২০২৪ সালে নির্বাচনগুলি বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় মঞ্চে জায়গা করে নিচ্ছে, এবং এই মার্চে স্পটলাইট রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ভূখণ্ড রাশিয়ার উপর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ১৫-১৭ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং প্রায় ১১২ মিলিয়ন রুশ ভোটার নির্বাচনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ইউক্রেন ও রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রত্যন্ত এলাকায় নতুন দখলকৃত অঞ্চলেও ভোট হয়েছে। ক্রেমলিনে পুতিনের বিজয় সত্ত্বেও নাগরিকদের সামাজিক মনোভাবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন ঘটেছে, যেমন যুদ্ধবিরোধী মনোভাব এবং অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি, এবং তা এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নতুন প্রবণতার জন্ম দিয়েছে।
প্রার্থীরা
ভ্লাদিমির পুতিন নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান; ২০২০ গণভোটের পর, যা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অফিসে দুটি অতিরিক্ত মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়েছিল, এটি ছিল তাঁর প্রথম নির্বাচন। এই ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নের ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বছরের জন্য একাধিক জাতীয় প্রকল্প ঘোষণা করেন, যার মধ্যে রয়েছে রুশ পরিবার ও যুবকদের রাষ্ট্রীয় সামাজিক ও আর্থিক সহায়তা, উদ্যোক্তাদের জন্য কর ছাড়, এবং শিক্ষামূলক পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে ব্যয় বৃদ্ধি। সেইসঙ্গেই তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের প্রকল্পগুলিতে আরও ব্যয়ের পথ প্রদান করতে ফেডারেল সরকারের কাছে ঋণের একটি শতাংশ মকুব করে দেন।
ভ্লাদিমির পুতিন নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান; ২০২০ গণভোটের পর, যা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অফিসে দুটি অতিরিক্ত মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়েছিল, এটি ছিল তাঁর প্রথম নির্বাচন।
কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (সিইসি) পুতিনের বিরোধিতা করার জন্য অন্য তিনজন প্রার্থীকে অনুমোদন দিয়েছিল: রাশিয়ান ফেডারেশনের কমিউনিস্ট পার্টির নিকোল খারিটোনভ, নবগঠিত নিউ পিপলস পার্টির ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ, এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির লিওনিদ স্লুটস্কি।
খারিটোনভ ১৯৯০-এর দশকে ডুমাতে ছিলেন, এবং ২০০৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি ১৩.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। তাঁর প্রচারাভিযানে এই সত্তরোর্ধ্ব নেতা কাজের বয়স ৬০ থেকে কমিয়ে ৫৫ করে পেনশন পেমেন্ট বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। খারিটোনভ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ) এবং অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে রাশিয়ার সদস্যপদ শেষ করা উচিত বলে বিশ্বাস করেন, এবং দাবি করেন এগুলি রাশিয়ার অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে।
লিওনিদ স্লুটস্কি ২০০০ সাল থেকে ডুমার সদস্য; এলডিপিআর নেতা ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কির মৃত্যুর পর স্লুটস্কি দলটির প্রধান নিযুক্ত হন। তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়ক স্টেট ডুমা কমিটির প্রধান এবং পুতিনের বৈদেশিক নীতি সমর্থন করেন। তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে ২০২২ সালের বসন্ত শান্তি আলোচনায় রুশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। কর ত্রাণের পাশাপাশি তাঁর প্রচারাভিযানের মধ্যে ছিল খাদ্যের দাম বেঁধে দেওয়া, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা, এবং সামাজিক আবাসন প্রদান। এজেন্সি ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কমিউনিকেশন বা এপিইসি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল স্লুটস্কি এই নির্বাচনে ৪-৬ শতাংশ ভোট পাবেন।
দাভানকভ প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন করেন, তবে ইউক্রেনের সঙ্গে কথাবার্তা এবং শান্তি আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
সর্বশেষে, ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ, সর্বকনিষ্ঠ নিবন্ধিত প্রার্থী, সকলের মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিলেন। এই স্টেট ডুমা ডেপুটি একটি উদার অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি এলজিবিটিকিউ-কে বৃহত্তর স্বাধীনতা প্রদানের পক্ষপাতী; তিনি বিশ্বাস করেন যে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া উচিত, এবং গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা উচিত নয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, দাভানকভ সিস্টেমের মধ্যে অন্য রাজনীতিবিদদের থেকে আলাদা। দাভানকভ প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন করেন, তবে ইউক্রেনের সঙ্গে কথাবার্তা এবং শান্তি আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তিনি যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যান, কিন্তু নিজেকে সিস্টেমের মধ্যে একজন শান্তিপন্থী প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দেন।
