Published on Mar 21, 2023 Updated 0 Hours ago

তালিবান ২.০-এর গালভরা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তারা ক্ষমতায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে দেশে নারীদের অবস্থার অবনতি হয়েছে।

আফগান রাজনীতি: তালিবান শাসনে নারীদের পরাধীনতা

১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহার এবং কমিউনিস্ট জমানার পতনের পর তালিবান একটি অতি-রক্ষণশীল রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে আফগানিস্তানে আবির্ভূত হয়। কাবুলের বাইরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সরকারের অক্ষমতা দেশটিকে স্থানীয় সেনাদল এবং যুদ্ধবাজদের হয়রানি ও হিংসার মুখে ঠেলে দেয়। ১৯৯৪ সালে কান্দাহার প্রদেশের একটি মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন যোদ্ধাদের একটি দল স্থানীয় এক যুদ্ধবাজকে পরাজিত করে এবং অঞ্চলটিকে স্থিতিশীল করে তুলতে শুরু করে। গোষ্ঠীটি নিরাপত্তা ও ধর্মীয় উত্সাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছিল এবং দ্রুত রাজধানী কাবুল-সহ দেশের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে। তালিবান, পশতু ভাষায় যার অর্থ ‘ছাত্র’, আদতে অতি-রক্ষণশীল পশতুন সংস্কৃতি  এবং ইসলামের পাকিস্তানি দেওবন্দি হানাফি ব্যাখ্যার সংমিশ্রণ। এ কথা অনস্বীকার্য যে, তালিবান একটি আফগান আন্দোলন হলেও এটি ইসলামের পাকিস্তানি দেওবন্দি হানাফি ব্যাখ্যা দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত। পাকিস্তানি দেওবন্দি হানাফি-র একাধিক ব্যাখ্যার বিস্তৃত পরিসর রয়েছে। তালিবান কট্টরপন্থী পাকিস্তানি দেওবন্দি হানাফি অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং সেটির সঙ্গে অত্যন্ত রক্ষণশীল পশতুন সাংস্কৃতিক ভাবধারার মিশ্রণ ঘটিয়েছে। চর্চা এবং ব্যাখ্যার এই সংস্কার ঐতিহাসিক ভাবে দৃশ্যমান এবং অন্য ঐতিহ্যবাহী আফগান ইসলামিক গবেষকদের বক্তৃতা ও ব্যাখ্যার ফারাকের মাঝে সেটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সর্বোপরি, ঐতিহ্যগতভাবে গ্রামীণ আফগান এবং পশতুন জাতিসত্তার মানুষের আরও রক্ষণশীল হওয়ার প্রবণতা তাদের রক্ষণশীলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তালিবানরা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন তাদের ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা কঠোর এবং অনমনীয় পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়েছিল, যার মধ্যে সূক্ষ্মতা এবং বিচারগত ব্যাখ্যার অভাব ছিল। এর পাশাপাশি মানবাধিকারের প্রতি তালিবানের অবহেলা এবং আল-কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের প্রতি তাদের সমর্থন অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, তালিবান একটি আফগান আন্দোলন হলেও এটি ইসলামের পাকিস্তানি দেওবন্দি হানাফি ব্যাখ্যা দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত।

তালিবান ২.০

২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সহায়তায় তালিবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। আলোচনার মূল বিষয় ছিল মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালিবান ও কাবুলের কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি সমঝোতায় আনতে চেয়েছিল। ২০১৯ সালে সরকারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকার ফলস্বরূপ জুলাই মাসে আরও আলোচনার জন্য নীতির বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তালিবানের প্রতিনিধিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেয়; তালিবানের হামলায় এক মার্কিন সেনা সদস্য নিহত হওয়ার পর আলোচনা স্থগিত করা হয়। ২০২১ সালের অগস্ট মাসে তালিবান কাবুলের দখল নেওয়ার পরে দলটির সংস্কার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কাতারের সঙ্গে আলোচনা, আন্তর্জাতিক কূটনীতির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পৃক্ততা এবং একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগের কারণে তাদের এমনকি ‘তালিবান ২.০’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সমঝোতামূলক শাসনব্যবস্থার আশা থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক ইঙ্গিতগুলি সংস্কারের জন্য যৎসামান্য ইচ্ছাই প্রদর্শন করে। এটি তালিবান ২.০ দ্বারা গৃহীত নীতিতে প্রতিফলিত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তারা শুধু ৭-১২ ক্লাসের ছেলেদের জন্য সেকেন্ডারি বিদ্যালয় পুনরায় চালু করে এবং ফের চরম লিঙ্গ পৃথগীকরণ ও অন্যান্য শাস্তির মতো কঠোর বিধি কার্যকর করে।

