Author : Shairee Malhotra

Published on Dec 24, 2024 Updated 0 Hours ago

ফ্রান্সের রাজনৈতিক সঙ্কট ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সি, বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ঘাটতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বার্ষিকীর মধ্যে উন্মোচিত হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা প্যারিসকে গ্রাস করেছে

৪ ডিসেম্বর, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অনাস্থা ভোটের পর, ফরাসি সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে এবং পার্লামেন্টের অনুমোদন এড়িয়ে গিয়ে একটি বিতর্কিত সামাজিক নিরাপত্তা বিল নিয়ে আসার পরে ভোটাভুটি হয়েছিল। বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোট, যার মধ্যে রয়েছে সোশ্যালিস্ট পার্টি ও অতি-বাম ফ্রান্স আনবোড, তারা মেরিন ল প্যাঁ-র নেতৃত্বাধীন অতি-দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র‍্যালির সঙ্গে একত্র হওয়ার ফলে ৫৭৭ সদস্যের কক্ষে ৩৩১ জন এম পি অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। এই ভোটাভুটি ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলের অধীনে জর্জি পঁপিদু প্রশাসনের পতনের পর প্রথমবারের মতো একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মাত্র তিন মাস দায়িত্বে থাকা বার্নিয়েকে ১৯৫৮ সালে পঞ্চম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর এ যাবৎ কালের সবচেয়ে স্বল্পকালীন প্রধানমন্ত্রীতে পরিণত করেছে।


সঙ্কট আরও ঘোরালো হয় যখন ম্যাক্রোঁ পার্লামেন্টে সবচেয়ে বেশি আসনের অধিকারী বাম জোটের প্রার্থীর পরিবর্তে মধ্য-দক্ষিণ বার্নিয়েকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন।



ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যায় যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর দলের পরাজয়ের পর অতি-দক্ষিণপন্থীদের উত্থান এড়াতে জুন মাসে
সময়ের আগেই নির্বাচনের ডাক দেন। নির্বাচনের ফলে তিনটি মতাদর্শিক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট তৈরি হয়েছিল — অতি-দক্ষিণ, বাম (অতি-বাম সহ) এবং মধ্যপন্থী — যাদের কোনওটিই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি এবং সরকার গঠন করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে। সঙ্কট আরও ঘোরালো হয় যখন ম্যাক্রোঁ পার্লামেন্টে সবচেয়ে বেশি আসনের অধিকারী বাম জোটের প্রার্থীর পরিবর্তে মধ্য-দক্ষিণ বার্নিয়েকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। এটি সরকারের টিকে থাকার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে অতি-দক্ষিণদের সমর্থন অপরিহার্য করে তোলে, এবং বার্নিয়েকে অভিবাসন ও নিরাপত্তার বিষয়ে অতি-দক্ষিণ বাগ্মিতার সঙ্গে সহাবস্থানে বাধ্য করে। বার্নিয়ের বিদ্যুতের করে ছাড় এবং সমর্থন পাওয়ার জন্য অন্যান্য অতি-দক্ষিণ দাবি মেনে নেওয়া সত্ত্বেও, অতি-দক্ষিণরা তাঁর সরকারের উপর রাশ টেনে ধরেছিল।

ফরাসি অর্থনীতি, যা ইউরোজোনের দ্বিতীয় বৃহত্তম, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিম্ন বৃদ্ধি, ঋণের মূল্যসহ উচ্চ ঋণ যা এমনকি এক পর্যায়ে গ্রিসকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল, এবং
৯ মিলিয়ন মানুষের দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা। আইএনজি-‌র অনুমান অনুযায়ী ২০২৪ সালে ১.১ শতাংশের তুলনায় ২০২৫ সালে ফরাসি অর্থনীতি মাত্র ০.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। বার্নিয়ের বাজেটের উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান জিডিপির ৬.১ শতাংশ থেকে ঘাটতি (ইউরোপীয় কমিশনের তুলনায় অনেক বেশি, যেখানে ৩ শতাংশ সীমা বাঁধা আছে) কমিয়ে ক্রমবর্ধমান ঋণের চাপ মোকাবিলা করা, এবং ৬০ বিলিয়ন ইউরো কর বৃদ্ধি ও ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে ঘাটতি ৫ শতাংশে নিয়ে আসা।


ফরাসি অর্থনীতি, যা ইউরোজোনের দ্বিতীয় বৃহত্তম, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিম্ন বৃদ্ধি, ঋণের মূল্যসহ উচ্চ ঋণ যা এমনকি এক পর্যায়ে গ্রিসকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল, এবং ৯ মিলিয়ন মানুষের দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা।