নন-সিস্টেম রাজনীতিবিদ
প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত প্রার্থীদের বিপরীতে কিছু রাজনীতিবিদদের নন-সিস্টেম রাজনীতিবিদ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, কারণ আমলাতান্ত্রিক অসঙ্গতি, যেমন নথিতে ত্রুটি বা অকার্যকর স্বাক্ষরের, উপর ভিত্তি করে তাঁদের প্রার্থীপদ প্রত্যাখ্যান করা হয়। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ না-থাকা সত্ত্বেও এই ব্যক্তিরা যথেষ্ট সামাজিক প্রভাব বিস্তার করেছেন। বর্তমান নির্বাচনে দুইজন বিশিষ্ট যুদ্ধবিরোধী প্রার্থী সিইসি কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ইয়েকাতেরিনা দুন্তসোভা, একজন সম্মানিত সাংবাদিক এবং আরজেভের-এর প্রাক্তন ডুমা ডেপুটি, তাঁর স্পষ্টভাষী যুদ্ধ-বিরোধী অবস্থান এবং দেশের গতিপথের সমালোচনার কারণে দ্রুত সমর্থন অর্জন করেছিলেন। তবে সিইসি তাঁর নিবন্ধন অস্বীকার করার ক্ষেত্রে নথিতে ত্রুটির কথা উল্লেখ করে। একইভাবে, বরিস নাদেজদিন, রাশিয়ার রাজনীতির একজন পাকা ব্যক্তিত্ব যিনি শান্তি আলোচনার পক্ষে ছিলেন, স্বাক্ষরের বৈধতার সমস্যাগুলির কারণে প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হন। মিখাইল খোডোরকভস্কি ও অ্যালেক্সি নাভালনির মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সমর্থন সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলি নাদেজদিনের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য প্রমাণিত হয়েছিল।
ইয়েকাতেরিনা দুন্তসোভা, একজন সম্মানিত সাংবাদিক এবং আরজেভের-এর প্রাক্তন ডুমা ডেপুটি, তাঁর স্পষ্টভাষী যুদ্ধ-বিরোধী অবস্থান এবং দেশের গতিপথের সমালোচনার কারণে দ্রুত সমর্থন অর্জন করেছিলেন।
নাভালনির মৃত্যুর প্রভাব
নন-সিস্টেমিক রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছিলেন আলেক্সি নাভালনি, যিনি ফেব্রুয়ারিতে আর্কটিক প্রিজন কলোনিতে মারা গিয়েছিলেন। তিনি রাশিয়ায় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এবং রুশ সমাজে একটি নতুন নাগরিক সমাজের কথন আনার চেষ্টা করেছিলেন। নাভালনিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য তাঁকে ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, এবং পরবর্তীতে এই ফেব্রুয়ারিতে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চরমপন্থার দায়ে তাঁকে অভিযুক্ত করে রাখা হয়েছিল। এই গণতন্ত্রপন্থী কর্মীকে স্মরণ করার জন্য রাশিয়া জুড়ে অনেক রাত্রিকালীন আয়োজন করা হয়েছিল। একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে, এমনকি দাভানকভ নাভালনির মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করেন, যা থেকে রুশ জনগণের উপর তাঁর প্রভাব সামনে এসেছে।
ক্রমবর্ধমান যুদ্ধবিরোধী মনোভাব
২৪৪,০০০ –এরও বেশি রুশ যখন ফ্রন্টলাইনে কাজ করছেন, সেই সময় রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা, আরেকটি সামরিক মোবিলাইজেশনের ভয়, এবং নিষেধাজ্ঞার হালকা চাপ, সবই যুদ্ধের ক্লান্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যদিও রাশিয়া অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং বৃদ্ধির হারের উন্নতি করার ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গতভাবে ভাল করছে, বাজারের অস্থিরতা ও গতিশীলতার ভয়ের ফলে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন কর্মক্ষম–বয়সী রুশ নিজেদের দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং রুবলের অবমূল্যায়ন এই অর্থনৈতিক উদ্বেগগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে৷ এটি ব্যাখ্যা করে যে কেন দাভানকভের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার মধ্যেকার প্রার্থীরাও শান্তির পক্ষে ওকালতি করা সত্ত্বেও রাজনৈতিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে পারেন, যা কিনা রুশ সমাজের কিছু অংশের যুদ্ধবিরোধী মনোভাব প্রতিফলিত করে।
ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা, আরেকটি সামরিক মোবিলাইজেশনের ভয়, এবং নিষেধাজ্ঞার হালকা চাপ, সবই যুদ্ধের ক্লান্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
উপসংহার
২০২৪ সালের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ভ্লাদিমির পুতিনের অব্যাহত নেতৃত্বকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে, কারণ তিনি ৮৭.৯৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। যাই হোক, এই আপাতদৃষ্টিতে নিশ্চিন্ততার নীচে রুশ সমাজের মধ্যে সূক্ষ্ম কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটছে। যুদ্ধবিরোধী অনুভূতির প্রভাব, আলেক্সি নাভালনির সাম্প্রতিক মৃত্যু, এবং অ-প্রণালীগত প্রার্থীদের উপস্থিতি ক্রমবর্ধমান সামাজিক মনোভাবের চোরাস্রোতের পরিচায়ক। এই উদীয়মান গতিশীলতা এমন একটি সমাজকে নির্দেশ করে যেখানে ভিন্নমত এবং বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমশ গতি পাচ্ছে।
রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ ইন্টার্ন
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.