তালিবান নেতৃত্ব সংগঠনের উপর সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, যা পূর্বে একটি বিকেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রক-কাঠামোর অধীনে কাজ করত। এই ঐক্যের অভাব ধারাবাহিকভাবে নীতি বাস্তবায়ন এবং স্থানীয় বাহিনীকে দায়বদ্ধ করার কাজটি আরও কঠিন করে তুলেছে। এর ফলে তালিবানের জনবিবৃতি এবং বাস্তব কাজকর্মের মধ্যে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইয়ালদা হাকিমের সঙ্গে বিবিসি-র  একটি সাক্ষাত্কারে তালিবানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন যে, শিক্ষার ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলাদের সমান অধিকার রয়েছে। অথচ বাস্তবে নারীদের সেকেন্ডারি স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতি নেই।

এই ঐক্যের অভাব ধারাবাহিকভাবে নীতি বাস্তবায়ন করা এবং স্থানীয় বাহিনীকে দায়বদ্ধ করার কাজটি আরও কঠিন করে তুলেছে।

তালিবানের প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি

তালিবানের রাজনৈতিক মঞ্চ এবং প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের প্রতি তাদের নীতি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়, যেগুলিকে তারা প্রায়শই ইসলামি নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে ন্যায্যতাপ্রদান করে। তাদের নীতিগুলিকে চরম বলে মনে হলেও তারা নিজেদের চিন  রাশিয়ার মতো কূটনৈতিক মিত্র দেশের পথে হেঁটে কট্টরপন্থী অবস্থান নিয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে ঐতিহ্যবাহী পশতুন অঞ্চলে নারীদের জনজীবন থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ শতকে আফগানিস্তান আরও ধর্মনিরপেক্ষ এবং আধুনিক হয়ে ওঠার ফলে নারীরা আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। আমির হবিবুল্লা খান, বাদশা আমানুল্লা এবং বাদশা জহির শাহের মতো নেতার অধীনে কাবুলের মতো শহুরে এলাকায় নারীদের অবস্থান নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়। মোহাম্মদ দাউদের বামপন্থী সরকারের অধীনে এই উন্নতি অব্যাহত ছিল। কাবুল, কান্দাহার, হেরাত, জালালাবাদ এবং মাজার-ই-শরিফের মতো শহরে নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, আধা-সামরিক ক্ষেত্রে কাজ করা, পেশাদার ক্ষেত্রে নিযুক্ত হওয়া এবং সরকারি ক্ষেত্রে উচ্চপদে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এর অন্তর্গত। তা সত্ত্বেও আফগান নারীদের অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করতেন এবং অনেকেই ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী জনসংখ্যার অংশ হিসাবে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন।

বর্তমানে তালিবান অভ্যন্তরীণভাবে বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত। তাদের সেনাদের অধিকাংশই মাদ্রাসার বাইরের বিশ্ব সম্পর্কে নিতান্তই অনভিজ্ঞ। কয়েক জন বিশেষজ্ঞের মতে, কিছু তালিবান সরকারি কর্মকর্তা নারীদের বিষয়ে তাঁদের অবস্থান নরম করতে চাইলেও গোষ্ঠীর আরও কট্টরপন্থী সদস্যদের সমর্থন হারানোর ভয়ে তাঁরা এগিয়ে আসেননি। ল্যারি গুডসন ও অন্যদের মতে, তালিবান নেতৃত্ব এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে, নারীদের সংস্পর্শ তাদের তরুণ অনুগামীদের কলুষিত করতে পারে, যারা এখনও পর্যন্ত নারী সংস্পর্শহীন জীবনযাপন করেছে। ১৯৭৩ সালে লুই ডুপ্রি যেমনটা বলেন যে, নেতারা শক্তির উত্স হিসাবে তাদের তরুণ সেনাবাহিনীর উপর নির্ভর করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সম্পর্কে নিজেরাই সন্দিহান।

