিশাল বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দ্রুত সরে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অন্যান্য কৌশলগত অংশীদার, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি তাঁর দেশের মানুষকেও তাঁর নির্বাচনী জয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আশ্বস্ত করবেন, যাতে বিশেষ করে তাঁর বিরোধীদের মাধ্যমে মার্কিন আখ্যান আরও প্রতিষ্ঠিত হতে না–পারে।
সোহিনী বোস অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.