সামনে সম্ভাব্য পরিস্থিতি

ফরাসি সংবিধানের
১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ফ্রান্সে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না, কারণ পূর্ববর্তী স্ন্যাপ পোলটি মাত্র ছয় মাস আগে হয়েছিল।

একদিকে, সরকার পতনের সময় সৌদি আরব সফররত ম্যাক্রোঁকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছে বিরোধী কণ্ঠস্বর।
প্রায় ২৩ শতাংশে, প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের রেটিং কম রয়েছে, এবং একটি সমীক্ষা অনুসারে ৬২ শতাংশ ফরাসি জনসাধারণ তাঁর পদত্যাগ চান। তবে ম্যাক্রোঁ ইলিসিতে তাঁর মেয়াদ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, আদালতের মামলায় জর্জরিত  ল প্যাঁ আগাম নির্বাচন চান, পাছে মার্চ মাসে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ করা হয়।

ম্যাক্রোঁর তাৎক্ষণিক কাজ হল নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা, এবং তিনি মধ্যপন্থী নেতা ফ্রাঁসোয়া বেরুকে নিযুক্ত করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়েঁ লেকোর্নু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রিতেলু এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বার্নার্ড কাজেনুভ ছিলেন
নেতৃস্থানীয় অন্য কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী। যাই হোক, একটি গ্রিডলকড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির কারণে নতুন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেও ঐকমত্য গড়ে তোলা চ্যালেঞ্জিং হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী বাজেট পাশ করা এবং মূল বিষয়গুলিতে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে বার্নিয়ের মতো একই রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন।


ফরাসি সংবিধানে মার্কিন-শৈলীর গভর্নমেন্ট শাটডাউন প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ২০২৪ সালের বাজেটকে পরের বছরের বাজেটের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনা খোলা রাখে। তবে এটি শুধুই ফ্রান্সের আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা বিলম্বিত করবে।



যদি নতুন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও মতৈক্য গড়ার প্রচেষ্টা নিরর্থক প্রমাণিত হয়, একটি বিকল্প হল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেখানে বার্নিয়ে প্রশাসনিক বিষয়গুলি পরিচালনা করবেন এবং একটি অস্থায়ী রোল-ওভার বাজেট প্রস্তাব করবেন। আর একটি বিকল্প হল একটি টেকনোক্র্যাটিক সরকার যেখানে নির্দলীয় মন্ত্রীরা দৈনন্দিন কাজগুলি পরিচালনা করবেন। যেভাবেই হোক, আগামী বছরের বাজেটের জন্য ঐকমত্য অধরাই থাকবে। ফরাসি সংবিধানে মার্কিন-শৈলীর গভর্নমেন্ট শাটডাউন প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ২০২৪ সালের বাজেটকে পরের বছরের বাজেটের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনা খোলা রাখে। তবে এটি শুধুই ফ্রান্সের আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা বিলম্বিত করবে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বার্ষিকীর আসন্ন পটভূমিতে ফ্রান্সের রাজনৈতিক সঙ্কট ইউরোপকেও একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ফেলেছে কারণ মহাদেশটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সির প্রভাব, বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ঘাটতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ইতিমধ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য পাওয়ার হাউস জার্মানি তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজনের মুখোমুখি হচ্ছে, ‌‌কারণ সেখানেও বাজেট নীতির কারণে চ্যান্সেলর স্কোলজের জোট সরকারের
পতন ঘটেছে। প্যারিস ও বার্লিন উভয় ক্ষেত্রে নেতৃত্বের শূন্যতার পরে নিরাপত্তা ও ইউক্রেন নীতিগুলি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্যফ্রন্ট দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাও এমন এক সময়ে যখন ইউরোপ জুড়ে সরকারগুলি প্রতিরক্ষা ও শিল্প প্রতিযোগিতায় ব্যয় বাড়ানোর দাবির মুখোমুখি হচ্ছে।


ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য পাওয়ার হাউস জার্মানি তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজনের মুখোমুখি হচ্ছে, ‌‌কারণ সেখানেও বাজেট নীতির কারণে চ্যান্সেলর স্কোলজের জোট সরকারের পতন ঘটেছে।



নোত্‌রদাম গির্জায় আবারও ঘণ্টা বাজলেও, বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক কাঠামো নিয়েই প্যারিসকে নতুন বছরের দিকে এগোতে হবে, তার আর্থিক ব্যবস্থা শক্তপোক্ত করার জন্য একটি স্থিতিশীল সরকার বা নতুন বাজেট কিছুই থাকবে না।




শায়রী মলহোত্র অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.