প্রশাসন ও রাজনীতিতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য নারীদের প্রতি তালিবানের নীতিগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার আর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের নীতির সীমাবদ্ধতা। তাদের অভিজ্ঞ প্রশাসকের অভাব, স্বল্প বাজেট, শিল্প ক্ষেত্রের অভাব এবং একটি একফসলি কৃষি অর্থনীতি রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতার কারণে তালিবানের একমাত্র নীতি যা তারা প্রয়োগ করতে পারে, তা হল আফগান জীবন ও প্রশাসনের সমস্ত ক্ষেত্রে তাদের ইসলামিক ব্যাখ্যার রাজনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের সীমিত সম্পদ এবং দক্ষতার কারণে তালিবানরা জনস্বাস্থ্য, পরিকাঠামো পুনর্গঠন এবং শিক্ষার মতো সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে অক্ষম।

আমির হবিবুল্লা খান, বাদশা আমানুল্লা এবং বাদশা জহির শাহের মতো নেতার অধীনে কাবুলের মতো শহুরে এলাকায় নারীদের অবস্থান নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও তালিবান তাদের শাসন ব্যবস্থায় নারীদের প্রতি কঠোর নীতির প্রয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এটি তাদের দলের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা, বাহিনীর মধ্যে দুর্নীতি এড়ানো এবং ভয় ও সর্বাঙ্গীন নীতির বাস্তবায়নের অক্ষমতার ভিত্তিতে আদর্শগত ভাবে চালিত, বিচ্ছিন্ন এবং নারীবিদ্বেষী মাদ্রাসা দ্বারা নির্ধারিত বিশ্ব দর্শনের সঙ্গে সাযুজ্য বজায় রাখার মতো চেষ্টা চালিয়েছে। সর্বোপরি নীতিটি প্রধানত মূলধারার  ইসলামি গবেষকদের ব্যাখ্যা এবং চিন্তাধারাকে প্রত্যাখ্যান করে। আফগানিস্তানের একাধিক ইসলামি কাউন্সিল, যার মধ্যে হেরাতের দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান রেক্টর, আন্তর্জাতিক কাউন্সিল যেমন আল আজহার, সৌদি আরবের কাউন্সিল অব স্কলারস ও অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কাউন্সিল (ওআইসি) এবং আফগানিস্তানের ভিতরে ও বাইরে অসংখ্য ইসলামি গবেষক তালিবানের পদক্ষেপকে ‘অ-ইসলামি’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং স্পষ্টভাবে এটিকে ‘নিষিদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন।

তালিবান তাদের ধর্মীয় নীতি প্রয়োগের জন্য প্রাথমিক সংস্থা হিসাবে গুণের প্রচার এবং দোষ প্রতিরোধের জন্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সংস্থা রাস্তায় টহল দিয়ে পোশাক, দাড়ি, বিনোদন, বিদেশিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং নারীদের সামাজিক ভূমিকা সংক্রান্ত বিধান বাস্তবায়নের জন্য দায়বদ্ধ। ইরান ও সৌদি আরবের অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের আদলে তৈরি এই সংস্থার ধর্মীয় পুলিশ দেশগুলি থেকে তালিবানের আদর্শগত প্রভাবকেই প্রতিফলিত করে। নারীদের প্রতি তাদের নীতি ইসলামি আইন বা সাংস্কৃতিক অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে বা যুদ্ধের কারণে অস্থায়ী ব্যবস্থা বলে দাবি করা সত্ত্বেও, এ কথা স্পষ্ট যে তালিবান শাসনের ভিত্তি আসলে নারীদের দমনের উপর কেন্দ্রীভূত। সুনির্দিষ্ট নীতিগুলি বিস্তৃত পরিসরে প্রয়োগের মাধ্যমে এমনটা করতে পেরেছে এবং সামান্য নীতিগত শিথিলতা এই বাস্তবতা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

এ কথা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলামের ব্যাখ্যা অন্যান্য যে কোনও ধর্মের মতো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। নারীদের প্রতি তালিবানের নীতি ইসলামি বিশ্বাস ও অনুশীলনের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে না। অনেক মুসলিম গবেষক এবং নেতা নারীদের প্রতি তালিবানের আচরণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে এটি ইসলামিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে। এর পাশাপাশি তাঁরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, তালিবানের নীতিগুলি সাংস্কৃতিক ভাবে লঙ্ঘিত ব্যাখ্যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধর্ম এবং শিক্ষাকে বিকৃত করে যা ইসলামের সংখ্যাগরিষ্ঠদের অবজ্ঞা করারই নামান্তর। এই ধরনের কট্টরপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকৃতপক্ষে ইসলামের উদ্দেশ্য, যা মাকসিদ আল শরিয়া নামে পরিচিত, এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ইসলামি ঘোষণার বিপরীত। কোরান ব্যক্তিদের মধ্যে সাম্য ও স্বায়ত্তশাসনের উপর জোর দেয় এবং সকল মানুষের সঙ্গে সদয় ব্যবহার ও ন্যায়বিচার করার আহ্বান জানায়। তালিবানের নীতিগুলি ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে গৃহীত, একথা অনুমান করার পরিবর্তে এর প্রেক্ষাপট এবং উদ্দেশ্য বিবেচনা করা অপরিহার্য।

নারীদের প্রতি তাদের নীতি ইসলামি আইন বা সাংস্কৃতিক অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে বা যুদ্ধের কারণে অস্থায়ী ব্যবস্থা বলে দাবি করা সত্ত্বেও, এ কথা স্পষ্ট যে তালিবান শাসনের ভিত্তি আসলে নারীদের দমনের উপর কেন্দ্রীভূত।

কোরান নারীদের অধিকারের উপরও জোর দেয় এবং তাঁদের শিক্ষা ও সমাজে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। নারীদের প্রতি তাদের নিপীড়নমূলক নীতির ন্যায্যতা হিসেবে তালিবানের ধর্মের ব্যবহার তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য কীভাবে ইসলামের শিক্ষাকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে এবং অপব্যবহার করে, এটি তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ

আফগানিস্তানে নারীর অধিকারের পরিসরে পরিবর্তন ঘটাতে ও অগ্রগতি আনতে তালিবান দ্বারা গৃহীত নিপীড়নমূলক নীতির নেপথ্যে থাকা সমস্যা এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলনগুলি বোঝার পাশাপাশি তালিবানদের উপর বাহ্যিক সমর্থন এবং সম্পদের উপরেও নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নারীদের প্রতি তালিবানের নিপীড়নমূলক নীতি শুধুমাত্র সংগঠনের উপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করার মাধ্যমে পরিবর্তন করা যেতে পারে। তাদের শক্তির মূল উৎস হল উপকরণ, কর্ম সংস্থান, নিরাপদ আশ্রয় এবং অর্থায়নের আকারে পাকিস্তানের সমর্থন। তালিবানকে দুর্বল করার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করা জরুরি এবং তাদেরকে সমর্থন জোগানো বন্ধ করার জন্য চিন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলির উপর জন্য চাপ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোষ্ঠীটি যদি সর্বাত্মক জয় পায় এবং বৈধ সরকার হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়, তাহলেও নারী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষদের প্রতি তাদের  অবস্থানের দ্রুত পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি সমাধানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে নারীদের দুর্দশা ভয়াবহ হতে থাকবে।

উপসংহারে বলা যায়, পরিবর্তন আনার মূল চাবিকাঠি হল প্রকৃত প্রশাসনের মাধ্যমে মধ্যপন্থাকে উৎসাহিত করা। আফগানিস্তানের সঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির মধ্যে সমাজে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরও প্রগতিশীল পদ্ধতিতে ধর্মীয় আলোচনাকে সমর্থন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। একটি অর্থনৈতিক বা ত্রাণ কর্মসূচির মাধ্যমে এই পদক্ষেপ শুরু হতে পারে যা শুধুমাত্র আফগান নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আফগানিস্তানের বিবর্তনের জন্য প্রগতিশীল ইসলামিক দেশগুলির তরফে একটি ইসলামি হস্তক্ষেপও প্রয়োজন। ধর্মীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা পরিমাপযোগ্য লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে একটি সর্বাঙ্গীন পরিকল্পনা হয়ে উঠতে পারে। আফগানিস্তানকে পুনরায় তার বর্তমান অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার দরুন এমনটা করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।


দ্রষ্টব্য:

ডুপ্রি, লুই। আফগানিস্তান, প্রিন্সটন: প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৩

গুডসন, ল্যারি পি।, ২০০২, বেন্টলে কলেজ

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.